ঢাকা ১০:৪১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৮ অগাস্ট ২০২৫

কোপানোর ভিডিও ধারণ করার কারণে সাংবাদিক তুহিন খুন, আটক পাঁচ

  • আপডেট সময় : ০৮:২৫:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫
  • ১১ বার পড়া হয়েছে

নিহত সাংবাদিক আসাদুজ্জামান তুহিন - ছবি সংগৃহীত

গাজীপুর সংবাদদাতা: গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানাধীন ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার ঈদগাহ মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।

নিহতের নাম মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহের কাজ করতেন।

নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা গ্রামের শহীদ রওশন সড়ক এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন তুহিন। বুধবার রাতে তিনি চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসার দিকে রওয়ান হয়েছিলেন। এসময় ৬-৭ জন যুবক ধারালো দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে জনসম্মুখে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মার্কেটের চা-পান বিক্রেতার দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাথাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্বৃত্তরা ঘটনার পর সদর্পে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, আমরা একসাথেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করে। ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যায়। সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিল। পরে দুর্বৃত্তরা তুহিনকে ধাওয়া দেয় তুহিন দৌড়ে পালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে ফেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য এবং আশপাশের এলাকা থেকে সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দেখা যায়, রাতে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়ায়। বাদশা মিয়া নারীকে আঘাত করার পর এক দল দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো চাপাতি হাতে বাদশা মিয়াকে আঘাত করে। এসময় বাদশা মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যায়। আর এ ঘটনাটি রাস্তার পাশ থেকে মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীরা তাকে ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে তুহিন দৌড়ে পালাতে থাকে সন্ত্রাসীরাও তুহিনের পিছু নিয়ে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি দোকানের কাছে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তুহিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

পুলিশ জানায়, এটি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা নয়। নারী ঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তুহিনকে কুপিয়ে খুন করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা জানার এবং জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ফুটেজ ও ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এর আগে তুহিনের ফেসবুক আইডি ঘেটে দেখা গেছে, চাঁদাবাজি সম্পর্কিত কোনো লাইভ, ভিডিও বা কোনো রিপোর্ট তার আইডিতে নেই। তিনি চান্দানা চৌরাস্তা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি চান্দনা চৌরাস্তার একটি ভিডিও আপলোড করেন। এতে লেখা রয়েছে ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য, গাজীপুর চৌরাস্তা’। এর কিছু সময় আগে তিনি আরো দুটি ছবি ও ভিডিও আপলোড দেন।
এদিকে, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং হত্যাকারীদের অবিলম্বে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

হত্যায় কারা জড়িত: পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অপরাধীদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের বিস্তারিত পরিচয় এবং গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই অজ্ঞাতদের আসামি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় একটি মামলা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় ৬-৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিক তুহিনকে ধাওয়া করে। সে তার জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ে ঈদগাহ (মসজিদ) মার্কেটের চা-পান বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। কালো রঙের জামা বা বোরকা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন আর পেছন দিক থেকে সাদার মধ্যে কালো চেক জামা পরা যুবক ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। ওই নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করেন ওই যুবক। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকনে। মুহূর্তের মধ্যেই পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত ওই যুবককে কোপানোর চেষ্টা করেন। পরে ওই যুবক দৌড়ে পালিয়ে যান।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এক নারীকে নিয়েই মূলত ঘটনার সূত্রপাত। সে মানুষের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সব লুটে নেয়। সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে তাকে ধাওয়া দেয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নারীঘটিত ঘটনা এবং যুবককে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আহত বাদশা মিয়া গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাজীপুরের বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি চক্র আছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই ওই দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ফুটেজে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনিও ওই চক্রের সদস্য হতে পারেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে ওই চক্র ছিনতাই করে। আমরা ধারণা করছি, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের ওই মেয়ে ছিনতাইকারী দলের একজন সদস্য। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।’

