নিজস্ব প্রতিবেদক : নেতৃত্বের দ্ব›েদ্ব গণ অধিকার পরিষদ দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে আগেই। এবার দুই পক্ষই ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণে পাল্টাপাল্টি কমিটি দিয়েছে। গত বুধবার নুরুল-রাশেদের নেতৃত্বাধীন অংশ দুটি কমিটি ঘোষণা করে। এর তিন দিন পর রেজা-ফারুক অংশ গতকাল শনিবার মহানগর কমিটি গঠন করেছে। এর মধ্য দিয়ে দুই পক্ষ সাংগঠনিকভাবে আরও বিভক্ত হয়ে পড়ল।
সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কার আন্দোলন করে জনপ্রিয়তা পাওয়া নুরুল হক ছাত্র অধিকার পরিষদের ব্যানারে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করে ডাকসুর ভিপি নির্বাচিত হয়েছিলেন। পরবর্তী সময়ে নুরুল হক ও তাঁর সমমনারা ২০২১ সালের অক্টোবরে গণ অধিকার পরিষদ নামে নতুন রাজনৈতিক দল গঠন করেন। রেজা কিবরিয়াকে করা হয় আহŸায়ক। তবে শীর্ষ দুই নেতা রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হককে ঘিরে দলটিতে অস্থিরতা চলছিল অনেক দিন ধরে। গত জুন মাসে সেই অস্থিরতা প্রকট রূপ নেয়। দলের আহŸায়ক ও সদস্যসচিবকে পাল্টাপাল্টি অব্যাহতি, আহŸায়ককে অপসারণের মতো ঘটনায় দলটি কার্যত দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে পড়ে। নুরুল হকের সমর্থকেরা গত ১০ জুলাই দলের জাতীয় কাউন্সিল করেন। তাতে নুরুল হক সভাপতি ও মুহাম্মদ রাশেদ খান সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। রেজা কিবরিয়ার পক্ষ এই কাউন্সিল মানেনি। তাঁরা রেজা কিবরিয়াকে আহŸায়ক ও ফারুক হাসানকে ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব করে আহŸায়ক কমিটি দিয়ে কার্যক্রম চালাচ্ছেন। এরপর থেকে গণ অধিকার পরিষদের দুই পক্ষই বিএনপির নেতৃত্বে চলমান এক দফার যুগপৎ আন্দোলনে আলাদাভাবে কর্মসূচি পালন করছে। পাশাপাশি বিভিন্ন ইস্যুতে দুই পক্ষই নিজেদের মতো করে কর্মসূচি দিচ্ছে।
দলে বিভক্তির পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহŸায়ক কমিটির আহŸায়ক ও সদস্যসচিব রেজা কিবরিয়ার পক্ষ নেন। ফলে কার্যত নুরুল-রাশেদের নেতৃত্বাধীন অংশের ঢাকা মহানগরে কোনো কমিটি ছিল না। কেন্দ্রীয় কাউন্সিলের দুই মাস পরে ১৩ সেপ্টেম্বর নুরুল-রাশেদ অংশ ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ কমিটি ঘোষণা করে। নুরুল-রাশেদ অংশের ঘোষিত গণ অধিকার পরিষদ ঢাকা মহানগর উত্তরের কমিটির সদস্যসংখ্যা ৯১। এতে মিজানুর রহমান ভ‚ঁইয়াকে সভাপতি এবং আবদুর রহিমকে সাধারণ সম্পাদক করা হয়। আর ঢাকা মহানগর দক্ষিণের কমিটি ১০১ সদস্যের। ওই কমিটির সভাপতি মো. নাজিম উদ্দিন এবং সম্পাদক নুরুল করিম। অন্যদিকে নুরুল-রাশেদ কমিটি ঘোষণার তিন দিন পর ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করেছে রেজা-ফারুক অংশ। গতকাল শনিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় এই আহŸায়ক কমিটি ঘোষণা করা হয়। রেজা-ফারুক অংশ ঘোষিত কমিটিতে উত্তরের আহŸায়ক কর্নেল (অব.) মিয়া মশিউজ্জামান ও সদস্যসচিব মোস্তাক শিশির এবং দক্ষিণের আহŸায়ক জীসান মহসীন ও সদস্যসচিব ইমাম উদ্দিন।
পাল্টাপাল্টি কমিটি কেন? গণ অধিকার পরিষদের (নুরুল-রাশেদ) উচ্চতর পরিষদের সদস্য আবু হানিফ প্রথম আলোকে বলেন, ‘তারা (রেজা–ফারুকের নেতৃত্বাধীন অংশ) দেখাদেখি কমিটি দিয়েছে। তাদের সাংগঠনিক সক্ষমতাও নেই। আমরা ৯১ ও ১০১ সদস্যের কমিটি দিয়েছি। তারা দিয়েছে দুই সদস্যের আহŸায়ক কমিটি। এতেই সাংগঠনিক দুর্বলতা স্পষ্ট।’ তবে গণ অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত সদস্যসচিব ফারুক হাসান প্রথম আলোকে বলেন, ‘আমরা দলের গঠনতন্ত্র অনুযায়ী পরিচালিত হচ্ছি। আগের মহানগর কমিটির অনেকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। তাই গঠনতন্ত্র মেনেই নতুন কমিটি করা হয়েছে। পাল্টাপাল্টির কোনো ব্যাপারই নেই।’ তিনি বলেন, ‘আমরা ছাড়া আর কোনো গণ অধিকার পরিষদ আসলে বৈধ না।’ তবে দুই অংশের নেতাদেরও অনেকে বলছেন, রেজা কিবরিয়া ও নুরুল হকের বিরোধ থেকে গণ অধিকার পরিষদের দুটি পক্ষ মুখোমুখি অবস্থানে দাঁড়িয়েছে। দুই পক্ষের পাল্টাপাল্টি কর্মকাÐে দলটি সংকটে পড়েছে।
গণ অধিকার পরিষদে ঢাকা মহানগরে দুই অংশের পাল্টাপাল্টি কমিটি
জনপ্রিয় সংবাদ























