ঢাকা ১০:৫৯ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১০ মে ২০২৫

ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে দাঁড়ালে আইনজীবীর সনদ বাতিল

  • আপডেট সময় : ০১:১৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ নভেম্বর ২০২১
  • ৬৫ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো মামলায় আইনজীবী থাকার পরও ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে এসে দাঁড়ালে ওই আইনজীবীর সনদ বাতিল করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
গতকাল সোমবার বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী আইনজীবী ছাড়াই ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মামলার নিষ্পত্তির আবেদন জানানোর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এমন মন্তব্য করেন।
মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) থেকে যারা সরাসরি দাঁড়াবে তাদের আইনজীবী থাকলে সেই আইনজীবীর সনদ আমরা পাচঁজন মিলে বাতিল করে দেবো।’
এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার কাজ শুরু হলে প্রথমেই দুই নারী বিচারপ্রার্থী দাঁড়িয়ে তাদের চাকরি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে আবেদন করেন। মানবিক দৃষ্টি দিয়ে আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।
তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আইন মাফিক চলতে হবে। মানবিক আবেদন করবেন সরকারের কাছে। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব না। আমরা দেখবো আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে। মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে সরকার। মানবিক এতটুকুই করতে পারবো মামলাটা তাড়াতাড়ি শুনবো।’ এরপর মঙ্গলবার তাদের মামলাটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন।
ওই দুই নারীর আবেদনের পরই আরেকজন বিচারপ্রার্থী দাঁড়ান তার আবেদন নিয়ে। তিনি নিজেকে বেকার যুবক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েছি। মামলাটি আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে। কিন্তু রেলওয়ে আমাদের নিয়োগ দিচ্ছে না।’
এটা দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা তো মহা মুশকিল। আপনার আইনজীবী কই?’ এসময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘চেম্বার আদালতে আবেদন না দিয়ে আপিলে চলে আসছেন কেন? একটা ফ্যাশন শুরু হয়ে গেছে আইনজীবী ছাড়া কোর্টে এসে দাঁড়িয়ে যাওয়া।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আইনজীবী কে? জবাবে ওই বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘পঙ্কজ কুমার কু-ু।’ তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘আপনার আইনজীবী থাকতে আপনি এখানে দাড়াঁতে পারেন না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড যিনি আছেন তাকে দিয়ে আবেদন দেন।’ এরপর আরেকজন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমি মসজিদের মুয়াজ্জিন। আমি মানুষের যাকাত ফেতরা নিয়ে খাই। স্যার আমার মামলটা বন্ধ হয়ে রয়েছে। যদি দয়া করে একটু দেখতেন।’
একের পর এক এভাবে আইনজীবী ছাড়া সরাসরি কোর্টে দাঁড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এরপর থেকে যেসব আইনজীবীদের ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে এসে দাঁড়াবে, আমরা তার সনদ বাতিল করে দেবো। আগামীকাল থেকে যারা দাঁড়াবে তাদের আইনজীবী থাকলে তাদের সনদ আমরা পাচঁজন মিলে বাতিল করে দেবো।’ তার নিয়োগ করা আইনজীবী আছে কি-না আদালতের প্রশ্নের জবাবে ওই বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘উকিল আছে। অনেক টাকা চায়।’ তখন আদালত বলেন, ‘আপনি আইনজীবী না রেখে থাকলে আপনারটা শুনবো। আপনার মামলার নম্বর দিয়ে যান। পরে আদালত কার্যতালিকা অনুসারে শুনানি শুরু করেন।’

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে দাঁড়ালে আইনজীবীর সনদ বাতিল

