ঢাকা ১০:৪৫ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০ বঙ্গাব্দ

গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ, ১১ আগস্ট বিক্ষোভের ডাক

  • আপডেট সময় : ০১:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ অগাস্ট ২০২২
  • ২৮ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের জোটের আত্মপ্রকাশ করা হয়। আত্মপ্রকাশের দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জোটটি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১১ আগস্ট বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা।
এ সময় জাসদের সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহামুদর রহমান মান্ন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নুর সহ অন্যান্য দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজনৈতিক ঘোষণা পাঠ করা হয়। এতে বলা হয় বাংলাদেশ ৫০ বছর পার করলেও এখনও পর্যন্ত দেশে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। এমনকি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো গণতান্ত্রিক পথ পর্যন্ত আর অবশিষ্ট নাই। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন ও পরবর্তীতে পাকিস্তান পর্বের এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশেও বহাল থেকেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছে তার মূলনীতিতে গণ-আকাক্সক্ষার কিছু প্রকাশ থাকলেও সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামো রয়ে গেছে পুরোপুরি স্বৈরতান্ত্রিক এবং সঙ্গত কারণেই এসব মূলনীতি বাস্তবায়নে কেবল অনুপযুক্ত নয়, একবারে বিরোধী। ফলে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বিপরীতেই দেশকে পরিচালনা করেছে।এই সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিণত হয়েছে সর্বত্র দখলদারিত্বের এক হাতিয়ারে। ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যাবিচার প্রতিষ্ঠা পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সরকার ও শাসকশ্রেণি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ প্রতিষ্ঠার গণ-আকাক্সক্ষার বিপরীত পথে দেশকে ঠেলে দিয়েছে। যে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক হওয়ার কথা ছিল সেই রাষ্ট্রকে স্বৈরতান্ত্রিক দমন-পীড়নের গণবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থায় পর্যবসিত করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকৃত। নানা গণবিরোধী আইন ও নির্যাতন- নিপীড়নের যাঁতাকলে ন্যুনতম নাগরিক অধিকার পিষ্ট। রাষ্ট্রক্ষমতা এখানে দ্রুত অর্থবিত্ত গড়ে তোলার বাহনে পরিণত হয়ে। আয় ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে সমাজেধনী-গরিবের সীমাহীন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাফিয়াদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত কয়েক দশকে এখানকার শাসকগোষ্ঠী ও সরকারসমূহের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের সম্ভাবনাময় দেশ ও জনগোষ্ঠী চরম দুর্দশা ও বিপদে নিমজ্জিত হয়েছে। ‘রাষ্ট্র ক্ষমতা মানে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমা সর্বত্র সরকার ও প্রশাসনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব; যা জনগণের জান ও জবানের ওপর কর্তৃত্বে পর্যবসিত হয় এবং রাজনৈতিকভাবে সমস্থ বিরোধিতাকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতার চিরস্থায়িত্ব কায়েম করতে চায়।’ ঘোষণাপত্রে বলা হয়- এ প্রবণতাকে এক কর্তৃত্ববাদী-ফ্যাসিবাদী রূপে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। রাষ্ট্রের নানা স্বৈরতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের সবগুলোই এখন চরম রূপ ধারণ করেছে। যেমন, এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা বাংলাদেশের জন্মের আগ থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের ওপর ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে একে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে পুরো পৃথিবীতে আর কোন সরকার প্রধান এত ক্ষমতা ভোগ করেন বলে জানা যায় না। তিনি সংবিধানেরও ঊর্ধ্বে, তার কথাই আইন। এরকম চরম কর্তৃত্ববাদী অবস্থায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক ঘোষণায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশে কখনোই এমন অবস্থা না যে, এখানে কার্টুন আঁকাও নিষিদ্ধ, অনলাইনে কিছু লিখলে তাকে বিনা পরোয়ানায় ধরে নিয়ে যাওয়া আইনসিদ্ধ, প্রধানমন্ত্রীর নাম ধরে কোনো সমালোচনা করা যাবে না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক, এখন পদ্মা সেতুর ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রায় অপরাধতুল্য। শুম-খুন-হামলা-মামলার মাধ্যমে দমন-পীড়ন পরিণত করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এদেশের ইতিহাসে রাজনীতি এতটা নির্বাসিত ছিল না কখনোই। এমনকি সরকারি দল আওয়ামী লীগও এখন রাজনীতিহীন হয়েছে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার ভাড়াটের ভূমিকা পালন করছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি-লুণ্ঠন চরম সীমায় পৌঁছেছে। হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন, আগে যা কল্পনারও অতীত ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে তা মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি দলের লোকদের দখলে। শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, সমগ্র অর্থনীতিই নির্লজ্জ চুরি, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সরকার-ঘনিষ্ঠ কতিপয়ব্যক্তি ও পরিবারের লুণ্ঠনের স্বর্গরাজ্যে। ‘সরকার নিজেদের দুর্নীতি, লুটপাট আর সীমাহীন ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম, বাড়ী ভাড়া, পরিবহন ভাড়ার চাপে কোটি কোটি মানুষ দিশেহারা। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে সরকার ও সরকারি দল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে দেশকে ভয়ংকর বিপদ ও গভীর অনিশ্চতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ সব কিছু হতে পারছে একদিকে সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো ব্যবহার করে এবং অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী মারফত শান্তিপূর্ণ পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের ন্যূনতম সাংবিধানিক পথটিও বন্ধ করে দিয়েছে।’
জনগণের ভোটাধিকারের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে শাসনব্যবস্থারও বদল অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিকীকরণ অবিচ্ছেদ্য আকারে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। জনগণের হাতে ক্ষমতা এবং জবাবদিহিতাপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত হচ্ছে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান এবং রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয় বদল ও সংস্কার করে গণমুখী শাসন কাঠামোর ভিত্তি তৈরি করা। এই উপলব্ধি থেকেই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণকামী ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে ৭টি রাজনৈতিক দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের ঘোষণাপত্রে বেশকিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
