প্রযুক্তি ডেস্ক: মঙ্গলই আমাদের একমাত্র প্রতিবেশী নয়, যেখানে প্রাণের সম্ভাবনা থাকতে পারে। এখন শনি গ্রহের চাঁদ বা উপগ্রহ এনসেলাডাসেও প্রাণ থাকার সম্ভাবনা বেড়েছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।
গত বুধবার (১ অক্টোবর) একটি গবেষণাপত্র প্রকাশ করেছেন বিজ্ঞানীরা, যেখানে এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের নিচ থেকে বের হওয়া বিভিন্ন অণু আরো জটিল হয়ে উঠেছে বলে ইঙ্গিত মিলেছে।
ইউরোপীয় মহাকাশ সংস্থা বা ইএসএ-এর ড. জোর্ন হেলবার্ট বলেছেন, এনসেলাডাসে প্রাণ থাকার জন্য প্রয়োজনীয় সব উপাদানের খোঁজ আমারা পেয়েছি।
গবেষকদের জন্য এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের নিচের জগত জানার এক বিরল সুযোগ এনে দিয়েছে এটি। ‘ক্যাসিনি’ মিশনের মাধ্যমে বিজ্ঞানীরা এরইমধ্যে জানতে পেরেছেন, শনির উপগ্রহের পৃষ্ঠ থেকে প্রায় ছয় হাজার মাইল ওপরে পর্যন্ত পানি ও বরফের গম্বুজ আকারে গিজার ছুটে যায় মহাকাশের দিকে।
ধারণা করা হচ্ছে, বরফের এসব ঝর্ণার উৎস লবণাক্ত এক পানির বিশাল ভূগর্ভস্থ মহাসাগর, যার গভীরতা প্রায় ৩০ মাইল এবং এটি পুরো উপগ্রহটিকে ঘিরে রেখেছে। এসব ঝর্ণা মূলত উপগ্রহটির দক্ষিণ মেরু অঞ্চল থেকে বেরিয়ে এসেছে। এর আগেও এনসেলাডাসের বরফ কণার বিশ্লেষণে প্রাণের জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক উপাদান মিলেছিল। তবে তখন এসব জৈব যৌগের উপস্থিতি আন্দাজ করা হয়েছিল শনি গ্রহের ‘ই’ রিং বিশ্লেষণের মাধ্যমে, যা মূলত এনসেলাডাসের বরফগিজার থেকে ছুটে আসা কণা থেকে তৈরি।
এবারের গবেষণাটি ভিন্ন, এখানে সরাসরি ক্যাসিনি মহাকাশযানের গিজারের ওপর দিয়ে উড়ে যাওয়ার তথ্য সংগ্রহ করে তা বিশ্লেষণ করেছেন গবেষকরা।
নতুন আবিষ্কারের বিশেষত্ব হচ্ছে, জৈব পদার্থের বৈচিত্র্য অনেক বেশি ও এসব নমুনা একেবারেই সতেজ। গবেষণার প্রধান লেখক ড. নোজাইর খাজা বলেছেন, এসব কণা কেবল কয়েক মিনিট আগেই তৈরি হয়েছিল।
গবেষণাপত্রে গবেষকরা লিখেছেন, গিজারে সরাসরি জৈব উপাদান শনাক্ত হওয়ার মানে হচ্ছে এগুলোর উৎস কেবল মহাকাশীয় আবহাওয়া বা বিকিরণ নয়। এখানে ‘মহাকাশীয় আবহাওয়া’ বলতে বোঝানো হয়েছে মহাকাশের বিকিরণ ও অন্যান্য প্রক্রিয়া, যা নমুনার গঠন পরিবর্তন করতে বা নষ্ট করে দিতে পারে। কিন্তু এক্ষেত্রে দেখা গিয়েছে, এসব কণা একেবারে সতেজ ও অপরিবর্তিত। এর থেকে প্রমাণ মেলে, এসব যৌগ এনসেলাডাসের গভীর মহাসাগর থেকে গিজারের মাধ্যমে বেরিয়ে এলেও অক্ষত অবস্থায় টিকে থাকতে পেরেছে। খাজা বলেছেন, এসব কণা কেবল কয়েক মিনিট আগেই তৈরি হয়েছে। এর মানে, আমরা আসলে এনসেলাডাসের ভূপৃষ্ঠের নিচ থেকে উঠে আসা একেবারে খাঁটি নমুনাই সংগ্রহ করেছি।
তিনি আরো বলেছেন, এ গবেষণার ফলাফল এনসেলাডাসের পৃষ্ঠের নিচে থাকা বিভিন্ন জৈব রাসায়নিক পদার্থের জটিলতা আরো বাড়িয়েছে। যখন এমন জটিলতা দেখা যায় তখন বলতেই হয়, এনসেলাডাসের বাসযোগ্য হওয়ার আরো বেশি সম্ভাবনা আমাদের নজরে আসছে।
গবেষণার বিভিন্ন ফলাফল এখনো প্রমাণ করে না যে, শনি গ্রহের চাঁদ এনসেলাডাসে সত্যিই প্রাণ আছে। তবে গবেষণায় স্পষ্টভাবে ইঙ্গিত মিলেছে, এর ভূপৃষ্ঠের নিচে এক রাসায়নিক উপাদানে সমৃদ্ধ মহাসাগর আছে, আর সেখানেই রয়েছে প্রাণের উপাদান গঠনের সম্ভাবনা।
সানা/আপ্র/০৪/১০/২০২৫