মেহেরপুর সংবাদদাতা : কোরবানির ইদকে সামনে রেখে গরু-ছাগল পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় পার করছেন মেহেরপুরের খামারীরা। গরু মোটাতাজাকরণে কৃত্রিম পন্থা অবলম্বন খুব বেশি ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় এ জেলার সকলেই সম্পূর্ণ প্রাকৃতিক খাবার ব্যবহার করছেন। নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে ঢাকাসহ অন্যান্য জেলায়ও সরবরাহ হবে কোরবানির গরু-ছাগল। তবে শেষ সময়ে ভারত থেকে গরু আমাদানি হলে লোকসানের আশঙ্কায় চিন্তিত খামারিরা। জেলা প্রাণি সম্পদ বিভাগের তথ্য মতে, মেহেরপুর জেলায় কোরবানির ইদকে সামনে রেখে বাণিজ্যিক ও পারিবারিক ২৯ হাজার ২৫২টি খামারে ৫৮ হাজার ৩৬৩টি গরু, মহিষ ৫৮২টি এবং ১ লাখ ২৮ হাজার ৮৪১টি ছাগল ও ভেড়া প্রস্তুত। মোট ১ লাখ ৮৭ হাজার ৭৮৬টি কোরবানিযোগ্য পশু প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এ বছর জেলায় সর্বোচ্চ চাহিদা রয়েছে ৮৯ হাজার ৮২০টি পশুর। নিজেদের চাহিদা পূরণ করেও এক লাখের বেশি গবাদি পশু উদ্বৃত্ব থেকে যাবে। প্রতিবারের মতো এবারও গাংনী উপজেলাতে গরু-ছাগল রয়েছে চাহিদার তিন গুণেরও বেশি। বছর জুড়ে গরুর দাম বেশি থাকায় কোরবানির সময় কাঙ্খিত মুল্য পাবেন বলে আশা খামারিদের। ধানের বিচালী, কাঁচা ঘাস, খৈল, গমের ভুষি, ছোলা, ভাত, চালের কুঁড়া ইত্যাদি খাওয়ায়ে গরু মোটাতাজা করেছেন এসব খামারীরা। তাদের দাবী কোরবানির ইদকে সামনে রেখে কোনোভাবেই যেন বৈধ ও অবৈধ পথে ভারতীয় গরু আমদানী না করা হয়। তাহলে কাঙ্খিত মূল্য পাবেন না খামারিরা। এতে খামারি ও পশু পালনকারীরা গরু পালনে উৎসাহ হারাবে। বালিয়াঘাট মা এগ্রো ফার্মের স্বত্ত্বাধিকারী হাজী আবু নাঈম জানান, তার খামারে ৬০টি গরু মোটাতাজা করা হচ্ছে। এর মধ্যে ৩০টি এবছর কোরবানির জন্য প্রস্তুত করা হয়েছে। এর মধ্যে ৪০টি হরিয়ান ও ২০টি নেপালী জাতের গরু। সম্পূর্ণ দেশীয় খাবার খাওয়াচ্ছেন তিনি। বিচালী, ছোলা, খৈল, চালের কুড়াসহ অন্যান্য দেশীয় খাবার দিয়ে দেশীয় প্রযুক্তিতে গরু পালন করা হচ্ছে। তবে ভারত থেকে পশু আমদানি না করা হলে কাঙ্খিত মুল্য পাবেন বলেও আশাবাদ তিনি। গাংনীর মালসাদহ গ্রামের গরুর খামারি এনামুল হক জানান, বেশ কয়েক বছর ধারাবাহিকভাবে তিনি খামারে গরু পালন করে আসছেন। গেলো কোরবানিতে ভালো দাম না পাওয়ায় সব গরু বিক্রি করেননি। পুরানো গরুর সঙ্গে নতুন যোগ করে বর্তমানে খামারে ১৮টি নেপালী ও ১২টি হরিয়ান জাতের গরু আছে। এবছর ভালো দামে বিক্রি করার আশা করছেন এ খামারি। ধানখোলা গ্রামের গরু ব্যবসায়ী আব্দুল লতিফ জানান, গত বছর করোনার মাঝেও ৯০টি গরু ঢাকায় নিয়েছিলেন। এবার অন্তত ২০০ গরু ঢাকার বিভিন্ন পশুহাটে তুলবেন। ইতোমধ্যে গ্রামে গ্রামে ঘুরে গরু পছন্দ করছেন। পছন্দের গরুর দাম নির্ধারণ করে অগ্রীম কিছু টাকাও দিয়ে আসছেন খামারিকে। এবার ভালো লাভ হবে বলেও আশাবাদ ব্যাক্ত করেন তিনি। জেলা প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তা সাইদুর রহমান জানান, মেহেরপুর বাংলাদেশের ভারতীয় সীমান্তঘেষা জেলা। তাই কোরবানির ইদকে সামনে রেখে অবৈধভাবে সীমান্ত দিয়ে ভারতীয় গরু যেন না আসতে পারে সেজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এছাড়াও হাটে স্টরয়েড ও হরমন ব্যবহারে মোটাতাজাকরণ গরু না তুলতে পারে সেজন্য হাটগুলোতে মোবাইল কোর্টসহ প্রাণী সম্পদ কর্মকর্তাদের একাধিক টিম থাকবে পরীক্ষা নিরিক্ষা করার জন্য।