ঢাকা ০৬:০১ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ২৬ জুলাই ২০২৫

খাল পুনঃখননে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন

  • আপডেট সময় : ১১:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অগাস্ট ২০২২
  • ১০৫ বার পড়া হয়েছে

নওগাঁ সংবাদদাতা : নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় তিনটি খাল পুনঃখননের ফলে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও কৃষি আবাদে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে ১২ হাজার কৃষক।
খাল পুনঃখননে রবিশস্য, মৎস্যচাষ, হাঁস পালন, সবজি চাষসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন তৈরি হয়েছে এলাকার উপকারভোগীদের মাঝে। খালের পানি থেকে কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার কারণে ফসল উৎপাদনে সুবিধা পাবে চাষিরা। তিনটি খালে ১২০০ সদস্য বিশিষ্ট গ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অধীনে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁ (এলজিইডি) অর্থায়নে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৯ কি. মি. দৈর্ঘ্য খালটি খনন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যার উপকার ভোগীরা সুফল পেতে শুরু করেছে। এর ফলে রবিশস্যসহ বছরে তিনবার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজটি বাস্তবায়িত হয়। আত্রাই বুড়িগঞ্জ উপ প্রকল্পের অধীন আত্রাই বুড়িগঞ্জ খাল। ইসলামগাথী মারিয়া কাশিয়াবাড়ি উপ-প্রকল্পের ইসলামগাথী মারিয়া খাল; চকতেমুখ ইসলামগাথী উপ-প্রকল্পের চকতেমুখ খাল ও সমসপায়ারা খালের পুন:খনন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চকতেমুখ ও সমসপায়ারা খাল আত্রাই গৌড় নদী থেকে শুরু হয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে নাগর নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। খাল খননের আগে বন্যার সময় ভরা নাগর নদীর পানিতে মাঠের ফসল নিমজ্জিত থাকত। এর কারণে বছরে বোরো ধান উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটতো। কিন্তু বর্তমানে খালটি পুন:খনন হওয়ায় গৌড় নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। খালের গড় খনন গভীরতা ৩’ এবং খালের তলা ১৪-১৫ ফিট প্রশস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় ইসলামগাথী গ্রামের চাষি শুকবর আলী বলেন, জমিতে ধান চাষে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা সেচ কাজে ব্যয় হতো। কিন্তু বর্তমানে তা আর করতে হবে না। খালটি খনন করার কারণে ধান চাষে খরচ কমে গেল। মারিয়া গ্রামের চাষি দিদারুল আলম বলেন, খালটি পুন:খনন করার কারণে কৃষি কাজের সুবিধার পাশাপাশি হাঁস পালন, মৎস্যচাষ, সবজি চাষে অনেক সুবিধা হবে। বন্যার পানিতে আর ফসল ফলনে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভবনা নেই। তাছাড়া খালের জমে থাকা পানি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই কৃষি কাজ করতে পারবো।
কাশিয়াবাড়ি গ্রামের চাষি বিজয় কুমার বলেন, দীর্ঘদিন পরে খালটি পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে আমাদের এই এলাকার চাষিদের কৃষি কাজে সুবিধা হবে। পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে আমাদের ক্ষেতগুলো বছরজুড়ে ফসলে ভরে থাকবে। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষকেরা ফিরে পাবে তাদের সুযোগ সুবিধা। সারা বছর চাষিরা যেন জমি সেচ দিতে পারে মূলত সেই লক্ষ্যে খালটি পুনঃখনন করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিগত দিনে এই অঞ্চলে ফসল তেমন একটি ভালো উৎপাদিত হতো না। খাল খননের কারণে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা বয়ে আনবে বলে মনে করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনটি খাল থেকে প্রায় ২০০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সারা বছর ফসল ফলানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যার উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার। আগে বন্যায় তারা মাঠে দুই বার চাষ করতে পারতো না ঠিক মতো। এছাড়া অনেক সময় মাঠেই ফসল নষ্ট হয়ে যেত। এখন খাল খননের ফলে তিনবার ফসল আবাদ করতে পারবে, ফসল নষ্টের আশঙ্কাও অনেক কমে গেছে। আর সেচ সুবিধা তো পাবেই। প্রাকৃতিক মাছের চাহিদা পূরণ হবে। খাল সংলগ্ন বসবাসকারী যারা আছেন তারা হাঁস চাষ করতে পারবেন, খালের পাড়ে শাক- সবজি আবাদ করতে পারবেন। তারা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হবে। খালটি পুনঃখননের ফলে কৃষি খাতে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন বলেন, আত্রাই উপজেলার বুড়িগঞ্জ খাল খননের ফলে আত্রাই, বুড়িগঞ্জ, পাচুপুর বিহারীপুরসহ আরো কিছু গ্রাম ইসলামগাথি মারিয়া কাশিয়াবাড়ি খাল খননের ফলে চৌথল, নোওদুলী, শফিকপুর, বাঁশবাড়িয়া, কচুয়া, পোওয়াতাসহ বেশ কিছু গ্রাম এবং চক্তেমুখ ইসলামগাথি খাল খননের ফলে গুড়নাই, জগদশ, নৈদিঘি, পতিসর, তেতুলিয়া পর্যন্ত এবং বরশাতা, নন্দীগ্রাম, ইসলামগাথী, খরসতীসহ আরও কিছু গ্রামের কৃষকেরা কৃষি চাষের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