আটক পাঁচজন: গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ যাদের পাওয়া গেছে আটকদের মধ্যে তারা কেউ নেই। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কোপানোর ভিডিও ধারণ করার কারণে সাংবাদিক তুহিন খুন, আটক পাঁচ

আপডেট সময় : ০৮:২৫:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৮ অগাস্ট ২০২৫

গাজীপুর সংবাদদাতা: গাজীপুরে এক সাংবাদিককে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যা করেছে দুর্বৃত্তরা। বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) রাতে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের বাসন থানাধীন ব্যস্ততম চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার ঈদগাহ মার্কেটে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় এখন পর্যন্ত পাঁচজনকে আটক করার খবর পাওয়া গেছে।

নিহতের নাম মো. আসাদুজ্জামান তুহিন (৩২)। তিনি ময়মনসিংহ জেলার ফুলবাড়িয়া থানার ভাটিপাড়া গ্রামের হাসান জামালের ছেলে। তিনি দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি ছিলেন। সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি ওষুধ কোম্পানির প্রতিনিধি হিসেবে বিভিন্ন হাসপাতাল ও ক্লিনিকে ওষুধ সরবরাহের কাজ করতেন।

নিহতের বড় ভাই মো. সেলিম ও স্থানীয়রা জানান, গাজীপুর মহানগরীর বাসন থানাধীন চান্দনা গ্রামের শহীদ রওশন সড়ক এলাকার ভাড়া বাসায় স্ত্রী ও দুই সন্তান নিয়ে থাকেন তুহিন। বুধবার রাতে তিনি চান্দনা চৌরাস্তা থেকে বাসার দিকে রওয়ান হয়েছিলেন। এসময় ৬-৭ জন যুবক ধারালো দা ও চাপাতি নিয়ে তাকে জনসম্মুখে ধাওয়া করে। তিনি প্রাণ রক্ষার জন্য দৌড়ে পার্শ্ববর্তী ঈদগাহ মার্কেটের চা-পান বিক্রেতার দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেন। সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রকাশ্যে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাথাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয় এবং ঘটনাস্থলেই তিনি নিহত হন। দুর্বৃত্তরা ঘটনার পর সদর্পে সেখান থেকে পালিয়ে যায়।

নিহত তুহিনের বন্ধু শামিম বলেন, আমরা একসাথেই হেঁটে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ একজন নারী এক ব্যক্তিকে নাজেহাল করছিল। ওই ব্যক্তি নারীটিকে আঘাত করার সঙ্গে সঙ্গে কয়েকজন দুর্বৃত্ত ধারালো অস্ত্র দিয়ে ওই ব্যক্তিকে আঘাত করে। ওই ব্যক্তি দৌড়ে পালিয়ে যায়। সাংবাদিক তুহিন ঘটনাটি দেখে দৌড়ে সাইডে গিয়ে ভিডিও করছিল। পরে দুর্বৃত্তরা তুহিনকে ধাওয়া দেয় তুহিন দৌড়ে পালানোর সময় দুর্বৃত্তরা তাকে ধরে ফেলে প্রকাশ্যে কুপিয়ে মৃত্যু নিশ্চিত করে পালিয়ে যায়।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) মো. রবিউল ইসলাম জানান, খবর পেয়ে পুলিশ দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়। ঘটনা সম্পর্কে স্থানীয়দের কাছ থেকে তথ্য এবং আশপাশের এলাকা থেকে সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়। তিনি জানান, সিসি টিভির ফুটেজ পর্যালোচনা এবং প্রত্যক্ষদর্শীদের বর্ণনা মতে দেখা যায়, রাতে বাদশা মিয়া নামে এক ব্যক্তি চান্দনা চৌরাস্তা মোড়ে এক নারীর সঙ্গে বাক বিতণ্ডায় জড়ায়। বাদশা মিয়া নারীকে আঘাত করার পর এক দল দুর্বৃত্ত নারীর পক্ষ নিয়ে ধারালো চাপাতি হাতে বাদশা মিয়াকে আঘাত করে। এসময় বাদশা মিয়া দৌড়ে পালিয়ে যায়। আর এ ঘটনাটি রাস্তার পাশ থেকে মোবাইল ফোনে ধারণ করছিলেন সাংবাদিক তুহিন। সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে সন্ত্রাসীরা তাকে ধাওয়া দেয়। এক পর্যায়ে তুহিন দৌড়ে পালাতে থাকে সন্ত্রাসীরাও তুহিনের পিছু নিয়ে ধাওয়া করে। একপর্যায়ে চান্দনা চৌরাস্তার মসজিদ মার্কেটের সামনে একটি দোকানের কাছে সন্ত্রাসীরা ধারালো অস্ত্র দিয়ে উপর্যুপরি কুপিয়ে তুহিনের মৃত্যু নিশ্চিত করে চলে যায়।

