ঢাকা ০৯:৫৯ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ অগাস্ট ২০২৫

গণিতের পাঠ জীবনের জন্য প্রাসঙ্গিক

  • আপডেট সময় : ১০:৫১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অগাস্ট ২০২১
  • ১২৫ বার পড়া হয়েছে

মোস্তফা মোরশেদ : করোনাভাইরাসের এ অতিমারিতে শিক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণের উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তারাও ভয়ংকর ক্ষতির মুখোমুখি। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত কমে গিয়ে লোকসানের মুখে পরিবহন খাতও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া শিক্ষাজীবন।

গত ১৬ জুলাই ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এ প্রকাশিত কলামে কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছিলাম। সমাধান হিসেবে বলেছিলাম নি¤œ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শুধু গণিতের পূর্ণাঙ্গ একটি পাঠ বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণের কৌশল হতে পারে। শুধু করোনাকালের শিক্ষা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য নয়; বরং গণিত সবার কাছে সবকিছুতে সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক।

সংখ্যা এ মহাবিশ্বকে বর্ণনা করে আর গণিত বর্ণনা করে সংখ্যাকে। গণিত শুধু সংখ্যাই নয়; বরং গণিত হলো মহাজগতের ভাষা। গণিত আছে বলেই আমরা জগতের অনেক কিছুর ব্যাখ্যা জানতে পারি। যদি ১০+১০=২০ লেখা হয় তবে জানতে হবে এগুলো কেবল কিছু সংখ্যাই নয়; বরং এভাবে বলা যেতে পারে ১০ জন নারীর সঙ্গে সমান ১০ জন পুরুষের যে ঐক্য, এ সমীকরণ দ্বারা সেটিই বুঝাচ্ছে।

গণিতের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক তা সর্বদা একই ফল/উত্তর নিয়ে আসবে। সে বাস্তবতায় মানুষের জীবনের সব স্তরেই গণিত উপস্থিত। বিকল্প যা-ই থাকুক জীবনের সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত একটিই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় বা অনেক বিকল্প থাকতে পারে। উদাহরণ দেই। আপনি কাঁচামরিচ কিনতে বাজারে গেলেন। অনেক দোকানি কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন। কার কাছ থেকে কিনবেন? আপনার আর্থিক সামর্থ্য ও কাঁচামরিচের গুণগত মান বিবেচনায় কার কাছ থেকে কিনবেন সে সিদ্ধান্ত কিন্তু একটিই। আপনার কাছে বিভিন্ন অপশন থাকতে পারে। তবে কেনার সিদ্ধান্ত একটিই। এভাবে জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিকতা ও সামর্থ্য বিবেচনায় সব সিদ্ধান্ত এক ও অদ্বিতীয়। রসিকতা করে যোগ-বিয়োগ ও গুণ-ভাগের হিসাবে এভাবেও বলা হয়, সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে সফলতাকে যোগ, হতাশাকে বিয়োগ, খুশিকে গুণ এবং দুঃখকে ভাগ করে নেওয়া শিখে নিতে হয়। কথায় আছে, ‘খরভব রং ধ সধঃয বয়ঁধঃরড়হ. ওহ ড়ৎফবৎ ঃড় মধরহ ঃযব সড়ংঃ, ুড়ঁ যধাব ঃড় শহড়ি যড়ি ঃড় পড়হাবৎঃ হবমধঃরাবং রহঃড় ঢ়ড়ংরঃরাবং।’

