ঢাকা ০৯:৫১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ মে ২০২৫

ক্রেতারা আগে বেশি দাম দিক, তারপর বাড়তি মজুরি : বিজিএমইএ

  • আপডেট সময় : ০২:৩৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩
  • ৮০ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক : পশ্চিমা ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাকের বাড়তি দাম দিলে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হবে কি না, এই প্রশ্নে জবাব না দিয়ে আরও অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ।
সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, “অতীতেও তারা (বিদেশি ক্রেতা) বলেছিল (দাম বাড়ানো)। আমরা আবার তাদের চিঠি দেব, তাদের সঙ্গে বসব, কেস-টু-কেস আলোচনা করে দেখব তারা কোন কোন কাজ ও কারখানায় মূল্য বাড়ায়। মূল্য বাড়ানো না পর্যন্ত এ বিষয়ে তো বলা যাবে না।”
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণার পরও আরও বেশি মজুরির দাবিতে ক্রমাগত শ্রমিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে রোববার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি উঠে।
গত মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের পরও বাড়তি মজুরির দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ থামছে না। এর মধ্যে শ্রমিক আন্দোলনের কথা বিবেচনায় রেখে পোশাকের ক্রয়মূল্য ৫ থেকে ৬ শতাংশ বাড়াতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছে এক হাজার পশ্চিমা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জোট আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন। পোশাকের মজুরি বাড়লে শ্রমিককেও বাড়তি মজুরি দেওয়া সম্ভব বলে মত প্রকাশ করছেন অনেকেই। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ প্রধান দাবি করেন, যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়নই তাদের জন্য ‘বিশাল চ্যালেঞ্জ’। তিনি বলেন, “আমাদের সক্ষমতার মূলে রয়েছে শ্রমিকদের মূল্য সংযোজন। কারণ, আমাদের এখানে কোনো তুলার মতো কাঁচামাল নেই।”
শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শ্রমিকদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে আপনাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ান এবং শিল্পকে টিকে থাকতে সহায়তা করুন। শিল্প ভালো থাকলে আপনারাও ভালো থাকবেন।”
তৈরি পোশাক শিল্প খাত ‘এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ দাবি করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি। এই শিল্প নিয়ে ‘চক্রান্ত চলছে’ অভিযোগ এনে হামলা ও ভাঙচুর বন্ধ রাখা না হলে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ কারখানা বন্ধ রাখার ইঙ্গিতও দেন তিনি। দাবি করেন, এটি উদ্যোক্তার ‘সাংবিধানিক অধিকার’।
‘উসকানি দিয়ে’ কারখানায় আক্রমণ করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ এনে বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পোশাক শিল্পের যে ‘গভীর সংকট’, তা কখনও গণমাধ্যমে উঠে আসে না।
ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের পর তা মেনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা।
