ঢাকা ০৬:৫৪ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

কৃষি খাত: সরকারি পদক্ষেপের ঘাটতি কৃষি খাতের সংকটকে আরো গভীর করেছে

  • আপডেট সময় : ০৬:৫১:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫
  • ০ বার পড়া হয়েছে

ছবি সংগৃহীত

ড. নার্গিস আখতার বানু

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চালের ঊর্ধ্বমুখী দাম দেশের কৃষি অর্থনীতির গভীর কাঠামোগত দুর্বলতাকে আবারো সামনে এনেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো এ মূল্যবৃদ্ধি চালের দামের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রবণতার সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশ্ববাজারে ২০১৭ সালের পর চালের দাম সর্বনিম্ন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববাজারে চালের গড় দাম প্রায় ৩১ শতাংশ কমে গেলেও দেশে তা সর্বোচ্চ পর্যায়েই অবস্থান করছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের শুরুতে মোটা চাল প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকে।

বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টন এবং জুলাই থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আরো ৫ লাখ টন চাল আমদানি করলেও দাম কমেনি। বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে চালের দামে বৈষম্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আমাদের মূল সমস্যা মূল্যেই আটকে নেই। এর বিস্তার উৎপাদন থেকে শুরু করে খোলা বাজারে বিক্রি- সবক্ষেত্রেই বিদ্যমান।
চালের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং তা দেশের কৃষি খাতের বৃহত্তর সংকটেরই প্রতিফলন। দেশের কৃষি খাতে স্বল্প কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের এক ধরনের আধিপত্য তৈরি হয়েছে। বীজ, সার, মিলিং, পণ্য মজুদ করা থেকে শুরু করে পাইকারি ব্যবসা- সবই এখন কয়েকটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।

কৃষকরা এ কাঠামোর সবচেয়ে দুর্বল অংশ; উৎপাদন খরচ বেড়েছে, বাজারে দরকষাকষির ক্ষমতা নেই, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেন না। অথচ মাঝখানে থাকা সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীরা বিপুল মুনাফা করছেন। বিগত সরকারও বাজারে এ অসাম্য কমাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি; ফলে লুটপাট ও দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থার প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বাজার সংকটের মূলে রয়েছে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য কেবল স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়ার ফল নয়; বরং তা গড়ে উঠেছে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে। বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা, ব্যাপক কর ফাঁকি ও করবিহীন সুবিধা ধনীদের আরো শক্তিশালী করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেও এ কাঠামো বদলাতে পারেনি। ফলে কৃষকরা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও সবসময়ই উপেক্ষিত থেকে গেছে।

কৃষি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়া সত্ত্বেও শুধু এ খাতের মঙ্গলে নিবেদিত কাজ করার জন্য বর্তমান সরকার কাউকে রাখতে পারেনি—বাজার, কৃষি ফলন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য, কোনো বিষয়ে ফলপ্রসূ কোনো সমাধানও হয়নি।

সারের সংকট কৃষি খাতে অস্থিরতার সবচেয়ে দৃশ্যমান উদাহরণ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সার সরবরাহ কমে গেছে, দাম বেড়েছে এবং বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এ বছরের প্রথমার্ধে ইউরিয়ার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানি ঘাটতির কারণে সারের সরবরাহ ১৫-২০ শতাংশ কমেছে এবং ইউরিয়া, এমওপি ও ডিএপি সারের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা আরো বেড়েছে। অথচ কৃষি খাত এখনো দেশের মোট জিডিপিতে প্রায় ১১-১২ শতাংশ অবদান রাখে।

শস্য মৌসুমে কৃষকরা নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েকশ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হয়েছেন, হচ্ছেন। বোরো থেকে আমন মৌসুমে সার পেতে চরম ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক। ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি এবং ইউরিয়া সারের জন্য ডিলার পয়েন্ট ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ঘুরে শূন্য হাতে ফেরার কথা বলেছেন অনেকে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও গ্যাসের উচ্চমূল্য, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের (সাপ্লাই চেইন) বিঘ্ন ঘটা, ভূরাজনৈতিক সংকট— এসব বৈশ্বিক কারণের পাশাপাশি দেশে গ্যাস সরবরাহে অনিয়ম, কারখানার পুরনো প্রযুক্তি, আমদানিতে দেরি হওয়া, বিতরণে দুর্নীতি ও কালোবাজারি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

