ঢাকা ০৮:০৭ অপরাহ্ন, বুধবার, ০৫ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কোটা সংস্কারের দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের নীরব প্রতিবাদ

  • আপডেট সময় : ১১:১৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪
  • ৬৮ বার পড়া হয়েছে

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার প্রতিবেদন : কোটা নিয়ে চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে ১৩ মিনিটের মৌন সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১২টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ মৌন সমাবেশ করেন তারা। এসময় সাংবাদিকরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তাছাড়া বিবৃতিতে তাদের সম্মিলিত দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা বাতিলের পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর ফলে সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সরকারি চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থানÑ
১. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন, তখন তিনি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং নারীদের জন্য যথাক্রমে ৩০% এবং ১০% কোটার ব্যবস্থা করেন। কেননা, মুক্তিযুদ্ধে তখন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে শহীদ হওয়াতে তাদের পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারায়। পাক হানাদার বাহিনী অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলে। অনেকে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারান, অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ অবস্থায়, তখন বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য জাতির জনকের ৩০% কোটা ব্যবস্থা প্রদান করা সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অনগ্রসর অবস্থা বিবেচনায় কোটা দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা বলা আছে)। তাছাড়াও তৎকালীন নারী শিক্ষায় এই জনপদ অনগ্রসর ছিল। যেসব নারী পড়াশোনা করেছেন তারাও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পড়ালেখা করতে পেরেছেন। সেজন্য তাদের জন্যও কোটা থাকা জরুরি ছিল। পরে মাঝে কোটা সুবিধা বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়াতে অনেক মুক্তিযোদ্ধার চাকরিতে প্রবেশের বয়স পেরিয়ে যায়। যার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পর্যন্ত কোটা সুবিধা প্রদান করা যৌক্তিক ছিল। তবে বর্তমান সময়ে এসে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সচ্ছল জীবন-যাপন করছে। তাদের পরিবারের নাতি নাতনিদের পূর্বের অনগ্রসর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা লাগেনি। এক্ষেত্রে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিবেচনা করে তাদের সুবিধার্থে এবং মেধার স্বার্থে পূর্বের কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা বাধ্যতামূলক।
২. ২০০৪ সালের ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী নারীদের সাক্ষরতার হার ছিল ৩১% এবং ২০০৮ সালে ছিল ৫১%। সেখানে বর্তমানে মেয়েদের সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৩%। যেখানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮ শতাংশ (সূত্র: প্রথম আলো)। এ থেকে এটা বলা যায় যে, দেশে নারী শিক্ষায় ও যোগ্যতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নারীরা তাদের আত্মমর্যাদা ও অধিকারের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। এমতাবস্থায়, ১০% নারী কোটা বজায় রাখা আত্মমর্যাদাশীল নারীদের প্রতি অসম্মানজনক। এমনকি আমাদের মাঝে উপস্থিত নারীরা কেউই নারীদের জন্য এই বিশেষ কোটা সুবিধা চায় না। তাই নারী কোটাও সংস্কার করা উচিত। ৩. পূর্বে দেশের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বেশ কিছু প্রত্যন্ত জেলা ছিল যারা অনগ্রসর ছিল। যার জন্য ১০% জেলা কোটা রাখা হয়েছিল। বর্তমানে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে সারাদেশ এখন একসঙ্গে কানেক্টেড। তাছাড়াও টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা সারাবিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জেলা বলতে কার্যত কিছু থাকছে না। তাই এখানেও ১০% কোটা রাখা ভিত্তিহীন।
