নিজস্ব প্রতিবেদক : বাংলাদেশ কোস্ট গার্ড সদস্যদের ‘দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে’ দায়িত্ব পালন করে বাহিনীর ‘সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত’ রাখার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
গতকাল মঙ্গলবার সকালে গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডের ২৭তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী ও পদক প্রদান অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে এ বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে ‘প্রয়োজনীয় সব কিছু করার’ আশ্বাস দিয়েছেন তিনি। শেখ হাসিনা বলেন, “আপনারা সবসময় দেশপ্রেম, সততা ও ঈমানের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করে কোস্ট গার্ডের সুনাম ও মর্যাদা সমুন্নত রাখবেন। দেশের সমুদ্র ও উপকূলীয় এলাকার নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন বলে আমি আশা করি।
“এই বাহিনীর ধারাবাহিক অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে এবং আপনাদের সার্বিক কল্যাণে প্রয়োজনীয় যা যা করা দরকার অবশ্যই আমাদের সরকার তা করে যাবে।”
কোস্ট গার্ডের ক্রমবর্ধমান উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে সহযোগিতার জন্য বন্ধুপ্রতীম দেশগুলোকে ধন্যবাদ জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, “মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন উন্নত, সমৃদ্ধ ‘সোনার বাংলাদেশ’ আমরা গড়ে তুলব।”
কোস্ট গার্ডের উন্নয়ন ও আধুনিকায়নে আওয়ামী লীগ সরকারের নেওয়া নানা পদক্ষেপের কথাও অনুষ্ঠানে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
বাংলাদেশের উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পাওয়ার কথা মনে করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বাংলাদেশকে আমরা উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০৪১ প্রণয়ন করেছি।
“প্রাকৃতিক দুর্যোগ বা জলবায়ুর অভিঘাত থেকে বাংলাদেশকে রক্ষা করতে, এই ব-দ্বীপটাকে ঘিরে আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন যুগ যুগ ধরে সুন্দরভাবে বাঁচতে পারে এবং তাদের জীবনমান উন্নত হতে পারে সেই লক্ষ্য নিয়ে আমরা ‘ডেল্টা প্ল্যান ২১০০’ প্রণয়ন করে সেটাও বাস্তবায়ন করে যাচ্ছি।”
ভবিষ্যতের বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য সামনে রেখে সব ধরনের পরিকল্পনার একটা কাঠামো তৈরি করার কথা জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, “যার ভিত্তিতে পরবর্তীতে, আমি মনে করি, প্রজন্মের পর প্রজন্ম, তারা এই দেশের উন্নয়নের কার্যধারাটা অব্যাহত রাখতে সক্ষম হবে।”
সমুদ্রসীমার বিরোধ মীমাংসার কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭৫ সালের ১৫ অগাস্ট জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নির্মমভাবে হত্যার পর যারা ক্ষমতায় এসেছিল, তাদের মধ্যে সামরিক শাসক জিয়াউর রহমান, এইচ এম এরশাদ বা খালেদা জিয়া- কেউ বাংলাদেশের মেরিটাইম বাউন্ডারি নিয়ে ‘কোনো উদ্যোগ নেয়নি’।
“আওয়ামী লীগ সরকার গঠনের পর তথ্যউপাত্ত সংগ্রহ করে সমুদ্রসীমায় অধিকার প্রতিষ্ঠা করে। ভারত এবং মিয়ানমার- দুটো বন্ধুপ্রতীম দেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব বজায় রেখেই আমরা আমাদের সমুদ্রসীমা নির্দিষ্ট করতে সক্ষম হয়েছি।”
