নিজস্ব প্রতিবেদক : ঈদকে সামনে রেখে মুক্তিপণ আদায়ে আবদুল বারেক ওরফে রানার নেতৃত্বে একটি অপহরণ চক্র বেপরোয়া ছিল। তাঁরা পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাজধানী ও আশপাশ এলাকায় গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে কারে যাত্রী তুলতেন। পরে নির্জন স্থানে নিয়ে অস্ত্রের মুখে অপহরণের কবলে পড়া ব্যক্তিদের মারধর করে তাঁদের স্বজনদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা হাতিয়ে নিতেন চক্রের সদস্যরা। গত সোমবার রাতে রাজধানী ও নরসিংদীতে অভিযান চালিয়ে চক্রের মূল হোতা বারেকসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা বিভাগ (ডিবি)। তাঁদের কাছ থেকে অপহরণে ব্যবহৃত দুটি খেলনা পিস্তল, দুটি ছুরি, একটি চাপাতি, একটি লোহার পাইপ, আসামিদের ব্যবহৃত পাঁচটি মুঠোফোন ও একটি টি প্লাস জব্দ করা হয়।
গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিবির (উত্তর) যুগ্ম কমিশনার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
গ্রেপ্তার অন্য ব্যক্তিরা হলেন হিরু মোল্লা (৪০), নিজাম উদ্দিন (৪৫), জাকির হোসেন (৪৮) ও নজরুল ইসলাম (৪২)। ডিবির দাবি, অপহরণকারী চক্রের মূল হোতা বারেক (৫৫) জিজ্ঞাসাবাদে ডিবি কর্মকর্তাদের বলেছেন, এ পর্যন্ত তিনি ৫০০ ব্যক্তিকে অপহরণ করেছেন। একটি অপহরণ মামলার তদন্ত করতে গিয়ে ডিবি পুলিশ অপহরণকারী বারেক (৫৫) চক্রের সন্ধান পায়।
মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী চক্রের সদস্যরা রাজধানীর ও আশপাশে জনাকীর্ণ স্থানে অবস্থান নিয়ে সকালে অফিসগামী যাত্রীদের পিছু নিতেন। তাঁরা যাত্রীদের গন্তব্যস্থলে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে কারে ওঠাতেন। গাড়িচালকসহ চক্রের তিন-চারজন সদস্য যাত্রীবেশে বসে থাকতেন। পরে যাত্রী তুলে চক্রের সদস্যরা নির্জন স্থানে নিয়ে খুন–জখমের ভয়ভীতি দেখিয়ে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে সর্বস্ব লুটে নিতেন। পরে তাঁদের স্বজনদের ফোন করে মুক্তিপণ নিয়ে বিকেলে ছেড়ে দিতেন ভুক্তভোগীদের।
ডিবির যুগ্ম কমিশনার হারুন অর রশীদ আরও বলেন, ঈদুল ফিতরকে লক্ষ্য ধরে তারা আরও অপহরণের প্রস্তুতি নিচ্ছিল বলে স্বীকার করেন। গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জিজ্ঞাসাবাদ, অপরাধের ডেটাবেইস পর্যালোচনা এবং তদন্তে ডিবি জানতে পেরেছে, গত পাঁচ বছরে বারেক ও তাঁর চক্রের বিরুদ্ধে অপহরণ, মুক্তিপণ, চুরি, ডাকাতি, দস্যুতা, অস্ত্র, বিস্ফোরক, মারামারিসহ বিভিন্ন ধরনের মামলা আদালতে বিচারাধীন। বারেকের নেতৃত্বে গত পাঁচ বছরে ৫০০টি অপহরণের ঘটনা ঘটলেও এর মধ্যে রুস্তুম খান নামের এক ব্যক্তি বারেক চক্রের বিরুদ্ধে একটি অপহরণের মামলা করেছেন। হারুন অর রশীদ বলেন, গত বছরের ২৫ জানুয়ারি সকালে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মী রুস্তম খানকে যাত্রাবাড়ীর বাদমা মিয়া রোডের মাথা থেকে অস্ত্রের মুখে অপহরণ করে ব্যক্তিগত গাড়িতে তোলেন। তাঁরা রুস্তুমের হাত-পা বেঁধে চোখে কালো চশমা পরিয়ে দেন। অপহরণকারীরা রুস্তুমকে মারধর করেন। তাঁরা রুস্তুমের মেয়েকে ফোন করে তাঁদের কাছ থেকে মোবাইল ব্যাংকিংয়ে এক লাখ টাকা নেন। পরে অপহরণকারীরা রুস্তমের কাছ থেকে দুটি মুঠোফোন ও নগদ দেড় হাজার কেড়ে নেন। ওই দিন বিকেলে রুস্তমকে তাঁরা মুন্সিগঞ্জের গজারিয়ার বাউশিয়ায় নির্জন স্থানে ফেলে চলে যান। পরে রুস্তম যাত্রাবাড়ী থানায় অপহরণের মামলা করেন। ওই মামলার তদন্তে নেমে ডিবি অপহরণকারী বারেক চক্রের সন্ধান পায়।
গন্তব্যে পৌঁছে দেওয়ার কথা বলে যাত্রী তুলে মুক্তিপণ নিতেন তাঁরা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