ঢাকা ০৮:৫৫ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ মার্চ ২০২৫

গতানুগতিক বাজেটে যাবে না অন্তর্বর্তী সরকার

  • আপডেট সময় : ০৮:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫
  • ২২ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু গতানুগতিক বাজেটের দিকে যাব না। উপদেষ্টা বলেন, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাদ্দ বাড়বে। বাংলাদেশ যদি তথ্যপ্রযুক্তির দিকে না যায়, তাহলে কিন্তু দেশ এগোতে পারবে না। সেজন্য ক্যাশলেস সোসাইটি ও ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম হওয়া জরুরি।

তাহলে সরকারের আয় বাড়বে। গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধি সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সভার আয়োজন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের শীর্ষ নির্বাহীসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাচ্ছি সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী বাজেট। আমাদের সময় সংক্ষিপ্ত, এ সময়ের মধ্যে আমরা বাজেটের কিছুটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।

আমরা বাজেটে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিষয়ে নজর দিতে পারব না। কারণ এটি আমাদের ম্যান্ডেট নয়। তবে আমরা একেবারে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে যাবো না। দ্রুত যেটা করা যাবে, মধ্য মেয়াদ লাগবে সেরকম কিছু করব। আমরা একটা পদচিহ্ন রেখে যাব। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আমাদের নজরে আছে, এতে ভাতার পরিমাণ বাড়াব। সেটার অংক বলতে চাই না। ধরুন, আমরা কিছু বাড়াতে গেলে ৩০ হাজার কোটি টাকা লেগে যাবে। কিন্তু আমাদের সীমাহীন সম্পদ নেই। তবে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাদ্দ বাড়াব। এলডিসি উত্তরণে যেতে প্রস্তুতি লাগবে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা গ্র্যাজুয়েশন এড়াতে পারব না। যাব না- এটা কিন্তু খুব ভালো অ্যাটিচিউড (মনোভাব) নয়। ভুটান ও আফ্রিকার পাঁচ-ছয়টি দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ করলে তারা সঙ্গে থাকবে। তাই আমরা প্রস্তুতিটা নেব।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ভয় পান, গ্র্যাজুয়েশন হলে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে, পানিতে পড়ে যাবেন। তাদের ধারণা, তারা প্রতিযোগিতায় যেতে পারবেন না। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগী হতে হবে। এটিই তাদের চ্যালেঞ্জ। গ্র্যাজুয়েশনের পর আমরা আরও তিন বছর সময় পাব নিজেদের প্রমাণ করতে। এই চ্যালেঞ্জটা ব্যবসায়ীদের নিতে হবে। ক্যাশলেস সোসাইটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটি ও ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম হওয়া জরুরি। আমি মনে করি, ট্যাক্স অফিসারদের মুখোমুখি যাওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সামনে গেলেই টেবিলের নিচে হাত চলে যায়। পৃথিবীর কোনো দেশেই ট্যাক্স পেয়াররা ট্যাক্স অফিসে যান না। বাংলাদেশ যদি আইটিতে বা ডিজিটালে (তথ্যপ্রযুক্তির দিকে) না যায়, তাহলে কিন্তু দেশ এগোতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু গতানুগতিক বাজেটের দিকে যাব না। কারণ আমরা বাইরে থেকে সম্পদ আনব কি না, সেটিও নির্ভর করবে তা শোধ দিতে পারব কি না, তার ওপর। আমরা বাজেটে এ রকম কিছু পদক্ষেপ নেব, পরবর্তী পলিটিক্যাল সরকার এসে যদি পরিবর্তনও করে, তখন যেন আপনারা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। আর বাজেট বক্তৃতা ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার মধ্যে হবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে এ বছর একটি বিষয় আনব। গৃহায়ণে যে নারীরা কাজ করেন, তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। বাজেটে সরাসরি অবদান না রাখলেও কৃষিখাতে তারা অবদান রাখছেন। সেখানে তারা ২ থেকে ৩ শতাংশ রাখছেন। খুব বেশি না হলেও কিছুতো রাখছেন।