প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পোশাক শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়। প্রতিবারই দেখা গেছে, শ্রমিকরা একটি অঙ্ক চেয়ে আন্দোলনে নামে, মালিকপক্ষ দিতে চায় তার চেয়ে অনেক কম। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডে দুই পক্ষের প্রস্তাবের পর দর কষাকষি করে একটি মজুরি ঘোষণা করা হয়। এরপরও শ্রমিক বিক্ষোভ চলতে থাকে। এতে প্রতিবারই একাধিক শ্রমিকের প্রাণ ঝরে। এবারও পাঁচ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি আর শ্রমিকদের মধ্যেকার মতভেদ কেন, এই প্রশ্নের জবাবও কখনও পাওয়া যায়নি। শ্রমিকদের কেউ ন্যূনতম মজুরি চাইছে ২৩ হাজার টাকা, কেউ চাইছে ২৫ হাজার টাকা। তবে মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি দাবি করেন ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। বিজিএমইএ প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। পরে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে তারা ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি দেওয়ার প্রস্তাব করে আর বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি তা মেনেও নেন গত মঙ্গলবার। কিন্তু এরপরও বিক্ষোভ থামছে না। প্রতিদিনই গাজীপুর, সাভার বা মিরপুরের কারখানা থেকে বের হয়ে শ্রমিকরা আরও বেশি মজুরির দাবি জানিয়েই যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘাতও হচ্ছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, কোথাও কোথও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে কারখানাও বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা না পেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ: রোববার পর্যন্ত সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় ২৫টি কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষা জন্য ১৩০টি কারখানা বন্ধ করেছে মালিকপক্ষ।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিক ভাইবোনদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিক ভাই-বোনেরা কাজ না করেন, কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, কারখানা ভাঙচুর করেন, তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ভাই-বোন ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষায় শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।
“যতদিন না শ্রমিক ভাঙচুর বন্ধ হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারছে ততদিন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ শিল্প ও সম্পদ রক্ষায় ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। প্রতিটি উদ্যোক্তার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে বহিরাগতদের হাত থেকে তার নিজস্ব শিল্প ও সম্পদ রক্ষার।”
নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার বিষয়ে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, “অনেক কারখানায় কাজ কম, ক্রেতারা নতুন করে অর্ডার দেয় বন্ধ রেখেছেন, তাই আমরা নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরিস্থিতি অনূকূলে এলে আবার নতুন নিয়োগদান করা হবে।” কোনো কারখানার যদি কাজ বেশি থাকে, তাহলে যে কারখানায় কাজ কম, সেখান থেকে কাজ করিয়ে নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এতে করে কম কাজের কারখানাগুলোকে সাহায্য করা হবে এবং সব কারখানাগুলোর কাজের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং যে ওভার ক্যাপাসিটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা প্রশমিত হবে।”
পোশাক শিল্প বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে: বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এ মূহূর্তে প্রবাসী আয়খাতে মন্থর ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই শিল্পকে নিয়ে ‘অপপ্রচার হচ্ছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “বলা হয়েছে ইপিলিয়ন কারখানায় ৩ জন মারা গেছে, যা মোটেও সত্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ, যারা এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।” শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, “কোনো কারণে এ শিল্পখাত অস্তিত্ব হারালে লাখো শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বে, যা কাম্য নয়।” বিশাল এই শ্রমগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে, এমন কোনো খাত এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি মন্তব্য করে বিজিএমইএ স।ভাপতি বলেন, “সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, এত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে, তা মোকাবেলার সক্ষমতা এ অর্থনীতির নেই।”
