ঢাকা ১২:০৫ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৭ মে ২০২৫

কৃষি প্রণোদনা : লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ঋণও বিতরণ করেনি ২০ ব্যাংক

  • আপডেট সময় : ০১:৫৯:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১
  • ১০৭ বার পড়া হয়েছে

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা তহবিল গঠন করে সরকার। গত বছরের এপ্রিলে এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে গত সেপ্টেম্বরে শেষ করার কথা ছিল। তবে ব্যাংকগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে ৩ দফায় ৯ মাস অর্থাৎ জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণে সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু সাড়ে ১৩ মাসে (১৫ মে পর্যন্ত) চুক্তিবদ্ধ ৪৩ ব্যাংকের মধ্যে ২০ ব্যাংক তাদের অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিশ্চুক ঢাকা টাইমসকে জানান, চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে একাধিক তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপকদের টেলিফোনে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ এবং পরামার্শ প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংকসমূহের শাখাওয়ারী বরাদ্দকৃত ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনকি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর কঠোর হুশিয়ারী করে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও ঋণ বিতরণ আগ্রহ কম দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কৃষি খাতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের বরাদ্ধকৃত অর্থ বিতরণে বকরতে না পারায় আরো তিনমাস অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এসময়েও তারা ব্যর্থ হওয়ায় আরো তিন মাস বাড়িয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। কিন্তু মার্চেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রণোদনার অর্থ বিতরণের সময় আরো তিন মাস বাড়িয়ে জুন মাস করা হয়। কিন্তু চুক্তিবদ্ধ ৪৩ টি ব্যাংকের মধ্যে ২০ টি ব্যাংক এখনো ৫০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এমনকি ১৫ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি ৪টি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ১৫ মে শেষে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৩২ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা বা ৭৯ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ৭৬৮ কৃষকের কাছে মোট বরাদ্ধের ৯৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ও উত্তরা ব্যাংক ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করেছে।

তবে প্রণোদনা বিতরণকৃত ৪৩ ব্যাংকের মধ্যে ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে ২০ ব্যাংক। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, স্টান্ডার্ড ব্যাংক ২৪ দশমকি ১২ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, যমুনা ব্যাংক ২৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ৩১ দশমিক ৪১ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩৩ দশমিক ১০ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৩৩ দশমকি ১৯ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বেসিক ব্যাংক ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংক ৩৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ৩৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংক ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং পূবালী ব্যাংক ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, এ ঋণ সরাসরি কৃষককে দিতে হয়। এ খাতে আমাদের তেমন এক্সপার্ট নেই। তবুও আমরা ঋণ বিতরণে চেষ্ঠা চালাচ্ছি। এবং অনেকটা সফল হয়েছি। আশা করি এ মাসেই আমাদের বাকি লক্ষ্যমাত্র পূরণ হবে ইনশাল্লাহ। সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ঋণ বিতরণে খুবই আগ্রহী। কারণ ছোট ছোট এ ঋণ তেমন খেলাপি হয়না। বড় ঋণ গ্রহীতারাই খেলাপি বেশি হয়। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ শাখাই শহরে। তাই কৃষককে সরাসরি ঋণ দিতে অসুবিধা হচ্ছে। আশা করি জুনের মধ্যে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কৃষি প্রণোদনা : লক্ষ্যমাত্রার অর্ধেক ঋণও বিতরণ করেনি ২০ ব্যাংক

আপডেট সময় : ০১:৫৯:১১ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ জুন ২০২১

অর্থনৈতিক প্রতিবেদক : করোনাভাইরাসের কারণে সৃষ্ট আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কৃষি খাতের জন্য ৫ হাজার কোটি টাকার বিশেষ প্রণোদনা তহবিল গঠন করে সরকার। গত বছরের এপ্রিলে এ তহবিল থেকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু করে গত সেপ্টেম্বরে শেষ করার কথা ছিল। তবে ব্যাংকগুলোর দাবির প্রেক্ষিতে ৩ দফায় ৯ মাস অর্থাৎ জুন পর্যন্ত ঋণ বিতরণে সময় বাড়ানো হয়। কিন্তু সাড়ে ১৩ মাসে (১৫ মে পর্যন্ত) চুক্তিবদ্ধ ৪৩ ব্যাংকের মধ্যে ২০ ব্যাংক তাদের অর্ধেক লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারেনি। বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রকাশিত প্রতিবেদনে এ তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশে অনিশ্চুক ঢাকা টাইমসকে জানান, চুক্তিবদ্ধ ব্যাংকগুলোকে প্রণোদনা প্যাকেজের আওতায় ঋণ বিতরণে একাধিক তাগাদা দেওয়া হয়েছে। তদারকি কমিটি গঠন করা হয়েছে। শাখা ব্যবস্থাপকদের টেলিফোনে সরাসরি তথ্য সংগ্রহ এবং পরামার্শ প্রদান করা হচ্ছে। ব্যাংকসমূহের শাখাওয়ারী বরাদ্দকৃত ঋণের তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। এমনকি ব্যাংকগুলোর ব্যবস্থাপনা পরিচালক বরাবর কঠোর হুশিয়ারী করে চিঠিও দেয়া হয়েছে। কিন্তু তারপরও ঋণ বিতরণ আগ্রহ কম দেখাচ্ছে ব্যাংকগুলো।

