ঢাকা ০৪:২৯ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ০৯ মে ২০২৫

কেন রাতের আঁধারে গাছ কাটা হলো?

  • আপডেট সময় : ১১:২০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩
  • ১২১ বার পড়া হয়েছে

মহানগর প্রতিবেদন : রাজধানীজুড়ে তীব্র তাপদাহে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকা যখন উত্তপ্ত, ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর জন্য ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ দেয়, তখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকা ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হয় গাছ। পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সড়কের গাছ কাটা অব্যাহত রাখে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এই গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তাতে কান দেননি দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মেয়র থেকে শুরু করে নগর ভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গাছ কাটার পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নগরবিদদের ভাষ্যমতে, মূলত জনগণের অসুবিধা বিবেচনায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই কাটা হয়েছে গাছগুলো।
গত ২ মে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে নির্বিচারে গাছ কাটার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধনে নামে পরিবেশবাদীরা। সে সময় কর্মসূচি থেকে উন্নয়নের নামে গাছ কাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বক্তারা। গত ৭ মে (রোববার) রাতে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের পাশে গাছ কাটার মিশন চলাকালে আবারও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেখানে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)। পরিবেশ আন্দোলনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন এতে। বেলা প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রচ- বায়ুদূষণে অভিশপ্ত, একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত হওয়া ঢাকাতে গাছ কাটার আগে ১০০ বার চিন্তা করতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশনই এই গাছগুলো লাগিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারে বলা হয়েছে, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কিন্তু গাছ কেটে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হয় তা আমাদের জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘নতুন করে যে ডিভাইডার করা হচ্ছে সেখানে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। দেখতে তো একই রকম। এই গাছগুলো রেখেই সৌন্দর্যবন্ধনের কাজ করা যেত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বিষয়ে মেয়র বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয় হলো ডেভলপমেন্ট (উন্নয়নমূলক কর্মকা-) করতে গেলে কিছু জিনিস কনসিডার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় আছে। আপনারা বাস্তবতা দিয়ে চিন্তা করেন।’
মুঠো ফোনে ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘এই যে একটা গাছ। এই গাছটা রোড ডিভাইডারটা নষ্ট করে ফেলছে। এগুলোর শেকড় বাইরে চলে এসেছে। তারপরেও অনেক জায়গা আছে যেখানে একটা রাস্তা ধরেন ৫০ ফুট আছে কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে একদিকে আছে ৩০ ফুট এবং অন্য দিকে আছে ২০ ফুট। এখন এমন চিপা সড়কে নিয়মিত যানজট লেগেই থাকছে। সেই ক্ষেত্রে মানুষের কথা বিবেচনা করে লাইনটা ঠিক রাখার জন্য এই রাস্তাটার ডিভাইডার ভেঙে দুইদিকে ২৫ ফুট করে তৈরি করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তো ডিভাইডার ভাঙা লাগবে। আর ডিভাইডার ভাঙতে হলে গাছ কাটতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখেন। কে ডিভাইডারের মাঝখানে গাছ লাগায়। আর গাছতো আমরা অনেক লাগিয়েছি। মাত্র এই কয়টা গাছ কাটলেই কি আমাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আমি যদি গত কয় বছরে ৫০০ গাছ কেটে থাকি, তার বিপরীতে আমি কয়েক লাখ গাছ লাগিয়েছি। আদি বুড়িগঙ্গার পাশে যে আমি এখন গাছ লাগাব এগুলোর প্রভাব কি পড়বে না?’ জনগণকে বিবেচনা করতে হবে, আমি কি আসলে গাছ কাটার জন্য এগুলো কাটছি নাকি বৃহৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গাছগুলো কাটছি।

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কেন রাতের আঁধারে গাছ কাটা হলো?

আপডেট সময় : ১১:২০:১০ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ২১ মে ২০২৩

