নারী ও শিশু ডেস্ক : গবেষকরা ধারণা করছেন, বয়ঃসন্ধিকালে মস্তিষ্ক, দেহের হরমোন ও যে সামাজিক পরিবর্তনগুলো হয় তার সঙ্গে একটি নির্দিষ্ট বয়সে সামাজিক মাধ্যমের প্রতি দুর্বলতার সংশ্লিষ্টতা রয়েছে। বিষয়গুলোর মধ্যে যোগসূত্র এবং এর সার্বিক প্রভাব বুঝতে আরও গবেষণা প্রয়োজন বলে মত দিয়েছেন গবেষকরা।
আর গবেষণার কাজ ত্বরান্বিত করতে গবেষকদের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যম কোম্পানিগুলোর নিজস্ব ডেটা আরও বেশি শেয়ার করা উচিত বলে মন্তব্য করেছেন ইউনিভার্সটি অফ অক্সফোর্ড, ইউনিভার্সিটি অফ কেমব্রিজ এবং ‘ডোন্ডার্স ইনস্টিটিউট ফর ব্রেইন, কগনিশন অ্যান্ড বিহেভিয়র’-এর গবেষকরা।
তবে, গবেষকরা এটাও বলেছেন যে কোভিড মহামারী চলাকালীন কিশোরবয়সীদের একে অন্যের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার সুযোগ করে দিয়ে সামাজিক মাধ্যম যে ইতিবাচক প্রভাব রেখেছে, ঠিক তেমনভাবেই ভালো কিছুর বার্তাবাহক হতে পারে এই প্রযুক্তি।
সামাজিক মাধ্যম আর মানসিক স্বাস্থ্যের যোগসূত্রটা বেশ জটিল বলে জানিয়েছেন গবেষক দলের প্রধান ড. এমি ওরবেন। এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে যত গবেষণা হয়েছে, সেগুলোর ফলাফল মিশ্র ছিল বলে জানিয়েছেন তিনি।
“আমাদের শরীরের ভেতরে যে পরিবর্তন হয়, যেমন মস্তিষ্কের গঠন, বয়ঃসন্ধিকাল এবং আমাদের সামাজিক অবস্থায় পরিবর্তনগুলো জীবনের নির্দিষ্ট কয়েকটি সময়ে আমাদের নাজুক অবস্থায় ফেলে,” বলেন ওরবেন।
গবেষকরা যুক্তরাজ্যের ৭২ হাজার মানুষের তথ্য সংগ্রহ করেছিল বলে জানিয়েছে বিবিসি। প্রতিদিন তারা বন্ধুদের সঙ্গে সামাজিক মাধ্যমে কতো সময় দেন আর জীবন নিয়ে তারা কতোটা সন্তুষ্ট, সেই তথ্য চাওয়া হয়েছিল তাদের কাছে।
২০১১ থেকে ২০১৮ সালের মধ্যে সাতবার জরিপে অংশ নিয়েছেন তারা। এর মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের ব্যবহার এবং জীবন নিয়ে অসন্তুষ্টির মধ্যেকার নেতিবাচক সম্পর্ক সবচেয়ে বেশি ছিল বয়ঃসন্ধিকালে থাকা কিশোরবয়সীদের মধ্যে।
জরিপে উঠে এসেছে: ১৬ থেকে ২১ বছর বয়সীদের মধ্যে দিনে সর্বোচ্চ তিন ঘণ্টার সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করেন, তাদের তুলনায় যারা দিনে সর্বোচ্চ সাত ঘণ্টা সামাজিক মাধ্যমে দেন, তাদের মধ্যে জীবন নিয়ে সন্তুষ্টি কম।
আরও কম বয়সীদের মধ্যে সামাজিক মাধ্যমের প্রভাবটা ভিন্ন। তারা সামাজিক মাধ্যমে যতো সময় কাটায়, জীবন নিয়ে অসন্তুষ্টি ততো বাড়তে থাকে তাদের মধ্যে।
এরপর গবেষকরা ১০ থেকে ২১ বছর বয়সী ১৭ হাজার ৪০৯ জন অংশগ্রহণকারীকে নিয়ে গবেষণা চালান বলে জানিয়েছে বিবিসি। এই গবেষণাটির লক্ষ্য ছিল, ভবিষ্যৎ জীবনের সন্তুষ্টির উপর বর্তমান সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের কোনো প্রভাব আছে কি না, সেটি উন্মোচন করা।
পরের গবেষণাটি ইঙ্গিত করছে, ১১ থেকে ১৩ বছর বয়সী কিশোরীরা এক বছরে মধ্যে সামাজিক মাধ্যমে যতো সময় দিচ্ছেন, ঠিক এক বছর পরে জীবন নিয়ে অসন্তুষ্টির হার তাদের মধ্যে ততোটাই বেশি। তবে, কিশোরবয়সীদের মধ্যে কে সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে আছে, নিজেদের গবেষণা থেকে সেই ভবিষ্যদ্বাণী করা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছেন গবেষকরা। এর সঙ্গে অনেকগুলো পরিবর্তনশীল বিষয় জড়িত বলে জানিয়েছেন গবেষকরা; যেমন: কনটেন্টের ধরন এবং সামাজিক যোগাযোগের প্ল্যাঠফর্মগুলোতে কাদের সঙ্গে কিশোরবয়সীদের যোগাযোগ হচ্ছে– এমন বিষয়গুলো। এ প্রসঙ্গে ইউনিভার্সটি অফ ম্যানচেস্টারের শিশু বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক বার্নাডকা ডুবিচকা বলেন, “গবেষণাটি বেশ কৌতুহল উদ্দীপক। চিকিৎসা খাতেও বয়ঃসন্ধিকালের যে নাজুক পরিস্থিতি দেখা যায় তারই প্রতিফলন ঘটেছে এতে। সামাজিক মাধ্যম ক্ষতিকর, নাকি ক্ষতিকর নয় সেই দ্বিধাবিভক্তি থেকেও সরে এসেছে এ গবেষণা।”
২০১৮ সাল পর্যন্ত সংগ্রহ করা ডেটা ব্যবহার করা হয়েছে গবেষণায়। কিন্তু মহামারীর কারণে কিশোরবয়সীদের জীবনে সামাজিক মাধ্যমের উপস্থিতি আরও বেড়েছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে। অন্যদিকে কিশোরবয়সীদের মানসিক স্বাস্থ্যের উপর প্ল্যাটফর্মগুলোর নেতিবাচক প্রভাবও বেড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডুবিচকা বলছেন, “তরুণ বয়সীদের জীবনে ওপর সামাজিক মাধ্যমের ইতিবাচক ভূমিকা এবং নেতিবাচক প্রভাব উভয় বুঝতেই এই গবেষণারভিত্তিতে সামনে এগোনো গুরুত্বপূর্ণ।-
কৈশোরে ‘জীবনানন্দের’ অভাব আনে সামাজিক মাধ্যম
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