ঢাকা ০২:৩৪ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ০১ জুলাই ২০২৫

খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়া থেকে দ্রুত ফেরত পাওয়ার আশায় সরকার

  • আপডেট সময় : ০৩:১০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২
  • ৮৪ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে দ্রুত ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রত্যর্পণ ঠেকাতে মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামানের পরিবারের আইনি তৎপরতার মধ্যে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। শাহরিয়ার বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি, প্রথম দিনই যেভাবে বলেছি, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, মালয়েশিয়া সরকার এবং তাদের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক সেটার উপরে ভিত্তি করে আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাকে আমরা ফেরত পাব।”
খায়রুজ্জামান জেল হত্যা মামলার আসামি ছিলেন, তবে আদালত তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। প্রায় ১৩ বছর ধরে আড়ালে থাকা সাবেক এই কূটনীতিককে গত বুধবার মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানায়, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’। চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের খবর আসার পর বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, অভিবাসন আইন ভাঙায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো প্রবাসীর এমন অপরাধ পেলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সরকার তাকে ফেরত আনবে বলে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খায়রুজ্জামানেরে প্রত্যার্পণ ঠেকাতে তার পরিবার ও বিএনপি-জামায়াত ‘অর্থের বিনিময়ে’ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীকে জড়িত করার চেষ্টা করছে বলে গতকাল সোমবার অভিযোগ করেন শাহরিয়ার। গ্রেপ্তারের সময় খায়রুজ্জামানের কাছে ইউএনএইচসিআরের একটি শরণার্থী কার্ড ছিল। সেটি দেখিয়ে তার আইনজীবী বলছেন, বৈধভাবে অবস্থান করায় তাকে ফেরত পাঠাতে পারে না সরকার।
খায়রুজ্জামানের শরণার্থী কার্ডের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “হোস্ট গভর্নমেন্ট কিন্তু এটাকে বাতিল করতে পারেন। তিনি কী আবেদন বা কিসের ভিত্তিতে সেখানে প্রথম পর্যায়ে থেকে গিয়েছিলেন, সেখানে ডেফিনিটলি অনেক ইনফরমেশন পাওয়া যাবে, যেগুলো বিভ্রান্তিকর অথবা ভুল বা ইচ্ছাকৃতভালো গোপন করা।
“এবং এখানেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমরা তাকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব শেষ হলে সাধারণত যা হয়, হেডকোয়ার্টারে ফেরত আসেন, সেটার জন্য বলা হয়েছিল, তিনি আসেননি।”
আর্থিক অনিয়মের কারণে অনেক অডিট আপত্তি থাকলেও খায়রুজ্জামান সেগুলো মেটাননি বলেও অভিযোগ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ ধরনের অনেক কিছু আছে যেগুলি যথেষ্ট একটা লিগ্যাল প্রসেসকে স্ট্রেংদেন করার জন্য।”
খায়রুজ্জামানকে ফেরত আনার পক্ষে যুক্তি প্রয়োজেন জাতিংঘকেও জানানো হবে বলে জানান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, “সেখানে মালয়েশিয়া সরকারের কল যে, তারা সেখানে যাদেরকে থাকতে দিচ্ছেন এবং সে যদি আরেকটি দেশে ওয়ান্টেড হন, অপরাধীদেরকে একটি রিফিউজি স্ট্যাটাস দিয়ে রেখে দেওয়ার যুক্তি। “এবং সেটা আমরা প্রয়োজন হলে ইউএনকেও জানাব এবং আমরা বিশ্বাস করি, তাদেরকে বোঝাতেও পারব। কারণ তার রিফিউজি স্ট্যাটাসের প্রয়োজন নেই।”
খায়রুজ্জামানের মতো ব্যক্তি শরণার্থী হতে পারেন না মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “রিফিউজি কারা হন? একজন সাধারণ মানুষ, একজন সবল মানুষ, একজন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল মানুষ কখনো রিফিউজি হতে পারেন না।
“তাহলে তো কোনো অপরাধী কোনো না কোনো দেশে গিয়ে রিফিউজি স্ট্যাটাস চাইবে। সো এটাও লজিক্যাল না। আমরা প্রয়োজনে সেটা ইউএনকেও ব্যাখ্যা করব।”
খায়রুজ্জামানকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া থেকে একজন অভিযুক্ত অপরাধীকে ফেরত নিয়ে আসতে আইনজীবী বা আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বা আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ দুটো রাষ্ট্রের মধ্যকার বিষয় এটি। শাহরিয়ার আলম বলেন, “এখানে মালয়েশিয়া সরকারের মতানৈক্য নেই। আপনারা দেখেছেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তাকে আমরা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছি, এই কারণে। তো মালয়েশিয়ার সরকার কিন্তু এতে রাজি আছে। তবে এখনো যদি সামনের দিনে তাদের আইনি প্রচেষ্টায় যদি তারা কোনো ফল পান এবং সেখানে যদি প্রয়োজন হয়। “এক্ষেত্রে তারা মামলাটি বা অভিযোগটি করবেন মালয়েশিয়া সরকারের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সরকারই বিষয়টিতে আইনি ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করবেন।”

