ঢাকা ১১:৩৯ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

কোর্ট ম্যারেজ কি আইনসম্মত বিয়ে?

  • আপডেট সময় : ০৬:০৪:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট

বাংলাদেশের আদালতসহ সর্বত্র বহুল প্রচলিত বিয়ের পদ্ধতি কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে বিয়ে। এমনকি অধিকাংশ মানুষই মনে করে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করলেই বিয়ে হয়ে যায়; যা কাজী ও নিকাহ রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে বিয়ে নিবন্ধন করার চেয়ে উত্তম। অথচ মজার বিষয় হলো, কোর্ট ম্যারেজ ধর্মীয় বা আইনসম্মত কোন বিয়ে নয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে বিয়ের কোনো বিধান বা ন্যূনতম আইনগত ভিত্তিও নেই; এমনকি কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ের কোন উপাদান বা শর্ত পূরণ হয় না। মূলত দীর্ঘদিন যাবত কোর্ট ম্যারেজ শব্দটি প্রচার ও প্রসারের ফলে এটি এখন লোকমুখে বহুল প্রচলিত শব্দ হয়ে উঠেছে।

কোর্ট ম্যারেজ কী: সাধারণত অধিকাংশ মানুষ হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই কোর্ট ম্যারেজ বলে মনে করেন। মূলত ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই হলফনামা সম্পাদন হয়ে থাকে।

হলফনামা বিয়ের ঘোষণা মাত্র। অর্থাৎ এ হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে মর্মে ঘোষণা দেন মাত্র। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর তারা ইচ্ছা করলে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা করতে পারেন। তবে হলফনামা না করলে বিয়ের বিন্দুমাত্র ক্ষতি বা কোনো শর্ত ও উপদান ভঙ্গ হবে না।

আইনত বৈধ বিয়ে: মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪-এর বিধান মতে, প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক এবং এই উদ্দেশ্যে সরকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ করেন। বিবাহ রেজিস্ট্রার সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতিতে হয় এবং তালাকেরও পৃথক নিবন্ধন রয়েছে।

হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২-এর ৩ ধারার ১ উপধারা অনুসারে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং হিন্দু রীতিনীতি তথা শাস্ত্র অনুসারে সম্পাদিত বিবাহগুলোকে নিবন্ধন করা যাবে। এখানে নিবন্ধন করতেই হবে- এ ধরনের বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে বলা হয়েছে, নিবন্ধন করা যাবে অর্থাৎ আপনি ইচ্ছা করলে নিবন্ধন করতে পারেন আবার ইচ্ছা অনুযায়ী নিবন্ধন না করলে কোনো সমস্যা নাই। কেননা ওই আইনের ৩ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে যে, ৩ ধারার ১ উপধারায় যা কিছু বলা থাকুক না কেন; হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সম্পন্ন হওয়া বিয়ে এই আইনের অধীন যদি নিবন্ধন করা না হয়, তাহলে উক্ত বিয়ের বৈধতা ক্ষুণ্ন হবে না।

এদিকে বাংলাদেশে ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ অ্যাক্ট (খ্রিস্টান বিবাহ আইন) অনুযায়ী খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে সম্পাদিত হয়।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পবিত্র চুক্তি। তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করার আগে কিছু নিয়ম পালন করতে হয়; যা অন্যান্য ধর্মের চেয়ে কিছুটা আলাদা। তাদের বিয়ে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

খ্রিস্টান বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। তাই আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে হবে। কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের মূলত আইনগত ন্যূনতম ভিত্তি নেই।

লেখক: আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

কোর্ট ম্যারেজ কি আইনসম্মত বিয়ে?

আপডেট সময় : ০৬:০৪:০১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২৮ অক্টোবর ২০২৫

খন্দকার মাজেদুল ইসলাম সম্রাট

বাংলাদেশের আদালতসহ সর্বত্র বহুল প্রচলিত বিয়ের পদ্ধতি কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে বিয়ে। এমনকি অধিকাংশ মানুষই মনে করে ‘কোর্ট ম্যারেজ’ করলেই বিয়ে হয়ে যায়; যা কাজী ও নিকাহ রেজিস্ট্রার এর মাধ্যমে বিয়ে নিবন্ধন করার চেয়ে উত্তম। অথচ মজার বিষয় হলো, কোর্ট ম্যারেজ ধর্মীয় বা আইনসম্মত কোন বিয়ে নয়। বাংলাদেশের প্রচলিত আইনে কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে বিয়ের কোনো বিধান বা ন্যূনতম আইনগত ভিত্তিও নেই; এমনকি কোর্ট ম্যারেজের মাধ্যমে বিয়ের কোন উপাদান বা শর্ত পূরণ হয় না। মূলত দীর্ঘদিন যাবত কোর্ট ম্যারেজ শব্দটি প্রচার ও প্রসারের ফলে এটি এখন লোকমুখে বহুল প্রচলিত শব্দ হয়ে উঠেছে।

