নিজস্ব প্রতিবেদক : বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত মঙ্গলবার যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত। রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া ও জাতীয়তাবাদী যুবদলের সাধারণ সম্পাদক আবদুল মোনায়েমের রোগমুক্তি কামনায় গতকাল বুধবার দোয়া মাহফিলে মির্জা ফখরুল এসব কথা বলেন। জাতীয়তাবাদী যুবদল এ কর্মসূচির আয়োজন করে।
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, ‘আমরা ভাবতেও পারি না, কল্পনাও করতে পারি না। এ ধরনের উক্তি কেউ করতে পারেন না। এটা সব রাজনৈতিক শিষ্টাচারবিবর্জিত। এর একটাই কারণ রাজনৈতিক প্রতিহিংসা। প্রতি মুহূর্তে দেশনেত্রী খালেদা জিয়াকে তিনি হিংসা করেন এবং সহ্য করতে পারেন না। যে কারণেই আজকের তাঁর বিরুদ্ধে অনৈতিক, শিষ্টাচারবহির্ভূত কথা বলেন। এটা দেশের মানুষ কখনোই ভালো চোখে দেখে না।’
বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াকে আপসহীন নেত্রী উল্লেখ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তিনি দেশের গণতন্ত্রের জন্য আজীবন লড়াই করেছেন। তিনি স্বৈরাচার হটিয়ে গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার করেছিলেন। জনগণের অকুণ্ঠ ভালোবাসা নিয়ে তিনবার দেশের প্রধানমন্ত্রী হয়েছিলেন। অসুস্থ অবস্থায় হাসপাতালে থেকেও তিনি দেশের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করছেন। আজকের সেই নেত্রী ন্যূনতম চিকিৎসা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন।
জাতিসংঘের মানবাধিকারবিষয়ক হাইকমিশনার মিশেল ব্যাশেলেতের বক্তব্য নিয়েও সরকারের মন্ত্রীরা মিথ্যাচার করেছেন বলে অভিযোগ করেন বিএনপি মহাসচিব। মির্জা ফখরুল বলেন, ‘তিনি (মিশেল ব্যাশেলেত) সংবাদ সম্মেলন করে বলেন, এই দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন হচ্ছে, গুম হচ্ছে। এগুলো বন্ধ করা প্রয়োজন। এ জন্য একটি স্বাধীন, সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজনের কথাও বলেছিলেন তিনি।
অথচ হাইকমিশনার চলে যাওয়ার পর আমাদের দেশের মন্ত্রীরা প্রচার করেছেন মিশেল ব্যাশেলেত নাকি মানবাধিকার বিষয়ে কোনো কথা বলেননি। এখানে মানবাধিকার পরিস্থিতি নাকি ভালো। তিনি নাকি সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছিলেন। আজকে হাইকমিশনের অফিস থেকে তাঁরা আবার বিবৃতি দিয়ে বলেছে সরকারের মন্ত্রীরা মিথ্যা কথা বলেছেন। এতে করে ভাবমূর্তি বিনষ্ট হয়েছে।’
বর্তমান সরকার মুক্তিযুদ্ধের সব আশা–আকাঙ্ক্ষাকে ধূলিসাৎ করে দিয়েছে বলে অভিযোগ করেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, এ সরকার গণতন্ত্রের অর্জনগুলো ধ্বংস করে দিয়েছে। ন্যায়বিচার ভূলুণ্ঠিত হয়েছে। হত্যা–গুমের মাধ্যমে দেশের মানুষকে একেবারে জিম্মি করে রাখা হয়েছে। এখন গণতান্ত্রিকব্যবস্থা প্রতিষ্ঠা করায় সবচেয়ে বড় দায়িত্ব। জাতীয়বাদী যুবদলের সভাপতি সুলতান সালাউদ্দিনের সভাপতিত্বে বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা ও টাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমান ও দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম বক্তব্য দেন।
গত মঙ্গলবার জাতীয় শোক দিবস উপলক্ষে ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজনে এক স্মরণসভা হয়। সভা প্রধান অতিথির বক্তৃতায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, ‘এখন উনি (খালেদা) সেজেগুজে মেকআপ নিয়ে, একেবারে ভ্রু-ট্রু এঁকে হাসপাতালে যান। আর এদিকে তাঁর ডাক্তারেরা আবার রিপোর্ট দেয় খুবই খারাপ অবস্থা। মানে, অবস্থা নাকি যায় যায়, তাঁর লিভার নাকি পচে শেষ।
লিভার সাধারণত পচলে মানুষ কী বলে? সেটা আমি মুখ দিয়ে বলতে চাই না। কী খেলে তাড়াতাড়ি লিভার পচে, সেটা সবাই জানে।’ প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এখন তারা আরেকটা নাটক সাজাচ্ছে। আপনারা দেখেছেন যে গাড়িতে করে হলুদ শাড়ি পরে তিনি হাসপাতালে গেলেন। এখন রিপোর্ট দিয়েছে খুবই খারাপ অবস্থা। বিদেশে না পাঠালে নাকি চিকিৎসা হবে না। এভারকেয়ার তো চমৎকার চিকিৎসা করেছে। সব থেকে আধুনিক চিকিৎসা, সব থেকে ব্যয়বহুল চিকিৎসা তাঁকে দিচ্ছে। আসামিকে কে কবে বিদেশে পাঠায়, চিকিৎসার জন্য। তাহলে কারাগারে কোনো আসামি আর বাদ থাকবে না। সবাই দাবি করবে আমাদেরও চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। আমরা কি সবাইকে পাঠাব? আমি অনেক দুঃখে কথাগুলো বললাম।’ গতকাল প্রধানমন্ত্রীর এ বক্তব্যর পর মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর আজ বলেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গতকাল যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সম্পূর্ণ রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত।
খালেদা জিয়া সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্যকে রাজনৈতিক শিষ্টাচারবহির্ভূত বললেন ফখরুল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