৪. কোটা সংস্কারের পর বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত/ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে না পাওয়া গেলে সে জায়গাগুলোতে মেধার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।
৫. একটি বিশেষ কোটাকে যাতে কোনো ব্যক্তি তার জীবনের ধাপে ধাপে সুবিধা ভোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের সঠিক অবকাঠামো গঠন করার আবশ্যক।
৬. কালের বিবর্তনে বাংলাদেশ এখন স্মার্ট আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে প্রতিনিয়ত মেধাবীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসছে। তার মানে মেধা ও মননের দিক দিয়ে দেশ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। যার ফলে আগামীর বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে দেশের মেধাবীরা। সেজন্য মেধার সর্বাত্মক সুযোগ বজায় রাখা কাম্য। তাই মেধাই হোক সবচেয়ে বড় কোটা। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই, দেশের সর্বস্তরে কোটা সংস্কার বিষয়ক যেসব আন্দোলন হচ্ছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করছি এবং আদালতের প্রতি মেধার মূল্যায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে অতি দ্রুত রায় প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার ইস্যুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকলেও বুয়েট শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল না। ফলে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানালো বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
কাফনের কাপড় পরে জবি শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’: রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় কাফনের কাপড় পরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন তারা। গত সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কোটাবিরোধী স্লোগান দিতেও দেখা গেছে তাদের। জবির অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাফনের কাপড় পরে আন্দোলন করতে থাকব। কোটা প্রথার জন্য আমরা সব দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হলো, বাংলাদেশের সব চাকুরিতে শুধু প্রতিবন্ধী কোটা রেখে সব কোটা বাতিল করতে হবে। কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তামিম ইসলাম দুর্জয় বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধার কোনও মূল্যায়ন নেই। আমরা প্রয়োজনে রক্ত দেব, জীবন দেব, কিন্তু আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। মো. সুলাইমান হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কাফনের কাপড় পরে আমরা প্রতীকী আন্দোলন করছি। নিঃসন্দেহে আমাদের দাবি যৌক্তিক। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সাড়া দিয়ে মেধার মূল্যায়ন করবেন।

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কোটা সংস্কারের দাবিতে বুয়েট শিক্ষার্থীদের নীরব প্রতিবাদ

আপডেট সময় : ১১:১৭:৩৬ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৯ জুলাই ২০২৪

ক্যাম্পাস ও ক্যারিয়ার প্রতিবেদন : কোটা নিয়ে চলমান আন্দোলনকে যৌক্তিক দাবি করে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সংহতি ও একাত্মতা প্রকাশ করে ১৩ মিনিটের মৌন সমাবেশ করেছে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থীরা।