ইতিহাস বলছে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০০-তে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক)-এর সুমেরীয় সভ্যতায় দৈনন্দিন প্রয়োজন ও ক্রয়-বিক্রয়ের চাহিদা-জোগান থেকে গণিতের পাঠ শুরু হয়। তারা ‘টোকেন’ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, পণ্যের হিসাব, পশুপাখি গণনার কাজ শুরু করে। সে সভ্যতার পতনের পর মিসরের জ্ঞানপিপাসুদের কাছে গণিত এক আবশ্যক বিষয় হয়ে ওঠে। কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের মিশেলে গণিতকে তারা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়, যা মিসরিয়ান হায়ারোগ্লিপিতেও বর্ণিত হয়েছে। সুবিশাল পিরামিড তৈরিতে গণিতের অবদান ছিল। তারও প্রায় কয়েক হাজার বছর পর পিথাগোরাসের হাত ধরে গ্রিসে গণিতের আবির্ভাব ঘটে। সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ, লম্ব ও ভূমির যোগসূত্র স্থাপন করে তিনি এক যুগান্তকারী সূত্র প্রণয়ন করেন। পিথাগোরাসের মৃত্যুর আনুমানিক ২০০ বছর পর গ্রিক বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিস দেখান যে কোনও বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গ ও পাইয়ের গুণফলের সমান। পাই-এর মান (সাধারণ হিসাবে ৩.১৪) গণিতের আরেক রহস্য। এর মান হলো ২২-কে ৭ দ্বারা ভাগ করলে যা আসে সেটি। রহস্যের জায়গা হচ্ছে, এ ভাগফলের মান দশমিকের পর ১০০০তম সংখ্যা পর্যন্ত গিয়েও ভাগফল মিলে না। পাই-এর গুরুত্ব বিবেচনায় পাই দিবসও উদযাপন করা হয়। পাই-এর প্রথম তিন সংখ্যা ৩, ১ ও ৪-এর আলোকে বছরের তিন নম্বর মাস অর্থাৎ, মার্চ মাসের ১৪ তারিখ পাই দিবস উদযাপন করা হয়।
তবে গণিতের রহস্যের জায়গা অন্য খানে। পৃথিবীর যত বড় সমকোণী ত্রিভুজ আঁকা হোক বা যত ছোট বৃত্তই হোক সর্বদা একই নিয়মের জালে বাঁধা পড়বে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালে গ্রিসে গণিত চর্চা শুরুর সময় থেকে পূর্ণাঙ্গ ও সংগঠিত বিষয় হিসেবে আধুনিক গণিত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দার্শনিক ও ধর্মীয় আলোচনার সূত্র ধরে জন্ম নেওয়া গণিতের সঙ্গে বর্তমান একুশ শতকে এসে পরিসংখ্যানও যুক্ত হয়েছে।
তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পৃথিবীর সর্বত্র গণিত হয়ে ওঠে সবকিছু জয় করার মূলমন্ত্র। ধারণা করা হয়, গণিতের অগাধ জ্ঞানের পথ ধরেই ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে ‘স্পুটনিক’ প্রেরণ করে। মার্কিন মুলুক আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে মহাকাশ বিজয়ের এ ঘটনা মার্কিনিদের গণিত নিয়ে নতুন যাত্রা শুরুর উদ্দীপনা জোগায়। সে সময় তারা গণিত শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্যা সৃষ্টি ও সমাধান খোঁজার মাধ্যমে শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের গণিতের পাঠ চলতে থাকে।
শুধু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নয়, পৃথিবীজুড়ে এক আতঙ্কের নাম গণিত। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত; এক) যারা ক্লাসে গণিত বুঝতে পারে, সংখ্যার হিসাবে যার পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ; দুই) অবশিষ্ট সবাই; অর্থাৎ, বাকি ৯৮ শতাংশ। অথচ গণিত ছাড়া সব অচল। খুব শক্ত করে বললে, যে গণিত জানে সে আসলে সব বিষয় জানে বলেই ধরে নেওয়া হয়। যিনি গণিত জানেন তিনি ভালো রান্না করতে জানেন, তার অফিসে তত দক্ষতা রয়েছে, তিনি তত ভালো গাড়ি চালাতে পারেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে, যারা ডাক্তারি বিদ্যা পড়বে তাদের গণিত কম জানলেও হয়। কিন্তু যিনি গণিতে পারদর্শী তার কাছে একজন রোগীর রোগ নির্ণয় ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য একটি সুন্দর সমন্বয় প্রয়োজন, যা গণিত থেকেই পাওয়া সম্ভব।
গণিত আমাদের চিন্তার ক্ষেত্র প্রসারিত করে এবং একই সঙ্গে চিন্তায় নতুন মাত্রা যোগ করে। আইনস্টাইন যেভাবে বলেছেন, ‘গধঃযবসধঃরপং রং, রহ রঃং ধিু, ঃযব ঢ়ড়বঃৎু ড়ভ ষড়মরপধষ রফবধং’। একজন যৌক্তিক মানুষ হিসেবে সমাজে টিকে যেতে হলে গণিতে পারদর্শিতার বিকল্প নেই।
আমাদের দেশে গণিত শিক্ষায় এখনও ভয় আর অপরিপক্বতা রয়েছে। জরিপ করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনে গণিতের ভয়ে ভীত ছিলেন। এর দায় শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তার অভিভাবক ও শিক্ষকদের। শিক্ষার্থী নিজে থেকে কখনও আগ্রহী হয়নি। শিক্ষক মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে সংখ্যার ক্রম শিখানোর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা শিখেনি। যখন বুঝতে পেরেছে যে শিক্ষক গণিত শিখাচ্ছেন তখন ঘুড়ি ওড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আবার এও দেখা যায়, তারা নিজেদের নিভৃত করে রেখেছে। এক রাজার যোগ শিখার গল্পটি স্মরণ করা যেতে পারে। রাজা তার প্রজাদের ডেকে বললেন, দুইয়ে দুইয়ে কীভাবে চার হয় বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি তার রাজ্য দিয়ে দেবেন। মন্ত্রী মশাই রাজার কানে কানে বললেন, এটা তো খুব সহজ; যে কেউ বলে দিতে পারবে। রাজা তাৎক্ষণিক বললেন, আমি যদি না বুঝি তাহলে কে বোঝাতে পারবে? কেউ না বুঝতে চাইলে কি-ই বা করার রয়েছে।
গণিতের পাঠকে কীভাবে আকর্ষণীয় করা যায় সে নিয়ে অনেক কৌশল রয়েছে। প্রায়োগিক জায়গা থেকে দু-একটি উল্লেখ করছি। গণিত ভালো করে শিখতে হলে অনেক বেশি ভালো লাগা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে তার প্রথম গণিত শিক্ষকের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, যিনি জীবনের শুরু থেকেই ভালো লাগা তৈরি করতে সাহায্য করবেন। অনেক ক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ের মানও খারাপ। তবে শুধু শুধু পাঠ্য বইয়ের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। বানরের তৈলাক্ত লাঠি বেয়ে ওপরে ওঠার বিষয়টি যতই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে স্মরণ করা হোক, এখান থেকে অনেক কিছু শিখার ছিল। গণিতে পারদর্শী হতে হলে যেকোনও সমাধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায়ে উত্তর বের করার কৌশল রপ্ত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যে কোনও গাণিতিক সমস্যাকে একটি অজানা সংখ্যা ধরে সমাধান করা যায়। এছাড়া, যিনি যত দ্রুত গণিতের বিভিন্ন সূত্র, কৌশল ও উদাহরণ প্রয়োগ করতে পারবেন তিনি গণিতে তত ভালো করবেন। দ্রুততম সময়ে গণিতের সমাধান বের করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।
গণিতে কোনও অসামঞ্জস্যতা নেই। গণিত সৃষ্টির শুরুর দিকে শুধু পজিটিভ সংখ্যা বিবেচনা করা হতো। পরবর্তীতে অসীম ও রৎৎধঃরড়হধষ সংখ্যার ধারণা গণিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। বারটান্ড রাসেলের প্যারাডক্সসহ আরও অনেক প্যারাডক্সের ভূমিকা স্মরণ করা যায়। গণিতের পারদর্শিতার সঙ্গে তথাকথিত ‘ষবভঃ নৎধরহ’ ও ‘ৎরমযঃ নৎধরহ’ ধারণার কার্যত কোনও সংযোগ নেই। বলা হয়, যারা ষবভঃ নৎধরহ দ্বারা চালিত হন তারা অনেক বেশি যৌক্তিক আচরণ করেন। পক্ষান্তরে, যারা ৎরমযঃ নৎধরহ দ্বারা পরিচালিত তারা সৃজনশীল হয়ে থাকেন। ফলে যাদের ষবভঃ নৎধরহ বেশি কাজ করে তাদের গণিতে পারদর্শী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়; যা বিজ্ঞানসম্মত নয়।