শেখ হাসিনা বলেন, “আমরা চাই, আমাদের যে সম্পদ আছে সেই সম্পদ আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে কাজে লাগুক। এজন্য আমাদের সমুদ্রসীমা সংরক্ষণ করা বা নদী মাতৃক বাংলাদেশ, সেই বাংলাদেশকেও নিরাপদ করার জন্য আমাদের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান একান্তভাবে দরকার। সেজন্য কোস্ট গার্ড – আমাদের এই দায়িত্বটা যথাযথভাবে পালন করে যাচ্ছে।”
বঙ্গোপসাগর যে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, সে কথা তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, “আমাদের এটা অবশ্যই চিন্তা করতে হবে যে আমাদের এ অঞ্চলের নিরাপত্তা রক্ষা করা প্রয়োজন এবং সেদিকে যথাযথ ব্যবস্থাও নেওয়া দরকার এবং সেগুলো আমরা যথাযথভাবে করে যাচ্ছি।”
বাংলাদেশ কোস্ট গার্ডে সৃষ্টি এবং ক্রমবর্ধমান উন্নয়নে আওয়ামী লীগ সরকার ‘সবসময় সরাসরি জড়িত’ বলে মন্তব্য করেন সরকারপ্রধান। ১৯৯৪ সালে তৎকালীন বিরোধী দল হিসেবে জাতীয় সংসদে আওয়ামী লীগের উত্থাপিত বিলেই কোস্ট গার্ড একটি বাহিনী হিসাবে আত্মপ্রকাশ করে বলেও মনে করিয়ে দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর কোস্ট গার্ডকে আরও শক্তিশালী করা, তাদের জন্য জমি বরাদ্দ করা, অবকাঠামো নির্মাণ, বিভিন্ন ধরনের জলযানের ব্যবস্থা করার মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এলাকায় কোস্ট গার্ড-এর কার্যক্রম চালু করার ক্ষেত্রে ‘ব্যাপক অবদান রাখে’।
“২০০৯ সাল থেকে ব্যাপক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উপকূলীয় এবং প্রত্যন্ত অঞ্চলে কোস্ট গার্ড-এর স্টেশন ও আউটপোস্টে কোস্টাল ক্রাইসিস ম্যানেজমেন্ট সেন্টার, বেইসসমূহের কর্মকর্তা ও নাবিকদের বাসস্থান, অফিসার্স মেস, নাবিক নিবাস, প্রশাসনিক ভবনসহ বিভিন্ন ধরনের অবকাঠামো নির্মাণ করা হয়েছে।”
গত ১৩ বছরে কোস্ট গার্ড-এর জন্য ৭৭টি জাহাজ ও জলযান নির্মাণ ও সংযোজন করার তথ্য তুলে ধরে সরকারপ্রধান বলেন, “নৌবাহিনী পরিচালিত নারায়ণগঞ্জ ডকইয়ার্ড এবং খুলনা শিপইয়ার্ডে কোস্ট গার্ড-এর জন্য দুটি ইনশোর পেট্রল ভেসেল, একটি ফ্লোটিং ক্রেন, দুটি টাগ বোট এবং ১৬টি বোট তৈরি করা হয়েছে। কোস্ট গার্ড-এর ভেসেল ও জাহাজ নির্মাণ, মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণে গজারিয়ায় একটি ডকইয়ার্ডও নির্মাণ করা হচ্ছে।”
নিজস্ব ইয়ার্ডে জাহাজ তৈরির সক্ষমতা বাংলাদেশের আত্মবিশ্বাসকে আরও মজবুত করবে বলে মনে করেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, “বিএনপির সরকারের সময়ে বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শে অলাভজনক হওয়ায় খুলনা শিপ ইয়ার্ড বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমরা সরকারে আসার পর এই শিপইয়ার্ডটা আমি নৌ বাহিনীর হাতে অর্পণ করি।
“যেহেতু আমাদের নদীমাতৃক বাংলাদেশ, বিশাল সমুদ্র সীমা, আমরা শুধু পরমুখাপেক্ষী হয়ে থাকব কেন? ঐতিহাসিক যুগ থেকেই বাংলাদেশের জাহাজ নির্মাণ শিল্প এবং সেটা রপ্তানি করা এটা আমাদের একটা বাণিজ্য ছিল। সেটাকে আবার আমরা কার্যকর করি। যার ফলে আজকে আমরা বিদেশ থেকে কিনে আনছি না। আমরা নিজেরা তৈরি করার সক্ষমতা অর্জন করেছি এবং ভবিষ্যতে আরও করব।” নারায়ণগঞ্জ ড্রাইডক ও চট্টগ্রাম ড্রাইডকের দায়িত্ব নৌ বাহিনীর হাতে তুলে দেওয়ার কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, “ভবিষ্যতে আরেকটা আকাঙ্ক্ষা আছে যে আমরা আরেকটি শিপইয়ার্ড করতে পারব দক্ষিণ অঞ্চলে। সেটা হয়ত ভবিষ্যতে আমরা দেখব। জায়গা আমরা দেখে রেখেছি।” গত বছর কোস্ট গার্ডের ৯টি জাহাজ এবং একটি ঘাঁটি কমিশনিং করার কথাও প্রধানমন্ত্রী অনুষ্ঠানে বলেন।
‘কোস্ট গার্ডের অগ্রযাত্রা যেন অব্যাহত থাকে’
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