ফারজানা কাশেমী : দুর্ঘটনা মানব জীবনের এক অপ্রত্যাশিত সমাচার। জীবন পরিক্রমায় তাই এই দুর্ঘটনা অনাকাঙ্ক্ষিতভাবে হাতছানি দেয়। দৈব শক্তি বলেও আবার কখনো এই বিপর্যয় এড়ানো প্রায় অসম্ভব ও অবাস্তব হয়ে যায়। নিয়তি বলে যাবতীয় দুর্ঘটনাকে আমরা মেনে নেই।
অবহেলা এক চরম বিপর্যয় এর নামান্তর। তাই এই অবহেলা পরমদায় তূল্য। এই অবহেলা ক্ষমার অযোগ্য ভুল। কারণ এই অবহেলা নামক ভুলের পরিত্রাণ হয় না। আইনগত দিক বিবেচনায় এই অবহেলা শাস্তিযোগ্য অপরাধ। অবহেলাজনিত দুর্ঘটনার ক্ষয়,ক্ষতি বহুমাত্রিক ।তেমনি অবহেলাজনিত মৃত্যু এক অপূরনিয় ক্ষতি। কোন ক্ষতিপূরনই মৃত্যুর দায়ভার এড়াতে পারেনা। নিহিত’র স্বজনদের ক্ষতিপূরন দেয়া সমগ্র শক্তির সাধ্যাতীত। আপনজনের মৃত্যুর শোক কোন ক্ষতিপূরনই মুছে যায় না। কারণ আপনজনের প্রয়োজন তার পরিবার এর কাছেই কখনই ফুরায় না।
চৎড়ীরসধঃব ঈধঁংব (নিকটবর্তী কারণ) প্রতিটি মৃত্যুর জন্য অনুসন্ধনীয়। অবহেলা যদি কোন ব্যক্তির মৃত্যুর নিকটবর্তী কারণ হয়,উক্ত অবহেলার সাথে সম্পৃক্ত ব্যক্তি বর্গ এই মৃত্যুর জন্য দায়ী বলে বিবেচিত হয়।
জবং ওঢ়ংধ খড়য়ঁরঃঁৎ( ধপপরফবহঃ রং ংঁভভরপরবহঃ ঃড় রসঢ়ষু হবমষরমবহপব) যার বাংলা অর্থ ঘটনা নিজেই কথা বলে। উদাহরণ স্বরুপ বলা যায় যে – কোন চালের দোকানে আগত ব্যক্তির কাঁধে যদি চালের বস্তা পরে এবং সে আহত হয়, তাহলে ঐ দোকানে কর্মরত ব্যক্তির অবহেলা জনিত দায়ভার কোনভাবে অস্বীকার করা যায় না। ক্ষতি পূরণ আহত ব্যক্তির আইনগত অধিকার।অস্পৃশ্য দুর্ঘটনার ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ অবান্তর বিষয়।
ঝপরবহঃবৎ জঁষব (ফধসধমব ফড়হব নু ধহরসধষ ফরৎবপঃষু)
কারো পোষা প্রাণী দ্বারা কোন ব্যক্তির ক্ষয় ক্ষতি হলে তার দায়ভার সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি এড়াতে পারে না। সুতরাং, অবহেলাজনিত সকল দুর্ঘটনার দায় সমূহ ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান, বা কৃর্তপক্ষের উপর প্রত্যক্ষভাবে আরোপিত হয়।
কারো মৃত্যু ঘটানোর উদ্দেশ্য না থাকা স্বত্তে ও যদি কোন ব্যক্তির কাজের সমীপে অন্য ব্যক্তির মৃত্যুর কারণ হয় তাকে পঁষঢ়ধনষব যড়সরপরফব হড়ঃ ধসড়ঁহঃরহম ঃড় সঁৎফবৎ ধরা হয়। যা বাংলাদেশে প্রচলিত আইন অনুসারে শাস্তিযোগ্য অপরাধ। (ঝবপঃরড়হ ৩০৪, চবহধষ ঈড়ফব ১৮৬০).
জিহাদ নামের একটি ছোট শিশু, শাহাজানপুর রেলওয়ে কলোনীর খুব কাছে ম্যানহোলে ডুবে মারা যায়। ম্যানহোলের ঢাকনা না থাকার মত অবহেলার জন্য ওয়াসা কৃর্তপক্ষ কে দায়ী করেন মহামান্য আদালত। শিশু জিহাদ এর পরিবারকে ক্ষতিপূরুন দিতে সংশ্লিষ্ট আদালত নির্দেশনা প্রদান করেন।
অবহেলা জনিত সকল মৃত্যু বন্ধ হোক।শুধুমাত্র ক্ষতিপূরুন একটি মৃত্যুর জন্য যথেষ্ট নয়।কিংবা দুঃখ প্রকাশ, ক্ষমা প্রার্থনা,শান্তনা প্রদর্শন ও অবহেলাজনিত মৃত্যুর জন্য সমোচিত উত্তর নয়।শুধু আইনের যথাযথ প্রয়োগ অবহেলাজনিত মৃত্যু রুখে দিতে যথেষ্ট নয়।সহমর্মিতা, মানবিকতা, সুহৃদতা অবহেলা জনিত সকল মৃত্যু রোধে সহায়ক।
আইনজীবী
সুপ্রিম কোর্ট অব বাংলাদেশ