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

ইউনূস-রুবিও ফোনালাপ, ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে নিরাপত্তা বাড়াতে জোর

খায়রুজ্জামানকে মালয়েশিয়া থেকে দ্রুত ফেরত পাওয়ার আশায় সরকার

আপডেট সময় : ০৩:১০:০৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ ফেব্রুয়ারী ২০২২

নিজস্ব প্রতিবেদক : মালয়েশিয়ায় গ্রেপ্তার সাবেক হাই কমিশনার এম খায়রুজ্জামানকে দ্রুত ফেরত পাওয়া যাবে বলে আশা করছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম।
প্রত্যর্পণ ঠেকাতে মালয়েশিয়ায় খায়রুজ্জামানের পরিবারের আইনি তৎপরতার মধ্যে সোমবার সাংবাদিকদের প্রশ্নে এই আশাবাদ প্রকাশ করেন তিনি। শাহরিয়ার বলেন, “আমরা নিশ্চিত হয়েছি, প্রথম দিনই যেভাবে বলেছি, আমাদের দৃঢ় বিশ্বাস যে, মালয়েশিয়া সরকার এবং তাদের সাথে আমাদের যে সম্পর্ক সেটার উপরে ভিত্তি করে আমি আত্মবিশ্বাসের সাথে বলতে পারি যে, দ্রুততম সময়ের মধ্যেই তাকে আমরা ফেরত পাব।”
খায়রুজ্জামান জেল হত্যা মামলার আসামি ছিলেন, তবে আদালত তাকে অভিযোগ থেকে অব্যাহতি দিয়েছিল। প্রায় ১৩ বছর ধরে আড়ালে থাকা সাবেক এই কূটনীতিককে গত বুধবার মালয়েশিয়ার আমপাং, সেলাঙ্গর এলাকার একটি অ্যাপার্টমেন্ট থেকে গ্রেপ্তার করে সে দেশের পুলিশ। পরদিন বৃহস্পতিবার মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হামজা জাইনুদিনের বরাতে মালয়েশিয়ার ইংরেজি দৈনিক দ্য স্টার জানায়, একটি অভিযোগ থাকায় খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এ বিষয়ে ‘তার দেশের একটি অনুরোধ রয়েছে’। চারদলীয় জোট সরকারের সময় রাষ্ট্রদূতের দায়িত্ব পাওয়া সাবেক এই সেনা কর্মকর্তাকে ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে হাই কমিশনার করে মালয়েশিয়ায় পাঠানো হয়েছিল।
২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় তাকে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার জন্য দেশে ফিরতে বলা হয়েছিল। কিন্তু বিপদ বুঝে তিনি কুয়ালালামপুর থেকে জাতিসংঘের শরণার্থী কার্ড নিয়ে সেখানেই থেকে যান।
খায়রুজ্জামানকে গ্রেপ্তারের খবর আসার পর বৃহস্পতিবার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম বলেছিলেন, অভিবাসন আইন ভাঙায় তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। কোনো প্রবাসীর এমন অপরাধ পেলে তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হয়। সেই প্রক্রিয়ার অংশ হিসাবে সরকার তাকে ফেরত আনবে বলে জানিয়েছিলেন প্রতিমন্ত্রী। খায়রুজ্জামানেরে প্রত্যার্পণ ঠেকাতে তার পরিবার ও বিএনপি-জামায়াত ‘অর্থের বিনিময়ে’ আন্তর্জাতিক বিভিন্ন গোষ্ঠীকে জড়িত করার চেষ্টা করছে বলে গতকাল সোমবার অভিযোগ করেন শাহরিয়ার। গ্রেপ্তারের সময় খায়রুজ্জামানের কাছে ইউএনএইচসিআরের একটি শরণার্থী কার্ড ছিল। সেটি দেখিয়ে তার আইনজীবী বলছেন, বৈধভাবে অবস্থান করায় তাকে ফেরত পাঠাতে পারে না সরকার।