পুলিশ জানায়, এটি কোনো চাঁদাবাজির ঘটনা নয়। নারী ঘটিত একটি ঘটনার ভিডিও চিত্র ধারণ করার কারণে ক্ষিপ্ত হয়ে সন্ত্রাসীরা তুহিনকে কুপিয়ে খুন করে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানার ওসি শাহীন খান জানান, খবর পেয়ে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠিয়েছে। তবে কী কারণে এ হত্যাকাণ্ড তা জানার এবং জড়িতদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। এছাড়া ফুটেজ ও ক্লু সংগ্রহ করা হচ্ছে। সেগুলো বিশ্লেষণ করে খুনিদের শনাক্ত করার চেষ্টা চলছে।

এর আগে তুহিনের ফেসবুক আইডি ঘেটে দেখা গেছে, চাঁদাবাজি সম্পর্কিত কোনো লাইভ, ভিডিও বা কোনো রিপোর্ট তার আইডিতে নেই। তিনি চান্দানা চৌরাস্তা এলাকার বিভিন্ন সমস্যা ও মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে বিভিন্ন সময়ে ফেসবুকে পোস্ট করতেন। বৃহস্পতিবার সন্ধ্যার দিকে তিনি চান্দনা চৌরাস্তার একটি ভিডিও আপলোড করেন। এতে লেখা রয়েছে ‘যেমন খুশি তেমন রাস্তা পার হওয়ার দৃশ্য, গাজীপুর চৌরাস্তা’। এর কিছু সময় আগে তিনি আরো দুটি ছবি ও ভিডিও আপলোড দেন।
এদিকে, এই নির্মম হত্যাকাণ্ডের খবর ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয় সাংবাদিক মহলে তীব্র ক্ষোভ ও উত্তেজনা দেখা দেয়। তারা দ্রুত ঘটনাস্থলে ছুটে যান এবং হত্যাকারীদের অবিলম্বে শনাক্ত করে আইনের আওতায় আনার দাবি জানান।

হত্যায় কারা জড়িত: পুলিশ বলছে, সিসিটিভি ফুটেজ দেখে আমরা অপরাধীদের প্রাথমিকভাবে চিহ্নিত করতে পেরেছি। তাদের বিস্তারিত পরিচয় এবং গ্রেফতার করতে পুলিশ কাজ করছে। গত বৃহস্পতিবার (৭ আগস্ট) সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিটে মহানগরীর চান্দনা চৌরাস্তা মোড় এলাকার মসজিদ মার্কেটের সামনে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সাংবাদিক তুহিনের বড় ভাই অজ্ঞাতদের আসামি করে গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) বাসন থানায় একটি মামলা করেছেন।
স্থানীয়রা জানান, ঘটনার সময় ৬-৭ জন যুবক দা ও চাপাতি নিয়ে প্রকাশ্যে সাংবাদিক তুহিনকে ধাওয়া করে। সে তার জীবন বাঁচানোর জন্য দৌড়ে ঈদগাহ (মসজিদ) মার্কেটের চা-পান বিক্রেতা খায়রুল ইসলামের দোকানে গিয়ে আশ্রয় নেয়। সন্ত্রাসীরা সেখানে গিয়ে তাকে ধারালো অস্ত্র দিয়ে বুকে, গলায়, কাঁধে ও পিঠে এলোপাতাড়ি কোপায়। এতে তার গলার কিছু অংশ কেটে যায় এবং শরীরের বিভিন্ন অংশ ক্ষতবিক্ষত হয়ে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