তবে এশিয়ার অধিবাসী হওয়ায় গণিত নিয়ে আমাদের আশাবাদী হওয়াই যায়। ঞৎবহফং রহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গধঃযবসধঃরপং ধহফ ঝপরবহপব ঝঃঁফু (ঞওগঝঝ)-এর সমীক্ষা বলছে, এশিয়ার দেশগুলো, যেমন- চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান, হংকং কিংবা দক্ষিণ কোরিয়াই বিজ্ঞান ও গণিতে সাফল্যের তালিকার প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। এরমধ্যে সবার থেকে এগিয়ে আছে চীন। চীনের প্রথম সম্রাটের একজন দেবতা গণিত তৈরি করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে চীনের সাফল্য উঠে আসে। ১৯৫৯ সালে রোমানিয়ায় প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে চীন গণিত অলিম্পিয়াডে যাত্রা শুরু করে। এ বছর ৬২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড পর্যন্ত ৩৬ বার অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ ১৬৮টি স্বর্ণ পদক লাভ করেছে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৪ সালে যুক্ত হয়ে ৪৭ বারের অংশগ্রহণে ১৩৭টি, রাশিয়ান ফেডারেশন ১৯৯২ সাল থেকে ১০৬টি, দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৮৮ সাল থেকে ৮৬টি, রোমানিয়া ১৯৫৯ সাল থেকে ৭৮টি, ভিয়েতনাম ১৯৭৪ থেকে ৬৫টি, যুক্তরাজ্য ১৯৬৭ সাল থেকে ৫১টি, জার্মানি ১৯৭৭ সাল থেকে ৫৩টি ও জাপান ১৯৯০ সাল থেকে ৪৩টি স্বর্ণপদক লাভ করেছে।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের সূচনা হয় ২০০৫ সালে। এ পর্যন্ত ১টি স্বর্ণ, ৭টি সিলভার, ৩১টি ব্রোঞ্জ ও ৩৩টি সম্মানসূচক স্বীকৃত লাভ করেছে বাংলাদেশ। ভারত ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩টি স্বর্ণপদক পেয়েছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত এবারের ৬২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ৩টি ব্রোঞ্জপদক ও ২টি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ৬৮ নম্বর পেয়ে বাংলাদেশ ১০৭টি দেশের মধ্যে ৪৩তম স্থান অধিকার করেছে। এবারের প্রতিযোগিতায় ভারত ২৬তম, শ্রীলঙ্কা ৮১তম, নেপাল ৯১তম ও পাকিস্তান ১০৩তম স্থান অধিকার করেছে। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে আমাদের দেশ ভালো করেছে বলেই প্রতীয়মান। গণিতের যুগোপযোগী সহজ-সরল ও সাবলীল পাঠ আগামীর ‘উন্নত বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ঘরে ঘরে গণিত হয়ে ওঠুক আনন্দের উপকরণ।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতি গবেষক