মহানগর প্রতিবেদন : রাজধানীজুড়ে তীব্র তাপদাহে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) এলাকা যখন উত্তপ্ত, ঢাকার তাপমাত্রা কমানোর জন্য ‘চিফ হিট অফিসার’ নিয়োগ দেয়, তখন দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) এলাকা ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে রাতের আঁধারে কেটে ফেলা হয় গাছ। পরিবেশবাদী ও সচেতন নাগরিকদের বিরোধিতা সত্ত্বেও সড়কের গাছ কাটা অব্যাহত রাখে ডিএসসিসি কর্তৃপক্ষ। এই গাছ কাটা নিয়ে সমালোচনার ঝড় উঠলেও তাতে কান দেননি দায়িত্বে থাকা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। মেয়র থেকে শুরু করে নগর ভবনের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গাছ কাটার পক্ষে ব্যাখ্যা দিয়েছেন। নগরবিদদের ভাষ্যমতে, মূলত জনগণের অসুবিধা বিবেচনায় উন্নয়নমূলক কাজের জন্যই কাটা হয়েছে গাছগুলো।
গত ২ মে মঙ্গলবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে ধানমন্ডি সাত মসজিদ সড়কে নির্বিচারে গাছ কাটার প্রতিবাদে নাগরিক সমাবেশ ও মানববন্ধনে নামে পরিবেশবাদীরা। সে সময় কর্মসূচি থেকে উন্নয়নের নামে গাছ কাটা থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান বক্তারা। গত ৭ মে (রোববার) রাতে ধানমন্ডির আবাহনী মাঠের পাশে গাছ কাটার মিশন চলাকালে আবারও তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় সেখানে মানববন্ধন করে বাংলাদেশ আইনজীবী সমিতি (বেলা)। পরিবেশ আন্দোলনে সম্পৃক্ত ব্যক্তিরা ছাড়াও বিভিন্ন সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতা-কর্মীরা অংশ নেন এতে। বেলা প্রধান নির্বাহী ও সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘প্রচ- বায়ুদূষণে অভিশপ্ত, একটি তাপীয় দ্বীপে পরিণত হওয়া ঢাকাতে গাছ কাটার আগে ১০০ বার চিন্তা করতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশনই এই গাছগুলো লাগিয়েছে। ওয়ার্ক অর্ডারে বলা হয়েছে, সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য এই গাছগুলো কাটা হচ্ছে। কিন্তু গাছ কেটে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হয় তা আমাদের জানা নেই।’
তিনি বলেন, ‘নতুন করে যে ডিভাইডার করা হচ্ছে সেখানে কীভাবে সৌন্দর্যবর্ধন হচ্ছে তা বুঝতে পারছি না। দেখতে তো একই রকম। এই গাছগুলো রেখেই সৌন্দর্যবন্ধনের কাজ করা যেত।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. মিজানুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘এই বিষয়ে মেয়র বক্তব্য দিয়েছেন। বিষয় হলো ডেভলপমেন্ট (উন্নয়নমূলক কর্মকা-) করতে গেলে কিছু জিনিস কনসিডার করতে হবে।’ তিনি বলেন, ‘অনেকগুলো বিষয় আছে। আপনারা বাস্তবতা দিয়ে চিন্তা করেন।’
মুঠো ফোনে ছবি দেখিয়ে বলেন, ‘এই যে একটা গাছ। এই গাছটা রোড ডিভাইডারটা নষ্ট করে ফেলছে। এগুলোর শেকড় বাইরে চলে এসেছে। তারপরেও অনেক জায়গা আছে যেখানে একটা রাস্তা ধরেন ৫০ ফুট আছে কোথাও কোথাও দেখা যাচ্ছে একদিকে আছে ৩০ ফুট এবং অন্য দিকে আছে ২০ ফুট। এখন এমন চিপা সড়কে নিয়মিত যানজট লেগেই থাকছে। সেই ক্ষেত্রে মানুষের কথা বিবেচনা করে লাইনটা ঠিক রাখার জন্য এই রাস্তাটার ডিভাইডার ভেঙে দুইদিকে ২৫ ফুট করে তৈরি করতে হচ্ছে। সেক্ষেত্রে তো ডিভাইডার ভাঙা লাগবে। আর ডিভাইডার ভাঙতে হলে গাছ কাটতে হবে।’
তিনি বলেন, ‘বিশ্বের বিভিন্ন দেশে দেখেন। কে ডিভাইডারের মাঝখানে গাছ লাগায়। আর গাছতো আমরা অনেক লাগিয়েছি। মাত্র এই কয়টা গাছ কাটলেই কি আমাদের ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে। আমি যদি গত কয় বছরে ৫০০ গাছ কেটে থাকি, তার বিপরীতে আমি কয়েক লাখ গাছ লাগিয়েছি। আদি বুড়িগঙ্গার পাশে যে আমি এখন গাছ লাগাব এগুলোর প্রভাব কি পড়বে না?’ জনগণকে বিবেচনা করতে হবে, আমি কি আসলে গাছ কাটার জন্য এগুলো কাটছি নাকি বৃহৎ উদ্দেশ্য পূরণের জন্য গাছগুলো কাটছি।