নারী ও শিশু ডেস্ক: জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে খুলনার দাকোপে বিপুল নারী জনগোষ্ঠী দিন দিন পিছিয়ে পড়ছে। খাবার পানি সংগ্রহে তাদের দিনের একটি বড় সময় ব্যয় করতে হচ্ছে। এতে কমে আসছে কর্মঘণ্টা। এর পাশাপাশি লবণাক্ততা বৃদ্ধি, উপকূলীয় ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও নদীভাঙনের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন নারীরা। এতে একদিকে যেমন নারীরা বা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী প্রাকৃতিক দুর্যোগে প্রথম ক্ষতিগ্রস্ত, অন্যদিকে তাদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার জন্য সরকারি-বেসরকারিভাবে সাহায্যেও অপ্রতুলতা দুর্ভোগ আরও বাড়ছে।
সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ৯৯২ বর্গকিলোমিটার আয়তনের এ উপজেলার মোট জনসংখ্যা ১ লাখ ৫৮ হাজার ৩০৯ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৭৯ হাজার ২৮৯ জন ও নারী ৭৯ হাজার ১৭ জন। দেখা যায় প্রায়, অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। এই অর্ধেক নারী জনগোষ্ঠী আজ জলবায়ু পরিবর্তনের বিভিন্ন প্রভাবের কারণে সামাজিক ও অর্থনৈতিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত। নারীদের প্রবল ইচ্ছাশক্তি থাকা সত্ত্বেও তারা সমাজ ও পরিবারের উন্নয়নে আশানুরূপ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছেন না। এমতাবস্থায় প্রায় অর্ধেক জনগোষ্ঠীকে পেছনে ফেলে রেখে এ এলাকার উন্নয়ন কতটুকু সম্ভব সেটা চিন্তার বিষয়।
নারীনেত্রী ও উপজেলা সিএসও নেটওয়ার্ক কমিটির সদস্য জয়নগর এলাকার রওশন আরা বেগম জানান, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে পরিত্রাণের একটি মাত্র উপায় খাপ খাইয়ে নেওয়া। বিভিন্ন প্রকল্পে বিষয়টি নিয়ে কাজ চলছে, যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য সিএআরএসর ইভলভ্ প্রকল্প। তারা প্রান্তিক মানুষের সক্ষমতা বৃদ্ধির মাধ্যমে স্থানীয় সরকারকে শক্তিশালী করার চেষ্টা করছে। সরকার যদি নারী, শিশু ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীর উন্নয়নে ইউনিয়ন পরিষদে জেন্ডারবান্ধব ও জলবায়ু সংবেদনশীল কার্যক্রমে খাতভিত্তিক বাজেট বিভাজন, বাজেট বৃদ্ধি ও বাস্তবায়নে কার্যকরী পদক্ষেপ গ্রহণ করে তাহলে উপরিউক্ত সমস্যা অনেকাংশে সমাধান পাওয়া সম্ভব। এছাড়া উপজেলার দাকোপ, পানখালী, তিলডাঙ্গা, বানিশান্তা, বাজুয়া ও কামারখোলা ইউনিয়ন পরিষদের ২০২৪-২৫ সালের গত ডিসেম্বর পর্যন্ত বাজেট বিশ্লেষণে দেখা যায়, জেন্ডারবান্ধব ও জলবায়ু সংবেদনশীল বাজেট প্রস্তাব হয়েছে মোট বাজেটের ১৮ শতাংশ। আর সেখানে অনুমোদন হয়েছে সেই ১৮ শতাংশ থেকে মাত্র ১১ শতাংশ। বাস্তবায়ন হয়েছে ঐ ১১ শতাংশ থেকে মাত্র ৩২ ভাগ।
উপজেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা সুরাইয়া সিদ্দীকা বলেন, সরকারিভাবে এ উপজেলায় ৩ হাজার ৪১১ জন নারীকে ভিডাবলুবি সেবা দেওয়া হচ্ছে। এ বছরও আগামী ৬ এপ্রিল থেকে এ সেবার জন্য অনলাইনে আবেদন গ্রহণ করা হবে। আবেদন হয়তো অনেক পড়বে কিন্তু উল্লেখিত সংখ্যাই আবার নিতে হবে। এছাড়া ২ হাজার ৬৭ জন নারীকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হয়। আর প্রতি বছর ২০০ জন নারীকে দক্ষতা উন্নয়ন প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকি। পাঁচ বছরে মোট ১ হাজার জন নারীকে এ প্রশিক্ষণ দিয়েছি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডা. সুদীপ বালা জানান, ধারণা করা হচ্ছে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে নারীদের স্বাস্থ্যঝুঁকি বিশেষ করে সময়ের আগে গর্ভপাত হওয়া, গর্ভপাতের হার ও জরায়ু সমস্যা বেড়ে যাওয়া এবং শারীরিক কর্মক্ষমতা কমছে। তাই আমাদের জায়গা থেকে সর্বোচ্চ চেষ্টা চালিয়ে এলাকার স্বাস্থ্যসেবার মান ঠিক রাখার চেষ্টা করছি।