আপডেট সময় : ০১:১৩:৫৩ অপরাহ্ন, সোমবার, ১ নভেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক : কোনো মামলায় আইনজীবী থাকার পরও ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে এসে দাঁড়ালে ওই আইনজীবীর সনদ বাতিল করে দেওয়া হবে বলে মন্তব্য করেছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন।
গতকাল সোমবার বেশ কয়েকজন বিচারপ্রার্থী আইনজীবী ছাড়াই ভার্চুয়ালি সংযুক্ত হয়ে মামলার নিষ্পত্তির আবেদন জানানোর এক পর্যায়ে প্রধান বিচারপতি এমন মন্তব্য করেন।
মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আগামীকাল (আজ মঙ্গলবার) থেকে যারা সরাসরি দাঁড়াবে তাদের আইনজীবী থাকলে সেই আইনজীবীর সনদ আমরা পাচঁজন মিলে বাতিল করে দেবো।’
এদিন সকালে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে মামলার কাজ শুরু হলে প্রথমেই দুই নারী বিচারপ্রার্থী দাঁড়িয়ে তাদের চাকরি সংক্রান্ত মামলা নিষ্পত্তি করতে আবেদন করেন। মানবিক দৃষ্টি দিয়ে আদালতের কাছে বিচার প্রার্থনা করেন।
তখন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেন বলেন, ‘আমাদের আইন মাফিক চলতে হবে। মানবিক আবেদন করবেন সরকারের কাছে। আমরা মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখব না। আমরা দেখবো আইনের দৃষ্টিকোণ থেকে। মানবিক দৃষ্টিতে দেখবে সরকার। মানবিক এতটুকুই করতে পারবো মামলাটা তাড়াতাড়ি শুনবো।’ এরপর মঙ্গলবার তাদের মামলাটি শুনানির জন্য দিন নির্ধারণ করে দেন।
ওই দুই নারীর আবেদনের পরই আরেকজন বিচারপ্রার্থী দাঁড়ান তার আবেদন নিয়ে। তিনি নিজেকে বেকার যুবক পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘আমি বাংলাদেশ রেলওয়েতে চাকরির জন্য দরখাস্ত করেছিলাম। ওই মামলায় হাইকোর্ট থেকে রায় পেয়েছি। মামলাটি আপিল বিভাগে পেন্ডিং আছে। কিন্তু রেলওয়ে আমাদের নিয়োগ দিচ্ছে না।’
এটা দেখে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এটা তো মহা মুশকিল। আপনার আইনজীবী কই?’ এসময় আপিল বিভাগের বিচারপতি ওবায়দুল হাসান বলেন, ‘চেম্বার আদালতে আবেদন না দিয়ে আপিলে চলে আসছেন কেন? একটা ফ্যাশন শুরু হয়ে গেছে আইনজীবী ছাড়া কোর্টে এসে দাঁড়িয়ে যাওয়া।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার আইনজীবী কে? জবাবে ওই বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘পঙ্কজ কুমার কু-ু।’ তখন বিচারপতি ইমান আলী বলেন, ‘আপনার আইনজীবী থাকতে আপনি এখানে দাড়াঁতে পারেন না।’
প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘আপনার মামলার অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড যিনি আছেন তাকে দিয়ে আবেদন দেন।’ এরপর আরেকজন আদালতের সামনে দাঁড়িয়ে বলেন, ‘আমি গরিব মানুষ। আমি মসজিদের মুয়াজ্জিন। আমি মানুষের যাকাত ফেতরা নিয়ে খাই। স্যার আমার মামলটা বন্ধ হয়ে রয়েছে। যদি দয়া করে একটু দেখতেন।’
একের পর এক এভাবে আইনজীবী ছাড়া সরাসরি কোর্টে দাঁড়ানোয় ক্ষোভ প্রকাশ করে প্রধান বিচারপতি বলেন, ‘এরপর থেকে যেসব আইনজীবীদের ক্লায়েন্ট সরাসরি কোর্টে এসে দাঁড়াবে, আমরা তার সনদ বাতিল করে দেবো। আগামীকাল থেকে যারা দাঁড়াবে তাদের আইনজীবী থাকলে তাদের সনদ আমরা পাচঁজন মিলে বাতিল করে দেবো।’ তার নিয়োগ করা আইনজীবী আছে কি-না আদালতের প্রশ্নের জবাবে ওই বিচারপ্রার্থী বলেন, ‘উকিল আছে। অনেক টাকা চায়।’ তখন আদালত বলেন, ‘আপনি আইনজীবী না রেখে থাকলে আপনারটা শুনবো। আপনার মামলার নম্বর দিয়ে যান। পরে আদালত কার্যতালিকা অনুসারে শুনানি শুরু করেন।’