অর্থনৈতিক ডেস্ক: জুলাই অভ্যুত্থানে নিহত পরিবার এবং আহতদের জন্য ২৫ কোটি টাকার বিশেষ তহবিল গঠন করতে যাচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এই তহবিলে কেন্দ্রীয় ব্যাংক দেবে ১৪ কোটি টাকা। আর বাকিটা আসবে অন্য ১১টি ব্যাংক থেকে। ব্যাংকার্স মিটিং এ বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর এ বিষয়টি তুলে ধরেন। এর আগে ১১টি ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের সঙ্গে গভর্নর আলাদা বৈঠক করেন, এ ব্যাংকগুলোর প্রত্যেকটিই সদ্য বিদায়ী ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ৪০০ কোটি টাকার ওপর নিট মুনাফা করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র আরিফ হোসেন খান বিডিনিউজ টোয়েন্টিফর ডটকমকে এ তথ্য নিশ্চিত করে বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে নিহতদের পরিবার ও আহতদের জন্য ২৫ কোটি টাকার তহবিল তৈরি করা হবে।এর মধ্যে ১৪ কোটি টাকার তহবিল জোগান দেবে বাংলাদেশ ব্যাংক এবং বাকি ১১টি ব্যাংক থেকে ১ কোটি টাকা করে নেওয়া হবে। এটা বাংলাদেশ ব্যাংকের নেওয়া নিজস্ব উদ্যোগ। তিনি বলেন, এটা একটা বিশেষ তহবিল। যুদ্ধাহত যারা রয়েছেন তাদের সেবা ও প্রয়োজনে এ তহবিল করা মূল উদ্দেশ্য।
২০২৪ সালের জুলাই-অগাস্টের প্রবল আন্দোলনে আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হয়। ৫ অগাস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার মধ্য দিয়ে আওয়ামী লীগের টানা দেড় দশকের শাসনের অবসান ঘটে। ৮ অগাস্ট মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে অন্তর্বর্তী সরকার দায়িত্ব নেয়। এর ১০ মাসে পর প্রথমবারের মতো গভর্নরের সঙ্গে সব ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের বৈঠক হল। শেষ ব্যাংকার্স মিটিং হয়েছিল ২০২৪ সালের ৪ সেপ্টেম্বরে।
বৈঠক শেষে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানে শহীদ পরিবার এবং আহতদের জন্য ব্যাংকারদের একটি তহবিল গঠন করা হবে। এতে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ অন্যান্য বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলো অংশগ্রহণ করবে। তিনি বলেন, ব্যাংকগুলোকে আন্ডার ইনভয়েসিং ও অর্থপাচার রোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।
মাহবুবুর রহমান বলেন, রফতানি করা হলেও রপ্তানি আয় দেশে আসছে না, সে সমস্যা কীভাবে সমাধান করা যায় তা ব্যাংকগুলোকে দেখতে বলা হয়েছে। তাছাড়া স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর জন্য একটি তহবিল তৈরি করা হয়েছে। এসব কোম্পানিকে মূলধন যোগান দেওয়ার বিষয়ে আলোচনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, সঞ্চয়পত্রের পরিবর্তে সরকার ট্রেজারি বিল ও বন্ডকে বেশি উৎসাহিত করছে। আমানতের মতই যাতে সাধারণ মানুষ ট্রেজারি বিল ও বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারে, সে বিষয়ে উদ্যোগ নিতে ব্যাংকগুলোকে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। মূল্যস্ফীতি আশানুরূপ অবস্থায় রয়েছে এবং সামনে আরো কমবে বলে আশা করছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মূল্যস্ফীতি কমলে নীতি সুদহার কমাতে পারে বলেও আলোচনা করা হয়েছে বলে জানান তিনি।
সভায় ব্যাংক খাতকে স্থিতিশীল ও আগের চেয়ে শক্তিশালী করতে একাধিক নির্দেশনা দেন গভর্নর। তাছাড়া ডিজিটাল ব্যাংকিংকে গুরুত্ব দেওয়ার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে ব্যাংকগুলোকে। গ্রাহকরা যাতে অনলাইনে বা মোবাইল অ্যাপের মাধ্যমে ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে পারেন, এ ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে বলে জানান বাংলাদেশ ব্যাংকের মুখপাত্র।
গভর্নর আহসান মনসুরের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি গভর্নর, সংশ্লিষ্ট বিভাগের নির্বাহী পরিচালকরা।
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