গতকাল মঙ্গলবার (৯ জুলাই) দুপুর সাড়ে ১২টা থেকে ১২টা ৪৩ মিনিট পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারের সামনে এ মৌন সমাবেশ করেন তারা। এসময় সাংবাদিকরা তাদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করলে তারা মিডিয়ার সামনে কথা বলতে অস্বীকৃতি জানান। তাছাড়া বিবৃতিতে তাদের সম্মিলিত দাবিগুলো উল্লেখ করা হয়েছে বলেও জানান তারা।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ৫ জুন হাইকোর্ট ২০১৮ সালের জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কোটা বাতিলের পরিপত্রটি অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেন। এর ফলে সারা দেশের মেধাবী শিক্ষার্থীদের মধ্যে ভবিষ্যৎ সরকারি চাকরি নিয়ে অনিশ্চয়তার সৃষ্টি হয়। এতে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীদের অবস্থানÑ
১. একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান যখন দেশ পুনর্গঠনের দায়িত্ব নেন, তখন তিনি যুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্ত মুক্তিযোদ্ধা পরিবার এবং নারীদের জন্য যথাক্রমে ৩০% এবং ১০% কোটার ব্যবস্থা করেন। কেননা, মুক্তিযুদ্ধে তখন আমাদের বীর মুক্তিযোদ্ধারা অনেকে শহীদ হওয়াতে তাদের পরিবার উপার্জনক্ষম ব্যক্তিদের হারায়। পাক হানাদার বাহিনী অনেকের বাড়িঘর পুড়িয়ে ফেলে। অনেকে পরিবারের গুরুত্বপূর্ণ সদস্যকে হারান, অনেকে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে পঙ্গুত্ব বরণ করেন। এ অবস্থায়, তখন বেঁচে থাকা মুক্তিযোদ্ধা এবং শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবারের জন্য জাতির জনকের ৩০% কোটা ব্যবস্থা প্রদান করা সময়োপযোগী সঠিক সিদ্ধান্ত ছিল। (গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের সংবিধানে অনগ্রসর অবস্থা বিবেচনায় কোটা দিয়ে সুযোগ সৃষ্টি করে দেওয়ার কথা বলা আছে)। তাছাড়াও তৎকালীন নারী শিক্ষায় এই জনপদ অনগ্রসর ছিল। যেসব নারী পড়াশোনা করেছেন তারাও অনেক প্রতিকূলতা অতিক্রম করে পড়ালেখা করতে পেরেছেন। সেজন্য তাদের জন্যও কোটা থাকা জরুরি ছিল। পরে মাঝে কোটা সুবিধা বন্ধ থাকার পর আবার চালু হওয়াতে অনেক মুক্তিযোদ্ধার চাকরিতে প্রবেশের বয়স পেরিয়ে যায়। যার জন্য মুক্তিযোদ্ধা সন্তান পর্যন্ত কোটা সুবিধা প্রদান করা যৌক্তিক ছিল। তবে বর্তমান সময়ে এসে অধিকাংশ মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সচ্ছল জীবন-যাপন করছে। তাদের পরিবারের নাতি নাতনিদের পূর্বের অনগ্রসর পরিস্থিতি মোকাবিলা করা লাগেনি। এক্ষেত্রে অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা পরিবারের কথা বিবেচনা করে তাদের সুবিধার্থে এবং মেধার স্বার্থে পূর্বের কোটা পদ্ধতি সংস্কার করা বাধ্যতামূলক।
২. ২০০৪ সালের ইউনিসেফের তথ্য অনুযায়ী নারীদের সাক্ষরতার হার ছিল ৩১% এবং ২০০৮ সালে ছিল ৫১%। সেখানে বর্তমানে মেয়েদের সাক্ষরতার হার বেড়ে হয়েছে ৭৩%। যেখানে দেশের সাক্ষরতার হার ৭৬.০৮ শতাংশ (সূত্র: প্রথম আলো)। এ থেকে এটা বলা যায় যে, দেশে নারী শিক্ষায় ও যোগ্যতায় অনেক দূর এগিয়ে গেছে। নারীরা তাদের আত্মমর্যাদা ও অধিকারের প্রতি যথেষ্ট সচেতন। এমতাবস্থায়, ১০% নারী কোটা বজায় রাখা আত্মমর্যাদাশীল নারীদের প্রতি অসম্মানজনক। এমনকি আমাদের মাঝে উপস্থিত নারীরা কেউই নারীদের জন্য এই বিশেষ কোটা সুবিধা চায় না। তাই নারী কোটাও সংস্কার করা উচিত। ৩. পূর্বে দেশের অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থার জন্য বেশ কিছু প্রত্যন্ত জেলা ছিল যারা অনগ্রসর ছিল। যার জন্য ১০% জেলা কোটা রাখা হয়েছিল। বর্তমানে পদ্মা সেতু, যমুনা সেতুসহ বিভিন্ন মেগা প্রজেক্টের মাধ্যমে যোগাযোগ ব্যবস্থায় অভাবনীয় পরিবর্তনের ফলে সারাদেশ এখন একসঙ্গে কানেক্টেড। তাছাড়াও টেলিযোগাযোগ ও ইন্টারনেট ব্যবস্থা সারাবিশ্বকে হাতের মুঠোয় এনে দিয়েছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যন্ত জেলা বলতে কার্যত কিছু থাকছে না। তাই এখানেও ১০% কোটা রাখা ভিত্তিহীন।
