ঢাকা ০৪:৩২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১৩ মে ২০২৫

ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার

  • আপডেট সময় : ০৯:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল ২০২২
  • ৭২ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : বশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে রমজানে পরিবারের সাথে ইফতারের অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম। বাড়িতে পরিবারের সবার সাথে ইফতার করা হয় কিন্তু এবছর ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার অনুভূতিটা ছিল একদম আলাদা। ইফতার মানে শুধু খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, একসঙ্গে ইফতার করার মাধ্যমে গভীর হয় পারস্পরিক বন্ধন। অনেকেই আবার এই বছর বন্ধু, জুনিয়র-সিনিয়রদের সাথে ক্যাম্পাস জীবনের শেষ ইফতার করেছে। সময়ের সাথে ভালোবাসার এই প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যেতে হবে তাদের, শুধু স্মৃতিপটে থাকবে বন্ধুদের সাথে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো।
সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলতে শুরু করে যবিপ্রবি’র ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ তখন জমে ওঠে বন্ধুদের সাথে ইফতার আড্ডায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় মাঠ, ক্যাফেটেরিয়া, জামে মসজিদ, টিএসসির প্রতিটি ফ্লোর, প্রশাসনিক চত্বর, অদম্য’৭১ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে সবাই ইফতার করার জন্য সমবেত হয়। মাঠে সবাই ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে মেতে ওঠে ইফতারের আনন্দে, এর মাধ্যমে ধর্মীয় উৎসবের আমেজ ফুঁটে ওঠে। এতে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়া বিভিন্ন বর্ষের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। সারাদিনের ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষা শেষে সবাই মিলে ইফতার আয়োজন করার মাঝে অদৃশ্য উৎফুল্লতা বিরাজ করে।
তবে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে ইফতারের আগের সময়টুকু। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা—এসব খুবই আনন্দদায়ক। এদিকে কেউ কাটে পেয়ারা, কেউ বা শসা, আপেল আবার মেস থেকে রান্না করে আনে খিচুড়ি আর মুরগির মাংস, কেউবা আবার গরমের প্রশান্তিময় ফল তরমুজ কাটে। এদিকে কয়েকজন মিলে পেঁয়াজু-বেগুনি-চপ, ছোলা-মুড়ি বন্টনে ব্যস্ত। এদিকে অনেকে ব্যস্ত বন্ধুদের ছবি তুলতে, কেউ বলে দোস্ত এটা আমি করবো আমায় দে।
সবাই মিলে ভাগাভাগি করে ইফতার করার যে আনন্দ, তা পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটাকে প্রশমিত করে দেয়, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে প্রবাহিত হতে থাকে এক নীরব মুগ্ধতার প্রশান্তির হাওয়া। সব সম্প্রদায়ের অনুসারীরা একত্রেই বসে একই সময়ে একসাথে ইফতার করেন, আলোচনা হয় কারো কোনো সমস্যা আছে কিনা, পড়াশোনাসহ নানাবিধ বিষয়ে। ফলে সবার মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়, গড়ে ওঠে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। থাকে সিনিয়র ভাই-আপু থেকে শুরু করে জুনিয়র ভাই-বোনেরাও। মাঝে মাঝে শিক্ষকরাও আমাদের সাথে বসে ইফতারে শামিল হন। তখন এক মিলনমেলার পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যা সচরাচর দেখা যায় না।
প্রায় প্রতিদিনই যবিপ্রবিতে দেখা যায় কোনো না কোনো বিভাগ বা ব্যাচের ইফতারের গোল আড্ডা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, বিভিন্ন সংগঠন, প্রাক্তন বন্ধুদের মিলনায়তন শেষে ইফতার আয়োজন করে। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সাংবাদিক সমিতি, বিভিন্ন ক্লাব, জেলা সমিতি, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ইফতার পার্টি করে থাকে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো হতদরিদ্র ও পথশিশুদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে। সবমিলিয়ে পবিত্র মাহে রমজানে সবার মাঝে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, তা চিরকাল অম্লান হোক, বিশ্ব থেকে সব মহামারি দূর হোক, মানুষে মানুষে বিভেদ ভুলে এগিয়ে চলি একসাথে এই প্রার্থনাই হোক তবে…।
লেখক: শিক্ষার্থী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সঙ্গে ইফতার

আপডেট সময় : ০৯:০৮:৪৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৬ এপ্রিল ২০২২