সরাসরি এসবের প্রভাব পড়েছে কৃষি উৎপাদনে। অনেক অঞ্চলে কৃষকরা সময়মতো সার না পেয়ে বোরো, আমন, আলু ও সবজির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলে সার প্রয়োগ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে; যা খাদ্যনিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

সেচ দেয়া, জমি প্রস্তুত করা, সব জায়গাতেই ব্যয় বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে অনিশ্চয়তা। এর সঙ্গে যুক্ত সেচ ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা; যেমন নষ্ট পাম্প, গভীর নলকূপ চালনায় সীমাবদ্ধতা, সেচ ফি বৃদ্ধি প্রভৃতি, যা প্রকারান্তরে কৃষকের বোঝা শুধু বাড়িয়েই চলছে। হিমাগারের চার্জ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা আলু বা সবজি সংরক্ষণ করতে পারছেন না; ফলে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে, জোরদার হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ।

মানব সৃষ্ট সংকট ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক ও কৃষি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত নভেম্বরের শুরুতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় ঝড় ও বৃষ্টিতে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর ৫৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে; যার মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টরের ধান কাটা শেষ। বাকি জমির ধান এখন পরিপক্ব অবস্থায়। কিন্তু পানিতে ডুবে যাওয়ায় ধান হেলে পড়ছে ও চিটা বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে আবার আলুর উৎপাদন বেশি হলেও দাম না থাকায় কৃষকরা বড় লোকসানে পড়েছেন। কেউ কেউ কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি গুনেছেন। ক্ষতির কারণে অনেক কৃষক আলু চাষ থেকে সরে আসার কথা ভাবছেন।

কৃষকরা বুঝতে পারছেন না কখন ফসল বাঁচাতে হবে, কখন লাগাতে হবে। এমতাবস্থায় কৃষিবিদসহ খাত সংশ্লিষ্টরা কৃষি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন; অন্তত আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকের হাতে সময়মতো যেন পৌঁছানো যায়। কিন্তু সে উদ্যোগ কোথায়?

সরকারি পদক্ষেপের ঘাটতিও কৃষি খাতের সংকটকে আরো গভীর করেছে। বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, সারের দাম কমানো ও বিতরণে তদারকি, কারখানায় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ- এসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে বিলম্ব ও নীরবতা। উৎপাদন কমে গেলে আমদানির চাপ বাড়ে, বৈদেশিক মুদ্রা খরচ বেড়ে যায় এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম আরো বৃদ্ধি পায়। এ পরিস্থিতি খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করবে এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতিকে আরো নাজুক করে তুলবে।

আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময়ে কৃষি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে আমরা মনগড়া অনেক কথা শুনেছি, আস্ফালন দেখেছি, অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশকে বছরে এক কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। নানা সংকটের মাঝেও দেশের কৃষি খাতের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন সঠিক নীতি, আধুনিক অবকাঠামো এবং কৃষককেন্দ্রিক প্রণোদনা নিশ্চিত করা। সামনে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে আশু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

প্রথমেই প্রয়োজন কৃষি বীমা চালু করা। বাংলাদেশের কৃষকরা বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও রোগবালাইসহ নানা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। একটি মৌসুমের ক্ষতিই একটি পরিবারকে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিতে পারে। কৃষি বীমা কৃষকের আয় স্থিতিশীল করবে, ক্ষতির পরে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।

চীন ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ কৃষিভিত্তিক বীমা চালু করে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে, বাংলাদেশকেও সেই পথে হাঁটতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশব্যাপী আধুনিক গুদাম ও কোল্ড-স্টোরেজ স্থাপন জরুরি। কৃষকরা ফসল কাটার মৌসুমে একযোগে বাজারে আনলে দাম পড়ে যায়। ফলে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, আর মধ্যস্বত্বভোগীরা পরে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে লাভবান হন।