ভিডিওতে দেখা যায়, বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৬টা ৫৮ মিনিট। ঘটনাস্থল চন্দনা চৌরাস্তা মসজিদ মার্কেটের পশ্চিম পাশে। কালো রঙের জামা বা বোরকা পরা এক নারী হেঁটে যাচ্ছেন আর পেছন দিক থেকে সাদার মধ্যে কালো চেক জামা পরা যুবক ওই নারীকে পেছন দিক থেকে টেনে ধরেন। ওই নারী জোর করে চলে যেতে চাইলে তার সামনে গিয়ে গতিরোধ করেন ওই যুবক। একপর্যায়ে ওই ব্যক্তি নারীকে কিল-ঘুষি মারতে থাকনে। মুহূর্তের মধ্যেই পাশ থেকে ধারালো অস্ত্র হাতে ৪-৫ জন দুর্বৃত্ত ওই যুবককে কোপানোর চেষ্টা করেন। পরে ওই যুবক দৌড়ে পালিয়ে যান।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপকমিশনার (এসি) রবিউল ইসলাম বলেন, ‘এক নারীকে নিয়েই মূলত ঘটনার সূত্রপাত। সে মানুষের সঙ্গে কৌশলে সম্পর্ক তৈরি করে সন্ত্রাসীদের মাধ্যমে সব লুটে নেয়। সন্ত্রাসীরা তুহিনকে দেখে ফেলে ভিডিও মুছে ফেলতে বলে। তুহিন ভিডিও মুছতে অস্বীকার করলে তাকে ধাওয়া দেয়। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, নারীঘটিত ঘটনা এবং যুবককে কোপানোর ভিডিও ধারণ করায় দুর্বৃত্তরা তাকে কুপিয়ে হত্যা করে। আহত বাদশা মিয়া গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।’

তিনি আরো বলেন, ‘গাজীপুরের বাসন, ভোগরা ও চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় একটি চক্র আছে, যারা ছিনতাইয়ের সঙ্গে জড়িত। সিসিটিভির ফুটেজে যাদের দেখা গেছে, তারা সবাই ওই দলের সদস্য। তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে। এ ছাড়াও ফুটেজে যে নারীকে দেখা গেছে, তিনিও ওই চক্রের সদস্য হতে পারেন। চান্দনা চৌরাস্তা এলাকায় বিভিন্ন ধরনের ফাঁদ পেতে ওই চক্র ছিনতাই করে। আমরা ধারণা করছি, সিসিটিভি ক্যামেরার ফুটেজের ওই মেয়ে ছিনতাইকারী দলের একজন সদস্য। হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের ধরতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর একাধিক টিম কাজ করছে। পাশাপাশি সিসিটিভি ফুটেজে হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদের গ্রেফতারে পুলিশ অভিযান শুরু করেছে।’

আটক পাঁচজন: গাজীপুরে দৈনিক প্রতিদিনের কাগজ পত্রিকার গাজীপুর প্রতিনিধি মো. আসাদুজ্জামান তুহিনকে প্রকাশ্যে কুপিয়ে ও গলা কেটে হত্যার ঘটনায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য পাঁচজনকে আটক করা হয়েছে। গাজীপুর মেট্রোপলিটন বাসন থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহীন খান বলেন, সাংবাদিক মো. আসাদুজ্জামান তুহিন হত্যাকাণ্ডে পাঁচজনকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আটক করা হয়েছে। তবে সিসি ক্যামেরা বিশ্লেষণ যাদের পাওয়া গেছে আটকদের মধ্যে তারা কেউ নেই। আটককৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। তদন্তের স্বার্থে তাদের নাম-পরিচয় প্রকাশ করতে অনীহা প্রকাশ করেন তিনি।