নিজস্ব প্রতিবেদক: খুলনা-ঢাকা রুটে পদ্মাসেতু হয়ে নতুন ট্রেন ‘জাহানাবাদ এক্সপ্রেসের’ যাত্রা শুরু হয়েছে। মোট ৭৬৮ আসন সংখ্যার ট্রেনটির প্রথম যাত্রায় সঙ্গী হন ৫৫৩ জন যাত্রী।
সেই যাত্রীদের নিয়ে মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল ৬টায় খুলনা থেকে ট্রেনটি ঢাকার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসে বলে জানিয়েছেন রেলওয়ের খুলনা স্টেশন মাস্টার (চলতি দায়িত্ব) আশিক আহমেদ।
ট্রেনটি নওয়াপাড়া, সিঙ্গিয়া জংশন, নড়াইল, লোহাগড়া, কাশিয়ানী জংশন, ভাঙ্গা জংশন হয়ে মাত্র তিন ঘণ্টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার কমলাপুর রেলস্টেশনে পৌঁছানোর কথা জানান এই স্টেশন মাস্টার।
যদিও প্রথম দিন খুলনা থেকে নড়াইল হয়ে পদ্মা সেতু দিয়ে ঢাকায় এসে পৌঁছাতে ট্রেনটির সময় লেগেছে প্রায় সাড়ে চার ঘণ্টা।
মঙ্গলবার (২৪ ডিসেম্বর) সকাল সাড়ে ১০টায় এই ট্রেন ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে এসে থামে। এর আগে সকাল ঠিক ৬টায় ৫৫৩ জন যাত্রী নিয়ে খুলনা থেকে ট্রেনটি ছাড়ে।
এদিকে সকাল ১০টায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনে ট্রেনটির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা মুহাম্মাদ ফাওজুল কবির খান।
উদ্বোধনী বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘রেল চালু হয়েছে, এটি বড় বিষয় না। এটি যেন সময় ঠিক রেখে চলতে পারে এবং নিয়মিত পরিচর্যা হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে।’
নতুন ট্রেনে করে ঢাকায় আসা যাত্রীরা উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন। নতুন এই রুটে ২১২ কিলোমিটার দূরত্ব কমার পাশাপাশি যাত্রীদের সাশ্রয় হচ্ছে সময় এবং বাসের চেয়ে সাধারণ সিটে কমেছে ভাড়াও।
আনুষ্ঠানিক যাত্রাকালে বাংলাদেশ রেলওয়ের মহাপরিচালক মো. আফজাল হোসাইন বলেন, খুলনা-ঢাকা রুটের এ ট্রেনের ভাড়া নির্ধারণ হয়েছে শোভন চেয়ার ৪৪৫ টাকা, স্নিগ্ধা (এসি চেয়ার) ৮৫১ টাকা ও এসি সিট ১০১৮ টাকা। আপাতত এই ভাড়াই চলবে। তবে পরবর্তীতে ভাড়া কমবেশি হতে পারে।
আফজাল হোসাইন আরও বলেন, বিদেশ থেকে ট্রেনের নতুন ইঞ্জিন ও বগি আনা হচ্ছে। ৬ মাস পর এই রুটে নতুন আরও ট্রেন চালুর পরিকল্পনা রয়েছে।
রেলওয়ের সূত্র মতে, ১১টি যাত্রীবাহী এবং একটি মালবাহী বগি ট্রেনটির মোট আসন সংখ্যা ৭৬৮টি। প্রথম ট্রেনে খুলনা থেকে ৫৫৩টি অর্থাৎ শতকরা ৭০ ভাগ টিকিট বিক্রি হয়েছে।
জাহানাবাদ ট্রেনটি ঢাকায় এসে ‘রূপসী বাংলা এক্সপ্রেস’ নামে সাপ্তাহিক ছুটি সোমবার ছাড়া প্রতিদিন ঢাকা থেকে সকাল ১০টা ৪৫ মিনিটে ছেড়ে বেনাপোল পৌঁছবে দুপুর আড়াইটায়।
বিকাল তিনটা ২৫ মিনিটে বেনাপোল থেকে ছেড়ে যশোর জংশন, নড়াইল, কাশিয়ানী জংশন ও ভাঙ্গা জংশন হয়ে ঢাকায় পৌঁছবে সন্ধ্যা সাতটায়। পরে রাত ৮টায় ঢাকা থেকে আবার জাহানাবাদ নামে খুলনার উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসবে ট্রেনটি। খুলনায় পৌঁছাবে ১১টা ৪৫ মিনিটে।
সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) খুলনা জেলা সাধারণ সম্পাদক কুদরত-ই-খুদা বলেন, নতুন এই ট্রেন সার্ভিস চালুর ফলে রাজধানী ঢাকার সঙ্গে খুলনার যোগাযোগ অনেক সহজ হবে। বর্তমানে খুলনা থেকে যেহেতু কোনো বিমান সার্ভিস নেই, তাই এটা খুব সহজে মানুষের মন জয় করে নেবে। এতে খুলনার অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধি পাবে। তবে কমলাপুরে ট্রেনের শেষ স্টেশন। এটা যদি এয়ারপোর্ট স্টেশন পর্যন্ত বাড়ানো যায়, তাহলে খুলনার মানুষের আরও বেশি উপকার হবে।
এদিকে ট্রেনের যাত্রার সময় নির্ধারণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনার দাবিও জানিয়েছেন অনেকে। লিয়াকত হোসেন ও শহীদ হোসেন নামের প্রথম দিনের দুই যাত্রী বলেন, খুলনাবাসীর জন্য ঢাকা পর্যন্ত ট্রেনের যাতায়াত এত দিন সুখকর ছিল না। খুলনা থেকে এখন ঢাকায় যাওয়া যাবে মাত্র পৌনে ৪ ঘণ্টায়। তবে খুলনা থেকে সকাল ছয়টায় ট্রেনটি ছেড়ে যাচ্ছে, অনেকেই এত ভোরে যথাসময়ে স্টেশন পৌঁছাতে পারবেন না। আবার রাতে পৌনে ১২টায় খুলনা পৌঁছনোর পর অনেক দূরের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছাতে কষ্ট হবে। এজন্য হয় ট্রেনের সময় পুনঃনির্ধারণ করা অথবা ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধি করা উচিত।
রেলওয়ের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, বর্তমানে ঢাকা থেকে খুলনার পথে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ও চিত্রা এক্সপ্রেস ট্রেন দুটি চলাচল করে। এর মধ্যে সুন্দরবন এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী-কুষ্টিয়া হয়ে খুলনায় যাচ্ছে। এই ট্রেন সার্ভিসে খুলনা-ঢাকায় চলাচলে সময় লাগে প্রায় ৭ ঘণ্টা।
অন্যদিকে চিত্রা এক্সপ্রেস বঙ্গবন্ধু যমুনা সেতু হয়েই চলাচল করছে। এই ট্রেনের সময় লাগে সাড়ে ৯ ঘণ্টার মতো। এর বাইরে বেনাপোল এক্সপ্রেস ঢাকা থেকে রাজবাড়ী ও কুষ্টিয়া হয়ে যশোরের বেনাপোলে যায়। এতে সময় লাগছে সাড়ে ৭ ঘণ্টা।