নিজস্ব প্রতিবেদক: জনগণের ম্যান্ডেট পেলে জামায়াতে ইসলামী পাঁচ বছরে ‘উন্নয়নের এক্সপ্রেস ট্রেন চালু করবে’ বলে দলের প্রত্যাশার কথা ব্যক্ত করেছেন দলের আমির শফিকুর রহমান।
‘ঘূণে ধরা বাংলাদেশকে’ তার দল ‘বদালাতে চায়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, জনগণের সহযোগিতা পেলে এবং আল্লাহতালার আসমানি সহযোগিতা পেলে ইনশাল্লাহ এটা সম্ভব।
শনিবার (২৭ সেপ্টেম্বর) কাকরাইলে ইনস্টিটিউশন অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশে (আইডিইবি) ফোরাম অব ডিপ্লোমা ইঞ্জিনিয়ার্স বাংলাদেশ (এফডিইবি) আয়োজিত বার্ষিক অধিবেশন ২০২৫-এ প্রধান অতিথির বক্তব্য কথা বলছিলেন শফিকুর রহমান। তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, পাঁচ বছরে উন্নয়নের ‘বুলেট ট্রেন’ আমরা চালু করতে পারব না, কিন্তু ইনশাল্লাহ ‘এক্সপ্রেস ট্রেন’ আমরা চালু করতে পারব। একসময়ে ‘বুলেট ট্রেন’ও চালু হবে ইনশাল্লাহ।
শফিকুর রহমান বলেন, সমাজের দায়িত্ববোধের চাইতে মর্যাদার লড়াইটা বেশি হবে। আমি যদি দায়িত্ববোধের সাথে আমার দায়িত্বটা পালন করি মর্যাদার আমার পেছনে গোলামের মতো লেগে থাকবে। দুনিয়ার মানুষ মর্যাদার চিন্তা করে না। জাপানের মানুষ ৯ ঘণ্টা কাজ করে.. এই ৯ ঘণ্টার মধ্যে এক ঘণ্টা তাদের লেজার পিরিয়ডৃ ৪০ মিনিট তাদের লাঞ্চের জন্য, ১০ মিনিট তাদের প্রথম ব্রেকফাস্টের জন্য, আরো ১০ মিনিট হচ্ছে লাইট ব্রেকের জন্যৃ এই ঘণ্টা সময়ের ভেতরে সে তার বন্ধুবান্ধব, পরিবারের সদস্যদের মধ্যে কারো সাথে কথাবার্তা বলতে চাইলে বলতে পারবে। কিন্তু ৮ ঘন্টা তার মোবাইল সাইলেন্স বা অফ। তাদের (জাপানি) অনুভূতির কারণে আজকে বিশ্বে যদি তারা মর্যাদাশীল দেশ হয়ে দাঁড়াতে পারে তাহলে আমরা কেনো পারব না?
গোঁড়ায় গলদ: শফিকুর রহমান বলেন, বাংলাদেশকে না পারার ইতিহাস থেকে ‘পারার ইতিহাস’ তৈরি করতে হবে।
তিনি বলেন, এতদিন হয়নি বলে আগামীতে হবে না এটা আমি বিশ্বাস করতে চাই না। আমাদের গোঁড়ায় গলদ। আমাদের শিক্ষা ব্যবস্থা না নৈতিক না বৈষয়িকৃ কোনো মানের ধারে কাছেও নেই। এই শিক্ষা ব্যবস্থায় মানুষের মেধার অপচয় হয়, সময়ের অপচয় হয়, অর্থের অপচয় হয়। এই সময়ে এই অর্থ, এই মেধা বিনিয়োগ করে প্রিয় দেশ আরো উন্নত, দক্ষ, সোনার মানুষ তৈরি করতে পারত। কিন্তু সেই পরিকল্পনাটাও হয়নি। আর থাকবে কেন ভাই? এই পরিকল্পনার দায়িত্বে যারা আছেন তাদের সন্তানেরা তো এদেশে লেখাপড়া করে না। তাদের সন্তানেরা এদেশে লেখা পড়া করলে তখন তাদের মাথা থেকে জনকল্যাণমূলক বাস্তবধর্মী, প্র্যাগমেটিক সেই প্ল্যান ও পরিকল্পনা বের হয়ে আসতো।তাদের কোনো দরদ নাই এই জাতির প্রতি।