(১) বাংলাদেশে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো অবকাশ নেই। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন নয় বরং তারা আরও একটি একতরফা তামাশার নির্বাচনের ছক তৈরি করছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। এই অবস্থায় জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
(২) এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হবার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে
(৩) এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো এবং প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে, যাতে করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এই গণতান্ত্রিক সংস্থার সম্পন্ন করতে বাধ্য থাকে। শুধু একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানই যে যথেষ্ট নয় বরং তাতে ক্ষমতায় এসে যে কারও স্বৈরতন্ত্রী হয়ে ওঠার বীজ বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের ভেতরেই কার্যকর রয়েছে। কাজেই ভবিষাতে কারও স্বৈরতন্ত্রী বা ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠা প্রতিরোধে প্রয়োজন নতুন এক গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার।
সেই লক্ষ্যে-(১) প্রয়োজন এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহিতাহীনভাবে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ যথা সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহিতার কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োাগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন।
২) সংসদ সদস্যদের মতামত প্রদানের অধিকার খর্বকারী বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে। সরকার গঠনে আস্থা ভোট ও বাজেট পাশ ব্যতিরেকে সকল বিলে স্বাধীন মতামত প্রদান ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা।
৩) সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার। বর্তমান এককেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থার লক্ষ্যে বিদ্যমান সংবিধানের স্থানীয় শাসনের বিপরীতে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় সব উন্নয়ন কর্মকা-, আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা এবং এর প্রয়োজনীয় বাজেট প্রণয়ন, কর সংগ্রহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার।
৪) একইসঙ্গে ফেডারেল পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় কমিশন গঠন বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নি¤œ আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তার পরিচালনা ও তদারকি উচ্চ আদালতের হাতে ন্যস্ত করা, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন।
৫) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ব্যক্তির মতপ্রকাশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি উপনিবেশিক ও নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করা; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী আইন প্রণয়ন করা।
৬) মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।
৭) অর্থনৈতিক আইন কানুন সংস্কারের মাধ্যমে লুটপাট ও পাচার বন্ধ করে অর্থনীতির উৎপাদনশীল পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানস ও অর্থনীতির টেকসই প্রকৃতিবান্ধব ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল জনগণের জন্য সমান সুযোগের নিশ্চয়তা তৈরি। গ. এইসব রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক ও শাসন কাঠামোগত সংস্কারের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এমনভাবে অর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পুনর্গঠন করতে চাই যাতে তা জনগণের সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করে। যথা- ১) জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গীয় পরিচয় ও শ্রেণি নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। আমাদের প্রাথমিক দায়দায়িত্ব। