লাইফস্টাইল ডেস্ক : বরই খেতে ভালোবাসেন কম বেশি সবাই। দেশি ফল বরই বাঙালির মন জয় করবেই। বরই কিংবা কুল—দুই নামেই সমান পরিচিত ফলটি। দক্ষিণ এশিয়ায় বহুল প্রচলিত, কাঁটাযুক্ত গাছের ফল। আদি নিবাস আফ্রিকা হলেও বর্তমানে বরই বাংলাদেশ, ভারত, আফগানিস্তান, চীন, মালয়েশিয়া, অস্ট্রেলিয়া এবং প্রশান্ত মহাসাগরীয় কিছু অঞ্চলে বিস্তার লাভ করেছে। বাংলাদেশের প্রায় সব অঞ্চলে সব মাটিতেই জন্মে গাছটি। একটু ডিম্বাকৃতির বরইকে সচরাচর ‘কুল’ বলে অভিহিত করা হয়। বরই গাছ ছোট থেকে মাঝারি আকারের ঝোপাল প্রকৃতির বৃক্ষ। বরই গাছের স্বাভাবিক উচ্চতা ১২-১৩ মিটার। বরইয়ের বিভিন্ন জাতের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো- দেশি টক-মিষ্টি বরই, নারিকেল কুল বরই, আপেল কুল, বাউ কুল, থাই কুল ইত্যাদি। পতিত জায়গায়, ছাদ কিংবা বেলকুনিতে বরই গাছ লাগানো যায়।
বরই কেউ কেউ শুধু ফল হিসেবেই খান, কেউ আবার খান আচার বানিয়ে। কিন্তু শুধু স্বাদ নয়, জানেন কি বরইয়ে রয়েছে একাধিক খাদ্যগুণ। বরইয়ে ক্যালরির পরিমাণ খুবই কম। তবে এতে প্রচুর আঁশ, ভিটামিন এবং খনিজ উপাদান পাওয়া যায়। ১০০ গ্রাম বরইয়ে রয়েছে ক্যালরি ৭৯ গ্রাম, প্রোটিন ১ গ্রাম, কার্বোহাইড্রেট ২০ গ্রাম, আঁশ ১০ গ্রাম। দৈনিক চাহিদার ৭৭ ভাগ ভিটামিন সি, ৫ ভাগ পটাশিয়াম ভাগ পাওয়া যায়। এছাড়া এতে অল্প পরিমাণে বিভিন্ন রকমের ভিটামিন, খনিজ উপাদান রয়েছে। তবে প্রচুর ভিটামিন সি এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাওয়া যায়। বরই ভেষজ উদ্ভিদ হিসেবেও ব্যবহার করা হয়। বরই রক্ত শোধন, রক্ত পরিস্কার এবং হজমিকারক হিসেবে কাজ করে। তাছাড়া পেটে বায়ু, অরুচি ও প্রদর রোগ ফুল থেকে তৈরি ওষুধ ব্যবহার করা হয়। বরই যেমন অর্থকরী, তেমনি পুষ্টিগুণসমৃদ্ধ। উচ্চরক্তচাপ ও ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য কুল বেশ উপকারী ফল। ক্যানসার, ডায়রিয়া, অতিরিক্ত ওজন বৃদ্ধি, রক্তাল্পতা ইত্যাদি রোগ নিরাময়ে সহায়তা করে বরই।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে : বরই এর মধ্যে বিভিন্ন ধরনের অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট উপাদান বিদ্যমান, যারা টিউমারের উপর সাইটোটক্সিক প্রভাব বিস্তার করে। যার ফলে শরীরে ক্যানসার হওয়ার সম্ভাবনা কমে যায়।
রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে : বরইয়ের ভেতরে থাকা অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট শরীরের ফ্রি র্যাডিকেলগুলোকে নিষ্ক্রিয় করে দেয়। এছাড়াও এর মধ্যে ভিটামিন সি, এ, বি২, ফাইটোকেমিক্যাল ইত্যাদি পাওয়া যায় যা রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধিতে সাহায্য করে।
রক্তের সুগার লেভেল নিয়ন্ত্রণ করে : বরইয়ে ক্লোরোজেনিক এসিড থাকে। এই এসিড রক্তের শর্করা এর ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে এবং ক্ষুধা নিয়ন্ত্রণ করে। আর এতে থাকা ফাইবার উপাদান রক্তের সুগার বাড়তে দেয় না এবং নিয়ন্ত্রণে রাখে।
রক্ত পরিষ্কারে কার্যকর : শুকনো বরই এর মধ্যে স্যাপোনিন, অ্যাল্কালয়েড এবং ট্রাইটারপেনয়েড উপাদান থাকে যারা রক্ত পরিশুদ্ধ করে এবং হজম প্রক্রিয়ায় সহায়তা করে।
ওজন নিয়ন্ত্রণ : বরইতে ফ্যাট নাই বললেই চলে। ২ আউন্স (প্রায় ৪টি) বরই খেলে শরীরে ৪৪ ক্যালরি শক্তি যোগান দেয়, কিন্তু ফ্যাট প্রায় শূন্য। ফলে ওজন নিয়ন্ত্রণেও এরা সাহায্য করতে পারে।
হৃদরোগের ঝুঁকি কমায় : বরইয়ে ফাইটোকেমিকেল থাকার দরুন শরীর এর প্রদাহ কমে যায়। এর ফলে হৃদ রোগের ঝুকি কমে যায়। এবং বরই হার্ট এর অন্যান্য অসুখ হওয়ার থেকেও আমাদের রক্ষা করে।
অনিদ্রা দূর করে : ইনসোমনিয়া এবং দুশ্চিন্তা অনেক মানুষের ক্ষেত্রে দেখা যায়। বরই এর শক্তিশালী কেমিক্যালগুলো অনিদ্রা এবং দুশ্চিন্তা কমিয়ে আনতে সাহায্য করে।
লিভারের সুরক্ষা : শরীরের ফ্রি র্যযাডিকেলগুলো লিভারের ক্ষতি করে। বরই এর মধ্যে অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট থাকায় এটি লিভারকে সুরক্ষা প্রদান করে।
হাড় মজবুত করে : বরই ফলে ক্যালসিয়াম, ফসফরাস, আয়রন ইত্যাদিসহ আরো অনেক ভিটামিন ও মিনারেল পাওয়া যায় যা হাড় শক্ত ও মজবুত করতে সাহায্য করে।
রক্ত সঞ্চালনে কার্যকর : আয়রন ও ফসফরাস শরীরে রক্ত উৎপাদন এবং রক্ত সঞ্চালনের প্রক্রিয়া বৃদ্ধি করে।
ত্বককে কোমল করে : কুল চামড়াকে সতেজ রাখে। ত্বকের রুক্ষতা দূর করে ত্বককে কোমল করে। ফলে বয়সের ছাপ পড়ে না। কুল কোষ্ঠকাঠিন্য কমায় এবং হজমের সমস্যার সমাধান করে। খাবারে রুচি বাড়িয়ে তোলে ।
ক্যানসার প্রতিরোধ করে বরই!
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