কোর্ট ম্যারেজ কী: সাধারণত অধিকাংশ মানুষ হলফনামার মাধ্যমে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে বিয়ের ঘোষণা দেওয়াকেই কোর্ট ম্যারেজ বলে মনে করেন। মূলত ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে নোটারি পাবলিক কিংবা প্রথম শ্রেণির ম্যাজিস্ট্রেটের সামনে এই হলফনামা সম্পাদন হয়ে থাকে।

হলফনামা বিয়ের ঘোষণা মাত্র। অর্থাৎ এ হলফনামার মাধ্যমে বর-কনে নিজেদের মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে হয়েছে মর্মে ঘোষণা দেন মাত্র। স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে আইন অনুযায়ী বিয়ে সম্পন্ন হওয়ার পর তারা ইচ্ছা করলে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের ঘোষণা করতে পারেন। তবে হলফনামা না করলে বিয়ের বিন্দুমাত্র ক্ষতি বা কোনো শর্ত ও উপদান ভঙ্গ হবে না।

আইনত বৈধ বিয়ে: মুসলিম বিবাহ ও বিবাহ বিচ্ছেদ (নিবন্ধন) আইন, ১৯৭৪-এর বিধান মতে, প্রতিটি বিবাহ নিবন্ধন করা বাধ্যতামূলক এবং এই উদ্দেশ্যে সরকার ম্যারেজ রেজিস্ট্রার নিয়োগ করেন। বিবাহ রেজিস্ট্রার সরকারের নির্ধারিত পদ্ধতিতে হয় এবং তালাকেরও পৃথক নিবন্ধন রয়েছে।

হিন্দু বিবাহ নিবন্ধন আইন ২০১২-এর ৩ ধারার ১ উপধারা অনুসারে হিন্দু ধর্মাবলম্বী এবং হিন্দু রীতিনীতি তথা শাস্ত্র অনুসারে সম্পাদিত বিবাহগুলোকে নিবন্ধন করা যাবে। এখানে নিবন্ধন করতেই হবে- এ ধরনের বাধ্যবাধকতার পরিবর্তে বলা হয়েছে, নিবন্ধন করা যাবে অর্থাৎ আপনি ইচ্ছা করলে নিবন্ধন করতে পারেন আবার ইচ্ছা অনুযায়ী নিবন্ধন না করলে কোনো সমস্যা নাই। কেননা ওই আইনের ৩ ধারার ২ উপধারায় বলা হয়েছে যে, ৩ ধারার ১ উপধারায় যা কিছু বলা থাকুক না কেন; হিন্দু শাস্ত্র অনুযায়ী সম্পন্ন হওয়া বিয়ে এই আইনের অধীন যদি নিবন্ধন করা না হয়, তাহলে উক্ত বিয়ের বৈধতা ক্ষুণ্ন হবে না।

এদিকে বাংলাদেশে ১৮৭২ সালের খ্রিস্টান ম্যারেজ অ্যাক্ট (খ্রিস্টান বিবাহ আইন) অনুযায়ী খ্রিস্ট ধর্মাবলম্বীদের বিয়ে সম্পাদিত হয়।

খ্রিস্টান ধর্মাবলম্বীদের কাছে বিয়ে একটি ধর্মীয় অনুষ্ঠান ও পবিত্র চুক্তি। তাদের বিয়ে রেজিস্ট্রি করার আগে কিছু নিয়ম পালন করতে হয়; যা অন্যান্য ধর্মের চেয়ে কিছুটা আলাদা। তাদের বিয়ে লিখিত চুক্তির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।

খ্রিস্টান বিয়েতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক। তাই আমরা বলতে পারি বাংলাদেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী বিয়ে রেজিস্ট্রেশন বা নিবন্ধন করতে হবে। কোর্ট ম্যারেজ বা আদালতে হলফনামার মাধ্যমে বিয়ের মূলত আইনগত ন্যূনতম ভিত্তি নেই।

লেখক: আইনজীবী ও সংবাদকর্মী
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