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গণিতের পাঠ জীবনের জন্য প্রাসঙ্গিক

আপডেট সময় : ১০:৫১:৪৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৪ অগাস্ট ২০২১

মোস্তফা মোরশেদ : করোনাভাইরাসের এ অতিমারিতে শিক্ষা খাত সবচেয়ে বেশি বিপর্যয়ের সম্মুখীন। শিক্ষার্থীদের লেখাপড়ার পাশাপাশি শিক্ষা উপকরণের উৎপাদন ও বিক্রির সঙ্গে যারা জড়িত তারাও ভয়ংকর ক্ষতির মুখোমুখি। শিক্ষার্থীদের যাতায়াত কমে গিয়ে লোকসানের মুখে পরিবহন খাতও। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হলো শিক্ষার্থীদের জীবন থেকে হারিয়ে যাওয়া শিক্ষাজীবন।

গত ১৬ জুলাই ‘বাংলা ট্রিবিউন’ এ প্রকাশিত কলামে কীভাবে এ ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়া যাবে সে বিষয়ে আলোকপাত করেছিলাম। সমাধান হিসেবে বলেছিলাম নি¤œ মাধ্যমিক পর্যায় পর্যন্ত শুধু গণিতের পূর্ণাঙ্গ একটি পাঠ বিদ্যমান সংকট থেকে উত্তরণের কৌশল হতে পারে। শুধু করোনাকালের শিক্ষা হতে মুক্তি পাওয়ার জন্য নয়; বরং গণিত সবার কাছে সবকিছুতে সব সময়ের জন্য প্রাসঙ্গিক।

সংখ্যা এ মহাবিশ্বকে বর্ণনা করে আর গণিত বর্ণনা করে সংখ্যাকে। গণিত শুধু সংখ্যাই নয়; বরং গণিত হলো মহাজগতের ভাষা। গণিত আছে বলেই আমরা জগতের অনেক কিছুর ব্যাখ্যা জানতে পারি। যদি ১০+১০=২০ লেখা হয় তবে জানতে হবে এগুলো কেবল কিছু সংখ্যাই নয়; বরং এভাবে বলা যেতে পারে ১০ জন নারীর সঙ্গে সমান ১০ জন পুরুষের যে ঐক্য, এ সমীকরণ দ্বারা সেটিই বুঝাচ্ছে।

