ঢাকা ০৫:০৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৪ মার্চ ২০২৫

গণপরিবহনে নারীর আসন সংখ্যা বাড়ানো দরকার

  • আপডেট সময় : ১১:১৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১
  • ১৩৩ বার পড়া হয়েছে

নারী ও শিশু ডেস্ক : ঢাকায় বসবাসরতদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। এছাড়া বড় একটি অংশ রয়েছে নি¤œমধ্যবিত্ত এবং গরীব। এক স্থান থেকে অন্যত্র যাতায়াতে যাদের মূল ভরসা গণপরিবহন। কিন্তু সেই গণপরিবহনই প্রয়োজনের তুলনায় কম। যেখানে মানুষকে পড়তে হয় সমস্যায়। তার মধ্যে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় নারীদের। চাকুরিজীবি নারীরাই গণপরিবহনে বেশি সমস্যার সমুখীন হন। এর মূল কারণ গণপরিবহনের অপ্রতুলতা। তারপরও সেখানে রয়েছে আরেক সমস্যা, নারীর জন্য নির্ধারিত আসনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় একদমই অপ্রতুল। এ সব সমস্যাকে সাথী করেই ঢাকা শহরে চলাচল করতে হয় নারীদের। গণপরিবহন নিয়ে কথা হচ্ছিলো তেত্রিশ বছর বয়সী নারী নাসিমার (ছদ্ম)। নাসিমা থাকেন ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বকরে। সপ্তাহের ছয় দিনই মিরপুর-১৪ থেকে মহাখালী অফিসে যাতায়াত করতে নাসিমাকে। খুব বেশি বেতন না পাওয়ায় অফিসে যাওয়ার জন্য গণপরিবহনই তার মূল ভরসা। কেননা সিএনজি কিংবা ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া এত বেশি যা মিটিয়ে তার পক্ষে অফিসে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। দূরত্ব খুব বেশী না হলেও প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে। আর এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে এই দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুন। এক থেকে দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় উঠতে পারেনা কোন বাসে। আর সকালে তো সিএনজি-চালিত অটো-রিকশা পাওয়া যেন সোনার হরিণ পাওয়া।
আর কোনভাবে বাসে উঠতে পারলেও রক্ষা পাওয়া যায় না বাসের হেলপারের কাছ থেকে। কোন না কোন অজুহাতে তার যেন গায়ে স্পর্শ করতে হবে। আর মাঝে মাঝে কিছু পুরুষ যাত্রীদের হয়রানি তো আছেই।
গণপরিবহনে নারী যাত্রীর হয়রানির চিত্র নতুন কিছু নয়। প্রায় সময় দেশের কোনো না কোনো স্থানে গণপরিবহনে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ সিট ট্রিপ হয় যাদের ২০ শতাংশই নারী যাত্রী। সেই হিসেবে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ সিটে বিভিন্ন বয়সী নারীরা বিভিন্ন কাজে যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরিসহ নানা কাজে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন।
তিনি বলেন, নারী যাত্রী হয়রানীর এই চিত্র ঢাকাতে যেমন দেখা যায় তেমনি ঢাকার বাইরেও দেখা যায়। শহরে যেসব বাস চলাচল করে সে সব বাসে সাধারনত সামনের দিকের নয়টি সিট নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু পিক আওয়ারে সেই নয়টি আসনে বসতে পারা তো দূরে থাক প্রায়ই সময় নারী যাত্রীরা বাসে উঠতে পারেন না। আবার কোনভাবে বাসে উঠতে পারলেও সে সব আসনে বসতে পারেন না। প্রায় সময়ই এসব আসনে আগে থেকেই বসে থাকেন পুরুষ যাত্রীরা। তাদেরকে উঠতে বললে কেউ কেউ আসন ছেড়ে দিলেও অনেকে আবার বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এক গবেষণা মতে, দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার ৫০ শতাংশ মহাসড়কে, ২৫ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে ও ২৫ শতাংশ রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সড়কে ঘটে। মাঝারি পাল্লার বাসে ঘটে ২৫ শতাংশ, আন্ত:শহর বাসে ৩০ শতাংশ, স্বল্পদূরত্বের বাসে ২০ শতাংশ এবং দূর পাল্লার সিটিং বাসে ১৫ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে পারিবহনের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার জড়িত, যাদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী টহল পুলিশ কম, এমন সব জায়গাতেই নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে।
ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও লিগ্যাল ইকোনমিস্ট মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, নারীর প্রতি সমঅধিকারের চিন্তা থেকে সরে আসার প্রবণতা বহু উন্নত দেশেও দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে ১৮৭৪ সালে নারীদের জন্য ট্রেনে আলাদা বগির ব্যবস্থা ছিল, যা ১৯৭৭ সালে বাদ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন নারীর প্রতি যৌন হয়রানি দূর করতে আবারও নারীদের জন্য আলাদা বগি করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেকোন সভ্য দেশে নারীর প্রতি হয়রানি হলে নারীর বক্তব্যকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, শুধু গণপরিবহনে নয়, নারীদের প্রতি হওয়া সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সবার আগে আমাদের সমাজের পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আর নারীর প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধাবোধের এই মানসিকতা তৈরী করতে হবে পরিবার থেকেই। ছোটবেলা থেকেই ছেলে সন্তানদের এ বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন, গণপরিবহনের একজন নারী যাত্রীকে একজন যাত্রী হিসেবে দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই নারীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এবং আগে ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার বিচার কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করতে হবে। আর অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে।-