৪. কোটা সংস্কারের পর বিভিন্ন কোটায় উপযুক্ত/ন্যূনতম যোগ্যতা সম্পন্ন কাউকে না পাওয়া গেলে সে জায়গাগুলোতে মেধার অগ্রাধিকার ভিত্তিতে নিয়োগ বাস্তবায়ন করা আবশ্যক।
৫. একটি বিশেষ কোটাকে যাতে কোনো ব্যক্তি তার জীবনের ধাপে ধাপে সুবিধা ভোগের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে না পারে সেজন্য প্রশাসনের সঠিক অবকাঠামো গঠন করার আবশ্যক।
৬. কালের বিবর্তনে বাংলাদেশ এখন স্মার্ট আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। দেশ থেকে প্রতিনিয়ত মেধাবীরা আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে নিজেদের সামর্থ্যের প্রমাণ দিয়ে আসছে। তার মানে মেধা ও মননের দিক দিয়ে দেশ অনেকাংশে এগিয়ে গেছে। যার ফলে আগামীর বাংলাদেশের কাণ্ডারি হবে দেশের মেধাবীরা। সেজন্য মেধার সর্বাত্মক সুযোগ বজায় রাখা কাম্য। তাই মেধাই হোক সবচেয়ে বড় কোটা। এতে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের সোনার বাংলা গঠনে দেশ খুব দ্রুত এগিয়ে যাবে বলে আমরা বিশ্বাস করি।
পরিশেষে আমরা বলতে চাই, দেশের সর্বস্তরে কোটা সংস্কার বিষয়ক যেসব আন্দোলন হচ্ছে তা অত্যন্ত যৌক্তিক। আমরা বুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সর্বাত্মকভাবে একাত্মতা ও সংহতি প্রকাশ করছি এবং আদালতের প্রতি মেধার মূল্যায়নকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সাধারণ শিক্ষার্থীদের দাবির পক্ষে অতি দ্রুত রায় প্রদান করার জন্য অনুরোধ জানাচ্ছি।
উল্লেখ্য, কোটা সংস্কার ইস্যুতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়-কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থী স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণ থাকলেও বুয়েট শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণ ছিল না। ফলে এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের সমালোচনার মুখে পড়তে হয়েছে তাদের। ফলে প্রথমবারের মতো আনুষ্ঠানিকভাবে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সঙ্গে সংহতি জানালো বুয়েট শিক্ষার্থীরা।
কাফনের কাপড় পরে জবি শিক্ষার্থীদের ‘বাংলা ব্লকেড’: রাজধানীর গুলিস্তান জিরো পয়েন্টে অবস্থান নিয়ে কোটাবিরোধী আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি পালন করছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থীরা। এ সময় কাফনের কাপড় পরে সড়কে অবস্থান নিয়েছেন তারা। গত সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল থেকে এ কর্মসূচি শুরু করেন শিক্ষার্থীরা। সড়ক অবরোধ করে বিভিন্ন কোটাবিরোধী স্লোগান দিতেও দেখা গেছে তাদের। জবির অ্যাকাউন্টিং বিভাগের শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান বলেন, আমাদের দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত আমরা কাফনের কাপড় পরে আন্দোলন করতে থাকব। কোটা প্রথার জন্য আমরা সব দিক থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। প্রধানমন্ত্রীর কাছে আমাদের দাবি হলো, বাংলাদেশের সব চাকুরিতে শুধু প্রতিবন্ধী কোটা রেখে সব কোটা বাতিল করতে হবে। কাফনের কাপড় পরে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থী তামিম ইসলাম দুর্জয় বলেন, শিক্ষার্থীদের মেধার কোনও মূল্যায়ন নেই। আমরা প্রয়োজনে রক্ত দেব, জীবন দেব, কিন্তু আমাদের দাবি না মানা পর্যন্ত রাজপথ ছাড়ব না। মো. সুলাইমান হোসেন নামে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, কাফনের কাপড় পরে আমরা প্রতীকী আন্দোলন করছি। নিঃসন্দেহে আমাদের দাবি যৌক্তিক। আমরা বিশ্বাস করি, প্রধানমন্ত্রী আমাদের এই যৌক্তিক আন্দোলনে সাড়া দিয়ে মেধার মূল্যায়ন করবেন।