গণিতের সবচেয়ে শক্তিশালী দিক হলো যেভাবেই বিশ্লেষণ করা হোক তা সর্বদা একই ফল/উত্তর নিয়ে আসবে। সে বাস্তবতায় মানুষের জীবনের সব স্তরেই গণিত উপস্থিত। বিকল্প যা-ই থাকুক জীবনের সব ক্ষেত্রে সিদ্ধান্ত একটিই। তবে পরিস্থিতি বিবেচনায় দ্বিতীয়, তৃতীয় বা অনেক বিকল্প থাকতে পারে। উদাহরণ দেই। আপনি কাঁচামরিচ কিনতে বাজারে গেলেন। অনেক দোকানি কাঁচামরিচ বিক্রি করছেন। কার কাছ থেকে কিনবেন? আপনার আর্থিক সামর্থ্য ও কাঁচামরিচের গুণগত মান বিবেচনায় কার কাছ থেকে কিনবেন সে সিদ্ধান্ত কিন্তু একটিই। আপনার কাছে বিভিন্ন অপশন থাকতে পারে। তবে কেনার সিদ্ধান্ত একটিই। এভাবে জীবনের সব ক্ষেত্রে পরিস্থিতি, পারিপার্শ্বিকতা ও সামর্থ্য বিবেচনায় সব সিদ্ধান্ত এক ও অদ্বিতীয়। রসিকতা করে যোগ-বিয়োগ ও গুণ-ভাগের হিসাবে এভাবেও বলা হয়, সামাজিক জীব হিসেবে মানুষের জীবনে সফলতাকে যোগ, হতাশাকে বিয়োগ, খুশিকে গুণ এবং দুঃখকে ভাগ করে নেওয়া শিখে নিতে হয়। কথায় আছে, ‘খরভব রং ধ সধঃয বয়ঁধঃরড়হ. ওহ ড়ৎফবৎ ঃড় মধরহ ঃযব সড়ংঃ, ুড়ঁ যধাব ঃড় শহড়ি যড়ি ঃড় পড়হাবৎঃ হবমধঃরাবং রহঃড় ঢ়ড়ংরঃরাবং।’

