প্রযুক্তি ডেস্ক : বছর তিনেক আগেই ঢাকঢোল পিটিয়ে জাকারবার্গ ঘোষণা দিয়েছিলেন, নিজস্ব প্ল্যাটফর্মে ভুয়া তথ্যের প্রচার পর্যবেক্ষণ করতে বিভিন্ন পোস্ট এবং লিঙ্কে ব্যবহারকারীদের প্রতিক্রিয়া সম্পর্কিত তথ্য গবেষকদের দেবে ফেইসবুক। গত দুই বছরে একাধিক গবেষণায় ব্যবহৃত হয়েছে ওই ডেটা। কিন্তু সর্বশেষ খবর হল, গবেষকদের ত্রুটিপূর্ণ ডেটা দিয়েছে ফেইসবুক; অর্থাৎ ভুল প্রমাণিত হতে পারে সময় ও অর্থ খরচ করে পরিচালিত গবেষণার ফলাফল।
নিউ ইয়র্ক টাইম জানিয়েছে, ফেইসবুকের অভ্যন্তরীণ ইমেইল আর গবেষকদের সাক্ষাৎকার থেকে উঠে এসেছে ত্রুটিপূর্ণ ও অসম্পূর্ণ ডেটা সরবরাহের বিষয়টি। গবেষকদের কেবল যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক ফেইসবুক ব্যবহারকারীদের তথ্য দিয়েছে ফেইসবুক– রাজনৈতিক পেইজগুলো থেকে যেসব ব্যবহারকারীদের রাজনৈতিক ভাবধারা নিয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে, কেবল তাদের ডেটাই গবেষকদের দিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি।
কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের বাইরের ব্যবহারকারীদের ডেটার ক্ষেত্রে এমন কোনো অসঙ্গতি ছিলো না বলে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস। পুরো ডেটাসেটই হাতে পেয়েছেন গবেষকরা।
“এতে ফেইসবুকের উপর গবেষকদের বিশ্বাস খর্ব হলো বলে মন্তব্য করেছেন নিউ জার্সি ইনস্টিটিউট অফ টেকনোলজি’র সহাকারী অধ্যাপক এবং সামাজিক মাধ্যম গবেষক কোডি বান্টেইন। সোশাল সায়েন্স ওয়ান নামের একটি গবেষক দলের সদস্য ছিলেন তিনি। গবেষকদের ওই দলটিকেও ব্যবহারকারীদের কর্মকা- বিষয়ক ডেটা দিয়েছে ফেইসবুক।
“শুরু থেকেই ফেইসবুক আদৌ সোশাল সায়েন্স ওয়ানের গবেষকদের সঠিক ডেটা দেবে কি না, সে বিষয়ে সংশয়ের কথা জানিয়েছিলেন অনেকেই। এখন আমরা নিশ্চিত যে ফেইসবুককে বিশ্বাস করা ঠিক হয়নি এবং ডেটার নির্ভরযোগ্যতা নিশ্চিত করতে আরও বেশি চেষ্টার দাবি তোলা উচিত ছিলো আমাদের”– বলেন বান্টেইন।
সম্প্রতি এই বিষয়ে গবেষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে ইমেইল পাঠিয়েছে ফেইসবুক; “এর ফলে কোনো জটিলতার সৃষ্টি হয়ে থাকলে তার জন্য আমরা আন্তরিকভাবে দুঃখিত এবং যতোটা সম্ভভ সমর্থন দেওয়ার চেষ্টা করবো আমরা”। অসম্পূর্ণ ডেটার ফলে সৃষ্ট জটিলতার সমাধান করতে পুরো ডেটা সেট আপডেট করার কথা জানিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। তবে ডেটার পরিমাণ অনেক বেশি হওয়ায় আপডেটের কাজ শেষ হতে কয়েক সপ্তাহ সময় লাগবে শীর্ষ সামাজিক মাধ্যমটির।
গবেষণার ডেটা নিয়ে জটিলতা নিরসন করতে ফেইসবুকের মুক্ত গবেষণা এবং স্বচ্ছতা দলের দুই সদস্য সম্প্রতি গবেষকদের সঙ্গে বৈঠকেও বসেছিলেন বলে উপস্থিত দুই সূত্রের বরাত দিয়ে জানিয়েছে নিউ ইয়র্ক টাইমস।