নিয়ম না মেনে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর দফতরের ১৫ গাড়িচালকের নামে ঝিলমিলে প্লট বরাদ্দ

খাল পুনঃখননে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন

আপডেট সময় : ১১:৫৭:৫৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৪ অগাস্ট ২০২২

নওগাঁ সংবাদদাতা : নওগাঁর আত্রাই উপজেলায় তিনটি খাল পুনঃখননের ফলে আর্থ সামাজিক উন্নয়ন ও কৃষি আবাদে বাম্পার ফলনের স্বপ্ন দেখছে ১২ হাজার কৃষক।
খাল পুনঃখননে রবিশস্য, মৎস্যচাষ, হাঁস পালন, সবজি চাষসহ আর্থসামাজিক উন্নয়ন তৈরি হয়েছে এলাকার উপকারভোগীদের মাঝে। খালের পানি থেকে কৃষিকাজে সেচ ব্যবস্থার কারণে ফসল উৎপাদনে সুবিধা পাবে চাষিরা। তিনটি খালে ১২০০ সদস্য বিশিষ্ট গ্রামীণ পানি ব্যবস্থাপনা সমবায় সমিতির অধীনে স্থানীয় প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁ (এলজিইডি) অর্থায়নে দুই কোটি ৩৫ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় ১৯ কি. মি. দৈর্ঘ্য খালটি খনন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। যার উপকার ভোগীরা সুফল পেতে শুরু করেছে। এর ফলে রবিশস্যসহ বছরে তিনবার ধান উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এলজিইডি সূত্রে জানা যায়, ২০২১-২২ অর্থ বছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের অধীন টেকসই ক্ষুদ্রাকার পানি সম্পদ উন্নয়ন প্রকল্পের আওতায় কাজটি বাস্তবায়িত হয়। আত্রাই বুড়িগঞ্জ উপ প্রকল্পের অধীন আত্রাই বুড়িগঞ্জ খাল। ইসলামগাথী মারিয়া কাশিয়াবাড়ি উপ-প্রকল্পের ইসলামগাথী মারিয়া খাল; চকতেমুখ ইসলামগাথী উপ-প্রকল্পের চকতেমুখ খাল ও সমসপায়ারা খালের পুন:খনন কাজ ইতোমধ্যে সম্পন্ন হয়েছে। চকতেমুখ ও সমসপায়ারা খাল আত্রাই গৌড় নদী থেকে শুরু হয়ে মাঠের মধ্যে দিয়ে নাগর নদীর সঙ্গে সংযুক্ত হয়েছে। খাল খননের আগে বন্যার সময় ভরা নাগর নদীর পানিতে মাঠের ফসল নিমজ্জিত থাকত। এর কারণে বছরে বোরো ধান উৎপাদনেও ব্যাঘাত ঘটতো। কিন্তু বর্তমানে খালটি পুন:খনন হওয়ায় গৌড় নদী দিয়ে পানি নিষ্কাশনের মাধ্যমে ফসল উৎপাদনের সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। খালের গড় খনন গভীরতা ৩’ এবং খালের তলা ১৪-১৫ ফিট প্রশস্ত করা হয়েছে। স্থানীয় ইসলামগাথী গ্রামের চাষি শুকবর আলী বলেন, জমিতে ধান চাষে ১০০০ থেকে ১২০০ টাকা সেচ কাজে ব্যয় হতো। কিন্তু বর্তমানে তা আর করতে হবে না। খালটি খনন করার কারণে ধান চাষে খরচ কমে গেল। মারিয়া গ্রামের চাষি দিদারুল আলম বলেন, খালটি পুন:খনন করার কারণে কৃষি কাজের সুবিধার পাশাপাশি হাঁস পালন, মৎস্যচাষ, সবজি চাষে অনেক সুবিধা হবে। বন্যার পানিতে আর ফসল ফলনে ব্যাঘাত ঘটার সম্ভবনা নেই। তাছাড়া খালের জমে থাকা পানি ব্যবহার করে আমরা খুব সহজেই কৃষি কাজ করতে পারবো।
