ডববিসি : অন্যান্য দিনের মতো গত ৩১ জুলাইও সূর্যোদয়ের ঘণ্টাখানেক পর কাবুলের শহরতলির বাড়ির বারান্দায় এসে দাঁড়ান দীর্ঘদিন ধরে আল-কায়েদাকে নেতৃত্ব দিয়ে যাওয়া আয়মান আল-জাওয়াহিরি। ব্যাপক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন মিশরীয় এ জিহাদী যে ফজরের নামাজের পর বারান্দায় যেতে পছন্দ করতেন তার খবর আগেই মিলেছিল। কালও হল সেটিই।
বিবিসি জানিয়েছে, রোববার মৃত্যুর আগে সর্বশেষ তিনি ওই বারান্দাতেই যেতে পেরেছিলেন; যুক্তরাষ্ট্রের দুটি ক্ষেপণাস্ত্র স্থানীয় সময় সকাল ৬টা ১৮ মিনিটের দিকে বারান্দাতে আঘাত হানলে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন আল-কায়েদার ৭১ বছর বয়সী শীর্ষ নেতা। অথচ ঘরের ভেতরে থাকা তার স্ত্রী ও কন্যা ছিলেন অক্ষত।
অতীতে যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে প্রায়ই লক্ষ্যে হামলা চালিয়ে, কখনো কখনো ভুল টার্গেটে মেরে বিপুল বেসামরিক হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিন্তু এবার ক্ষেপণাস্ত্রের ধরন আর জাওয়াহিরির দৈনন্দিন অভ্যাস নিয়ে নিবিড় অধ্যয়নের পর হামলা হয়েছে। জাওয়াহিরি মারা গেছে, আর কারও কোনো ক্ষয়ক্ষতি হয়নি। জাওয়াহিরিকে হত্যায় ড্রোন থেকে ‘হেলফায়ার’ ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয় বলে মার্কিন কর্মকর্তাদের কাছ থেকে জানা গেছে। এই ‘হেলফায়ার’ আকাশ থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য; ২০০১ সালের ১১ সেপ্টেম্বর আল-কায়েদার হামলার পর এই ক্ষেপণাস্ত্রটি যুক্তরাষ্ট্রের সন্ত্রাসবাদবিরোধী অভিযানের নিয়মিত ব্যবহৃত হওয়া শুরু করে। হেলিকপ্টার, স্থলে চলা যান, জাহাজ, বিমান, মনুষ্যবিহীন ড্রোনসহ নানান প্ল্যাটফর্ম থেকে এই ক্ষেপণাস্ত্র ছোঁড়া যায়। ২০১৫ সালে সিরিয়ায় ব্রিটিশ বংশোদ্ভূত ইসলামিক স্টেটের জঙ্গি ‘জিহাদি জন’ এবং ২০২০ সালের শুরুর দিকে বাগদাদে ইরানি জেনারেল কাসেম সোলেমানিকি হত্যায়ও এই ‘হেলফায়ার’ ব্যবহার করা হয়েছে বলে মনে করা হয়। বারবার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহারের অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে- এর সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে নিখুঁতভাবে হামলার সক্ষমতা। ড্রোন থেকে ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার আগে ড্রোনটির পরিচালক লাইভ ভিডিও স্ট্রিম দেখে ‘টার্গেটের’ অবস্থান নিশ্চিত হয়ে নেন; ড্রোনের ক্যামেরা উপগ্রহের মাধ্যমে ওই ভিডিও পাঠায়। দূরে, কখনো কখনো এমনকী যুক্তরাষ্ট্রে শীতাতপ নিয়ন্ত্রিত কক্ষে বসে থাকা ড্রোন পরিচালক, সেই ভিডিও থেকে লক্ষ্যের অবস্থান ঠিক করে তার দিকে লেজার তাক করে দেন। ক্ষেপণাস্ত্রটি ছোড়ার পর সেটি ওই লেজারের পথ অনুসরণ করে লক্ষ্যে আঘাত হানে। তবে সেই ‘সুইচ’ টিপে দেওয়ার আগে ড্রোন পরিচালনাকারী ক্রুকে বেসামরিক হতাহতের ঝুঁকি কমাতে কিছু সুনির্দিষ্ট প্রক্রিয়া অনুসরণ করতে হয়। অতীতে মার্কিন সামরিক বাহিনী বা সিআইএ-কে হামলায় যেতে হলে যেসব প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হত, তার মধ্যে অন্যতম ছিল সামরিক আইনজীবীকে ডেকে তার সঙ্গে আলোচনা করে নেওয়া। তারপরই দেওয়া হতো হামলার নির্দেশ।
ক্ষেপণাস্ত্রে জাওয়াহিরি মরলেও স্ত্রী, কন্যা অক্ষত যেভাবে
ট্যাগস :
ক্ষেপণাস্ত্রে জাওয়াহিরি মরলেও স্ত্রী
জনপ্রিয় সংবাদ