সেজন্য তাদের সম্মানটা যাতে দিতে পারি। অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আজকের আলোচনায় মোটাদাগে যেসব বিষয় এসেছে, সেগুলো হলো: বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মসংস্থান খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেদিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে ক্রমান্বয়ে বাজেট বরাদ্দ কমেছে, তা বাড়াতে হবে। বাজেটের ব্যয় যেন সঠিক খাতে ব্যয় হয়, সে দিকে নজর দিতে হবে। ট্যাক্স, ক্যাশলেস সোসাইটির উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে অটোমেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। জিডিবির পরিসংখ্যান সঠিকভাবে দিতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। শিশুদের সুরক্ষায় বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বাজেটের বক্তৃতা ও আকার ছোট করতে হবে।

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গতানুগতিক বাজেটে যাবে না অন্তর্বর্তী সরকার

আপডেট সময় : ০৮:২৩:৫৯ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৯ মার্চ ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : আগামী ২০২৫-২৬ অর্থবছরের বাজেট সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী হবে বলে জানিয়েছেন অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, আমরা কিন্তু গতানুগতিক বাজেটের দিকে যাব না। উপদেষ্টা বলেন, আগামী বাজেটে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাদ্দ বাড়বে। বাংলাদেশ যদি তথ্যপ্রযুক্তির দিকে না যায়, তাহলে কিন্তু দেশ এগোতে পারবে না। সেজন্য ক্যাশলেস সোসাইটি ও ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম হওয়া জরুরি।

তাহলে সরকারের আয় বাড়বে। গতকাল বুধবার (১৯ মার্চ) দুপুরে সচিবালয়ে অর্থ মন্ত্রণালয়ের সম্মেলন কক্ষে এক মতবিনিময় সভার সমাপনী বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন। ২০২৫-২৬ অর্থবছরের প্রাক-বাজেট নিয়ে গণমাধ্যম প্রতিনিধি সম্পাদক ও সাংবাদিকদের সঙ্গে এ সভার আয়োজন করা হয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের সচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার, আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব নাজমা মোবারেক সভায় উপস্থিত ছিলেন। এ ছাড়া বিভিন্ন গণমাধ্যমের শীর্ষ নির্বাহীসহ জ্যেষ্ঠ সাংবাদিকরা উপস্থিত ছিলেন। অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা চাচ্ছি সমতাভিত্তিক ও কল্যাণমুখী বাজেট। আমাদের সময় সংক্ষিপ্ত, এ সময়ের মধ্যে আমরা বাজেটের কিছুটা বাস্তবায়ন করার চেষ্টা করব।

আমরা বাজেটে মধ্য ও দীর্ঘমেয়াদী বিষয়ে নজর দিতে পারব না। কারণ এটি আমাদের ম্যান্ডেট নয়। তবে আমরা একেবারে ঝুলন্ত অবস্থায় রেখে যাবো না। দ্রুত যেটা করা যাবে, মধ্য মেয়াদ লাগবে সেরকম কিছু করব। আমরা একটা পদচিহ্ন রেখে যাব। তিনি বলেন, সামাজিক সুরক্ষা কর্মসূচি আমাদের নজরে আছে, এতে ভাতার পরিমাণ বাড়াব। সেটার অংক বলতে চাই না। ধরুন, আমরা কিছু বাড়াতে গেলে ৩০ হাজার কোটি টাকা লেগে যাবে। কিন্তু আমাদের সীমাহীন সম্পদ নেই। তবে আমরা সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচি, শিক্ষা ও তথ্যপ্রযুক্তিতে বরাদ্দ বাড়াব। এলডিসি উত্তরণে যেতে প্রস্তুতি লাগবে উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, আমরা গ্র্যাজুয়েশন এড়াতে পারব না। যাব না- এটা কিন্তু খুব ভালো অ্যাটিচিউড (মনোভাব) নয়। ভুটান ও আফ্রিকার পাঁচ-ছয়টি দেশ আমাদের দিকে তাকিয়ে আছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ করলে তারা সঙ্গে থাকবে। তাই আমরা প্রস্তুতিটা নেব।