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা; রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা; গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা । ২) ‘বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না’ এই নীতির ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে মুনাফার লাগাম টেনে ধরার মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার। ৩) দেশের প্রতিটি শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এই নীতির ওপর ভিত্তি করে সকলের জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা, মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অধিকার এবং শিক্ষাকে জাতীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উপযুক্ত উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাজে এবং সকল নাগরিক সেবা পেতে ঝামেলামুক্ত ‘একটেবিল নীতি বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা। দেশের উদ্যোক্তাশ্রেণির জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ করা ও এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ খাতসহ সর্বত্র দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন এবং পরিবেশসম্মত সাশ্রীয় বিদ্যুতের জন্য বিদ্যুৎ হাতের পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো। ৫) কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকৃতিবান্ধব উৎপাদনমুখি সংস্কারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। পাটকলসহ সকল বন্ধ কলকারখানা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ। শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য ন্যূনতম মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ঘোষণা। ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা। নির্ধারণ। প্রকৃত দরিদ্রদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা দেয়া ও বেকারদের কর্মহীন মানুষের স্ব-কর্মসংস্থানে সহায়তা বা বেকারভাতা প্রদান। বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বত্র বিশেষ ব্যবস্থা ও তাদের কল্যাণে নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি সকল নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা
(৪) জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্য ও জনগণের ভূমিকা পালনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত বিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করা। সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভূমিকা চাই। আমরা চাই রাজপথে যুদ্ধ ধারায় জনগণের বৃহত্তর কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় জানাতে।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার লার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ, ১১ আগস্ট বিক্ষোভের ডাক

আপডেট সময় : ০১:৩০:৪৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ৮ অগাস্ট ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : নতুন রাজনৈতিক জোট গণতন্ত্র মঞ্চের আত্মপ্রকাশ হয়েছে। ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির নসরুল হামিদ মিলনায়তনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে তাদের জোটের আত্মপ্রকাশ করা হয়। আত্মপ্রকাশের দিনই কর্মসূচি ঘোষণা করেছে জোটটি। জ্বালানি তেলসহ নিত্যপণ্য দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধির প্রতিবাদে ১১ আগস্ট বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে তারা।
