ঢাকা ০৬:৪১ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ০৩ অগাস্ট ২০২৫

কোটিপতির সঙ্গে বাড়ছে আয় বৈষম্য

  • আপডেট সময় : ০২:২২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১
  • ৯৯ বার পড়া হয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক :” মহামারি করোনার অভিঘাতে বেশিরভাগ মানুষের আয় কমলেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। ফলে এসময় আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে আয় বৈষম্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা ১ লাখ ২৩৯টি। যা ছয় মাস আগেও ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। অপরদিকে এক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, করোনায় নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার সময়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। ফলে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগে আসছেন না। ফলে একদিকে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান কমে গেছে অন্যদিকে ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের অলস অর্থ জমা হচ্ছে। এতে দেশের আয় বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া, দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়ও দেশের আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব সংখ্যা এক লাখ ২৩৯টি। যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮টি। অর্থাৎ গত তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন কোটিপতির হিসাবসংখ্যা বেড়েছে ৩২১ জন। আর গত বছরের একই সময়ে ছিল কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৮৭ হাজার ৪৯০টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১২ হাজার ৭৪৯ টি। এছাড়া চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে পাঁচ হাজার ৬৪৬টি কোটিপতি ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোটিপতি হিসাবধারী বেড়েছিল ৩৮২ জন। এদিকে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। জরিপে আরও বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের ওপর প্রভাব অনেক বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতি ধনীদের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা লকডাউনের আগে ছিল ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই কোভিড-১৯-এর লকডাউন আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৬। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা এক লাখ ২৩৯টি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে দেশে কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী গ্রাহক ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কোটিপতির সঙ্গে বাড়ছে আয় বৈষম্য

