কক্সবাজার প্রতিনিধি : বান্দরবানের নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলার ঘুমধুম সীমান্তের ওপারে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে দুদিন ধরে গোলাগুলি বন্ধ আছে। এদিকে আজ বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হতে যাওয়া এসএসসি পরীক্ষা দিতে কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে উদ্বিগ্ন সে এলাকার পরীক্ষার্থীদের পরিবার।
ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে এসএসসি পরীক্ষার্থী আছে ৪৯৯ জন। এ পরীক্ষার্থীদের বেশ কয়েকজনের বাড়ি তুমব্রু সীমান্তে। সেখান থেকে ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে পরীক্ষা দিতে আসা-যাওয়া নিয়ে শিক্ষার্থী ও অভিভাবকেরা উদ্বিগ্ন।
ঘুমধুম সীমান্তের তুমব্রু এলাকার কৃষক নুরুল ইসলাম (৫৫) বলেন, মিয়ানমারের নিরাপত্তা বাহিনী কোন সময় গুলি ছুড়ে তার ঠিক-ঠিকানা নেই। দুদিন গোলাগুলি বন্ধ থাকায় ঘুমধুমের বেশ কয়েক কৃষক চাষাবাদ করতে মাঠে নেমেছেন। তবে হুট করে আবার কখন গোলাগুলি শুরু হয়ে যায়, এ নিয়ে তাঁদের আতঙ্ক যাচ্ছে না।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে তুমব্রু এলাকার একজন কৃষক বলেন, সীমান্তের গোলাগুলিতে এক মাসের বেশি সময় ধরে তাঁরা স্বাভাবিক জীবনযাপন করতে পারছেন না। ছেলেমেয়েরা আতঙ্কে ঘর থেকে বের হতে পারেনি। শিক্ষার পরিবেশ ব্যাহত হচ্ছে। আগামীকাল থেকে শুরু হচ্ছে এসএসসি পরীক্ষা। তাঁর মেয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থী। বাড়ি থেকে কেন্দ্রের দূরত্ব প্রায় তিন কিলোমিটার। গোলাগুলির ভয়ে সীমান্তঘেঁষা সড়কপথে মেয়েকে নিয়ে কেন্দ্রে যেতে নিরাপদ মনে করছেন না। সোনাইছড়ি ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান এ্যানি মারমা বলেন, সীমান্তঘেঁষা বাইশফাঁড়ি, তুমব্রুসহ বিভিন্ন এলাকার এসএসসি পরীক্ষার্থীরা কেন্দ্রে যেতে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছে। ঘুমধুম ইউপির চেয়ারম্যান জাহাঙ্গীর আজিজ বলেন, সীমান্তঘেঁষা সড়ক বাদ দিয়ে পাহাড়ের পেছনের আরেকটি সড়ক দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার্থীদের ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য অভিভাবকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে নাইক্ষ্যংছড়ি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) সালমা ফেরদৌস বলেন, দুদিন ধরে সীমান্তের ওপারে গোলাগুলি বন্ধ আছে। এতে আতঙ্ক কমলেও দুশ্চিন্তার শেষ নেই। তুমব্রুসহ ঘুমধুম এলাকার বাসিন্দাদের বাড়িগুলো পাহাড়ের এখানে-সেখানে। সব পরীক্ষার্থীকে এক জায়গায় এনে কেন্দ্রে নিয়ে যাওয়া সম্ভব নয়। আবার ঘুমধুম উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রের ৪৯৯ পরীক্ষার্থীকে ২৭ কিলোমিটার দূরে নাইক্ষ্যংছড়ি সদরের কেন্দ্রে নিয়ে এসে পরীক্ষা নেওয়াও কষ্টকর। পরিস্থিতি বিবেচনা করে বিকল্প পথে পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে নিয়ে আসার জন্য পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। সেখানে বিজিবি নিরাপত্তা দিচ্ছে।
সীমান্ত সুরক্ষার দায়িত্বে থাকা একাধিক সূত্র ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধিরা বলেন, গত ১৩ আগস্ট থেকে তুমব্রু সীমান্তের বিপরীতে মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ওয়ালিডং ও খ্য মং সেক পাহাড়ে দেশটির নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে সশস্ত্র গোষ্ঠী ‘আরাকান আর্মি’র লড়াই চলছে। এক মাসের বেশি সময় ধরে চলমান এ লড়াই বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না।
গতকাল বুধবার সকাল থেকে সেন্টমার্টিনের বিপরীত দিকে মিয়ানমারের জলসীমানায় দেশটির তিনটি নৌবাহিনীর জাহাজ এসে তৎপরতা শুরু করেছে। সেন্টমার্টিন জলসীমানায় তৎপর বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ড। সেন্টমার্টিন দ্বীপের ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সভাপতি মুজিবুর রহমান বলেন, আগে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর একটি জাহাজ টহলে থাকত। আজ সকাল থেকে সেখানে মিয়ানমারের নৌবাহিনীর তিনটি জাহাজের তৎপরতা চোখে পড়ছে। সেন্টমার্টিনে বাংলাদেশ নৌবাহিনী ও কোস্টগার্ডও প্রস্তুত আছে। টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লে. কর্নেল শেখ খালিদ মোহাম্মদ ইফতেখার বলেন, সীমান্ত দিয়ে মিয়ানমারের কেউ যেন বাংলাদেশে ঢুকতে না পারে, এ জন্য তৎপর বিজিবি। পুরো সীমান্ত সিল করে দেওয়া হয়েছে।
কেন্দ্রে যাওয়া নিয়ে ঘুমধুমের এসএসসি পরীক্ষার্থীদের পরিবারে উদ্বেগ
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ




















