মাহমুদ আহমদ : আজ পবিত্র মাহে রমজানের পঞ্চম দিনের রোজা অতিবাহিত করার আমরা তৌফিক লাভ করেছি, আলহামদুলিল্লাহ। পবিত্র রমজানের এইদিনগুলো বিশ্ব মুসলিম উম্মাহ যথাযথ ধমীর্য় ভাবগাম্ভির্যের সাথে অতিবাহিত করছেন।
এখন আমাদের সবার আত্মবিশ্লেষণ করা উচিত, এই যে রোজাগুলো আমরা পালন করেছি আল্লাহপাকের সন্তুষ্টির জন্য, আসলেই কি আমরা এ দিনগুলোতে আল্লাহর নির্দেশমত জীবন পরিচালিত করেছি? আমরা কি মিথ্যা বলাসহ সর্ব প্রকার পাপ থেকে বিরত থেকেছি? আমরা কি আমাদের ব্যবসায় অধিক মুনাফার চিন্তা ত্যাগ করেছি? আমরা কি আল্লাহর ধ্যানে কিছুটা সময় অতিবাহিত করেছি?
আমাদের উত্তর যদি না হয়, তাহলে এই রোজা রাখা আমাদের কোনো কাজে আসবে না। কেননা রোজা মানুষের মাঝে এক ধরনের বিনয়, ধৈর্য, সর্বপ্রকার পাপ মুক্ত এবং সহ্য-ক্ষমতা সৃষ্টি করে। আর রোজার মাধ্যমে মানুষ তার নিজের নাফসের সংশোধনও করে। যেব্যক্তি রোজা রেখে বৃথা কাজকর্ম করে, মিথ্যা কথা বলে, ধোকা দেয়, ব্যবসায় মানুষকে প্রতারিত করে, এমনটি করলে এই রোজা রাখা তার জন্য কোন কাজে লাগবে না। বরং এটি শুধুমাত্র উপবাস থাকারই নামান্তর।
আমাদের প্রিয় নবি (সা.) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি মিথ্যা কথা বলা এবং এর ওপর আমল করা থেকে বিরত থাকেনা আল্লাহতায়ালার জন্য তার উপবাস থাকা এবং পিপাসার্ত থাকার কোন প্রয়োজন নেই। অর্থাৎ তার রোজা রাখা বেকার বলে গণ্য হবে’ (বুখারি, কিতাবুস সওম)।
অর্থাৎ যখন মানুষ রোজার প্রকৃত উদ্দেশ্য থেকে গাফেল হয়ে যায় তখন সে শুধু নিজেকে উপবাসই রাখে যা আল্লাহতায়ালার জন্য কোন প্রয়োজন নেই। আল্লাহ মানুষের অন্তর দেখেন, কোন নিয়তে সে রোজা রাখছে এটাই মূল বিষয়।
হজরত ফাতেমা যাহরা (রা.) বলেছেন: ‘যে ব্যক্তি নিজের জিহবা, চোখ, কান সহ অন্যান্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গকে সংযত করতে পারে না তার রোজা কোন কাজেই আসবে না’ (বিহারুল আনওয়ার, খ- ৯৩, পৃষ্ঠা ২৯৫)।
একজন ব্যক্তির কেবলমাত্র অভুক্ত আর পিপাসার্ত থাকাই রোজার মুল উদ্দেশ্য নয়। কেননা মহানবি (সা.) বলেছেন: ‘তোমাদের কেউ যখন কোনদিন রোজা রাখে, সে যেন অশ্লীল কথা না বলে এবং গোলমাল ও ঝগড়াঝাটি না করে। যদি কেউ তাকে গালি দেয় অথবা কেউ তার সাথে ঝগড়াঝাটি করে তবে তার বলা উচিত, ‘আমি রোজাদার’ (বুখারি)।
তিনি (সা.) আরেক স্থানে বলেন, ‘যে ব্যক্তি রোজাদার আর সে যদি চুপ থাকে তাহলে সেটাও তার জন্য ইবাদত, তার ঘুমও ইবাদত হিসাবে গণ্য করা হবে। তার দোয়া গ্রহণীয় হবে। আর তার আমলের প্রতিদান বাড়িয়ে দেয়া হবে’।
মহানবি (সা.) আমাদেরকে বুঝিয়ে দিয়েছেন, যারা রমজান মাসে প্রবেশ করেছে এবং আন্তরিকতার সাথে রোজা রাখছে তাদের চেহারায় এক পবিত্র পরিবর্তন দেখা যায়, তাদের আত্মা নূরানী হয়ে যায় এবং তার জন্য জান্নাতের দরজা খুলে দেয়া হয়। আর শয়তানকেও শিকল দিয়ে বেধে রাখা হয়। কিন্তু যদি কোন ব্যক্তি রমজান থেকে কল্যাণ না উঠিয়ে কেবল সেহরি আর ইফতার করে তার জন্য এই রোজা কোনো কাজের নয়।
তাই আসুন, রমজানের দিনগুলোকে কাজে লাগাই, অনেক বেশি ইবাতদ-বন্দেগীতে রত ইহ, বেশি বেশি দুরূদ শরীফ পাঠ করি। আল্লাহপাকের স্মরণে নিজেকে নিয়োজিত করি আর ফিতরানা, ফিদিয়া সহ অধিকহারে সদকা-খয়রাত করি।
আমরা যদি এমনটি করতে পারি তবেই না এই রমজানে আমাদের আত্মা হয়ে ওঠবে প্রশান্তিপ্রাপ্ত। আর আল্লাহপাকও তাকে সম্বোধন করে আহ্বান জানাবে, হে প্রশান্তিপ্রাপ্ত আত্মা! তুমি তোমার রবের জান্নাতে প্রবেশ কর।
হে পরম কৃপাশীল প্রভূ! পবিত্র রমজান মাসের বরকত ও কল্যাণ থেকে তুমি আমাদেরকে কল্যাণম-িত কর, আমিন।
কেবল পানাহার বন্ধ রাখাই রোজা নয়
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