যদি কৃষকরা ফসল সংরক্ষণের সুবিধা পান, তাহলে তারা বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে বিক্রি করতে পারবেন। এতে উৎপাদনোত্তর ক্ষতি কমবে, কৃষকের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়বে এবং বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।

কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ব্যবস্থায় কৃষকের হাতে থাকে সবচেয়ে কম মুনাফা, আর মধ্যস্বত্বভোগীরা পায় সবচেয়ে বেশি। যদি সরকার ন্যূনতম সহায়তা মূল্য ঘোষণা করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় শুরু করে, তাহণে কৃষক ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা পাবেন। ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস, কৃষক সমবায় সংগঠন এবং স্বচ্ছ নিলাম ব্যবস্থা মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে পারে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা কেবল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি কৃষকের প্রতি ন্যায়বিচারের প্রতিফলন।

কৃষি পরিবর্তনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো কৃষকদের জন্য নির্দিষ্ট কার্ড চালু করা। যেটা বিএনপি তাদের অঙ্গীকার হিসেবে এরই মধ্যে উল্লেখ করেছে। দলটির নেতারা ‘ফার্মার কার্ড’ চালু করার কথা বলেছেন, যেটা নিঃসন্দেহে দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ডিজিটাল পরিচয়পত্রের আওতায় শুধু ফসল চাষী নয়, মাছচাষি, গবাদি পশুপালক ও দুগ্ধ উৎপাদকরাও আসবেন।

ফার্মার কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা সহজেই সরকারি ভর্তুকি, স্বল্পমূল্যের কৃষিযন্ত্র, সেচ সুবিধা, কৃষি ঋণ, সার ও বীজ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে এটি একটি জাতীয় ডাটাবেস তৈরি করে দেবে; যা কৃষিনীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি মোবাইলফোনের মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্য, বাজারদর এবং কৃষি পরামর্শ পাওয়া গেলে কৃষকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরো সহজ হবে।

আগাম বন্যা বা ঝড়ের সতর্কতা, কোন জেলায় কোন ফসলের দাম কত, এমন তথ্য কৃষকের ক্ষতি কমাতে এবং লাভ বাড়াতে সহায়ক হবে। মোবাইলভিত্তিক ফসল রোগনির্ণয় সেবা কৃষককে দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করবে। এতে অপচয় কমবে এবং উৎপাদন বাড়বে। তবে এসব করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন হবে সদিচ্ছা ও সৎ প্রচেষ্টার।

বিগত সময়ে সার ও সেচ থেকে শুরু করে ফসল সংরক্ষণ ও কৃষক প্রণোদনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। চালের দাম বৃদ্ধি, সারের সংকট, সেচ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতা— এসব সংকট দীর্ঘদিনের সে অবহেলার ফল। সামনে জনগণের নির্বাচিত সরকারকে কৃষি ও কৃষকের দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপিকে সাধুবাদ জানাই, নির্বাচনী অঙ্গীকারে কৃষি খাত অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করার জন্য। তবে একই সঙ্গে তাদের মনে রাখতে হবে, অঙ্গীকার যেন ফাঁকা বুলিতে পরিণত না হয়; কেননা যারা কৃষকদের ঘামকে সম্মান করবে তারাই জনগণের জন্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।

লেখক: কৃষিবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানী, সিডনি ওয়াটার করপোরেশন, অস্ট্রেলিয়া
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : prottashasmf@yahoo.com
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

কৃষি খাত: সরকারি পদক্ষেপের ঘাটতি কৃষি খাতের সংকটকে আরো গভীর করেছে

আপডেট সময় : ০৬:৫১:০৯ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১১ ডিসেম্বর ২০২৫

ড. নার্গিস আখতার বানু

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে চালের ঊর্ধ্বমুখী দাম দেশের কৃষি অর্থনীতির গভীর কাঠামোগত দুর্বলতাকে আবারো সামনে এনেছে। উদ্বেগজনক বিষয় হলো এ মূল্যবৃদ্ধি চালের দামের ক্ষেত্রে বৈশ্বিক প্রবণতার সম্পূর্ণ বিপরীত। বিশ্ববাজারে ২০১৭ সালের পর চালের দাম সর্বনিম্ন।

বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন অনুযায়ী বিশ্ববাজারে চালের গড় দাম প্রায় ৩১ শতাংশ কমে গেলেও দেশে তা সর্বোচ্চ পর্যায়েই অবস্থান করছে। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী ২০২০ সালের শুরুতে মোটা চাল প্রতি কেজি ৩০-৩৫ টাকায় বিক্রি হতো। কিন্তু এরপর থেকে ধারাবাহিকভাবে দাম বাড়তে থাকে।

বাজার স্থিতিশীল করতে সরকার ২০২৪-২৫ অর্থবছরে ১৪ লাখ ৩৭ হাজার টন এবং জুলাই থেকে নভেম্বরের শেষ সপ্তাহ পর্যন্ত আরো ৫ লাখ টন চাল আমদানি করলেও দাম কমেনি। বিশ্ববাজারের সঙ্গে দেশে চালের দামে বৈষম্য স্পষ্ট করে দিয়েছে যে আমাদের মূল সমস্যা মূল্যেই আটকে নেই। এর বিস্তার উৎপাদন থেকে শুরু করে খোলা বাজারে বিক্রি- সবক্ষেত্রেই বিদ্যমান।
চালের ধারাবাহিক মূল্যবৃদ্ধি কোনো বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়; বরং তা দেশের কৃষি খাতের বৃহত্তর সংকটেরই প্রতিফলন। দেশের কৃষি খাতে স্বল্প কিছু মানুষ ও প্রতিষ্ঠানের এক ধরনের আধিপত্য তৈরি হয়েছে। বীজ, সার, মিলিং, পণ্য মজুদ করা থেকে শুরু করে পাইকারি ব্যবসা- সবই এখন কয়েকটি প্রভাবশালী গোষ্ঠীর নিয়ন্ত্রণে।

কৃষকরা এ কাঠামোর সবচেয়ে দুর্বল অংশ; উৎপাদন খরচ বেড়েছে, বাজারে দরকষাকষির ক্ষমতা নেই, ন্যায্যমূল্যে পণ্য বিক্রি করতে পারেন না। অথচ মাঝখানে থাকা সিন্ডিকেটভুক্ত ব্যবসায়ীরা বিপুল মুনাফা করছেন। বিগত সরকারও বাজারে এ অসাম্য কমাতে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ নেয়নি; ফলে লুটপাট ও দুর্নীতি বাজার ব্যবস্থার প্রচলিত নিয়মে পরিণত হয়েছে।

বাজার সংকটের মূলে রয়েছে ক্রমবর্ধমান বৈষম্য। বাংলাদেশে অর্থনৈতিক বৈষম্য কেবল স্বাভাবিক একটি প্রক্রিয়ার ফল নয়; বরং তা গড়ে উঠেছে নির্দিষ্ট রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক কাঠামোর কারণে। বৈষম্যমূলক কর ব্যবস্থা, ব্যাপক কর ফাঁকি ও করবিহীন সুবিধা ধনীদের আরো শক্তিশালী করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার ক্ষমতায় এসেও এ কাঠামো বদলাতে পারেনি। ফলে কৃষকরা দেশের অর্থনীতিতে উল্লেখযোগ্য অবদান রাখলেও সবসময়ই উপেক্ষিত থেকে গেছে।

কৃষি দেশের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ খাত হওয়া সত্ত্বেও শুধু এ খাতের মঙ্গলে নিবেদিত কাজ করার জন্য বর্তমান সরকার কাউকে রাখতে পারেনি—বাজার, কৃষি ফলন, কৃষকের ন্যায্যমূল্য, কোনো বিষয়ে ফলপ্রসূ কোনো সমাধানও হয়নি।