কাশিয়াবাড়ি গ্রামের চাষি বিজয় কুমার বলেন, দীর্ঘদিন পরে খালটি পুনঃখননের কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে আমাদের এই এলাকার চাষিদের কৃষি কাজে সুবিধা হবে। পানির প্রবাহ ঠিক থাকলে আমাদের ক্ষেতগুলো বছরজুড়ে ফসলে ভরে থাকবে। নওগাঁ-৬ (আত্রাই-রাণীনগর) আসনের সাংসদ আলহাজ্ব মো. আনোয়ার হোসেন হেলাল বলেন, খাল খননের ফলে ওই এলাকার কৃষকেরা ফিরে পাবে তাদের সুযোগ সুবিধা। সারা বছর চাষিরা যেন জমি সেচ দিতে পারে মূলত সেই লক্ষ্যে খালটি পুনঃখনন করার কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বিগত দিনে এই অঞ্চলে ফসল তেমন একটি ভালো উৎপাদিত হতো না। খাল খননের কারণে এই অঞ্চলের কৃষি উৎপাদনে ব্যাপক সফলতা বয়ে আনবে বলে মনে করছি।
স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর নওগাঁর নির্বাহী প্রকৌশলী তোফায়েল আহমেদ বলেন, তিনটি খাল থেকে প্রায় ২০০০ হেক্টরের বেশি জমিতে সারা বছর ফসল ফলানোর সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। যার উপকারভোগীর সংখ্যা ১০ হাজার থেকে ১২ হাজার। আগে বন্যায় তারা মাঠে দুই বার চাষ করতে পারতো না ঠিক মতো। এছাড়া অনেক সময় মাঠেই ফসল নষ্ট হয়ে যেত। এখন খাল খননের ফলে তিনবার ফসল আবাদ করতে পারবে, ফসল নষ্টের আশঙ্কাও অনেক কমে গেছে। আর সেচ সুবিধা তো পাবেই। প্রাকৃতিক মাছের চাহিদা পূরণ হবে। খাল সংলগ্ন বসবাসকারী যারা আছেন তারা হাঁস চাষ করতে পারবেন, খালের পাড়ে শাক- সবজি আবাদ করতে পারবেন। তারা আর্থিকভাবে সাবলম্বী হবে। খালটি পুনঃখননের ফলে কৃষি খাতে ব্যাপক সাফল্য বয়ে আনবে বলে মনে করছেন এই কর্মকর্তা। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা কৃষিবিদ কেএম কাউছার হোসেন বলেন, আত্রাই উপজেলার বুড়িগঞ্জ খাল খননের ফলে আত্রাই, বুড়িগঞ্জ, পাচুপুর বিহারীপুরসহ আরো কিছু গ্রাম ইসলামগাথি মারিয়া কাশিয়াবাড়ি খাল খননের ফলে চৌথল, নোওদুলী, শফিকপুর, বাঁশবাড়িয়া, কচুয়া, পোওয়াতাসহ বেশ কিছু গ্রাম এবং চক্তেমুখ ইসলামগাথি খাল খননের ফলে গুড়নাই, জগদশ, নৈদিঘি, পতিসর, তেতুলিয়া পর্যন্ত এবং বরশাতা, নন্দীগ্রাম, ইসলামগাথী, খরসতীসহ আরও কিছু গ্রামের কৃষকেরা কৃষি চাষের ক্ষেত্রে সুবিধা পাবে।