ইতিহাস বলছে, খ্রিষ্টপূর্ব ৫৫০০-তে মেসোপটেমিয়া (বর্তমান ইরাক)-এর সুমেরীয় সভ্যতায় দৈনন্দিন প্রয়োজন ও ক্রয়-বিক্রয়ের চাহিদা-জোগান থেকে গণিতের পাঠ শুরু হয়। তারা ‘টোকেন’ ব্যবহারের মাধ্যমে রাজস্ব ব্যবস্থাপনা, পণ্যের হিসাব, পশুপাখি গণনার কাজ শুরু করে। সে সভ্যতার পতনের পর মিসরের জ্ঞানপিপাসুদের কাছে গণিত এক আবশ্যক বিষয় হয়ে ওঠে। কল্পনার সঙ্গে বাস্তবের মিশেলে গণিতকে তারা অনন্য উচ্চতায় নিয়ে যায়, যা মিসরিয়ান হায়ারোগ্লিপিতেও বর্ণিত হয়েছে। সুবিশাল পিরামিড তৈরিতে গণিতের অবদান ছিল। তারও প্রায় কয়েক হাজার বছর পর পিথাগোরাসের হাত ধরে গ্রিসে গণিতের আবির্ভাব ঘটে। সমকোণী ত্রিভুজের অতিভুজ, লম্ব ও ভূমির যোগসূত্র স্থাপন করে তিনি এক যুগান্তকারী সূত্র প্রণয়ন করেন। পিথাগোরাসের মৃত্যুর আনুমানিক ২০০ বছর পর গ্রিক বিজ্ঞানী ও গণিতজ্ঞ আর্কিমিডিস দেখান যে কোনও বৃত্তের ক্ষেত্রফল তার ব্যাসার্ধের বর্গ ও পাইয়ের গুণফলের সমান। পাই-এর মান (সাধারণ হিসাবে ৩.১৪) গণিতের আরেক রহস্য। এর মান হলো ২২-কে ৭ দ্বারা ভাগ করলে যা আসে সেটি। রহস্যের জায়গা হচ্ছে, এ ভাগফলের মান দশমিকের পর ১০০০তম সংখ্যা পর্যন্ত গিয়েও ভাগফল মিলে না। পাই-এর গুরুত্ব বিবেচনায় পাই দিবসও উদযাপন করা হয়। পাই-এর প্রথম তিন সংখ্যা ৩, ১ ও ৪-এর আলোকে বছরের তিন নম্বর মাস অর্থাৎ, মার্চ মাসের ১৪ তারিখ পাই দিবস উদযাপন করা হয়।
তবে গণিতের রহস্যের জায়গা অন্য খানে। পৃথিবীর যত বড় সমকোণী ত্রিভুজ আঁকা হোক বা যত ছোট বৃত্তই হোক সর্বদা একই নিয়মের জালে বাঁধা পড়বে। খ্রিষ্টপূর্ব ২৫০০ সালে গ্রিসে গণিত চর্চা শুরুর সময় থেকে পূর্ণাঙ্গ ও সংগঠিত বিষয় হিসেবে আধুনিক গণিত প্রতিষ্ঠা লাভ করে। দার্শনিক ও ধর্মীয় আলোচনার সূত্র ধরে জন্ম নেওয়া গণিতের সঙ্গে বর্তমান একুশ শতকে এসে পরিসংখ্যানও যুক্ত হয়েছে।
তারপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি। পৃথিবীর সর্বত্র গণিত হয়ে ওঠে সবকিছু জয় করার মূলমন্ত্র। ধারণা করা হয়, গণিতের অগাধ জ্ঞানের পথ ধরেই ১৯৫৭ সালে তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়ন মহাকাশে ‘স্পুটনিক’ প্রেরণ করে। মার্কিন মুলুক আর সোভিয়েত ইউনিয়নের মনস্তাত্ত্বিক যুদ্ধের পরিণতি হিসেবে মহাকাশ বিজয়ের এ ঘটনা মার্কিনিদের গণিত নিয়ে নতুন যাত্রা শুরুর উদ্দীপনা জোগায়। সে সময় তারা গণিত শিক্ষায় ব্যাপক পরিবর্তন নিয়ে আসে। সমস্যা সৃষ্টি ও সমাধান খোঁজার মাধ্যমে শিক্ষাজীবনের শুরু থেকে শিক্ষার্থীদের গণিতের পাঠ চলতে থাকে।
শুধু আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থায় নয়, পৃথিবীজুড়ে এক আতঙ্কের নাম গণিত। বলা হয়ে থাকে, পৃথিবীর মানুষ দু’ভাগে বিভক্ত; এক) যারা ক্লাসে গণিত বুঝতে পারে, সংখ্যার হিসাবে যার পরিমাণ মাত্র ২ শতাংশ; দুই) অবশিষ্ট সবাই; অর্থাৎ, বাকি ৯৮ শতাংশ। অথচ গণিত ছাড়া সব অচল। খুব শক্ত করে বললে, যে গণিত জানে সে আসলে সব বিষয় জানে বলেই ধরে নেওয়া হয়। যিনি গণিত জানেন তিনি ভালো রান্না করতে জানেন, তার অফিসে তত দক্ষতা রয়েছে, তিনি তত ভালো গাড়ি চালাতে পারেন, ইত্যাদি, ইত্যাদি। আমাদের দেশে প্রচলিত রয়েছে, যারা ডাক্তারি বিদ্যা পড়বে তাদের গণিত কম জানলেও হয়। কিন্তু যিনি গণিতে পারদর্শী তার কাছে একজন রোগীর রোগ নির্ণয় ও সে অনুযায়ী ব্যবস্থাপত্র দেওয়ার জন্য একটি সুন্দর সমন্বয় প্রয়োজন, যা গণিত থেকেই পাওয়া সম্ভব।