উসকানি দিয়ে অশান্ত করার অভিযোগ: ‘শান্ত’ শ্রমিক গোষ্ঠীকে ‘উসকানি দিয়ে’ অশান্ত করার অভিযোগ এনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। “মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক ‘অযৌক্তিক দাবিতে’ বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেছে, কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।” তিনি বলেন, “দুঃখের বিষয় যে, যখন মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার গঠিত নূন্যতম মজুরি বোর্ড কাজ করছিল, তখনও কারখানা ভাঙচুর, কারখানায় অগ্নি-সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।”

গত ৫ বছর ধরে শিল্পে একটি ‘স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করেছে’ এবং এর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অভিনন্দনও পাচ্ছেন জানিয়ে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, “তবে অনেকেই আছেন, যারা আমাদের এই উন্নতিতে খুশি হতে পারছেন না। এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যে কোনোভাবেই হোক বিঘিœত করতে চান।”
গণমাধ্যমে সংকট উঠে আসে না: পোশাক শিল্পের ‘অভ্যন্তরের গভীরতম সংকটের বিষয়টি’ গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশিত উঠে আসছে না বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ এর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও ৩ হাজার ৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২ হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি বিজিএমইএতে সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। তাই তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এরা সাব-কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০-২১ সালে ৩১৭টি এবং পরে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে আরও ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায় জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এমন অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা লোকসান দিয়েও কারখানা সচল রেখেছেন, শুধুমাত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য। শ্রমিকদেরকে বেতন দিচ্ছেন ঋণের বোঝা মাথায় রেখে।” হরতাল, অবরোধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক মন্দা, প্রকৃত রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসিত না হওয়া, ক্রয়াদেশ বাতিল, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে ঝরে গেছেন জানিয়ে বিজিএমই সভাপতি বলেন, “পোশাক শিল্পের সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের কান্না।”
বেড়েছে খরচ: ২০১০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি তিন গুণ বেড়েছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “সময়ের পরিক্রমায় নূন্যতম মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও শিল্পের সক্ষমতা সে অর্থে খুব বেশি বাড়েনি।” বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি ২৩.৩৩ শতাংশ কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে এই হার যথাক্রমে ৩৩ ও ৩৪ শতাংশ। এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি কমেছে ১২.