দুর্নীতির প্রসঙ্গে শফিকুর রহমান বলেন, আমি অবাক হই। ১ লাখ ২০ হাজার টাকা যিনি চাকরি পান প্রতি মাসে তিন লাখ টাকার তার সন্তানের জন্য লেখাপড়ার খরচ মেটানোর জন্য বিদেশে পাঠান। এই টাকা তিনি কোথায় পান? হ্যাঁ, আমাদের সমাজে ওই সমস্ত লোকেদের শ্বশুর বাড়ি বড় ধনী। বিয়ার সময় ধনী থাকে না। উনার হাত ধরে শ্বশুড় বাড়ির লোকেরা ধনী হয়ে যায়। কারণ জনগণের পকেট এবং কিসমত কেটে অসৎ লোকেরা যে টাকা উপার্জন করে ভয়ে নিজের একাউন্টে রাখে না।কারণ তারা দেখাতে পারবে না, তার এই টাকার উৎস কী? সে কট হয়ে যাবে। তিনি বলেন, আবার নিজের পিতৃপক্ষের যে আত্বীয়-স্বজন আছে তাদের নামেও লেখে না। কারণ ঘরের ভেতরে প্রধানমন্ত্রী আছেন অনবরত উৎসাহিত করে শ্বশুর বাড়ির ভাগ্য পরিবর্তনের জন্য। অনেকে এটা কেঁদে কেঁদে জীবনের এক পর্যায়ে এসে বলেন, আমার আমটাও গেল, আমার ছালাটাও গেল।
যাদের কাছে তারা আমানত হিসেবে রাখেন তাদেরও একটু লিস্ট নিতে হয়। তাদের সুবিধাজনক সময়ে বলে, মিয়া সাহেব আপনার জান বাঁচানোর জন্য আপনার তো বোঝা আমার ঘাড়ে রেখেছিলেন। আমি আপনাকে চিরতরে ওই বোঝার দায় থেকে মুক্তি দিয়ে এই বোঝা আমি কবুল করে নিচ্ছিৃ এটা এখন আমার। দায় যেহেতু আমি নিয়েছি, মালিকের ঠিকানাটা আমাকে দিয়ে দেন। এদিকে ফিরে তাঁকাবেন না। মানসিক ভারসাম্যহীন হয়ে অপদস্ত হয়ে দুনিয়ার বাকি জিন্দেগীগুলো তাদেরকে কাটাতে হয়। ভাইয়েরা কি হবে এতো সম্পদ দিয়ে?
চীন-ভারতের উন্নয়ন প্রসঙ্গে: চিকিৎসক শফিকুর রহমান বলেন, আমরা যদি মেধার দিক থেকে দেখি, এইচএসসি পাস করার পরে আমাদের সময়ে ট্রেন্ড ছিল প্রথমে বুয়েটে যাবে, না পাইলে মেডিকেলে আসবে, এরপরে এগ্রিকালচারে যাবে। তারপরে জেনারেল এডুকেশনে যাবে এবং সেখানে প্রায়োরিটি বেসিসে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়…এ ছিলো তখনকার ট্রেন্ড। তাহলে স্বীকার করতে হচ্ছে যে, যারা মেধাবী তারাই গিয়েছে বুয়েট অথবা ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজগুলোতে।
এই মেধাবীর কাছে কী এই জাতির কোনো কিছু পাওনা নেই? কিন্তু আমরা কী দেখি? আমরা দেখি কার্য্ত একবার একটা মিশুক আবিষ্কার করা হয়েছিলো এটা সাসটেইনেবল হয়নি। ওটাকে দেখলে মনে হতো কোন সময়ে আবার আসমানে উড়া দেয়। খুব হালকা পাতলা একটা যান.. পেছনে লেখা থাকতো আমি ছোট আমাকে ধাক্কা দেবেন না। আমাদের আবিস্কার চোখে পড়ার মতো আরো অনেক কিছু হতে পারতো। চীন গত ২৭ বছরে সেখানে দস্তুর মতো একটা রেভ্যুলেশন করেছে.. আমাদের কাছের দেশ, ভারতেও অনেক উন্নতি-অগ্রগতি হয়েছে। আমাদের এখানে প্রকৌশল সেক্টরে হয়নি কেন?
এর কারণগুলো তুলে ধরে এর পরিবর্তন আনার প্রত্যাশাও ব্যক্ত করেন জামায়াতের আমির। এফডিইউবির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি আব্দুছ ছাত্তার শাহের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় এফডিইবির কেন্দ্রীয় উপদেষ্টা এটিএম আজহারুল ইসলাম, সাইফুল আলম মিলনসহ আরো অনেকে বক্তব্য রাখেন।
সানা/আপ্র/২৭/০৯/২০২৫