ঢাকা ০৩:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ০১ নভেম্বর ২০২৫

খুলনায় ১০০ কয়েদি নিয়ে চালু হচ্ছে নতুন কারাগার

  • আপডেট সময় : ১২:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫
  • ৫ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

খুলনা সংবাদদাতা: দীর্ঘ ১৪ বছর প্রতীক্ষার পর অর্ধেক সক্ষমতা নিয়ে চালু হচ্ছে খুলনার নতুন কারাগার। খুলনা জেলা নতুন কারাগার আংশিক নির্মাণ কাজ শেষ। রয়েছে জনবল সংকটও। এ অবস্থায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দি (কয়েদি) স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (১ নভেম্বর) ১০০ কয়েদি যাবে নতুন কারাগারে। পরে ধাপে ধাপে নেওয়া হবে আরো বন্দিদের। এ আধুনিক কারাগারে শাস্তির সঙ্গে থাকবে সংশোধনেরও সুযোগ। পুরনো কারাগারে থাকবে মহানগরীর বন্দিরা ও নতুন কারাগারে থাকবে জেলার বন্দিরা।

কারাগার ঘুরে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটক পার হলেই বিশাল খোলা স্পেস। কংক্রিট ও লাল টাইলসের সড়ক ও কারারক্ষী প্যারেড গ্রাউন্ড। রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। বিশাল ও প্রশস্ত আধুনিক সুসজ্জিত মসজিদ। সামনেই মূল কারাগারের প্রধান গেট। ভেতরে আধুনিক সব বহুতল ভবন। যেন এটি আধুনিক আবাসিক এলাকা। রঙিন ভবন, পাকা পথ, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত। বন্দিদের জন্য নির্মিত প্রতিটি ভবনের চারপাশে রয়েছে পৃথক সীমানা প্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে।

পুরো কারাগারের ভেতরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মিত হয়েছে নিরাপত্তা জোরদারে। গোসলের জন্য রয়েছে পুকুর। বন্দি হাজিরার জন্য রয়েছে বিশাল মাঠ ও রয়েছে ছাউনি। কারাগারের মূল অংশের দুই কর্নারে রয়েছে দুটি ওয়াচ টাওয়ার। কারারক্ষীদের জন্য রয়েছে ব্যাচেলর ও পারিবারিক আবাসিক কোয়ার্টার ও স্কুল ভবন।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছিল ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপর ৮ বার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হয়েছে। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবে। আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।

কারা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ জনবল না পাওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র ছয়তলা পুরুষ হাজতি ব্যারাক এবং নারী ও কিশোরী বন্দিদের ব্যারাক চালু রাখা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাজাপ্রাপ্ত ১০০ বন্দিকে রাখা হবে এসব ব্যারাকে। এতে আদালতে আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমবে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আলাদা ব্যারাকও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, নতুন কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ভবন, কিশোর ও কিশোরীদের জন্য আলাদা ব্যারাক, আর নারীদের জন্য হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড। বন্দিদের চিকিৎসার জন্য থাকবে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, পাশাপাশি কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, লাইব্রেরি, ডাইনিং, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। শিশু সন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্যও রয়েছে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার, যেখানে সাধারণ বন্দিদের প্রবেশাধিকার থাকবে না।

খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। আপাতত নতুন কারাগারে ১০০ কয়েদিকে শনিবার নতুন কারাগারে নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে নতুন কারাগারে ৭০ কারারক্ষী নেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর কয়েদিদের সঙ্গে আরও ২০ কারারক্ষী নেওয়া হবে। বন্দিদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১ নভেম্বর সকাল ৯টায় বন্দিদের স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরাতন (বর্তমান) কারাগারেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে নতুন কারাগারটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বর্তমান জেলখানা ঘাট এলাকায় থাকা কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। পৃথক নামে খুলনার দুটি কারাগার আলাদাভাবে কার্যক্রম শুরু হলে দুই কারাগারে জেল সুপার এবং জেলার আলাদা আলাদাভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বর্তমান কারাগারের কর্মকর্তারাই দুটি কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলে বন্দি চাপ থাকবে না। বর্তমানে খুলনার কারাগারে এক হাজার ৪০০-এর অধিক বন্দি রয়েছে। নতুন কারাগারে কিছু বন্দি সরিয়ে নিলে চাপ কিছুটা কমে যাবে।

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ–২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি। সবকিছু কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

খুলনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, দুটি কারাগার পরিচালনায় ৬০০ জন জনবল প্রয়োজন। বর্তমানে রয়েছে ২০৮ জন, সম্প্রতি নতুন করে পদায়ন হয়েছে আরও ৪৪ জনের। আপাতত এই জনবল দিয়েই দুটি কারাগার চালাতে হবে। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরনো ও নতুন দুটি কারাগারই খুলনায় একসঙ্গে চালু থাকবে। পুরোনো কারাগারে রাখা হবে মহানগরীর বন্দিদের, আর নতুন কারাগারে রাখা হবে জেলার ৯ উপজেলার বন্দিদের।

এসি/আপ্র/০১/১১/২০২৫

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

খুলনায় ১০০ কয়েদি নিয়ে চালু হচ্ছে নতুন কারাগার

আপডেট সময় : ১২:৩০:৫৩ অপরাহ্ন, শনিবার, ১ নভেম্বর ২০২৫

খুলনা সংবাদদাতা: দীর্ঘ ১৪ বছর প্রতীক্ষার পর অর্ধেক সক্ষমতা নিয়ে চালু হচ্ছে খুলনার নতুন কারাগার। খুলনা জেলা নতুন কারাগার আংশিক নির্মাণ কাজ শেষ। রয়েছে জনবল সংকটও। এ অবস্থায় ১০০ সাজাপ্রাপ্ত বন্দি (কয়েদি) স্থানান্তর করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে কারা কর্তৃপক্ষ।

শনিবার (১ নভেম্বর) ১০০ কয়েদি যাবে নতুন কারাগারে। পরে ধাপে ধাপে নেওয়া হবে আরো বন্দিদের। এ আধুনিক কারাগারে শাস্তির সঙ্গে থাকবে সংশোধনেরও সুযোগ। পুরনো কারাগারে থাকবে মহানগরীর বন্দিরা ও নতুন কারাগারে থাকবে জেলার বন্দিরা।

কারাগার ঘুরে দেখা যায়, কারাগারের প্রধান ফটক পার হলেই বিশাল খোলা স্পেস। কংক্রিট ও লাল টাইলসের সড়ক ও কারারক্ষী প্যারেড গ্রাউন্ড। রয়েছে প্রশাসনিক ভবন। বিশাল ও প্রশস্ত আধুনিক সুসজ্জিত মসজিদ। সামনেই মূল কারাগারের প্রধান গেট। ভেতরে আধুনিক সব বহুতল ভবন। যেন এটি আধুনিক আবাসিক এলাকা। রঙিন ভবন, পাকা পথ, পার্কিং টাইলসের ফুটপাত। বন্দিদের জন্য নির্মিত প্রতিটি ভবনের চারপাশে রয়েছে পৃথক সীমানা প্রাচীর, যাতে এক শ্রেণির বন্দি অন্য শ্রেণির সঙ্গে যোগাযোগ করতে না পারে।

পুরো কারাগারের ভেতরে প্রায় পাঁচ কিলোমিটার দীর্ঘ দেয়াল নির্মিত হয়েছে নিরাপত্তা জোরদারে। গোসলের জন্য রয়েছে পুকুর। বন্দি হাজিরার জন্য রয়েছে বিশাল মাঠ ও রয়েছে ছাউনি। কারাগারের মূল অংশের দুই কর্নারে রয়েছে দুটি ওয়াচ টাওয়ার। কারারক্ষীদের জন্য রয়েছে ব্যাচেলর ও পারিবারিক আবাসিক কোয়ার্টার ও স্কুল ভবন।

গণপূর্ত বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ‘খুলনা জেলা কারাগার নির্মাণ’ প্রকল্প একনেকে অনুমোদন হয়েছিল ২০১১ সালে। ২০১৬ সালের জুনের মধ্যে কাজ শেষ করার কথা ছিল। এরপর ৮ বার প্রকল্পের সময় বেড়েছে, দুই দফা সংশোধনের পর ব্যয় বেড়ে হয়েছে ২৮৮ কোটি টাকা। খুলনার সিটি (রূপসা সেতু) বাইপাস সড়কে প্রায় ৩০ একর জমির ওপর নতুন কারাগার নির্মাণ হয়েছে। মাস্টারপ্লান অনুযায়ী নতুন কারাগারে ৪ হাজার বন্দি থাকতে পারবে। আপাতত ২ হাজার বন্দি রাখার অবকাঠামো তৈরি হয়েছে।