খায়রুজ্জামানের শরণার্থী কার্ডের বিষয়ে এক প্রশ্নে পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী বলেন, “হোস্ট গভর্নমেন্ট কিন্তু এটাকে বাতিল করতে পারেন। তিনি কী আবেদন বা কিসের ভিত্তিতে সেখানে প্রথম পর্যায়ে থেকে গিয়েছিলেন, সেখানে ডেফিনিটলি অনেক ইনফরমেশন পাওয়া যাবে, যেগুলো বিভ্রান্তিকর অথবা ভুল বা ইচ্ছাকৃতভালো গোপন করা।
“এবং এখানেও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় আমরা তাকে চিঠি দিয়ে দায়িত্ব শেষ হলে সাধারণত যা হয়, হেডকোয়ার্টারে ফেরত আসেন, সেটার জন্য বলা হয়েছিল, তিনি আসেননি।”
আর্থিক অনিয়মের কারণে অনেক অডিট আপত্তি থাকলেও খায়রুজ্জামান সেগুলো মেটাননি বলেও অভিযোগ করেন প্রতিমন্ত্রী। তিনি বলেন, “এ ধরনের অনেক কিছু আছে যেগুলি যথেষ্ট একটা লিগ্যাল প্রসেসকে স্ট্রেংদেন করার জন্য।”
খায়রুজ্জামানকে ফেরত আনার পক্ষে যুক্তি প্রয়োজেন জাতিংঘকেও জানানো হবে বলে জানান শাহরিয়ার। তিনি বলেন, “সেখানে মালয়েশিয়া সরকারের কল যে, তারা সেখানে যাদেরকে থাকতে দিচ্ছেন এবং সে যদি আরেকটি দেশে ওয়ান্টেড হন, অপরাধীদেরকে একটি রিফিউজি স্ট্যাটাস দিয়ে রেখে দেওয়ার যুক্তি। “এবং সেটা আমরা প্রয়োজন হলে ইউএনকেও জানাব এবং আমরা বিশ্বাস করি, তাদেরকে বোঝাতেও পারব। কারণ তার রিফিউজি স্ট্যাটাসের প্রয়োজন নেই।”
খায়রুজ্জামানের মতো ব্যক্তি শরণার্থী হতে পারেন না মন্তব্য করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, “রিফিউজি কারা হন? একজন সাধারণ মানুষ, একজন সবল মানুষ, একজন অর্থনৈতিকভাবে স্বচ্ছল মানুষ কখনো রিফিউজি হতে পারেন না।
“তাহলে তো কোনো অপরাধী কোনো না কোনো দেশে গিয়ে রিফিউজি স্ট্যাটাস চাইবে। সো এটাও লজিক্যাল না। আমরা প্রয়োজনে সেটা ইউএনকেও ব্যাখ্যা করব।”
খায়রুজ্জামানকে ফেরত পাঠানোর বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে আইনজীবী নিয়োগের বিষয়ে এক প্রশ্নে তিনি বলেন, মালয়েশিয়া থেকে একজন অভিযুক্ত অপরাধীকে ফেরত নিয়ে আসতে আইনজীবী বা আইনি প্রতিষ্ঠান নিয়োগ বা আইনি লড়াইয়ে যাওয়ার প্রয়োজন নাই। কারণ দুটো রাষ্ট্রের মধ্যকার বিষয় এটি। শাহরিয়ার আলম বলেন, “এখানে মালয়েশিয়া সরকারের মতানৈক্য নেই। আপনারা দেখেছেন, মালয়েশিয়ার স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন যে, তাকে আমরা বাংলাদেশে ফেরত পাঠাচ্ছি, এই কারণে। তো মালয়েশিয়ার সরকার কিন্তু এতে রাজি আছে। তবে এখনো যদি সামনের দিনে তাদের আইনি প্রচেষ্টায় যদি তারা কোনো ফল পান এবং সেখানে যদি প্রয়োজন হয়। “এক্ষেত্রে তারা মামলাটি বা অভিযোগটি করবেন মালয়েশিয়া সরকারের বিরুদ্ধে। সেক্ষেত্রে মালয়েশিয়ার সরকারই বিষয়টিতে আইনি ব্যবস্থাগুলো গ্রহণ করবেন।”