জুলাই-আগস্ট বিপ্লবের বিজয়ের দিন থেকেই অনেকেই এ বিষয় নিয়ে চিৎকার করলেও সংশ্লিষ্টদের কানে যায়নি। কিন্তু কারা এই সংশ্লিষ্ট জন? আর কেনই বা তাদের কানে তালা? এটা কি ড. ইউনূস সরকারের কারণে নাকি রাজনৈতিক দলগুলোর কারণ?
আমরা এর কারণ জানি না। তবে এটুকু বুঝি যে রাজনৈতিক দল চায় তাড়াতাড়ি নির্বাচন যেন তারা সব ক্ষমতা হাতে পায়। তারা ড. ইউনূসকে শক্তিশালী হতে দিতে চায় না যেন তিনি না আবার ক্ষমতায় জেঁকে বসেন। ড. ইউনূসকে সে রকম লোভী বলে মনে হয় না।
কারণ তিনি প্রধান উপদেষ্টা হওয়ার বহু আগে থেকেই বিশ্বে পরিচিত ও নন্দিত। ফলে লম্বা সময় ধরে এ ক্ষমতা ভোগ করার চেয়ে এর ঋধঃরমঁব অংশই তার কাছে বেশি প্রতিয়মান হওয়ার কথা। তিনি একটা বিষয়ে ঈড়সসরঃঃবফÑ ছাত্রদের বিপ্লব যেন সফল হয়, প্রয়োজনীয় সংস্কার যেন করা যায়। কেননা ছাত্ররা বিপ্লব করেছে সংস্কারের জন্য, ক্ষমতার জন্য নয়।
তাই তাদের সফলতা-ব্যর্থতার হিসাব নির্ধারিত হবে এই সংস্কারের মাত্রা দিয়েই। তাই ড. ইউনূস চাচ্ছেন প্রয়োজনীয় সংস্কার।
আমরা তার কথার অর্থ বুঝি না। কারণ আমরা তাকে আমাদের ফিল্টার দিয়েই দেখি। তাতে ক্ষমতালোভী বলে মনে করতে পারি; যা তিনি মোটেও নন। আর এটি তার দূর্বলতা নয়, বরং আমাদের দৈন্য।
সিরিয়াতেও আমাদের মতো একই কায়দায় বিপ্লব সংঘটিত হয়েছে। সেখানে ১৯৭১ থেকে জেঁকে বসা স্বৈরাচারেরও পতন হয়েছে এই ২০২৪ সালেই। আর তার নেতা আসাদ সব ছেড়ে-ছুড়ে পালিয়েছেন হাসিনার মত কাউকে না জানিয়ে বিমানে করে।
আশ্রয়ও নিয়েছেন ভারতেরই মত আরেক স্বৈরদেশ রাশিয়াতে। কারণ, আসাদ রাশিয়ার ল্যাসপেন্সার ছিলেন। যেমন এ দেশে হাসিনা ছিলেন ভারতের।
যাহোক, সিরিয়ার বিজয়ী বিপ্লবী নেতা আহমেদ আল-শারা আজ কিন্তু ঘোষণ দিয়েছেন যে সেখানে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে ৪ বছর লাগবে। স্বৈরাচারী আচার টহফড় করতে প্রয়োজন এই সময়। কথাটা মোটেও অসংগত নয়। কিন্তু আমরা এমনকি চ্যাম্পিয়ন হলাম যে ওদের লাগা সময়ের অনেক আগেই তা আমরা করে ফেলব?
আসলে আমরা মোটেই চ্যাম্পিয়ন নই; বরং আমাদের ত্যাগটা ছিল স্বল্পকালীন। বলতে গেলে মাত্র ক’দিনের। তাই আমরা এই বিপ্লবের মর্ম বুঝছি না। তবে যাদের সন্তানরা প্রাণ দিয়েছেন, আহত হয়ে রক্ত ঝরিয়েছেন, পঙ্গু হয়েছেন; তারা এ বিপ্লব কি ছিল তা টের পেয়েছেন। তাই তারা চাইছেন এ দেশে স্বৈরাচারের আচার টহফড় করতে। তারপর একটা নির্মল পরিবেশে নির্বাচন অনুষ্ঠান করতে যেন পুরনো স্বৈরাচার অন্য কারো হাত ধরে আবার ফেরত না আসে।
তাদের সঙ্গে আমরা অনেক সচেতন ব্যক্তিরাও সে সময়টুকু ড. ইউনূসকে দিতে চাই। কিন্তু আমাদের রাজনীতিকদের সে রকম কোনো মাথাব্যাথা নেই।
তাহলে তারা কি শুধু ক্ষমতাই চান? ফ্যাসিবাদের পুনরাগমন ঠেকাতে চান না? নাকি মনে করেন যে তারা একনায়কত্ব করলে তা ফ্যাসিবাদ হবে না?