৭১ শতাংশ, আর অগাস্টে কমেছে ২৬ শতাংশের বেশি। সামগ্রিকভাবে গত অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১৬ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দরপতন শুরু হয়েছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “যেটা শিল্পের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করছে।” আন্তর্জাতিক কারণে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। জানান, ২০১৮ সালের তুলানায় গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ আর বিদ্যুতের বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ৫ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। উন্নত দেশগুলো ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোয় ক্রেতাদের খরচও বেড়ে গেছে।
কারণ ছাড়াই হামলা: শ্রমিক অসন্তোষে হামলার শিকার ২৫টি কারখানার একটি অনন্ত কোম্পানিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ এর পরিচালক ইনামুল হক খান বাবুল বলেন, “আমাদের কারখানায় ৭০-৮০ জন মিলে হামলা, ভাঙচুর আর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তাদের একটি অংশ কিশোর। তারা কোনো কারণ ছাড়াই তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তা-ব চালায়।” তিনি বলেন, “একটি গ্রুপ কাটিং সেকশনে গিয়ে কাপড়ে আগুন দেয়, একটি গ্রুপ ভাঙচুর চালায় ও কোম্পানির ট্যাব, ল্যাপটপ ও কর্মকর্তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়, তৃতীয় গ্রুপ কোম্পানির কর্মকর্তাদের মারধর করে।”
সংকট কাটিয়ে উৎপাদনে সাভারের ৭০ কারখানা: শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অসন্তোষের জেরে শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পরদিনই খুলে দেওয়া হয়েছে ৭০টি কারখানা। গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার টঙ্গীবাড়ী, গৌরিপুর, আশুলিয়া, শ্রীখন্ডিয়া এলাকার বেশির ভাগ কারখানা খোলা রয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তবে জিরাবো এলাকার বেশির ভাগ কারখানা খোলা রাখার চেষ্টা করলে কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বের হয়ে অন্যান্য কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়লে ওই এলাকার সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তাই পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে গতকাল ১৩০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এদিন শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে গিয়ে অনির্দিষ্টকালের নোটিশ দেখে ফিরে যান। তবে বন্ধ ঘোষণার পরের দিনই (রোববার) শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ৭০টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকরা সকালে উপস্থিত হয়ে উৎপাদন শুরু করেছেন। তবে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের দুই পাশের বেশির ভাগ কারখানাগুলো এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার এক কারখানার শ্রমিক বলেন, রোববার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদানের উদ্দেশ্য কারখানায় আসেন। তবে শ্রমিকরা বেলা ১১টা পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রাখেন। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের বোঝালে বেলা ১২টার দিকে উৎপাদন শুরু করেন শ্রমিকরা। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গত শনিবার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকার ১৩০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আজ ৭০টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রোববার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম জানান, শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ ১২টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ক্রেতারা আগে বেশি দাম দিক, তারপর বাড়তি মজুরি : বিজিএমইএ