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার ডেস্ক : বশ্ববিদ্যালয়ে আসার আগে রমজানে পরিবারের সাথে ইফতারের অভিজ্ঞতা ছিল অন্যরকম। বাড়িতে পরিবারের সবার সাথে ইফতার করা হয় কিন্তু এবছর ক্যাম্পাসে বন্ধুদের সাথে ইফতার করার অনুভূতিটা ছিল একদম আলাদা। ইফতার মানে শুধু খাওয়ার মধ্যে সীমাবদ্ধ নয়, একসঙ্গে ইফতার করার মাধ্যমে গভীর হয় পারস্পরিক বন্ধন। অনেকেই আবার এই বছর বন্ধু, জুনিয়র-সিনিয়রদের সাথে ক্যাম্পাস জীবনের শেষ ইফতার করেছে। সময়ের সাথে ভালোবাসার এই প্রাঙ্গণ ছেড়ে চলে যেতে হবে তাদের, শুধু স্মৃতিপটে থাকবে বন্ধুদের সাথে কাটানো এত দিনের মধুর সময়গুলো।
সূর্য যখন পশ্চিম দিকে হেলতে শুরু করে যবিপ্রবি’র ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণ তখন জমে ওঠে বন্ধুদের সাথে ইফতার আড্ডায়।বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হল, কেন্দ্রীয় মাঠ, ক্যাফেটেরিয়া, জামে মসজিদ, টিএসসির প্রতিটি ফ্লোর, প্রশাসনিক চত্বর, অদম্য’৭১ চত্বরসহ ক্যাম্পাসের প্রায় প্রতিটি স্থানে সবাই ইফতার করার জন্য সমবেত হয়। মাঠে সবাই ঘাসের উপর গোল হয়ে বসে মেতে ওঠে ইফতারের আনন্দে, এর মাধ্যমে ধর্মীয় উৎসবের আমেজ ফুঁটে ওঠে। এতে অংশ নেয় দেশের বিভিন্ন জেলা থেকে যবিপ্রবিতে ভর্তি হওয়া বিভিন্ন বর্ষের সহস্রাধিক শিক্ষার্থী। সারাদিনের ক্লাস, ল্যাব, পরীক্ষা শেষে সবাই মিলে ইফতার আয়োজন করার মাঝে অদৃশ্য উৎফুল্লতা বিরাজ করে।
তবে আমার কাছে সবচেয়ে ভালো লাগে ইফতারের আগের সময়টুকু। সবাই মিলে ইফতার কিনতে যাওয়া, শরবত বানানো, প্রস্তুত করা—এসব খুবই আনন্দদায়ক। এদিকে কেউ কাটে পেয়ারা, কেউ বা শসা, আপেল আবার মেস থেকে রান্না করে আনে খিচুড়ি আর মুরগির মাংস, কেউবা আবার গরমের প্রশান্তিময় ফল তরমুজ কাটে। এদিকে কয়েকজন মিলে পেঁয়াজু-বেগুনি-চপ, ছোলা-মুড়ি বন্টনে ব্যস্ত। এদিকে অনেকে ব্যস্ত বন্ধুদের ছবি তুলতে, কেউ বলে দোস্ত এটা আমি করবো আমায় দে।
সবাই মিলে ভাগাভাগি করে ইফতার করার যে আনন্দ, তা পরিবার থেকে দূরে থাকার কষ্টটাকে প্রশমিত করে দেয়, ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে প্রবাহিত হতে থাকে এক নীরব মুগ্ধতার প্রশান্তির হাওয়া। সব সম্প্রদায়ের অনুসারীরা একত্রেই বসে একই সময়ে একসাথে ইফতার করেন, আলোচনা হয় কারো কোনো সমস্যা আছে কিনা, পড়াশোনাসহ নানাবিধ বিষয়ে। ফলে সবার মাঝে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সুদৃঢ় হয়, গড়ে ওঠে সৌহার্দ্য-সম্প্রীতির এক অনন্য নিদর্শন। থাকে সিনিয়র ভাই-আপু থেকে শুরু করে জুনিয়র ভাই-বোনেরাও। মাঝে মাঝে শিক্ষকরাও আমাদের সাথে বসে ইফতারে শামিল হন। তখন এক মিলনমেলার পরিবেশের সৃষ্টি হয়, যা সচরাচর দেখা যায় না।
প্রায় প্রতিদিনই যবিপ্রবিতে দেখা যায় কোনো না কোনো বিভাগ বা ব্যাচের ইফতারের গোল আড্ডা। তবে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, বিভিন্ন সংগঠন, প্রাক্তন বন্ধুদের মিলনায়তন শেষে ইফতার আয়োজন করে। এ ছাড়া, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি, সাংবাদিক সমিতি, বিভিন্ন ক্লাব, জেলা সমিতি, স্বেচ্ছাসেবী ও সাংস্কৃতিক সংগঠনগুলোও ইফতার পার্টি করে থাকে।
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনগুলো হতদরিদ্র ও পথশিশুদের জন্য ইফতারের আয়োজন করে। সবমিলিয়ে পবিত্র মাহে রমজানে সবার মাঝে যে ভ্রাতৃত্বের বন্ধন সৃষ্টি হয়েছে, তা চিরকাল অম্লান হোক, বিশ্ব থেকে সব মহামারি দূর হোক, মানুষে মানুষে বিভেদ ভুলে এগিয়ে চলি একসাথে এই প্রার্থনাই হোক তবে…।
লেখক: শিক্ষার্থী, যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।