তারা যা ভাবার ভাবুন। নিরপেক্ষ জনগণের ভাবনা যদি তারা পড়তে না পারেন তাহলে বুঝতে হবে ১/১১ বা ২০১৪ থেকে তারা কোনো শিক্ষা নেন নাই। যে ব্যর্থতার কারণে এ দেশে ফ্যাসিবাদ কায়েম হয় ও তাদের সঙ্গে জনগণও সেই পরাধীনতার স্বীকার হয়।
কিন্তু তাদের কি অধিকার ছিল বা আছে জনগণের জন্য এরূপ দুর্যোগ আনয়নের?
সুতরাং তাদের অনুরোধ করব, ধৈর্য ধরুন, দায়িত্বশীল হোন। ক্ষমতায় অন্তর্র্বতী সরকার থাকলেও তার সব সুফল আপনারাই ভোগ করছেন। আর নিজেদের ওপর আস্থা রাখুন যে সংস্কারের পর যে নির্বাচন হবে তাতে আপনারাই ক্ষমতায় আসবেন। তাতে আপনাদের ক্ষমতায় থাকার মেয়াদ দ্বিগুন হবে। কিন্তু তড়িত নির্বাচন দিয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার দিন থেকেই পতনের কাউন্ট ডাউন শুরু হয়ে যাবে। তখন আর এই ছাত্রদেরও পাবেন না পরিস্থিতি সামাল দিতে।
অন্য রাজনৈতিক দলও থাকবে আপনাদের বিরোধিতায়। তাতে নতুন আরেকটি ১/১১ এর সম্ভাবনা বাড়বে। এছাড়া এর মধ্যে যদি তৃতীয় কোনো দলের উদ্ভব না হয় তাহলে পতিত আওয়ামী লীগ (এর মাধ্যমে ভারত) আবার ফেরত আসার সুযোগ পাবে।
এসে সবার ওপর প্রতিশোধ নিবে। কিন্তু ছাত্রদের সুযোগ দিলে পাকিস্তানের ইমরান খানের মতো তৃতীয় একটি দল তৈরি করতে পারলে তারাই পতিত আওয়ামী লীগকে সামাল দেবে। ফলে মুজিব কোট গায়ে চাপিয়ে ভারত আর এ দেশে ফেরত আসতে পারবে না। আর জনগণ সেটাই চায়। তাই জনগণের অনুভুতি বোঝার চেষ্টা করুন।
ক্ষমতাই বড় কথা নয়, জনগণের আস্থা তার চেয়েও অনেক বড়। তা থাকতে পারে ক্ষমতায় থেকে, কিংবা বিরোধী দলে থাকা অবস্থায়ও! যেমন পাকিস্তানের ইমরান খানের ওপর সে দেশের জনগণের আছে। তাই তাড়াহুড়া না করে ড. ইউনূসের সরকারকে প্রয়োজনীয় সংস্কারে সহায়তা করুন।
জনগণের ওপর থেকে ভারতের ভুত আগে তাড়ান। প্রয়োজনে সবাই মিলে জাতীয় সরকার করে সরাসরি ক্ষমতা উপভোগ করুন।
পতিত আওয়ামী লীগের মাধ্যমে ভারতকে আবার দৃশ্যপটে আসার যে কোনো সুযোগ রহিত করুন। কারণ দেশি শক্তির চেয়ে বিদেশি শক্তি যে কত নির্মম হয় তা এদেশের জনগণ দুবার (১৯৭১ ও ২০২৪) দেখেছে। তাই সেটিই এখন জনগণের সবচেয়ে বড় টেনশন। আর এ টেনশন থেকে জনগণকে মুক্তি দিতে পারেন শুধু আপনারা রাজনীতিকরাই। আপনাদের মেধা, জনদরদ, ধৈর্য ও ক্ষমতার প্রতি নির্মোহ দিয়ে!