আপডেট সময় : ০২:৩৪:১১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১২ নভেম্বর ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : পশ্চিমা ক্রেতারা বাংলাদেশের পোশাকের বাড়তি দাম দিলে ঘোষিত ন্যূনতম মজুরির চেয়ে বেশি বেতন দেওয়া হবে কি না, এই প্রশ্নে জবাব না দিয়ে আরও অপেক্ষায় থাকার কথা জানিয়েছে তৈরি পোশাক উৎপাদন ও রপ্তানিকারকদের সমিতি বিজিএমইএ।
সমিতির সভাপতি ফারুক হাসান বলেছেন, “অতীতেও তারা (বিদেশি ক্রেতা) বলেছিল (দাম বাড়ানো)। আমরা আবার তাদের চিঠি দেব, তাদের সঙ্গে বসব, কেস-টু-কেস আলোচনা করে দেখব তারা কোন কোন কাজ ও কারখানায় মূল্য বাড়ায়। মূল্য বাড়ানো না পর্যন্ত এ বিষয়ে তো বলা যাবে না।”
শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ৮ হাজার ৩০০ টাকা থেকে ১২ হাজার ৫০০ টাকা ঘোষণার পরও আরও বেশি মজুরির দাবিতে ক্রমাগত শ্রমিক বিক্ষোভ ও সহিংসতার মধ্যে রোববার রাজধানীর উত্তরায় বিজিএমইএ ভবনে সংবাদ সম্মেলনে এই প্রসঙ্গটি উঠে।
গত মঙ্গলবার পোশাক শ্রমিকদের ন্যূনতম মজুরি ১২ হাজার ৫০০ টাকা নির্ধারণের পরও বাড়তি মজুরির দাবিতে শ্রমিক বিক্ষোভ থামছে না। এর মধ্যে শ্রমিক আন্দোলনের কথা বিবেচনায় রেখে পোশাকের ক্রয়মূল্য ৫ থেকে ৬ শতাংশ বাড়াতে রাজি থাকার কথা জানিয়েছে এক হাজার পশ্চিমা ফ্যাশন ব্র্যান্ডের জোট আমেরিকান অ্যাপারেল অ্যান্ড ফুটওয়্যার অ্যাসোসিয়েশন। পোশাকের মজুরি বাড়লে শ্রমিককেও বাড়তি মজুরি দেওয়া সম্ভব বলে মত প্রকাশ করছেন অনেকেই। সংবাদ সম্মেলনে বিজিএমইএ প্রধান দাবি করেন, যে মজুরি নির্ধারণ করা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়নই তাদের জন্য ‘বিশাল চ্যালেঞ্জ’। তিনি বলেন, “আমাদের সক্ষমতার মূলে রয়েছে শ্রমিকদের মূল্য সংযোজন। কারণ, আমাদের এখানে কোনো তুলার মতো কাঁচামাল নেই।”
শ্রমিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, “শ্রমিকদের প্রতি আমাদের উদাত্ত আহ্বান, আপনারা আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করে আপনাদের উৎপাদনশীলতা বাড়ান এবং শিল্পকে টিকে থাকতে সহায়তা করুন। শিল্প ভালো থাকলে আপনারাও ভালো থাকবেন।”
তৈরি পোশাক শিল্প খাত ‘এক সংকটময় পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে যাচ্ছে’ দাবি করে পর্যাপ্ত নিরাপত্তা দেওয়ার দাবি জানান বিজিএমইএ সভাপতি। এই শিল্প নিয়ে ‘চক্রান্ত চলছে’ অভিযোগ এনে হামলা ও ভাঙচুর বন্ধ রাখা না হলে ‘অনির্দিষ্টকালের জন্য’ কারখানা বন্ধ রাখার ইঙ্গিতও দেন তিনি। দাবি করেন, এটি উদ্যোক্তার ‘সাংবিধানিক অধিকার’।
‘উসকানি দিয়ে’ কারখানায় আক্রমণ করা হচ্ছে, এমন অভিযোগ এনে বিজিএমইএর সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, পোশাক শিল্পের যে ‘গভীর সংকট’, তা কখনও গণমাধ্যমে উঠে আসে না।
ন্যূনতম মজুরি সাড়ে ১২ হাজার টাকা নির্ধারণের পর তা মেনে বিক্ষোভ চালিয়ে যাচ্ছেন পোশাক শ্রমিকরা।
প্রতি পাঁচ বছর অন্তর পোশাক শিল্প খাতে ন্যূনতম মজুরি কাঠামো ঘোষণা করা হয়। প্রতিবারই দেখা গেছে, শ্রমিকরা একটি অঙ্ক চেয়ে আন্দোলনে নামে, মালিকপক্ষ দিতে চায় তার চেয়ে অনেক কম। ন্যূনতম মজুরি বোর্ডে দুই পক্ষের প্রস্তাবের পর দর কষাকষি করে একটি মজুরি ঘোষণা করা হয়। এরপরও শ্রমিক বিক্ষোভ চলতে থাকে। এতে প্রতিবারই একাধিক শ্রমিকের প্রাণ ঝরে। এবারও পাঁচ জন শ্রমিকের মৃত্যু হয়েছে।
মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি আর শ্রমিকদের মধ্যেকার মতভেদ কেন, এই প্রশ্নের জবাবও কখনও পাওয়া যায়নি। শ্রমিকদের কেউ ন্যূনতম মজুরি চাইছে ২৩ হাজার টাকা, কেউ চাইছে ২৫ হাজার টাকা। তবে মজুরি বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি সিরাজুল ইসলাম রনি দাবি করেন ২০ হাজার ৩৯৩ টাকা। বিজিএমইএ প্রথমে ১০ হাজার ৪০০ টাকা। পরে শ্রমিক বিক্ষোভের মুখে তারা ১২ হাজার ৫০০ টাকা মজুরি দেওয়ার প্রস্তাব করে আর বোর্ডে শ্রমিক প্রতিনিধি তা মেনেও নেন গত মঙ্গলবার। কিন্তু এরপরও বিক্ষোভ থামছে না। প্রতিদিনই গাজীপুর, সাভার বা মিরপুরের কারখানা থেকে বের হয়ে শ্রমিকরা আরও বেশি মজুরির দাবি জানিয়েই যাচ্ছেন। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে তাদের সংঘাতও হচ্ছে। এর মধ্যে বিজিএমইএ নতুন নিয়োগ বন্ধ করে দেওয়ার ঘোষণা দিয়েছে, কোথাও কোথও নিরাপত্তাহীনতার কথা বলে কারখানাও বন্ধ রাখা হয়েছে।
নিরাপত্তা না পেলে অনির্দিষ্টকালের জন্য কারখানা বন্ধ: রোববার পর্যন্ত সাভারের আশুলিয়া ও গাজীপুরের কোনাবাড়ী এলাকায় ২৫টি কারখানায় হামলা-ভাঙচুরের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি ফারুক হাসান বলেন, “নিরাপত্তা ও সম্পত্তি রক্ষা জন্য ১৩০টি কারখানা বন্ধ করেছে মালিকপক্ষ।”
লিখিত বক্তব্যে তিনি বলেন, “দেশ ও শিল্পের স্বার্থে, শ্রমিক ভাইবোনদের কর্মসংস্থানকে সুরক্ষিত রাখতে, যদি কোনো কারখানায় শ্রমিক ভাই-বোনেরা কাজ না করেন, কাজ না করে কারখানা থেকে বের হয়ে যান, কারখানা ভাঙচুর করেন, তবে কারখানা কর্তৃপক্ষ, শ্রমিক ভাই-বোন ও সম্পদের নিরাপত্তা রক্ষায় শ্রম আইনের ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন।
“যতদিন না শ্রমিক ভাঙচুর বন্ধ হচ্ছে, আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীগুলো পর্যাপ্ত নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে না পারছে ততদিন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ শিল্প ও সম্পদ রক্ষায় ১৩ (১) ধারায় কারখানা বন্ধ রাখতে পারবেন। প্রতিটি উদ্যোক্তার সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে বহিরাগতদের হাত থেকে তার নিজস্ব শিল্প ও সম্পদ রক্ষার।”
নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখার বিষয়ে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, “অনেক কারখানায় কাজ কম, ক্রেতারা নতুন করে অর্ডার দেয় বন্ধ রেখেছেন, তাই আমরা নতুন নিয়োগ বন্ধ রাখতে বলেছি। পরিস্থিতি অনূকূলে এলে আবার নতুন নিয়োগদান করা হবে।” কোনো কারখানার যদি কাজ বেশি থাকে, তাহলে যে কারখানায় কাজ কম, সেখান থেকে কাজ করিয়ে নেবে জানিয়ে তিনি বলেন, “এতে করে কম কাজের কারখানাগুলোকে সাহায্য করা হবে এবং সব কারখানাগুলোর কাজের মধ্যে একটি ভারসাম্য বজায় থাকবে এবং যে ওভার ক্যাপাসিটি পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তা কিছুটা প্রশমিত হবে।”
পোশাক শিল্প বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে: বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এ মূহূর্তে প্রবাসী আয়খাতে মন্থর ধারা পরিলক্ষিত হচ্ছে। এ অবস্থায় রপ্তানি আয়ের অন্যতম প্রধান খাত তৈরি পোশাক শিল্প বিশেষ মনযোগের দাবি রাখে।” সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে এই শিল্পকে নিয়ে ‘অপপ্রচার হচ্ছে’ দাবি করে তিনি বলেন, “বলা হয়েছে ইপিলিয়ন কারখানায় ৩ জন মারা গেছে, যা মোটেও সত্য নয়। আমরা এর তীব্র প্রতিবাদ জানাই। সরকারের প্রতি আমাদের একান্ত অনুরোধ, যারা এ ধরনের অপতৎপরতায় লিপ্ত, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করুন।” শিল্পে অস্থিরতা সৃষ্টি হলে শ্রমিকরাই সবচেয়ে বেশি বিপাকে পড়বেন জানিয়ে ফারুক হাসান বলেন, “কোনো কারণে এ শিল্পখাত অস্তিত্ব হারালে লাখো শ্রমিক ভাইবোন কর্মহীন হয়ে পড়বে, যা কাম্য নয়।” বিশাল এই শ্রমগোষ্ঠী কর্মহীন হয়ে পড়লে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা যাবে, এমন কোনো খাত এখন পর্যন্ত গড়ে উঠেনি মন্তব্য করে বিজিএমইএ স।ভাপতি বলেন, “সবচেয়ে বিপজ্জনক হলো, এত শ্রমিক কর্মহীন হয়ে পড়লে আর্থ-সামাজিক প্রেক্ষাপটে যে ভারসাম্যহীনতা সৃষ্টি হবে, তা মোকাবেলার সক্ষমতা এ অর্থনীতির নেই।”