গণিত আমাদের চিন্তার ক্ষেত্র প্রসারিত করে এবং একই সঙ্গে চিন্তায় নতুন মাত্রা যোগ করে। আইনস্টাইন যেভাবে বলেছেন, ‘গধঃযবসধঃরপং রং, রহ রঃং ধিু, ঃযব ঢ়ড়বঃৎু ড়ভ ষড়মরপধষ রফবধং’। একজন যৌক্তিক মানুষ হিসেবে সমাজে টিকে যেতে হলে গণিতে পারদর্শিতার বিকল্প নেই।
আমাদের দেশে গণিত শিক্ষায় এখনও ভয় আর অপরিপক্বতা রয়েছে। জরিপ করলে দেখা যাবে, অধিকাংশ শিক্ষার্থী তার শিক্ষাজীবনে গণিতের ভয়ে ভীত ছিলেন। এর দায় শিক্ষার্থীর পাশাপাশি তার অভিভাবক ও শিক্ষকদের। শিক্ষার্থী নিজে থেকে কখনও আগ্রহী হয়নি। শিক্ষক মাঠে ঘুড়ি উড়িয়ে সংখ্যার ক্রম শিখানোর চেষ্টা করলেও শিক্ষার্থীরা শিখেনি। যখন বুঝতে পেরেছে যে শিক্ষক গণিত শিখাচ্ছেন তখন ঘুড়ি ওড়ানোর আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছে। আবার এও দেখা যায়, তারা নিজেদের নিভৃত করে রেখেছে। এক রাজার যোগ শিখার গল্পটি স্মরণ করা যেতে পারে। রাজা তার প্রজাদের ডেকে বললেন, দুইয়ে দুইয়ে কীভাবে চার হয় বুঝিয়ে দিতে পারলে তিনি তার রাজ্য দিয়ে দেবেন। মন্ত্রী মশাই রাজার কানে কানে বললেন, এটা তো খুব সহজ; যে কেউ বলে দিতে পারবে। রাজা তাৎক্ষণিক বললেন, আমি যদি না বুঝি তাহলে কে বোঝাতে পারবে? কেউ না বুঝতে চাইলে কি-ই বা করার রয়েছে।
গণিতের পাঠকে কীভাবে আকর্ষণীয় করা যায় সে নিয়ে অনেক কৌশল রয়েছে। প্রায়োগিক জায়গা থেকে দু-একটি উল্লেখ করছি। গণিত ভালো করে শিখতে হলে অনেক বেশি ভালো লাগা তৈরি করতে হবে। এ ক্ষেত্রে একজন শিক্ষার্থীর জীবনে তার প্রথম গণিত শিক্ষকের গুরুত্ব সবচেয়ে বেশি, যিনি জীবনের শুরু থেকেই ভালো লাগা তৈরি করতে সাহায্য করবেন। অনেক ক্ষেত্রে পাঠ্য বইয়ের মানও খারাপ। তবে শুধু শুধু পাঠ্য বইয়ের দোষ দেওয়ার সুযোগ নেই। বানরের তৈলাক্ত লাঠি বেয়ে ওপরে ওঠার বিষয়টি যতই তাচ্ছিল্যের সঙ্গে স্মরণ করা হোক, এখান থেকে অনেক কিছু শিখার ছিল। গণিতে পারদর্শী হতে হলে যেকোনও সমাধানের ক্ষেত্রে বিভিন্ন উপায়ে উত্তর বের করার কৌশল রপ্ত করতে হয়। উদাহরণস্বরূপ, যে কোনও গাণিতিক সমস্যাকে একটি অজানা সংখ্যা ধরে সমাধান করা যায়। এছাড়া, যিনি যত দ্রুত গণিতের বিভিন্ন সূত্র, কৌশল ও উদাহরণ প্রয়োগ করতে পারবেন তিনি গণিতে তত ভালো করবেন। দ্রুততম সময়ে গণিতের সমাধান বের করার মাধ্যমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বাড়ানো সম্ভব।
গণিতে কোনও অসামঞ্জস্যতা নেই। গণিত সৃষ্টির শুরুর দিকে শুধু পজিটিভ সংখ্যা বিবেচনা করা হতো। পরবর্তীতে অসীম ও রৎৎধঃরড়হধষ সংখ্যার ধারণা গণিতে নতুন মাত্রা যোগ করে। বারটান্ড রাসেলের প্যারাডক্সসহ আরও অনেক প্যারাডক্সের ভূমিকা স্মরণ করা যায়। গণিতের পারদর্শিতার সঙ্গে তথাকথিত ‘ষবভঃ নৎধরহ’ ও ‘ৎরমযঃ নৎধরহ’ ধারণার কার্যত কোনও সংযোগ নেই। বলা হয়, যারা ষবভঃ নৎধরহ দ্বারা চালিত হন তারা অনেক বেশি যৌক্তিক আচরণ করেন। পক্ষান্তরে, যারা ৎরমযঃ নৎধরহ দ্বারা পরিচালিত তারা সৃজনশীল হয়ে থাকেন। ফলে যাদের ষবভঃ নৎধরহ বেশি কাজ করে তাদের গণিতে পারদর্শী হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়; যা বিজ্ঞানসম্মত নয়।

