নোয়াখালী প্রতিনিধি : নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলায় শিশুর সুন্নতে খতনা করানোর সময় চামড়ার অংশ কেটে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঘটনায় অভিযুক্ত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে কে শাস্তিমূলক বদলি করা হয়েছে। একই সঙ্গে শিক্ষানবিশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ ভৌমিকের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ঘটনা তদন্তে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার (আরএমও) ডা. মো. যোবায়েরকে প্রধান করে দুই সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির অপর সদস্য হলেন- মেডিকেল অফিসার ডা. শাহাদাত হোসেন। কমিটিকে আগামী তিনদিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে বলা হয়েছে।
জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, ঘটনাটি জানার পর স্বাস্থ্য বিভাগের চট্টগ্রাম বিভাগীয় পরিচালক ডা. মো. মহিউদ্দিন এবং তিনি (সিভিল সার্জন) বৃহস্পতিবার (২২ ফেব্রুয়ারি) সকালে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশুটিকে দেখতে যান। এ সময় তারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসাধীন শিশুটি ও তার বাবা সহ সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়ার পর দায়িত্বে অবহেলার অভিযোগে ওইদিন দায়িত্বরত উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে’কে তাৎক্ষণিক সেন্টমার্টিন দ্বীপ স্বাস্থ্যকেন্দ্রে শাস্তিমূলক বদলি আদেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া শিক্ষানবিশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ ভৌমিককে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রবেশাধিকার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। ভুক্তভোগী শিশু আল নাহিয়ান তাজবীব (৭) উপজেলার চরকাঁকড়া ইউনিয়নের আলমগীর হোসেন বাদলের ছেলে। সে বসুরহাট পৌরসভা এলাকার চাইল্ড কেয়ার স্কুলের প্রথম শ্রেণির ছাত্র। তার বাবা অভিযোগ করেন, বুধবার (২১ ফেব্রুয়ারি) সকাল ১১টার দিকে ছেলেকে সুন্নতে খতনা করাতে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তিনি। সেসময় তিনি চিকিৎসকের খোঁজ করলে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশপ্রহরীসহ তিনজন চিকিৎসক আসবেন বলে শিশুটিকে তার বাবার কাছ থেকে জরুরি বিভাগে নিয়ে নিজেরাই খতনা করাতে থাকেন। ওই সময় তিনি আবারও চিকিৎসকের খোঁজ করলে তারা নিজেদের এ বিষয়ে অভিজ্ঞ দাবি করে এদিন সকালে তারা আরও দুই শিশুর খতনা করেছেন বলে তাকে (শিশুটির বাবাকে) আশ্বস্ত করে সেখান থেকে বের করে দেন। এক পর্যায়ে শিশুটির চিৎকার শুনে তিনি সেখানে গিয়ে শিশুর প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছে দেখেন বলে অভিযোগ করেন। এ ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তি দাবি করেন শিশুটির বাবা। জেলা সিভিল সার্জন ডা. মাসুম ইফতেখার জানান, প্রাথমিক তদন্তে এ ঘটনায় শিক্ষানবিশ উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার সৌরভ ভৌমিকের সরাসরি সম্পৃক্ততা এবং উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে এর দায়িত্বে অবহেলার প্রমাণ মিলেছে। তাই তাদের বিরুদ্ধে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তদন্তে অন্য কারও সম্পৃক্তা পাওয়া গেলে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অফিসার ডা. মোহাম্মদ সেলিম জানান, শিশুটি এখন সুস্থ আছে। খতনার সময় তার একটু বেশি রক্তপাত হয়। যা স্বাভাবিক ঘটনা হলেও এতে শিশুটির স্বজনরা ঘাবড়ে যান। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়ার প্রক্রিয়া চলমান।
এর আগে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণের ঘটনায় দুই চিকিৎসক পালিয়ে যান। ভুক্তভোগী শিশুর জ্যাঠা শেখ ফরিদ বলেন, দুপুর পৌনে ১২টার দিকে তাজবীরের সুন্নতে খতনা করাতে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নিয়ে যান তার বাবা। ওই সময় উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার বিজয় কুমার দে ও সৌরভ ভৌমিকের তত্ত্বাবধানে খতনা করার সময় শিশুটির গোপনাঙ্গের মাথার চামড়া বেশি কেটে ফেলা হয়। এতে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয় শিশুটির। পরবর্তীতে ছেলের বাবা সন্তানের চিৎকার শুনে গিয়ে দেখেন রক্তক্ষরণে কেবিনের বিছানা ভিজে গেছে। একপর্যায়ে কৌশলে দুই উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার পালিয়ে যান।
শিশুটি বর্তমানে আশঙ্কামুক্ত রয়েছে।