উসকানি দিয়ে অশান্ত করার অভিযোগ: ‘শান্ত’ শ্রমিক গোষ্ঠীকে ‘উসকানি দিয়ে’ অশান্ত করার অভিযোগ এনে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, মজুরি বৃদ্ধির পরও আন্দোলনের নামে বিভিন্ন জায়গায় কারখানা ভাঙচুর করা হচ্ছে। “মজুরি ঘোষণার পর থেকে বেশ কিছু কারখানায় অজ্ঞাতনামা কিছু উচ্ছৃঙ্খল শ্রমিক ‘অযৌক্তিক দাবিতে’ বেআইনিভাবে কর্মবিরতি পালন করে কর্মকর্তাদের মারধর করেছে, কারখানার ভেতরে ব্যাপক ভাঙচুর ও ধ্বংসযজ্ঞ চালিয়েছে।” তিনি বলেন, “দুঃখের বিষয় যে, যখন মজুরি বৃদ্ধির বিষয়ে সরকার গঠিত নূন্যতম মজুরি বোর্ড কাজ করছিল, তখনও কারখানা ভাঙচুর, কারখানায় অগ্নি-সংযোগের ঘটনা ঘটেছে।”

গত ৫ বছর ধরে শিল্পে একটি ‘স্থিতিশীল ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বিরাজ করেছে’ এবং এর জন্য আন্তর্জাতিকভাবে অভিনন্দনও পাচ্ছেন জানিয়ে বিজিএমইএ প্রধান বলেন, “তবে অনেকেই আছেন, যারা আমাদের এই উন্নতিতে খুশি হতে পারছেন না। এই শান্তিপূর্ণ পরিস্থিতি যে কোনোভাবেই হোক বিঘিœত করতে চান।”
গণমাধ্যমে সংকট উঠে আসে না: পোশাক শিল্পের ‘অভ্যন্তরের গভীরতম সংকটের বিষয়টি’ গণমাধ্যমে সেভাবে প্রকাশিত উঠে আসছে না বলে দাবি করে সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, ৬ হাজার ৮৮৫টি পোশাক কারখানা বিজিএমইএ এর সদস্যপদ গ্রহণ করলেও ৩ হাজার ৯৬৪টি সদস্য কারখানা বিভিন্ন কারণে বন্ধ হয়ে গেছে। বাকি ২ হাজার ৯২১টি সদস্য কারখানার মধ্যে ২ হাজার ৩৩৯টি বিজিএমইএতে সদস্যপদ নবায়ন করেছে। এর মধ্যে ১ হাজার ৬০০টি সদস্য কারখানা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার এনে কাজ করছে। উল্লেখযোগ্য সংখ্যক কারখানা ব্যাংক দেনা ও দায়ের কারণে সরাসরি ব্যাক-টু-ব্যাক খুলতে পারছে না। তাই তারা ক্রেতাদের কাছ থেকে সরাসরি অর্ডার নিতে পারছে না। এরা সাব-কন্ট্রাক্ট এর মাধ্যমে তাদের ব্যবসা টিকিয়ে রেখেছে। করোনাভাইরাস মহামারীর কারণে ২০২০-২১ সালে ৩১৭টি এবং পরে প্রতিযোগী সক্ষমতা ধরে রাখতে না পারার কারণে আরও ২৬০টি কারখানা বন্ধ হয়ে যায় জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “এমন অনেক উদ্যোক্তা আছেন, যারা লোকসান দিয়েও কারখানা সচল রেখেছেন, শুধুমাত্র ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য। শ্রমিকদেরকে বেতন দিচ্ছেন ঋণের বোঝা মাথায় রেখে।” হরতাল, অবরোধ, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অর্থনৈতিক মন্দা, প্রকৃত রপ্তানিমূল্য প্রত্যাবাসিত না হওয়া, ক্রয়াদেশ বাতিল, ক্রেতা প্রতিষ্ঠানের দেউলিয়া হয়ে পড়াসহ বিভিন্ন কারণে ঝরে গেছেন জানিয়ে বিজিএমই সভাপতি বলেন, “পোশাক শিল্পের সাফল্যের সঙ্গে জড়িয়ে আছে তাদের কান্না।”
বেড়েছে খরচ: ২০১০ থেকে ২০২৩ পর্যন্ত পোশাক শিল্পে মজুরি তিন গুণ বেড়েছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “সময়ের পরিক্রমায় নূন্যতম মজুরি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পেলেও শিল্পের সক্ষমতা সে অর্থে খুব বেশি বাড়েনি।” বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় বাজার যুক্তরাষ্ট্রে চলতি বছরের প্রথম ৯ মাসে রপ্তানি ২৩.৩৩ শতাংশ কমেছে জানিয়ে তিনি বলেন, অগাস্ট ও সেপ্টেম্বরে এই হার যথাক্রমে ৩৩ ও ৩৪ শতাংশ। এই সময়ে ইউরোপীয় ইউনিয়নে রপ্তানি কমেছে ১২.৭১ শতাংশ, আর অগাস্টে কমেছে ২৬ শতাংশের বেশি। সামগ্রিকভাবে গত অক্টোবরে রপ্তানি কমেছে সাড়ে ১৬ শতাংশের বেশি। যুক্তরাষ্ট্রে পোশাকের দরপতন শুরু হয়েছে জানিয়ে বিজিএমইএ সভাপতি বলেন, “যেটা শিল্পের জন্য নতুন শঙ্কা তৈরি করছে।” আন্তর্জাতিক কারণে পোশাক শিল্পে উৎপাদন ব্যয় বহুগুণ বেড়েছে বলেও দাবি করেন তিনি। জানান, ২০১৮ সালের তুলানায় গ্যাসের দাম বেড়েছে ২৮৬ শতাংশ আর বিদ্যুতের বেড়েছে প্রায় সাড়ে ২১ শতাংশ। সব মিলিয়ে গত ৫ বছরে উৎপাদন ব্যয় বেড়েছে ৪০ শতাংশ। উন্নত দেশগুলো ব্যাংক ঋণের সুদহার বাড়ানোয় ক্রেতাদের খরচও বেড়ে গেছে।