বাংলাদেশ ব্যাংকের এ প্রতিবেদনে দেখা গেছে, আর্থিক সংকট মোকাবেলায় কৃষি খাতে প্রণোদনার অর্থ বিতরণে গত বছরের সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সময় নির্ধারণ করা হয়। তবে এ সময়ের মধ্যে ব্যাংকগুলো তাদের বরাদ্ধকৃত অর্থ বিতরণে বকরতে না পারায় আরো তিনমাস অর্থাৎ ডিসেম্বর পর্যন্ত সময় বাড়ানো হয়। এসময়েও তারা ব্যর্থ হওয়ায় আরো তিন মাস বাড়িয়ে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় দেয়া হয়। কিন্তু মার্চেও লক্ষ্যমাত্রা পূরণে ব্যর্থ হওয়ায় প্রণোদনার অর্থ বিতরণের সময় আরো তিন মাস বাড়িয়ে জুন মাস করা হয়। কিন্তু চুক্তিবদ্ধ ৪৩ টি ব্যাংকের মধ্যে ২০ টি ব্যাংক এখনো ৫০ শতাংশও ঋণ বিতরণ করতে পারেনি। এমনকি ১৫ শতাংশও বিতরণ করতে পারেনি ৪টি ব্যাংক।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের এ প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, গত বছরের এপ্রিলে কৃষি খাতে ৫ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করা হয়। চলতি বছরের ১৫ মে শেষে ১ লাখ ৭০ হাজার ৫৩২ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ হাজার ৯৫৩ কোটি টাকা বা ৭৯ দশমিক শূণ্য ৭ শতাংশ বিতরণ করেছে। এর মধ্যে ৮৩ হাজার ৭৬৮ কৃষকের কাছে মোট বরাদ্ধের ৯৭ দশমিক ৮৪ শতাংশ বা ১ হাজার ৬৬২ কোটি ২৪ লাখ টাকা বিতরণ করেছে বাংলাদেশ কৃষি ব্যাংক। এছাড়া অগ্রণী ব্যাংক, বাংলাদেশ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক, রাজশাহী কৃষি উন্নয়ন ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, এবি ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, ব্র্যাক ব্যাংক, এক্সিম ব্যাংক, মধুমতি ব্যাংক, এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংক, ওয়ান ব্যাংক, শাহজালাল ব্যাংক, প্রিমিয়ার ব্যাংক, ও উত্তরা ব্যাংক ৯০ থেকে ১০০ শতাংশ প্রণোদনা ঋণ বিতরণ করেছে।

তবে প্রণোদনা বিতরণকৃত ৪৩ ব্যাংকের মধ্যে ৫০ শতাংশের নিচে রয়েছে ২০ ব্যাংক। এর মধ্যে আইএফআইসি ব্যাংক ১১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক ১৩ দশমিক ৩১ শতাংশ, সাউথইস্ট ব্যাংক ১৪ দশমিক ৩৬ শতাংশ, ট্রাস্ট ব্যাংক ১৪ দশমিক ৭৮ শতাংশ, স্টান্ডার্ড ব্যাংক ২৪ দশমকি ১২ শতাংশ, ঢাকা ব্যাংক ২৪ দশমিক ৪২ শতাংশ, যমুনা ব্যাংক ২৬ দশমিক ৮৮ শতাংশ, আল আরাফা ইসলামী ব্যাংক ৩১ দশমিক ৪১ শতাংশ, গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংক ৩৩ দশমিক ১০ শতাংশ, বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক ৩৩ দশমকি ১৯ শতাংশ, মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক ৩৫ দশমিক ২৩ শতাংশ, সোশ্যাল ইসলামী ব্যাংক ৩৬ দশমিক ৪৫ শতাংশ, বেসিক ব্যাংক ৩৬ দশমিক ৪৬ শতাংশ, ন্যাশনাল ব্যাংক ৩৯ দশমিক ৩৮ শতাংশ, ডাচ্ বাংলা ব্যাংক ৩৯ দশমিক ৫৪ শতাংশ, ইউনিয়ন ব্যাংক ৪১ দশমিক ৭৭ শতাংশ, সীমান্ত ব্যাংক ৪১ দশমিক ৯২ শতাংশ, দি সিটি ব্যাংক ৪৪ দশমিক ৮৮ শতাংশ এবং পূবালী ব্যাংক ৪৫ দশমিক ১৫ শতাংশ।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে মিউচ্যুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক সৈয়দ মাহবুবুর রহমান জানান, এ ঋণ সরাসরি কৃষককে দিতে হয়। এ খাতে আমাদের তেমন এক্সপার্ট নেই। তবুও আমরা ঋণ বিতরণে চেষ্ঠা চালাচ্ছি। এবং অনেকটা সফল হয়েছি। আশা করি এ মাসেই আমাদের বাকি লক্ষ্যমাত্র পূরণ হবে ইনশাল্লাহ। সাউথইস্ট ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) এম কামাল হোসেন বলেন, আমি ব্যক্তিগতভাবে এ ঋণ বিতরণে খুবই আগ্রহী। কারণ ছোট ছোট এ ঋণ তেমন খেলাপি হয়না। বড় ঋণ গ্রহীতারাই খেলাপি বেশি হয়। কিন্তু আমাদের অধিকাংশ শাখাই শহরে। তাই কৃষককে সরাসরি ঋণ দিতে অসুবিধা হচ্ছে। আশা করি জুনের মধ্যে শতভাগ লক্ষ্যমাত্রা পূরণ হবে।