এ সময় জাসদের সভাপতি আ.স.ম আব্দুর রব, নাগরিক ঐক্যের আহবায়ক মাহামুদর রহমান মান্ন, বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক, গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক জোনায়েদ সাকি, গণঅধিকার পরিষদের আহ্বায়ক ড. রেজা কিবরিয়া, সদস্য সচিব নুরুল হক নুর সহ অন্যান্য দলের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানের শুরুতেই রাজনৈতিক ঘোষণা পাঠ করা হয়। এতে বলা হয় বাংলাদেশ ৫০ বছর পার করলেও এখনও পর্যন্ত দেশে কোনো গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা তৈরি হয়নি। এমনকি শান্তিপূর্ণ উপায়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের কোনো গণতান্ত্রিক পথ পর্যন্ত আর অবশিষ্ট নাই। ব্রিটিশ উপনিবেশিক শাসন ও পরবর্তীতে পাকিস্তান পর্বের এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক স্বৈরতান্ত্রিক ব্যবস্থা বাংলাদেশেও বহাল থেকেছে। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে যে সংবিধান রচিত হয়েছে তার মূলনীতিতে গণ-আকাক্সক্ষার কিছু প্রকাশ থাকলেও সংবিধানের ক্ষমতা কাঠামো রয়ে গেছে পুরোপুরি স্বৈরতান্ত্রিক এবং সঙ্গত কারণেই এসব মূলনীতি বাস্তবায়নে কেবল অনুপযুক্ত নয়, একবারে বিরোধী। ফলে বাংলাদেশে যারাই ক্ষমতায় এসেছে তারা মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের বিপরীতেই দেশকে পরিচালনা করেছে।এই সাংবিধানিক স্বৈরতন্ত্র এমন একটা পরিস্থিতি তৈরি করেছে যে, বাংলাদেশে রাষ্ট্র ক্ষমতা পরিণত হয়েছে সর্বত্র দখলদারিত্বের এক হাতিয়ারে। ঘোষণাপত্রে আরো বলা হয়, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যাবিচার প্রতিষ্ঠা পুরোপুরি বিসর্জন দিয়েছে। গত পঞ্চাশ বছরেরও বেশি সময় ধরে দেশের সরকার ও শাসকশ্রেণি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও দায়বদ্ধ রাষ্ট্র, সরকার ও সমাজ প্রতিষ্ঠার গণ-আকাক্সক্ষার বিপরীত পথে দেশকে ঠেলে দিয়েছে। যে রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ও মানবিক হওয়ার কথা ছিল সেই রাষ্ট্রকে স্বৈরতান্ত্রিক দমন-পীড়নের গণবিচ্ছিন্ন ব্যবস্থায় পর্যবসিত করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক অধিকার অস্বীকৃত। নানা গণবিরোধী আইন ও নির্যাতন- নিপীড়নের যাঁতাকলে ন্যুনতম নাগরিক অধিকার পিষ্ট। রাষ্ট্রক্ষমতা এখানে দ্রুত অর্থবিত্ত গড়ে তোলার বাহনে পরিণত হয়ে। আয় ও সম্পদের বৈষম্যের কারণে সমাজেধনী-গরিবের সীমাহীন বৈষম্য তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্র ও রাজনীতিতে রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক মাফিয়াদের নিরঙ্কুশ আধিপত্য প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। গত কয়েক দশকে এখানকার শাসকগোষ্ঠী ও সরকারসমূহের ধারাবাহিক ব্যর্থতা, চুরি, দুর্নীতি, লুটপাট ও চূড়ান্ত স্বেচ্ছাচারিতার কারণে আমাদের সম্ভাবনাময় দেশ ও জনগোষ্ঠী চরম দুর্দশা ও বিপদে নিমজ্জিত হয়েছে। ‘রাষ্ট্র ক্ষমতা মানে এখানে ব্যবসা-বাণিজ্য, হাট-বাজার, মসজিদ-মাদ্রাসা, স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়, ব্যাংক-বীমা সর্বত্র সরকার ও প্রশাসনের একচ্ছত্র নিয়ন্ত্রণ ও কর্তৃত্ব; যা জনগণের জান ও জবানের ওপর কর্তৃত্বে পর্যবসিত হয় এবং রাজনৈতিকভাবে সমস্থ বিরোধিতাকে নিশ্চিহ্ন করে ক্ষমতার চিরস্থায়িত্ব কায়েম করতে চায়।’ ঘোষণাপত্রে বলা হয়- এ প্রবণতাকে এক কর্তৃত্ববাদী-ফ্যাসিবাদী রূপে নিয়ে গেছে বর্তমান সরকার। রাষ্ট্রের নানা স্বৈরতান্ত্রিক বৈশিষ্ট্যের সবগুলোই এখন চরম রূপ ধারণ করেছে। যেমন, এক ব্যক্তিকেন্দ্রিক ক্ষমতা বাংলাদেশের জন্মের আগ থেকেই এই অঞ্চলের মানুষের ওপর ছিল। কিন্তু বর্তমান সময়ে একে এমন জায়গায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে যে পুরো পৃথিবীতে আর কোন সরকার প্রধান এত ক্ষমতা ভোগ করেন বলে জানা যায় না। তিনি সংবিধানেরও ঊর্ধ্বে, তার কথাই আইন। এরকম চরম কর্তৃত্ববাদী অবস্থায় পৌঁছেছে বাংলাদেশ। রাজনৈতিক ঘোষণায় আরও বলা হয়, বাংলাদেশে কখনোই এমন অবস্থা না যে, এখানে কার্টুন আঁকাও নিষিদ্ধ, অনলাইনে কিছু লিখলে তাকে বিনা পরোয়ানায় ধরে নিয়ে যাওয়া আইনসিদ্ধ, প্রধানমন্ত্রীর নাম ধরে কোনো সমালোচনা করা যাবে না। পরিস্থিতি এমন জায়গায় দাঁড়িয়েছে প্রধানমন্ত্রী দূরে থাক, এখন পদ্মা সেতুর ব্যয়ের স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তোলার প্রায় অপরাধতুল্য। শুম-খুন-হামলা-মামলার মাধ্যমে দমন-পীড়ন পরিণত করা হয়েছে। সত্যিকার অর্থে এদেশের ইতিহাসে রাজনীতি এতটা নির্বাসিত ছিল না কখনোই। এমনকি সরকারি দল আওয়ামী লীগও এখন রাজনীতিহীন হয়েছে আমলাতান্ত্রিক ক্ষমতার ভাড়াটের ভূমিকা পালন করছে। সব ক্ষেত্রে দুর্নীতি-লুণ্ঠন চরম সীমায় পৌঁছেছে। হাজার কোটি টাকা লুণ্ঠন, আগে যা কল্পনারও অতীত ছিল, বর্তমান সরকারের আমলে তা মামুলি বিষয়ে পরিণত হয়েছে সমস্ত আর্থিক প্রতিষ্ঠান সরকারি দলের লোকদের দখলে। শুধু আর্থিক প্রতিষ্ঠান নয়, সমগ্র অর্থনীতিই নির্লজ্জ চুরি, দুর্নীতি ও অর্থ পাচারের মৃগয়াক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে সরকার-ঘনিষ্ঠ কতিপয়ব্যক্তি ও পরিবারের লুণ্ঠনের স্বর্গরাজ্যে। ‘সরকার নিজেদের দুর্নীতি, লুটপাট আর সীমাহীন ব্যর্থতার দায় চাপাচ্ছে সাধারণ মানুষের ওপর। অতি প্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্য ও গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানির দাম, বাড়ী ভাড়া, পরিবহন ভাড়ার চাপে কোটি কোটি মানুষ দিশেহারা। জোর করে ক্ষমতায় টিকে থাকতে গিয়ে সরকার ও সরকারি দল রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক দিয়ে দেশকে ভয়ংকর বিপদ ও গভীর অনিশ্চতার দিকে ঠেলে দিয়েছে। এ সব কিছু হতে পারছে একদিকে সাংবিধানিক স্বৈরতান্ত্রিক ক্ষমতাকাঠামো ব্যবহার করে এবং অন্যদিকে পঞ্চদশ সংশোধনী মারফত শান্তিপূর্ণ পথে ক্ষমতা হস্তান্তরের ন্যূনতম সাংবিধানিক পথটিও বন্ধ করে দিয়েছে।’
জনগণের ভোটাধিকারের প্রতিষ্ঠার সঙ্গে শাসনব্যবস্থারও বদল অর্থ্যাৎ রাষ্ট্রের গণতান্ত্রিকীকরণ অবিচ্ছেদ্য আকারে আমাদের সামনে হাজির হয়েছে। জনগণের হাতে ক্ষমতা এবং জবাবদিহিতাপূর্ণ সরকার প্রতিষ্ঠার একমাত্র পূর্বশর্ত হচ্ছে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনের অবসান এবং রাষ্ট্র ও শাসনব্যবস্থার প্রয়োজনীয় বদল ও সংস্কার করে গণমুখী শাসন কাঠামোর ভিত্তি তৈরি করা। এই উপলব্ধি থেকেই জনগণের ভোটের অধিকার প্রতিষ্ঠাসহ একটি গণতান্ত্রিক, মানবিক ও কল্যাণকামী ব্যবস্থা কায়েমের লক্ষে ৭টি রাজনৈতিক দল ‘গণতন্ত্র মঞ্চ’ নামে ঐক্যবদ্ধ আন্দোলন গড়ে তোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
গণতন্ত্র মঞ্চের ঘোষণাপত্রে বেশকিছু লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য তুলে ধরা হয়। সেগুলো হলো-
(১) বাংলাদেশে বিদ্যমান ফ্যাসিবাদী দুঃশাসনে দলীয় সরকারের অধীনে অবাধ, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের কোনো অবকাশ নেই। সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য কোনো নির্বাচন নয় বরং তারা আরও একটি একতরফা তামাশার নির্বাচনের ছক তৈরি করছে আগামী নির্বাচনকে সামনে রেখে। এই অবস্থায় জনগণের ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা এবং অবাধ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের জন্য বর্তমান সরকারকে পদত্যাগ করতে হবে, জাতীয় সংসদ বিলুপ্ত ঘোষণা করতে হবে এবং একটি রাজনৈতিক ঐকমত্যের ভিত্তিতে গঠিত অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হবে।