কারা সূত্রে জানা গেছে, পূর্ণাঙ্গ জনবল না পাওয়া পর্যন্ত শুধুমাত্র ছয়তলা পুরুষ হাজতি ব্যারাক এবং নারী ও কিশোরী বন্দিদের ব্যারাক চালু রাখা হবে। প্রাথমিক পর্যায়ে সাজাপ্রাপ্ত ১০০ বন্দিকে রাখা হবে এসব ব্যারাকে। এতে আদালতে আনা-নেওয়ার ঝামেলা কমবে। ডিভিশনপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য আলাদা ব্যারাকও প্রস্তুত রাখা হয়েছে।

আরো জানা গেছে, নতুন কারাগারটি নির্মাণ করা হয়েছে আধুনিক সংশোধনাগার হিসেবে। এখানে বিচারাধীন ও সাজাপ্রাপ্ত বন্দিদের জন্য রয়েছে পৃথক ভবন, কিশোর ও কিশোরীদের জন্য আলাদা ব্যারাক, আর নারীদের জন্য হাসপাতাল, মোটিভেশন সেন্টার ও ওয়ার্কশেড। বন্দিদের চিকিৎসার জন্য থাকবে ৫০ শয্যার হাসপাতাল, পাশাপাশি কারারক্ষীদের সন্তানদের জন্য স্কুল, লাইব্রেরি, ডাইনিং, আধুনিক সেলুন ও লন্ড্রি। শিশু সন্তানসহ নারী বন্দিদের জন্যও রয়েছে পৃথক ওয়ার্ড ও ডে-কেয়ার সেন্টার, যেখানে সাধারণ বন্দিদের প্রবেশাধিকার থাকবে না।

খুলনা জেলা কারাগারের জেলার মুনীর হোসাইন বলেন, সবকিছু ঠিক করা হয়েছে। আপাতত নতুন কারাগারে ১০০ কয়েদিকে শনিবার নতুন কারাগারে নেওয়া হবে। এ লক্ষ্যে নতুন কারাগারে ৭০ কারারক্ষী নেওয়া হয়েছে। ১ নভেম্বর কয়েদিদের সঙ্গে আরও ২০ কারারক্ষী নেওয়া হবে। বন্দিদের স্থানান্তরের প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। ১ নভেম্বর সকাল ৯টায় বন্দিদের স্থানান্তর করার পরিকল্পনা রয়েছে। তিনি জানান, নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলেও পুরাতন (বর্তমান) কারাগারেও কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। ভবিষ্যতে নতুন কারাগারটি জেলার কেন্দ্রীয় কারাগার হিসেবে গণ্য হবে। এ ছাড়া বর্তমান জেলখানা ঘাট এলাকায় থাকা কারাগারটি মেট্রোপলিটন কারাগার হিসেবে কার্যক্রম চালিয়ে যাবে। পৃথক নামে খুলনার দুটি কারাগার আলাদাভাবে কার্যক্রম শুরু হলে দুই কারাগারে জেল সুপার এবং জেলার আলাদা আলাদাভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। তবে বর্তমান কারাগারের কর্মকর্তারাই দুটি কারাগারের দায়িত্ব পালন করবেন। নতুন কারাগারের কার্যক্রম শুরু হলে বন্দি চাপ থাকবে না। বর্তমানে খুলনার কারাগারে এক হাজার ৪০০-এর অধিক বন্দি রয়েছে। নতুন কারাগারে কিছু বন্দি সরিয়ে নিলে চাপ কিছুটা কমে যাবে।

খুলনা গণপূর্ত বিভাগ–২ এর নির্বাহী প্রকৌশলী আসাদুজ্জামান বলেন, মোট ৫৭টি স্থাপনা নির্মিত হয়েছে, যার মধ্যে বন্দিদের থাকার ভবন ১১টি। সবকিছু কারা কর্তৃপক্ষের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।

খুলনা জেল সুপার নাসির উদ্দিন প্রধান বলেন, দুটি কারাগার পরিচালনায় ৬০০ জন জনবল প্রয়োজন। বর্তমানে রয়েছে ২০৮ জন, সম্প্রতি নতুন করে পদায়ন হয়েছে আরও ৪৪ জনের। আপাতত এই জনবল দিয়েই দুটি কারাগার চালাতে হবে। সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পুরনো ও নতুন দুটি কারাগারই খুলনায় একসঙ্গে চালু থাকবে। পুরোনো কারাগারে রাখা হবে মহানগরীর বন্দিদের, আর নতুন কারাগারে রাখা হবে জেলার ৯ উপজেলার বন্দিদের।

এসি/আপ্র/০১/১১/২০২৫