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গণপরিবহনে নারীর আসন সংখ্যা বাড়ানো দরকার

আপডেট সময় : ১১:১৮:৩৩ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১৫ সেপ্টেম্বর ২০২১

নারী ও শিশু ডেস্ক : ঢাকায় বসবাসরতদের বেশিরভাগই মধ্যবিত্ত। এছাড়া বড় একটি অংশ রয়েছে নি¤œমধ্যবিত্ত এবং গরীব। এক স্থান থেকে অন্যত্র যাতায়াতে যাদের মূল ভরসা গণপরিবহন। কিন্তু সেই গণপরিবহনই প্রয়োজনের তুলনায় কম। যেখানে মানুষকে পড়তে হয় সমস্যায়। তার মধ্যে বেশি সমস্যায় পড়তে হয় নারীদের। চাকুরিজীবি নারীরাই গণপরিবহনে বেশি সমস্যার সমুখীন হন। এর মূল কারণ গণপরিবহনের অপ্রতুলতা। তারপরও সেখানে রয়েছে আরেক সমস্যা, নারীর জন্য নির্ধারিত আসনের সংখ্যা প্রয়োজনের তুলনায় একদমই অপ্রতুল। এ সব সমস্যাকে সাথী করেই ঢাকা শহরে চলাচল করতে হয় নারীদের। গণপরিবহন নিয়ে কথা হচ্ছিলো তেত্রিশ বছর বয়সী নারী নাসিমার (ছদ্ম)। নাসিমা থাকেন ঢাকার মিরপুর ১৪ নম্বকরে। সপ্তাহের ছয় দিনই মিরপুর-১৪ থেকে মহাখালী অফিসে যাতায়াত করতে নাসিমাকে। খুব বেশি বেতন না পাওয়ায় অফিসে যাওয়ার জন্য গণপরিবহনই তার মূল ভরসা। কেননা সিএনজি কিংবা ট্যাক্সি ক্যাবের ভাড়া এত বেশি যা মিটিয়ে তার পক্ষে অফিসে যাতায়াত করা সম্ভব নয়। দূরত্ব খুব বেশী না হলেও প্রায় প্রতিদিনই যানবাহনের ঝক্কি-ঝামেলা পোহাতে হয় তাকে। আর এখন করোনা পরিস্থিতির কারণে এই দুর্ভোগ বেড়েছে কয়েক গুন। এক থেকে দেড় ঘন্টা দাঁড়িয়ে থেকেও অনেক সময় উঠতে পারেনা কোন বাসে। আর সকালে তো সিএনজি-চালিত অটো-রিকশা পাওয়া যেন সোনার হরিণ পাওয়া।
আর কোনভাবে বাসে উঠতে পারলেও রক্ষা পাওয়া যায় না বাসের হেলপারের কাছ থেকে। কোন না কোন অজুহাতে তার যেন গায়ে স্পর্শ করতে হবে। আর মাঝে মাঝে কিছু পুরুষ যাত্রীদের হয়রানি তো আছেই।
গণপরিবহনে নারী যাত্রীর হয়রানির চিত্র নতুন কিছু নয়। প্রায় সময় দেশের কোনো না কোনো স্থানে গণপরিবহনে নারী নির্যাতনের ঘটনা ঘটছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান বলেন, স্বাভাবিক অবস্থায় প্রতিদিন সারা দেশে প্রায় ৬০ লাখ সিট ট্রিপ হয় যাদের ২০ শতাংশই নারী যাত্রী। সেই হিসেবে অনুযায়ী প্রতিদিন প্রায় ১২ লাখ সিটে বিভিন্ন বয়সী নারীরা বিভিন্ন কাজে যেমন শিক্ষা, চিকিৎসা, চাকরিসহ নানা কাজে বিভিন্ন গন্তব্যে যাতায়াত করেন।