কারণ ছাড়াই হামলা: শ্রমিক অসন্তোষে হামলার শিকার ২৫টি কারখানার একটি অনন্ত কোম্পানিজ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএ এর পরিচালক ইনামুল হক খান বাবুল বলেন, “আমাদের কারখানায় ৭০-৮০ জন মিলে হামলা, ভাঙচুর আর আগুন দিয়ে পুড়িয়ে দেয়। তাদের একটি অংশ কিশোর। তারা কোনো কারণ ছাড়াই তিনটি গ্রুপে ভাগ হয়ে তা-ব চালায়।” তিনি বলেন, “একটি গ্রুপ কাটিং সেকশনে গিয়ে কাপড়ে আগুন দেয়, একটি গ্রুপ ভাঙচুর চালায় ও কোম্পানির ট্যাব, ল্যাপটপ ও কর্মকর্তাদের মোবাইল ছিনিয়ে নেয়, তৃতীয় গ্রুপ কোম্পানির কর্মকর্তাদের মারধর করে।”
সংকট কাটিয়ে উৎপাদনে সাভারের ৭০ কারখানা: শ্রমিকদের মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে অসন্তোষের জেরে শতাধিক কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণার পরদিনই খুলে দেওয়া হয়েছে ৭০টি কারখানা। গতকাল রোববার (১২ নভেম্বর) দুপুরে আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১ এর পুলিশ সুপার সারোয়ার আলম এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। খোঁজ নিয়ে নিয়ে জানা যায়, আশুলিয়ার টঙ্গীবাড়ী, গৌরিপুর, আশুলিয়া, শ্রীখন্ডিয়া এলাকার বেশির ভাগ কারখানা খোলা রয়েছে। সেখানে শ্রমিকরা উৎপাদন কার্যক্রম অব্যাহত রেখেছেন। তবে জিরাবো এলাকার বেশির ভাগ কারখানা খোলা রাখার চেষ্টা করলে কন্টিনেন্টাল গার্মেন্টসের শ্রমিকরা বের হয়ে অন্যান্য কারখানায় ইটপাটকেল ছুড়লে ওই এলাকার সব কারখানা ছুটি ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। জানা যায়, প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে বেতন বৃদ্ধির দাবিতে শ্রমিকরা সড়কে নেমে বিক্ষোভ করেন। এছাড়া শ্রমিকরা বিভিন্ন কারখানায় হামলা ও ভাঙচুর চালায়। তাই পোশাক কারখানাগুলোর নিরাপত্তার স্বার্থে গতকাল ১৩০টি কারখানা অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করে কর্তৃপক্ষ। এদিন শ্রমিকরা তাদের কর্মস্থলে গিয়ে অনির্দিষ্টকালের নোটিশ দেখে ফিরে যান। তবে বন্ধ ঘোষণার পরের দিনই (রোববার) শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ৭০টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। এসব কারখানায় শ্রমিকরা সকালে উপস্থিত হয়ে উৎপাদন শুরু করেছেন। তবে টঙ্গী-আশুলিয়া-ইপিজেড সড়কের দুই পাশের বেশির ভাগ কারখানাগুলো এখনো বন্ধ রাখা হয়েছে। আশুলিয়ার জামগড়া এলাকার এক কারখানার শ্রমিক বলেন, রোববার সকালে শ্রমিকরা কাজে যোগদানের উদ্দেশ্য কারখানায় আসেন। তবে শ্রমিকরা বেলা ১১টা পর্যন্ত বেতন বাড়ানোর দাবিতে কাজ বন্ধ রাখেন। তবে কর্তৃপক্ষ তাদের বোঝালে বেলা ১২টার দিকে উৎপাদন শুরু করেন শ্রমিকরা। আশুলিয়া শিল্প পুলিশ-১-এর পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ সারোয়ার আলম বলেন, গত শনিবার সাভার, আশুলিয়া ও ধামরাই এলাকার ১৩০টি কারখানা বন্ধ ঘোষণা করা হয়। এর মধ্যে আজ ৭০টি কারখানা খুলে দেওয়া হয়েছে। তবে বন্ধ কারখানাগুলোর সামনে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। রোববার পরিস্থিতি স্বাভাবিক। সাভার সার্কেলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার শাহিদুল ইসলাম জানান, শ্রমিক অসন্তোষের ঘটনায় এখন পর্যন্ত কারখানা কর্তৃপক্ষ ১২টি মামলা দায়ের করেছে। এসব মামলায় প্রায় সাড়ে তিন হাজার জনকে আসামি করা হয়েছে এবং পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।