নিজস্ব প্রতিবেদক : অসুস্থ বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়ার কোনো ‘অঘটন ঘটলে’ পরিণতি ‘কঠিন হবে’ বলে সরকারকে হুঁশিয়ার করেছেন দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
গতকাল রোববার জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে এক বিক্ষোভ সমাবেশে তিনি বলেন, “আমি বলতে চাই, সরকারকেই দায় নিতে হবে। আজকে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার আল্লাহ না করুক যদি কোনোরকম অঘটন ঘটে, তাহলে এদেশের মানুষ আপনাদেরকে ক্ষমা করবে না। টেনেহিঁচড়ে আপনাদেরকে ক্ষমতা থেকে নামিয়ে দেবে।”
খালেদা জিয়া হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে বর্তমানে বসুন্ধরার এভারকেয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। শনিবার তার হৃৎপি-ে একটি ব্লক অপসারণ করে স্টেন্ট বসানো হয়েছে। দুর্নীতির দায়ে দ-িত খালেদা জিয়া বর্তমানে বিশেষ শর্তে সরকারের নির্বাহী আদেশে মুক্ত আছেন। চিকিৎসার জন্য তাকে বিদেশে নেওয়ার অনুমতি চেয়ে পরিবারের পক্ষ থেকে কয়েক দফা আবেদন করা হলেও সরকার তাতে সায় দেয়নি। ফখরুল বলেন, “আমি শুধু স্পষ্ট করে বলতে চাই যে, আমাদের শেষ কথা- অবিলম্বে দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়াকে মুক্তি দিন। তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠান। অন্যথায় তার সমস্ত দায়-দায়িত্ব আপনাদেরকে নিতে হবে।”
ক্ষমতাসীন দলের অনেক সাজাপ্রাপ্ত ব্যক্তি ‘অনায়াসে’ বিদেশে চিকিৎসা নিচ্ছেন মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “কেন দেশনেত্রীকে আটক রাখা হয়েছে, কেন তাকে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না? যখন তাদের (সরকার) সলিম উদ্দিন, কলিম উদ্দিন- সব বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করে, সাজাপ্রাপ্ত লোকরা বিদেশে গিয়ে চিকিৎসা করে, কেউ এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে যায়; তখন বাংলাদেশের এই জনপ্রিয় নেতা গণতন্ত্রের জন্য সারা জীবন উৎসর্গ করেছেন- তাকে বিদেশে চিকিৎসা করতে দেওয়া হয় না কেন?”
খালেদা জিয়াকে সরকার ‘ভয় পায় বলেই’ বিদেশে চিকিৎসার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না মন্তব্য করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “তিনি যদি রাস্তায় নামেন, তিনি যদি মানুষকে ডাক দেন, সেই ডাকে হ্যামিলনের সেই বংশীবাদকের মত, সব বেরিয়ে আসে রাস্তার মধ্যে…। সেজন্য তারা (সরকার) তাকে আটকে রেখেছে।”
‘মিথ্যা মামলা’ দিয়ে বিএনপি চেয়ারপার্সনকে সরকার আটকে রেখেছে অভিযোগ করে ফখরুল বলেন, “মূল কারণ হচ্ছে তাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেওয়া।”
খালেদা জিয়ার সর্বশেষ শারীরিক অবস্থা তুলে ধরতে গিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, “আমাদের চিকিৎসকদের অত্যন্ত সময়োচিত পদক্ষেপের এবং চিকিৎসার কারণে অতিদ্রুত স্টেন্টিং করে তার আজকে লাইফ সেইভ করা হয়েছে। এটাই তার শেষ না। তার অনেক অসুখ আছে। লিভার সিরোসিস আছে, আর্থ্রাইটিস আছে, হার্ট ডিজিস আছে, কিডনি ডিজিস। এর জন্য দরকার উন্নত চিকিৎসা কেন্দ্র। সেটা আমাদের দেশে নেই। “…এখন সোজা কথায় বলতে চাই, কালকে ওবায়দুল কাদের সাহেব বলেছেন, সরকার কোনো দায় নেবে না। আমি স্পষ্ট বলতে চাই, সরকারকেই দায় নিতে হবে।” অসুস্থ খালেদা জিয়াকে উন্নত চিকিৎসার জন্য দ্রুত বিদেশে পাঠানোর এবং তার মুক্তির দাবিতে ঢাকা মহানগর উত্তর-দক্ষিণ বিএনপির উদ্যোগে এ সমাবেশে হয়। রাজধানীর বিভিন্ন ওয়ার্ড থেকে কয়েক হাজার নেতা-কর্মী ব্যানার-ফেস্টুন নিয়ে সমাবেশে যোগ দেন।
মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমান উল্লাহ আমানের সভাপতিত্বে এবং সদস্য সচিব আমিনুল হক ও রফিকুল আলম মজনুর সঞ্চালনায় সমাবেশে অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির মীর মোহাম্মদ নাসির, হাবিবুর রহমান হাবিব, আবুল খায়ের ভুঁইয়া, রুহুল কবির রিজভী, মাহবুব উদ্দিন খোকন, খায়রুল কবির খোকন, ফজলুল হক মিলন, আবদুস সালাম আজাদ, শিরিন সুলতানা, মীর সরফত আলী সপু, মোস্তাফিজুর রহমান বাবলু, নাজিম উদ্দিন আলম, সাইফুল আলম নিরব, মীর নেওয়াজ আলী, মহিলা দলের আফরোজা আব্বাস, যুবদলের সুলতান সালাহউদ্দিন টুকু, স্বেচ্ছাসেবক দলের মোস্তাফিজুর রহমান, কৃষক দলের হাসান জাফির তুহিন, শ্রমিক দলের আনোয়ার হোসেইন, তাঁতী দলের আবুল কালাম আজাদ, মৎস্যজীবী দলের আবদুর রহিম, ছাত্রদলের সাইফ মাহমুদ জুয়েল, মহানগর বিএনপির ইশরাক হোসেন, আনোয়ারুজ্জামান আনোয়ার। এছাড়া মোরতাজুল করীম বাদরু, সুলতানা আহমেদ, হেলেন জেরিন খান, মুনায়েম মুন্না, মামুন হাসান, আবদুল কাদির ভুঁইয়া জুয়েল, শহিদুল ইসলাম বাবুল, মীর নেওয়াজ আলী সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন।
খালেদার অঘটন ঘটলে পরিণতি কঠিন হবে: ফখরুল
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