নারী ও শিশু ডেস্ক: মাত্রাতিরিক্ত স্মার্টফোনসহ বিভিন্ন ডিভাইসের ব্যবহার শিশু কিশোরদের পরিপূর্ণ মানসিক ও শারীরিক বিকাশের পথে বাধা সৃষ্টি করছে। ক্রমেই মোবাইল ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আসক্তি বাড়ছে শিশুদের। গ্রামের তুলনায় শহুরে শিশুদের স্মার্টফোন ব্যবহারের হার আরো বেশি। অতিরিক্ত স্মার্টফোন ব্যবহারের ফলে বাধাগ্রস্ত হচ্ছে শিশুদের মানসিক বিকাশ। স্মার্টফোনের বিকিরণের কারণে চোখের নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে শিশুরা।
ইউনিসেফের এক গবেষণা বলেছে, বাংলাদেশে শিশুদের মধ্যে স্মার্টফোন ব্যবহার বাড়ছে। শহরের প্রায় ৫০ শতাংশ শিশু ল্যাপটপ ব্যবহার করে। স্কুলে ডেস্কটপ ব্যবহারের সংখ্যা আরো বেশি।
শিশুদের মোবাইল ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপে বেশি আকৃষ্ট হওয়ার কারণ প্রসঙ্গে বিশেষজ্ঞরা বলেন, প্রথমত, শহরের অধিকাংশ পরিবারে মা-বাবা দু’জনই চাকরিজীবী। অফিস শেষ করে সন্তানদের পর্যাপ্ত সময় দিতে পারেন না। ফলে শিশুরা মা-বাবার আদর-যত্ন থেকে অনেকাংশে বঞ্চিত হয়। তাই তারা শিশুদের অবসর সময় কাটানোর জন্য ফোন, ট্যাব কিংবা ল্যাপটপ দিচ্ছেন। ফলে শিশুরা সহজেই এসবে আসক্ত হচ্ছে।
দ্বিতীয়ত, এক সময় শিশুদের খেলাধুলা করার জন্য পর্যাপ্ত মাঠ ছিল। তখন শিশুরা বাইরে খোলা মাঠে খেলাধুলা করত। বর্তমানে খোলা মাঠ যেমন নেই তেমনি ঘরের বাইরে শিশুদের খেলতে পাঠানোর আগে নিরাপত্তার বিষয়টিও ভাবেন অভিভাবকরা। তাই অনেক অভিভাবকই ঘরে শিশুদের গেমস, কার্টুন দেখে সময় কাটানোকে শ্রেয় মনে করেন।
তৃতীয়ত, আপনি হয়তো কোনো গুরুত্বপূর্ণ কাজে ব্যস্ত। আপনার পাশে বসে ছোট শিশুটা দুষ্টুমি করছে। তাকে শান্ত রাখার জন্য তার হাতে স্মার্টফোন বা ট্যাব ধরিয়ে দিলেন। গান, কার্টুন বা মজার ভিডিও ছেড়ে দিয়ে তাকে নিমেষেই শান্ত করে আপনি আপনার কাজে মনোনিবেশ করলেন। এভাবেই শিশুরা আসক্ত হচ্ছে।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলেছেন, মোবাইলের বিকিরণের কারণে দৃষ্টিশক্তি ক্ষীণ হওয়াসহ স্বাস্থ্যগত নানা ঝুঁকিতে পড়ছে শিশুরা। সন্তানকে অধিক সময় দিলে, পারিবারিক ও সামাজিক সংযোগ বাড়লে মোবাইল ফোন ব্যবহার কমানো সম্ভব।
শিশুদের অতিরিক্ত প্রযুক্তি ব্যবহারের ফল কী হতে পারে জানতে চাইলে স্যার সলিমুল্লাহ মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালের নবজাতক, শিশু ও কিশোর বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এসকে বণিক বলেন, প্রযুক্তির অতিরিক্ত ব্যবহারে দেখা যাচ্ছে শিশুরা ঠিকমতো খাচ্ছে না, কারোর সাথে মিশছে না, একা থাকতে পছন্দ করছে। একটা সময় দেখা যায় অস্বাভাবিক আচরণ করে। মানসিকভাবে অসুস্থ হয়ে যায় অনেক সময়। শিশুদের প্রযুক্তির ব্যবহার বন্ধ কীভাবে কমানো যায় সে প্রসঙ্গে তিনি বলেন, জোরপূর্বক প্রযুক্তির ব্যবহার কমানো যাবে না। শিশুকে বিনোদন দেয়ার বিকল্প উপায় খুঁজতে হবে। এ ক্ষেত্রে পার্কে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে, ঘুরতে নিয়ে যাওয়া যেতে পারে। রাজধানীর খিলগাঁওতে বসবাসরত সরোওয়ার আলম বলেন, বাবা-মা সন্তানদের প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত করে ফেলছে। যখন বাবা-মা দু’জনই চাকরি করছে এখন দেখা যাচ্ছে ছেলেমেয়ে একাই বড় হচ্ছে। এ ছাড়া ছেলেমেয়ে খুব বেশি বিরক্ত করলে দেখা যাচ্ছে তাদের হাতে ডিভাইস দিয়ে দেয়া হচ্ছে। এসব কারণেই শিশুরা প্রযুক্তির প্রতি আসক্ত হচ্ছে। তিনি বলেন, আমরা এক সময় মাঠে খেলতাম। এখনকার শিশুরা মাঠ না থাকায় সে সুযোগ পাচ্ছে না। ছেলেমেয়েকে খেলতে পাঠিয়েও টেনশনে থাকতে হয়। নিরাপদ আছে কি না।
এ বিষয়ে মাতুয়াইল মা ও শিশু হাসপাতালের শিশু বিভাগের রেজিস্ট্রার ডা: সম্রাট নাছের খালেক বলেন, শিশুরা মোবাইল, ট্যাব, কম্পিউটারে আসক্ত হয়ে পড়লে তাদের মানসিক বিকাশে সমস্যা হতে পারে। যে সময়টায় শিশুর খেলার কথা, শেখার কথা, সেই সময়টায় শিশুর চিন্তা ধারা বা বুদ্ধি একটি ডিভাইসের মধ্যে সীমাবদ্ধ করে ফেলে। সে জন্য সামাজিক ও পারিবারিক বিষয়গুলো সে শিখতে পারে না, শিশু আত্মকেন্দ্রীক হয়ে পড়ে। এটা গেল মানসিক বিষয়। শারীরিকভাবেও ক্ষতিগ্রস্ত হয় শিশু। শিশুর চোখ ও ব্রেইন ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তিনি বলেন, এসব ডিভাইস থেকে নানা ধরনের রেডিয়েশন বের হয়। শিশু দিনে এক ঘণ্টা এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস নিয়ে খেলতে পারে। কিন্তু এর চেয়ে বেশি সময় খেললে সমস্যাগুলো হতে পারে। ইউনিসেফ ফিচার।