(২) এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের কাজ হবে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের ব্যবস্থা করা। এই লক্ষ্যে তারা নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করবে, প্রয়োজনীয় প্রশাসনিক রদবদল করবে, একজন নাগরিকের নির্বাচিত করার ও নির্বাচিত হবার অধিকার নিশ্চিত করতে দল নিবন্ধন আইন, নির্বাচন আইন ও বিধিমালার যথাযথ সংস্কার করবে
(৩) এই অন্তর্বর্তীকালীন সরকার একটা গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠায় নির্বাচনকালীন সরকারের কাঠামো এবং প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐকমত্য তৈরিতে সহায়তা করবে, যাতে করে পরবর্তী নির্বাচিত সংসদ এই গণতান্ত্রিক সংস্থার সম্পন্ন করতে বাধ্য থাকে। শুধু একটা নির্বাচন অনুষ্ঠানই যে যথেষ্ট নয় বরং তাতে ক্ষমতায় এসে যে কারও স্বৈরতন্ত্রী হয়ে ওঠার বীজ বাংলাদেশের বিদ্যমান সংবিধানের ভেতরেই কার্যকর রয়েছে। কাজেই ভবিষাতে কারও স্বৈরতন্ত্রী বা ফ্যাসিবাদী হয়ে ওঠা প্রতিরোধে প্রয়োজন নতুন এক গণতান্ত্রিক বন্দোবস্ত প্রতিষ্ঠায় সাংবিধানিক ও শাসনতান্ত্রিক সংস্কার।
সেই লক্ষ্যে-(১) প্রয়োজন এক ব্যক্তির হাতে জবাবদিহিতাহীনভাবে সমস্ত ক্ষমতা কেন্দ্রীভূত করার ব্যবস্থার বদলে রাষ্ট্রের তিন অঙ্গ যথা সংসদ, নির্বাহী বিভাগ ও বিচার বিভাগের মধ্যে ক্ষমতার ভারসাম্য প্রতিষ্ঠা ও সরকারের জবাবদিহিতার কার্যকরী ব্যবস্থা গড়ে তোলা। ন্যায়পাল ও সাংবিধানিক আদালত প্রতিষ্ঠা এবং নির্বাচন কমিশনসহ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানসমূহে নিয়োাগের জন্য সাংবিধানিক কমিশন গঠনের আইন প্রণয়ন।
২) সংসদ সদস্যদের মতামত প্রদানের অধিকার খর্বকারী বিদ্যমান সংবিধানের ৭০ অনুচ্ছেদের সংস্কার করে। সরকার গঠনে আস্থা ভোট ও বাজেট পাশ ব্যতিরেকে সকল বিলে স্বাধীন মতামত প্রদান ও জনগণের প্রতিনিধিত্ব করার অধিকার নিশ্চিত করা।
৩) সংখ্যানুপাতিক নির্বাচন ও দ্বিকক্ষবিশিষ্ট পার্লামেন্ট ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার। বর্তমান এককেন্দ্রিক ক্ষমতা কাঠামোর পরিবর্তে বিকেন্দ্রীকৃত শাসনব্যবস্থার লক্ষ্যে বিদ্যমান সংবিধানের স্থানীয় শাসনের বিপরীতে স্থানীয় সরকারব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা এবং স্থানীয় সব উন্নয়ন কর্মকা-, আইন-শৃঙ্খলা, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, নাগরিক সেবা এবং এর প্রয়োজনীয় বাজেট প্রণয়ন, কর সংগ্রহ ও ব্যবহার নিশ্চিত করার জন্য প্রয়োজনীয় সাংবিধানিক সংস্কার।
৪) একইসঙ্গে ফেডারেল পদ্ধতির সরকারব্যবস্থা বিষয়ে আলোচনার জন্য জাতীয় কমিশন গঠন বিচার বিভাগের পরিপূর্ণ স্বাধীনতা নিশ্চিত করা, নি¤œ আদালতকে নির্বাহী বিভাগ থেকে সম্পূর্ণ আলাদা করে তার পরিচালনা ও তদারকি উচ্চ আদালতের হাতে ন্যস্ত করা, প্রধান বিচারপতিসহ বিচারক নিয়োগ ও পদোন্নতির বিষয়ে সুনির্দিষ্ট নীতিমালা প্রণয়ন।
৫) গণমাধ্যমের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনসহ ব্যক্তির মতপ্রকাশ, ব্যক্তিগত গোপনীয়তা ও গণতান্ত্রিক অধিকারের পরিপন্থি উপনিবেশিক ও নিবর্তনমূলক সকল আইন বাতিল করা; গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও গণতান্ত্রিক সমাজের উপযোগী আইন প্রণয়ন করা।