আপডেট সময় : ০২:২২:২৪ অপরাহ্ন, সোমবার, ২৭ ডিসেম্বর ২০২১

নিজস্ব প্রতিবেদক :” মহামারি করোনার অভিঘাতে বেশিরভাগ মানুষের আয় কমলেও কিছু মানুষের আয় বেড়েছে। ফলে এসময় আরো তীব্র আকার ধারণ করেছে আয় বৈষম্য। বাংলাদেশ ব্যাংকের হিসাবে দেশে এখন কোটি টাকার আমানতকারীর সংখ্যা ১ লাখ ২৩৯টি। যা ছয় মাস আগেও ছিল ৮২ হাজার ৬২৫টি। অপরদিকে এক বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠানের জরিপ অনুযায়ী, করোনায় নতুন করে প্রায় আড়াই কোটি মানুষ দরিদ্র হয়েছে। অর্থনীতিবিদরা বলছেন, করোনার সময়ে দেশের ব্যবসা-বাণিজ্য স্থবির হয়ে পড়েছিল। ফলে অনেকেই চাকরি হারিয়েছেন। বিনিয়োগকারীরাও নতুন বিনিয়োগে আসছেন না। ফলে একদিকে যেমন মানুষের কর্মসংস্থান কমে গেছে অন্যদিকে ব্যাংকে বিনিয়োগকারীদের অলস অর্থ জমা হচ্ছে। এতে দেশের আয় বৈষম্য চরম আকার ধারণ করেছে। এছাড়া, দুর্নীতির মাধ্যমে কালোটাকা অর্জন, হন্ডির মাধ্যমে দেশ থেকে টাকা পাচারে কিছুটা প্রতিবন্ধকতা, প্রণোদনা প্যাকেজের টাকা ভিন্ন খাতে স্থানান্তর, করনীতিতে অসামঞ্জস্য, ধনীদের কাছ থেকে কম হারে কর আদায়ও দেশের আয় বৈষম্যের অন্যতম কারণ। এসব কারণে এক শ্রেণির মানুষের বৈধ ও অবৈধ উপায়ে আয় বাড়ছে। তবে আয় কমেছে এমন মানুষের সংখ্যা সবচেয়ে বেশি। এ অবস্থায় বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বাড়ানোর উপর সরকারকে আরো বেশি গুরুত্ব দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন অর্থনীতিবিদরা।
বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, সেপ্টেম্বর শেষে দেশে ব্যক্তি ও প্রাতিষ্ঠানিক কোটিপতি আমানতকারীর ব্যাংক হিসাব সংখ্যা এক লাখ ২৩৯টি। যা আগের প্রান্তিক জুন শেষে ছিল ৯৯ হাজার ৯১৮টি। অর্থাৎ গত তিন মাসে ব্যাংক ব্যবস্থায় নতুন কোটিপতির হিসাবসংখ্যা বেড়েছে ৩২১ জন। আর গত বছরের একই সময়ে ছিল কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা ছিল ৮৭ হাজার ৪৯০টি। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে কোটিপতি হিসাবধারীর সংখ্যা বেড়েছে ১২ হাজার ৭৪৯ টি। এছাড়া চলতি বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকে (এপ্রিল-জুন) ব্যাংক খাতে পাঁচ হাজার ৬৪৬টি কোটিপতি ব্যাংক হিসাব যোগ হয়েছে, যেখানে চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জানুয়ারি-মার্চ) কোটিপতি হিসাবধারী বেড়েছিল ৩৮২ জন। এদিকে, কোভিডের আঘাতে দেশে নতুন করে দরিদ্র হয়েছে ২ কোটি ৪৫ লাখ মানুষ। এক জরিপে দেখা গেছে, ২০২১ সালের মার্চ পর্যন্ত দেশে এই নতুন দরিদ্র শ্রেণির সংখ্যা জনসংখ্যার ১৪ দশমিক ৭৫ শতাংশ হয়েছে। বেসরকারি গবেষণা প্রতিষ্ঠান পাওয়ার অ্যান্ড পার্টিসিপেশন রিসার্চ সেন্টার (পিপিআরসি) ও ব্র্যাক ইনস্টিটিউট অব গভর্ন্যান্স অ্যান্ড ডেভেলপমেন্টের (বিআইজিডি) এক সাম্প্রতিক জরিপে এসব তথ্য জানা গেছে। জরিপে আরও বলা হয়েছে, মহামারি শুরু হওয়ার পর দেশের অর্থনীতিতে কোভিড-১৯ এর প্রভাব পড়েছে। বিশেষ করে নি¤œ আয়ের মানুষের ওপর প্রভাব অনেক বেশি। গবেষণায় আরও দেখা গেছে, অতি ধনীদের হাতে এখন দেশের মোট আয়ের ৩৭ দশমিক ৮০ শতাংশ, যা লকডাউনের আগে ছিল ২৭ দশমিক ৮২ শতাংশ। এই কোভিড-১৯-এর লকডাউন আয় বৈষম্যও বাড়িয়েছে। যা মারাত্মক রূপ ধারণ করেছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরের সেপ্টেম্বর শেষে মোট আমানতকারীর সংখ্যা ১২ কোটি ৩৫ লাখ ৬৩ হাজার ৩৪৬। এসব হিসাবে মোট আমানতের পরিমাণ ১৪ লাখ ৬২ হাজার ৮৮৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে কোটি টাকার আমানতকারীর হিসাব সংখ্যা এক লাখ ২৩৯টি। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ১৯৭২ সালে দেশে কোটিপতি ছিলেন মাত্র পাঁচ জন। ১৯৭৫ সালের ডিসেম্বরে এই সংখ্যা বেড়ে ৪৭ জনে দাঁড়ায়। ১৯৮০ সালে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৯৮ জনে। এরশাদ সরকারের পতনের সময় ১৯৯০ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা ছিল ৯৪৩ জন। ১৯৯৬ সালের জুনে দেশে কোটিপতি ছিলেন ২ হাজার ৫৯৪ জন। ২০০১ সালের সেপ্টেম্বর শেষে এ সংখ্যা দাঁড়ায় ৫ হাজার ১৬২ জনে। ২০০৬ সালের ডিসেম্বরে কোটিপতির সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৮ হাজার ৮৮৭ জনে। ২০০৮ সালে ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারী গ্রাহক ছিলেন ১৯ হাজার ১৬৩ জন।