নিজস্ব প্রতিবেদক : পহেলা ফাল্গুনে বাসন্তী শাড়িতে খোঁপায় ফুল দিয়ে সাজবেন নারীরা; পুরুষরা উপহার হিসেবে নিয়ে আসবেন ফুল। বসন্ত উদযাপনের অনুষঙ্গ হিসেবে ফুল ফের সবার হাতে হাতে দেখা যাবে। এমনই আশায় বুক বেঁধেছেন রাজধানীর শাহবাগের ফুল দোকানিরা। তবে করোনাভাইরাসের নতুন ধরন ওমিক্রনের কারণে ভাইরাস সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় বেচাকেনার পরিস্থিতি নিয়ে সংশয়ও রয়েছে ব্যবসায়ীদের কারও কারও মনে। কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে দুই বছরের মন্দা পার করে এবার পহেলা ফাল্গুন ও ভালোবাসা দিবস সামনে রেখে ফুল বিক্রি নিয়ে ক্রেতার আশায় দোকানিরা। এ দুই উৎসবের পরের সপ্তাহেই রয়েছে ভাষা শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস একুশে ফেব্রুয়ারি। এ দুই উপলক্ষকে ঘিরে শাহবাগের ফুলের দোকানিরা বলছেন, প্রতিবছর ফেব্রুয়ারি মাস তাদের ব্যবসার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সময়। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ঠেকাতে সব ধরনের সামাজিক-সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে ভাটা পড়ায় দুই বছর ফুলের বাজারে ছিল হতাশা। ভরা মৌসুমে ফুল বেচতে না পেরে মাঠপর্যায়ে অনেক চাষি চাষও বন্ধ করেছেন।
কঠিন এক সময় পার করে এবার বিভিন্ন দিবস এবং ১৫ ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু হতে যাওয়া অমর একুশে গ্রন্থমেলা সামনে রেখে ফুলের পসরা সাজানোর প্রস্তুতি নিয়েছেন শাহবাগের খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা। ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতির অধীনে শতাধিক তালিকাভুক্ত ব্যবসায়ী পাইকারি ফুলের বাজারে নেতৃত্ব দেন। আর শাহবাগ বটতলা ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির অধীনে আছে খুচরা ফুল বিক্রির ৪০টি দোকান। মহামারী শুরুর আগের ফেব্রুয়ারিতেও এ বাজারে প্রায় ৪০ কোটি টাকার ফুল বিক্রি হয়েছে। ভিন্ন বাস্তবতায় এবার লক্ষ্যটা ততটা বড় নেই ফুল ব্যবসায়ীদের। ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির করতে পারলেই খুশি। ঢাকা ফুল ব্যবসায়ী কল্যাণ বহুমুখী সমবায় সমিতি এবং বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি শ্রী বাবুল প্রসাদ বলেন, “আমাদের ফুল ব্যবসার মৌসুম এখন। দীর্ঘদিন ফুলের বাজারে মন্দা ছিল। মন্দা কাটাতে আমরা ভ্যালেনটাইন ডে ও একুশে ফেব্রুয়ারি উপলক্ষে ২০ থেকে ২৫ কোটি টাকার ফুল বিক্রির প্রত্যাশা করছি। সেজন্য চলছে প্রস্তুতি। শাহবাগের পাইকারি ফুল বিক্রেতা মনির হোসেন বলেন, দুই বছর ধরে ব্যবসায় লোকসান যাচ্ছে। মাঝখানে কিছুটা ভালো হলেও এখন আবার বিয়ে-শাদীসহ সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে ওমিক্রন। আমাদের লক্ষ্যই মূলত ভ্যালেনটাইন ডে ও একুশে ফেব্রুয়ারি। আশা করি, সামনের কয়েকটা দিবসে ঘুরে দাঁড়াতে পারব। ক্ষুদ্র ফুল ব্যবসায়ী সমবায় সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. শামীম আহমেদ বলেন, “কোভিডের আগে প্রতি দোকানে কম করে হলেও দৈনিক ৪০ হাজার টাকা বিক্রি হত। মাঝে লকডাউনে দোকান বন্ধ ছিল। খোলার পর পাঁচ হাজার টাকার ফুল বিক্রি করতেও কষ্ট হয়ে যেত। শাহবাগে সবচেয়ে বেশি ফুল আসে যশোরের গদখালি ও চুয়াডাঙ্গার জীবন নগর থেকে। গোলাপ ফুল বেশি আসে সাভার ও আশুলিয়ার গোলাপ গ্রাম থেকে। মহামারীর কারণে অনেকে ফুল চাষ বন্ধ করে দিয়েছে উল্লেখ করে শামীম আহমেদ বলেন, “যশোরে হেক্টরের পর হেক্টর ফুলের জমি। এবার আমরা গিয়ে দেখলাম, তিন ভাগের একভাগও ফুল নাই। বিক্রি ভালো হলে তো উৎপাদন; অনেক ফুল ক্ষেত বন্ধ হয়ে গেছে। এদিকে শাহবাগে খুচরা ফুল বিক্রেতাদের জন্য সঙ্কট হয়ে দেখা দিয়েছে মেট্রোরেল নির্মাণ প্রকল্প। সমিতির ৪০টি দোকানের মধ্যে ২৭টিই মেট্রোরেল প্রকল্পের কবলে পড়েছে। ওই দোকানগুলোর অবস্থা তেমন সুবিধাজনক নয়। তবে গাবতলীতে নির্মাণাধীণ দেশের কেন্দ্রীয় পাইকারি ফুল মার্কেট চালু হলে সমস্যা কাটবে।
ক্রেতার আশায় ফুলের বিক্রেতারা
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