৬) মুক্তিযুদ্ধের অঙ্গীকার সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক ন্যায়বিচারের নীতিতে রাষ্ট্রের সকল নাগরিকের জীবন ও মর্যাদা নিশ্চিত করা। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে যার যার অবদানের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি প্রদান।
৭) অর্থনৈতিক আইন কানুন সংস্কারের মাধ্যমে লুটপাট ও পাচার বন্ধ করে অর্থনীতির উৎপাদনশীল পুনর্গঠনের মাধ্যমে দেশে ব্যাপক কর্মসংস্থানস ও অর্থনীতির টেকসই প্রকৃতিবান্ধব ভিত্তি প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে সকল জনগণের জন্য সমান সুযোগের নিশ্চয়তা তৈরি। গ. এইসব রাষ্ট্রীয় সাংবিধানিক ও শাসন কাঠামোগত সংস্কারের ওপর দাঁড়িয়ে আমরা এমনভাবে অর্থ-সামাজিক ও রাজনৈতিক পুনর্গঠন করতে চাই যাতে তা জনগণের সর্বাধিক মঙ্গল নিশ্চিত করে। যথা- ১) জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্গীয় পরিচয় ও শ্রেণি নির্বিশেষে প্রত্যেক নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করা হবে। আমাদের প্রাথমিক দায়দায়িত্ব। বিচারবহির্ভূত হত্যাকা-সহ রাষ্ট্রীয় সন্ত্রাস বন্ধ করা; রাজনৈতিক ও প্রশাসনিক হস্তক্ষেপমুক্ত স্বাধীন ও নিরপেক্ষ তদন্ত কমিটির মাধ্যমে বিচারবহির্ভূত হত্যাকা- ও সাম্প্রদায়িক হামলার তদন্ত ও বিচার নিশ্চিত করা; গুম হওয়া ব্যক্তিদের উদ্ধারে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা গ্রহণ করা । ২) ‘বিনা চিকিৎসায় কেউ মারা যাবে না’ এই নীতির ওপর ভিত্তি করে স্বাস্থ্যখাতে রাষ্ট্রীয় অংশগ্রহণ বৃদ্ধি ও বেসরকারি খাতে মুনাফার লাগাম টেনে ধরার মাধ্যমে স্বাস্থ্যখাতে প্রয়োজনীয় সংস্কার। ৩) দেশের প্রতিটি শিশুর শিক্ষার দায়িত্ব রাষ্ট্রের এই নীতির ওপর ভিত্তি করে সকলের জন্য একই মানের শিক্ষা নিশ্চিত করা, মাতৃভাষায় শিক্ষাকে অধিকার এবং শিক্ষাকে জাতীয় উৎপাদন ও কর্মসংস্থানের উপযুক্ত উদ্যোক্তাদের বিনিয়োগ সংশ্লিষ্ট কাজে এবং সকল নাগরিক সেবা পেতে ঝামেলামুক্ত ‘একটেবিল নীতি বা ‘ওয়ান স্টপ সার্ভিস’ কার্যকর করা। দেশের উদ্যোক্তাশ্রেণির জন্য বিনিয়োগের উপযুক্ত পরিবেশ করা ও এর মাধ্যমে কর্মসংস্থান ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি। বিদ্যুৎ খাতসহ সর্বত্র দুর্নীতি বন্ধে কার্যকর উদ্যোগ গ্রহন এবং পরিবেশসম্মত সাশ্রীয় বিদ্যুতের জন্য বিদ্যুৎ হাতের পরিকল্পনা ঢেলে সাজানো। ৫) কৃষকের ফসলের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা ও ভূমি ব্যবহারের ক্ষেত্রে প্রকৃতিবান্ধব উৎপাদনমুখি সংস্কারে রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষকতা প্রদান। পাটকলসহ সকল বন্ধ কলকারখানা চালুর উদ্যোগ গ্রহণ। শ্রমিক ও শ্রমজীবী মানুষের জন্য ন্যূনতম মর্যাদাপূর্ণ মজুরি ঘোষণা। ট্রেড ইউনিয়ন অধিকার প্রতিষ্ঠা। নির্ধারণ। প্রকৃত দরিদ্রদের যথাযথভাবে চিহ্নিত করে তাদের সহায়তা দেয়া ও বেকারদের কর্মহীন মানুষের স্ব-কর্মসংস্থানে সহায়তা বা বেকারভাতা প্রদান। বৃদ্ধ বা প্রতিবন্ধী জনগোষ্ঠীর জন্য সর্বত্র বিশেষ ব্যবস্থা ও তাদের কল্যাণে নিশ্চিত করতে রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা গ্রহণ। সর্বোপরি সকল নাগরিকের অধিকার ও মর্যাদা নিশ্চিত করার মাধ্যমে বাংলাদেশকে অন্তর্ভুক্তিমূলক টেকসই উন্নয়নের একটি মডেল হিসেবে প্রতিষ্ঠা
(৪) জাতীয় স্বার্থ, জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে জাতীয় ঐক্য ও জনগণের ভূমিকা পালনের কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করা। সমতা, ন্যায্যতা, পারস্পরিক স্বার্থের স্বীকৃতি ও স্বীকৃত বিধান অনুযায়ী দ্বিপাক্ষিক সমস্যাদির সমাধান করা। সারা বিশ্বে শান্তি প্রতিষ্ঠার ভূমিকা চাই। আমরা চাই রাজপথে যুদ্ধ ধারায় জনগণের বৃহত্তর কার্যকর ঐক্য গড়ে তুলতে এবং আন্দোলনের মাধ্যমে সরকারকে বিদায় জানাতে।