তবে এশিয়ার অধিবাসী হওয়ায় গণিত নিয়ে আমাদের আশাবাদী হওয়াই যায়। ঞৎবহফং রহ ওহঃবৎহধঃরড়হধষ গধঃযবসধঃরপং ধহফ ঝপরবহপব ঝঃঁফু (ঞওগঝঝ)-এর সমীক্ষা বলছে, এশিয়ার দেশগুলো, যেমন- চীন, সিঙ্গাপুর, জাপান, তাইওয়ান, হংকং কিংবা দক্ষিণ কোরিয়াই বিজ্ঞান ও গণিতে সাফল্যের তালিকার প্রথম সারিতে অবস্থান করছে। এরমধ্যে সবার থেকে এগিয়ে আছে চীন। চীনের প্রথম সম্রাটের একজন দেবতা গণিত তৈরি করেছিলেন বলে জনশ্রুতি আছে। আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডের ফলাফল বিশ্লেষণ করলে চীনের সাফল্য উঠে আসে। ১৯৫৯ সালে রোমানিয়ায় প্রথম গণিত অলিম্পিয়াড শুরু হয়। ১৯৮৫ সালে চীন গণিত অলিম্পিয়াডে যাত্রা শুরু করে। এ বছর ৬২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াড পর্যন্ত ৩৬ বার অংশগ্রহণ করে সর্বোচ্চ ১৬৮টি স্বর্ণ পদক লাভ করেছে তারা। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ১৯৭৪ সালে যুক্ত হয়ে ৪৭ বারের অংশগ্রহণে ১৩৭টি, রাশিয়ান ফেডারেশন ১৯৯২ সাল থেকে ১০৬টি, দক্ষিণ কোরিয়া ১৯৮৮ সাল থেকে ৮৬টি, রোমানিয়া ১৯৫৯ সাল থেকে ৭৮টি, ভিয়েতনাম ১৯৭৪ থেকে ৬৫টি, যুক্তরাজ্য ১৯৬৭ সাল থেকে ৫১টি, জার্মানি ১৯৭৭ সাল থেকে ৫৩টি ও জাপান ১৯৯০ সাল থেকে ৪৩টি স্বর্ণপদক লাভ করেছে।
আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে বাংলাদেশের সূচনা হয় ২০০৫ সালে। এ পর্যন্ত ১টি স্বর্ণ, ৭টি সিলভার, ৩১টি ব্রোঞ্জ ও ৩৩টি সম্মানসূচক স্বীকৃত লাভ করেছে বাংলাদেশ। ভারত ১৯৮৯ সাল থেকে এ পর্যন্ত ১৩টি স্বর্ণপদক পেয়েছে। রাশিয়ার সেন্ট পিটার্সবার্গে অনুষ্ঠিত এবারের ৬২তম আন্তর্জাতিক গণিত অলিম্পিয়াডে অংশ নিয়ে বাংলাদেশ ৩টি ব্রোঞ্জপদক ও ২টি সম্মানজনক স্বীকৃতি পেয়েছে এবং ৬৮ নম্বর পেয়ে বাংলাদেশ ১০৭টি দেশের মধ্যে ৪৩তম স্থান অধিকার করেছে। এবারের প্রতিযোগিতায় ভারত ২৬তম, শ্রীলঙ্কা ৮১তম, নেপাল ৯১তম ও পাকিস্তান ১০৩তম স্থান অধিকার করেছে। অংশগ্রহণকারী দেশসমূহের সঙ্গে তুলনামূলক বিচারে আমাদের দেশ ভালো করেছে বলেই প্রতীয়মান। গণিতের যুগোপযোগী সহজ-সরল ও সাবলীল পাঠ আগামীর ‘উন্নত বাংলাদেশ’ বিনির্মাণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে ঘরে ঘরে গণিত হয়ে ওঠুক আনন্দের উপকরণ।
লেখক: উন্নয়ন অর্থনীতি গবেষক