নাম গোপন রাখার শর্তে ওই দুই সূত্র জানিয়েছেন, কেবল ৩০ শতাংশ গবেষণা মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক ডেটার উপর নির্ভরশীল ছিলো বলে দাবি করেছে ফেইসবুক। তবে ডেটার অন্যান্য অংশের নির্ভরযোগ্যতা নিয়েও গবেষকরা এখন শঙ্কিত বলে জানিয়েছেন তারা।
টানা কয়েক মাসের গবেষণা কাজ নষ্ট হওয়ার অভিযোগ তুলেছেন গবেষকরা। ফেইসবুকের অসম্পূর্ণ তথ্যের কারণে ডক্টোরাল ডিগ্রি আটকে গেছে বলে জানিয়েছেন গবেষকদের একজন। গবেষণার ডেটা নিয়ে এই জটিলতা ফেইসবুকের অবহেলার কারণে হয়েছে, নাকি প্রতিষ্ঠানটি গবেষণার নির্ভরযোগ্যতা খর্ব করার জন্য ইচ্ছাকৃতভাবে অসম্পূর্ণ ডেটা দিয়েছে, এমন প্রশ্নও তুলেছেন গবেষকরা।
“ওই বৈঠকে ৪৭ জন মানুষ উপস্থিত ছিলেন এবং তাদের প্রত্যেকের গবেষণা প্রকল্প ঝুঁকির মুখে পড়েছে, একেবারেই নষ্ট হয়ে গেছে এর বেশ কয়েকটি”– ফেইসবুক কর্মীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে এই মন্তব্য করেন অংশগ্রহণকারী গবেষক মেগান স্কয়্যার। তবে ‘যান্ত্রিক ত্রুটি’র কারণে এই জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে বলে দাবি করেছেন ফেইসবুক মুখপাত্র মেভিস জোনস; “যেটা আমরা স্বউদ্যোগে ভূক্তভোগীদের জানিয়েছি এবং যতো দ্রুত সম্ভব সমাধান করার চেষ্টা করছি”, বলেন তিনি।
ডেটা সেটের অসঙ্গতি সর্বপ্রথম আবিষ্কার করেন ইতালির ইউনিভার্সিটি অফ আরবিনো’র সহযোগী অধ্যাপক এবং সামাজিক মাধ্যমবিষয়ক গবেষক ফাবিও জিইয়েত্তো। অগাস্ট মাসে নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের সবচেয়ে জনপ্রিয় পোস্ট সংক্রান্ত ডেটা জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করেছিলো ফেইসবুক। ওই ডেটার সঙ্গে গবেষকদের দেওয়া ডেটার তুলনা করে অসঙ্গতি নজরে আসে বলে জানান তিনি। ডেটার অসঙ্গতি আবিষ্কারে পর থেকে যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, সেই প্রসঙ্গে জিইয়েত্তো বলেন, “অল্প একটু স্বচ্ছতা থেকেই যে আশ্চর্যজনক ফল মিলতে পারে তার বড় একটা উদাহরণ এটি।”
নিজস্ব প্ল্যাটফর্মের স্বচ্ছতা বজায় রাখতে ফেইসবুক গবেষক ও সংবাদকর্মীদের যতো ডেটা সেট সরবরাহ করেছে, তার মধ্যে ত্রুটি খুঁজে পাওয়ার দ্বিতীয় সাম্প্রতিক ঘটনা এটি।
আগস্টের শেষ সপ্তাহে মার্কিন সাময়িকি পলিটিকো জানিয়েছিলো, ৬ জানুয়ারির ক্যাপিটল হিল কা- নিয়ে কয়েক হাজার ফেইসবুক পোস্ট খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না প্রতিষ্ঠানটির অ্যানালিটিক্স টুল ক্রাউডট্যাঙ্গলে। ক্রাউডট্যাঙ্গেলের মালিকানা সামাজিক মাধ্যমটির হলেও এটির মূল ব্যবহারকারী গবেষক এবং সংবাদকর্মীরা।