নিজস্ব প্রতিবেদক :মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার বাংলাদেশের সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি মেজর (বরখাস্ত) শরিফুল হক ডালিমের সঙ্গে যোগাযোগ ছিল কি-না, রাজনৈতিক অঙ্গনে গুঞ্জন জোরালো হচ্ছে।
জেল হত্যা মামলার সন্দেহভাজন এম খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়ার পুলিশ গত বুধবার আমপাং সেলাঙ্গরের একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করেছে। বর্তমানে তাকে কুয়ালালামপুরের ডিপোর্টেশন সেন্টারে অন্তরীণ রাখা হয়েছে বলে জানা গেছে। আর বঙ্গবন্ধু হত্যার আত্মস্বীকৃত খুনি মৃত্যুদ-প্রাপ্ত ডালিম বিদেশে পলাতক। তিনি কোন দেশে আছেন সেবিষয়ে পরিষ্কার কোনো ধারনা নেই।
মালয়েশিয়ায় খায়রজ্জামানের গ্রেপ্তারের পরদিন বৃহস্পতিবার সচিবালয়ে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম সাংবাদিকের এক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘তাকে দেশে ফেরানোর পর স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং আইন মন্ত্রণালয় মিলে সিদ্ধান্ত নেবেন, মামলাটি (জেল হত্যা) কোন পর্যায় থেকে, হয়ত বা জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে, অথবা আবার মামলাটি কীভাবে পুনরুজ্জীবিত করা হবে বা পরবর্তীতে পদক্ষেপ কী হবে।’
এদিকে খবর এসেছে, মালয়েশিয়া থেকে খায়রজ্জামানকে দেশে ফিরিয়ে আনার প্রক্রিয়া ঠেকাতে তার স্ত্রী রিটা রহমান তৎপর হয়েছেন। এরইমধ্যে আবতার সিংহ ঢালিওয়াল নামে এক আইনজীবীকেও নিয়োগ দিয়েছেন তিনি। তার নিয়োগ করা আইনজীবী অবতার সিংহ মালয়েশিয়া সরকারকে উকিল নোটিসও পাঠিয়েছেন। ওই নোটিসের কোনো জবাব না এলে কুয়ালালামপুর হাইকোর্টে আবেদন করবেন তারা।
খায়রজ্জামানের গ্রেপ্তারের বিষয়ে বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিন দেশটির ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টারকে বলেন, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে।
সাবেক সেনা কর্মকর্তা এম খায়রুজ্জামান চার দলীয় জোট সরকারের আমলে রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পান। ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে তাকে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সালে তাকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু খায়রজ্জামান বিপদ বুঝে কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী সংস্থার কার্ড নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
এক যুগেরও বেশি সময় ধরে মালয়েশিয়ায় শরণার্থী হিসেবে আশ্রিত খায়রুজ্জামানের বিরুদ্ধে ১৯৭৫ সালে কারাগারে চার জাতীয় নেতাকে জেল হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ রয়েছে। তার গ্রেপ্তারের খবর আসার পর বঙ্গবন্ধুর আত্মস্বীকৃত খুনি বিদেশে পলাতক ডালিমের সঙ্গে যোগাযোগ থাকার বিষয়ে জোরালো গুঞ্জন চলছে। ডালিম কোন দেশে আছে কোনো নিশ্চিত তথ্য পাওয়া যায় না। তবে লিবিয়া, সেনেগালসহ বিভিন্ন দেশে যাতায়াত করলেও তিনি স্থায়ীভাবে পাকিস্তানে বসবাস করছে বলে শোনা যায়। তবে ২০০৯ সালের শেষ দিকে ডালিম কানাডায় যান বলে সেসময় দেশটির সংবাদমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়।
পরে খবর আসে জানা গেছে, কানাডা থেকে কয়েক দিন পরই হংকং হয়ে তিনি পাকিস্তানে যান। তিনি ব্রিটিশ পাসপোর্ট ব্যবহার করছেন। ডালিমের অবস্থান সম্পর্কে সুনির্দিষ্ট আর কোনো তথ্য জানা যায় না। পরে জানা যায়, ২০১০ সালে বঙ্গবন্ধুর পাঁচ খুনির ফাঁসি কার্যকর হওয়ার পর একই পরিণতির আশঙ্কায় ডালিমসহ পলাতক খুনিরা বারবার অবস্থান পাল্টান। ডালিমসহ বঙ্গবন্ধু হত্যায় দ-িত পাঁচ খুনিকে দেশে ফিরিয়ে আনতে জোর তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে পুলিশ সদর দপ্তরের ইন্টারপোল শাখা।
খুনি ডালিমের সঙ্গে খায়রুজ্জামানের যোগাযোগের গুঞ্জন
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