তিনি বলেন, নারী যাত্রী হয়রানীর এই চিত্র ঢাকাতে যেমন দেখা যায় তেমনি ঢাকার বাইরেও দেখা যায়। শহরে যেসব বাস চলাচল করে সে সব বাসে সাধারনত সামনের দিকের নয়টি সিট নারী, শিশু ও প্রতিবন্ধীদের জন্য সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু পিক আওয়ারে সেই নয়টি আসনে বসতে পারা তো দূরে থাক প্রায়ই সময় নারী যাত্রীরা বাসে উঠতে পারেন না। আবার কোনভাবে বাসে উঠতে পারলেও সে সব আসনে বসতে পারেন না। প্রায় সময়ই এসব আসনে আগে থেকেই বসে থাকেন পুরুষ যাত্রীরা। তাদেরকে উঠতে বললে কেউ কেউ আসন ছেড়ে দিলেও অনেকে আবার বাক-বিতন্ডায় জড়িয়ে পড়েন।
এক গবেষণা মতে, দেশে নারী নির্যাতন, ধর্ষণ ও হত্যার ঘটনার ৫০ শতাংশ মহাসড়কে, ২৫ শতাংশ আঞ্চলিক সড়কে ও ২৫ শতাংশ রাজধানীর অভ্যন্তরীণ সড়কে ঘটে। মাঝারি পাল্লার বাসে ঘটে ২৫ শতাংশ, আন্ত:শহর বাসে ৩০ শতাংশ, স্বল্পদূরত্বের বাসে ২০ শতাংশ এবং দূর পাল্লার সিটিং বাসে ১৫ শতাংশ নির্যাতনের ঘটনা ঘটে। অধিকাংশ ঘটনার সঙ্গে পারিবহনের চালক, হেলপার ও সুপারভাইজার জড়িত, যাদের বয়স ৪০ বছরের মধ্যে। পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী টহল পুলিশ কম, এমন সব জায়গাতেই নির্যাতনের ঘটনা বেশি ঘটে।
ফাউন্ডেশনের ভাইস চেয়ারম্যান ও লিগ্যাল ইকোনমিস্ট মোহাম্মদ শাহজাহান সিদ্দিকী বলেন, শুধু বাংলাদেশেই নয়, নারীর প্রতি সমঅধিকারের চিন্তা থেকে সরে আসার প্রবণতা বহু উন্নত দেশেও দেখা যাচ্ছে।
তিনি বলেন, ইংল্যান্ডে ১৮৭৪ সালে নারীদের জন্য ট্রেনে আলাদা বগির ব্যবস্থা ছিল, যা ১৯৭৭ সালে বাদ দেওয়া হয়। ২০১৫ সালে লেবার পার্টির নেতা জেরেমি করবিন নারীর প্রতি যৌন হয়রানি দূর করতে আবারও নারীদের জন্য আলাদা বগি করার ঘোষণা দিয়েছেন। তিনি বলেন, যেকোন সভ্য দেশে নারীর প্রতি হয়রানি হলে নারীর বক্তব্যকেই গুরুত্ব দেওয়া হয়।
মানবাধিকার কর্মী এডভোকেট মনোয়ারা বেগম বলেন, শুধু গণপরিবহনে নয়, নারীদের প্রতি হওয়া সকল ধরনের নির্যাতন বন্ধ করতে হলে সবার আগে আমাদের সমাজের পুরুষদের মানসিকতার পরিবর্তন করতে হবে। আর নারীর প্রতি সম্মান এবং শ্রদ্ধাবোধের এই মানসিকতা তৈরী করতে হবে পরিবার থেকেই। ছোটবেলা থেকেই ছেলে সন্তানদের এ বিষয়ে নৈতিক শিক্ষা দিতে হবে।
তিনি বলেন, গণপরিবহনের একজন নারী যাত্রীকে একজন যাত্রী হিসেবে দেখার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। তাহলেই নারীর প্রতি হয়রানিমূলক আচরণ বন্ধ হবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে এবং আগে ঘটে যাওয়া সকল সহিংসতার বিচার কার্যক্রমও দ্রুত শেষ করতে হবে। আর অপরাধীদের দ্রুত বিচারের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করা গেলে নারীর প্রতি সহিংসতা অনেকাংশে কমে আসবে।-