নিজস্ব প্রতিবেদক: খাগড়াছড়িতে এক স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের জের ধরে সেখানে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টির জন্য ইউনাইটেড পিপলস ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টকে (ইউপিডিএফ) দায়ী করেছেন সেনাবাহিনীর খাগড়াছড়ি রিজিয়নের কমান্ডার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল হাসান মাহমুদ।
মঙ্গলবার (৩০ সেপ্টেম্বর) সকালে প্রেস ব্রিফিংয়ে তিনি অভিযোগ করেছেন, ধর্ষণের ঘটনাকে পুঁজি করে সাধারণ পাহাড়ি নারী ও কোমলমতি ছাত্রছাত্রীদের সামনে দিয়ে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা লাগানোর চেষ্টা করছে ইউপিডিএফ। এসব কর্মসূচিতে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের দিয়ে দেশীয় ও অটোমেটিক অস্ত্র দিয়ে ফায়ার করা হচ্ছে।
নানা অপপ্রচার ও উস্কানি সত্ত্বেও সেনাবাহিনী দেশের সার্বভৌমত্ব ও অবিচ্ছেদ্য অংশ রক্ষায় সবকিছু করবে বলেও অঙ্গীকার করেছেন রিজিয়ন কমান্ডার। ইউপিডিএফকে দেশের স্বার্থে অবরোধ তুলে নিয়ে পরিস্থিতি শান্ত রাখার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
এদিকে, ধর্ষণের ঘটনাকে কেন্দ্র করে খাগড়াছড়ি সদর ও গুইমারা উপজেলায় পরিস্থিতি এখনো পুরোপুরি স্বাভাবিক হয়নি। সবখানে থমথমে অবস্থা। জুম্ম ছাত্র-জনতার ডাকা অনির্দিষ্টকালের সড়ক অবরোধ চতুর্থ দিনের মতো চলছে। সংগঠনটির পক্ষ থেকে গতকাল সোমবার দুপুরে খাগড়াছড়ি-চট্টগ্রাম ও খাগড়াছড়ি-ঢাকা সড়কে অবরোধ শিথিলের ঘোষণা দেওয়া হলেও আজ মঙ্গলবার যানবাহন চলাচল বন্ধ আছে। অভ্যন্তরীণ সড়কেও যানবাহন চলছে না। তবে, নতুন করে অপ্রীতিকর ঘটনার খবর পাওয়া যায়নি।
আজও খাগড়াছড়ি শহর, শহরতলী ও গুইমারার অধিকাংশ দোকানপাট খোলেনি। শহরে সীমিত পরিসরে ইজিবাইক চলাচল করতে দেখা গেছে। নিরাপত্তা ব্যবস্থায় কড়াকড়ির কারণে জরুরি প্রয়োজন ছাড়া কেউ ঘর থেকেই বের হচ্ছেন না।
গুইমারা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এনামুল হক চৌধুরী জানিয়েছেন, খাগড়াছড়ির গুইমারায় সহিংসতায় নিহত তিনজনের মরদেহ ময়নাতদন্ত শেষে রবিবার রাতে পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। রাতের মধ্যেই দাহ করা হয়েছে। সেখানে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক করতে কাজ চলছে।
এসব এলাকায় সেনাবাহিনীর টহলের পাশাপাশি ১০ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন করা হয়েছে। গুরুত্বপূর্ণ স্থানে পুলিশ ও আনসার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন। খাগড়াছড়ি পৌরসভা, সদর উপজেলা ও গুইমারা উপজেলায় ১৪৪ ধারা বহাল আছে।
খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক এ বি এম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার জানিয়েছেন, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়া হবে।
একটি সূত্র জানিয়েছে, সোমবার কোনো একসময় খাগড়াছড়ি জেলা প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করেছেন আন্দোলনকারী জুম্ম ছাত্র-জনতার ছয় প্রতিনিধি। তারা ১৪৪ ধারা তুলে নেওয়াসহ ৮ দাবি তুলে ধরেছেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে অবরোধ তুলে নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়েছে। তবে, বৈঠকে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। বৈঠকে প্রশাসনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। যদিও দায়িত্বশীল কেউ বিষয়টি নিশ্চিত করেননি।
গত ২৩ সেপ্টেম্বর খাগড়াছড়ি সদরে এক স্কুলছাত্রীকে সংঘবদ্ধ ধর্ষণের জের ধরে রবিবার গুইমারায় সহিংসতায় তিনজন নিহত এবং সেনা কর্মকর্তাসহ কয়েকজন আহত হন। গুইমারায় পুড়িয়ে দেওয়া হয় রামসু বাজারসহ বহু ঘর-বাড়ি ও অফিস। ক্ষতিগ্রস্ত লোকজন খোলা আকাশের নিচে বাস করছেন। এ সহিংসতার জন্য পাহাড়ি ও বাঙালি পরস্পরকে দায়ী করছেন।
ওআ/আপ্র/৩০/০৯/২০২৫