তিনি বলেন, এক্ষেত্রে ব্যবসায়ীরা ভয় পান, গ্র্যাজুয়েশন হলে ধ্বংস হয়ে যেতে হবে, পানিতে পড়ে যাবেন। তাদের ধারণা, তারা প্রতিযোগিতায় যেতে পারবেন না। কিন্তু ব্যবসায়ীদের প্রতিযোগী হতে হবে। এটিই তাদের চ্যালেঞ্জ। গ্র্যাজুয়েশনের পর আমরা আরও তিন বছর সময় পাব নিজেদের প্রমাণ করতে। এই চ্যালেঞ্জটা ব্যবসায়ীদের নিতে হবে। ক্যাশলেস সোসাইটি হচ্ছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করে অর্থ উপদেষ্টা বলেন, ক্যাশলেস সোসাইটি ও ফেসলেস ট্যাক্স সিস্টেম হওয়া জরুরি। আমি মনে করি, ট্যাক্স অফিসারদের মুখোমুখি যাওয়া মোটেই বাঞ্ছনীয় নয়। সামনে গেলেই টেবিলের নিচে হাত চলে যায়। পৃথিবীর কোনো দেশেই ট্যাক্স পেয়াররা ট্যাক্স অফিসে যান না। বাংলাদেশ যদি আইটিতে বা ডিজিটালে (তথ্যপ্রযুক্তির দিকে) না যায়, তাহলে কিন্তু দেশ এগোতে পারবে না।

তিনি বলেন, আমরা কিন্তু গতানুগতিক বাজেটের দিকে যাব না। কারণ আমরা বাইরে থেকে সম্পদ আনব কি না, সেটিও নির্ভর করবে তা শোধ দিতে পারব কি না, তার ওপর। আমরা বাজেটে এ রকম কিছু পদক্ষেপ নেব, পরবর্তী পলিটিক্যাল সরকার এসে যদি পরিবর্তনও করে, তখন যেন আপনারা সে বিষয়ে প্রশ্ন তুলতে পারেন। আর বাজেট বক্তৃতা ৫০ থেকে ৬০ পৃষ্ঠার মধ্যে হবে। সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাজেটে এ বছর একটি বিষয় আনব। গৃহায়ণে যে নারীরা কাজ করেন, তাদের অবদানের স্বীকৃতি দেওয়া দরকার। বাজেটে সরাসরি অবদান না রাখলেও কৃষিখাতে তারা অবদান রাখছেন। সেখানে তারা ২ থেকে ৩ শতাংশ রাখছেন। খুব বেশি না হলেও কিছুতো রাখছেন।

সেজন্য তাদের সম্মানটা যাতে দিতে পারি। অর্থসচিব মো. খায়েরুজ্জামান মজুমদার বলেন, আজকের আলোচনায় মোটাদাগে যেসব বিষয় এসেছে, সেগুলো হলো: বাজেটে মূল্যস্ফীতিকে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিতে হবে। কর্মসংস্থান খাত একটি গুরুত্বপূর্ণ খাত। সেদিকে নজর দিতে হবে। শিক্ষা-স্বাস্থ্য খাতে ক্রমান্বয়ে বাজেট বরাদ্দ কমেছে, তা বাড়াতে হবে। বাজেটের ব্যয় যেন সঠিক খাতে ব্যয় হয়, সে দিকে নজর দিতে হবে। ট্যাক্স, ক্যাশলেস সোসাইটির উদ্যোগ নিতে হবে। এক্ষেত্রে অটোমেশনের গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি আরও বলেন, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী খাতে বরাদ্দ বাড়ানোসহ ভাতার পরিমাণ বাড়াতে হবে। আমরা সেদিকেই এগিয়ে যাচ্ছি। জিডিবির পরিসংখ্যান সঠিকভাবে দিতে হবে। এলডিসি গ্র্যাজুয়েশনের প্রস্তুতি নিতে হবে। শিশুদের সুরক্ষায় বাজেটে বরাদ্দ রাখতে হবে। সবচেয়ে বড় কথা হলো বাজেটের বক্তৃতা ও আকার ছোট করতে হবে।