সারের সংকট কৃষি খাতে অস্থিরতার সবচেয়ে দৃশ্যমান উদাহরণ। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা প্রতিবেদনে দেখা গেছে, সার সরবরাহ কমে গেছে, দাম বেড়েছে এবং বিতরণে ব্যাপক অনিয়ম হচ্ছে। এ বছরের প্রথমার্ধে ইউরিয়ার অভ্যন্তরীণ উৎপাদন ও আমদানি ঘাটতির কারণে সারের সরবরাহ ১৫-২০ শতাংশ কমেছে এবং ইউরিয়া, এমওপি ও ডিএপি সারের ক্ষেত্রে আমদানিনির্ভরতা আরো বেড়েছে। অথচ কৃষি খাত এখনো দেশের মোট জিডিপিতে প্রায় ১১-১২ শতাংশ অবদান রাখে।

শস্য মৌসুমে কৃষকরা নির্ধারিত দামের চেয়ে কয়েকশ টাকা বেশি দিয়ে সার কিনতে বাধ্য হয়েছেন, হচ্ছেন। বোরো থেকে আমন মৌসুমে সার পেতে চরম ভোগান্তির অভিযোগ তুলেছেন অনেক কৃষক। ডাই-অ্যামোনিয়াম ফসফেট বা ডিএপি এবং ইউরিয়া সারের জন্য ডিলার পয়েন্ট ও খুচরা বিক্রেতাদের কাছে ঘুরে শূন্য হাতে ফেরার কথা বলেছেন অনেকে।

আন্তর্জাতিক বাজারে জ্বালানি ও গ্যাসের উচ্চমূল্য, বিশ্বব্যাপী সরবরাহ শৃঙ্খলের (সাপ্লাই চেইন) বিঘ্ন ঘটা, ভূরাজনৈতিক সংকট— এসব বৈশ্বিক কারণের পাশাপাশি দেশে গ্যাস সরবরাহে অনিয়ম, কারখানার পুরনো প্রযুক্তি, আমদানিতে দেরি হওয়া, বিতরণে দুর্নীতি ও কালোবাজারি পরিস্থিতিকে আরো জটিল করে তুলেছে।

সরাসরি এসবের প্রভাব পড়েছে কৃষি উৎপাদনে। অনেক অঞ্চলে কৃষকরা সময়মতো সার না পেয়ে বোরো, আমন, আলু ও সবজির মতো গুরুত্বপূর্ণ ফসলে সার প্রয়োগ পিছিয়ে দিতে বাধ্য হয়েছেন। ফলে প্রতি হেক্টরে উৎপাদন কমার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে; যা খাদ্যনিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলতে পারে।

সেচ দেয়া, জমি প্রস্তুত করা, সব জায়গাতেই ব্যয় বেড়েছে, সঙ্গে বেড়েছে অনিশ্চয়তা। এর সঙ্গে যুক্ত সেচ ব্যবস্থার বিভিন্ন সমস্যা; যেমন নষ্ট পাম্প, গভীর নলকূপ চালনায় সীমাবদ্ধতা, সেচ ফি বৃদ্ধি প্রভৃতি, যা প্রকারান্তরে কৃষকের বোঝা শুধু বাড়িয়েই চলছে। হিমাগারের চার্জ বেড়ে যাওয়ায় কৃষকরা আলু বা সবজি সংরক্ষণ করতে পারছেন না; ফলে বাধ্য হয়ে কম দামে বিক্রি করে দিচ্ছেন। এতে বাজারে অস্থিরতা বাড়ছে, জোরদার হচ্ছে মধ্যস্বত্বভোগীদের নিয়ন্ত্রণ।

মানব সৃষ্ট সংকট ছাড়াও ঘূর্ণিঝড় ও অতিবৃষ্টির মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগেও ক্রমাগত ক্ষতির মুখে পড়ছেন কৃষক ও কৃষি। কৃষি মন্ত্রণালয়ের হিসাব অনুযায়ী, গত নভেম্বরের শুরুতে রাজশাহী ও রংপুর বিভাগের ১৬ জেলায় ঝড় ও বৃষ্টিতে প্রায় ২৬ হাজার হেক্টর ফসলি জমি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জানিয়েছে, এ বছর ৫৭ লাখ হেক্টর জমিতে আমন ধানের আবাদ হয়েছে; যার মধ্যে মাত্র ১ লাখ ৭৬ হাজার হেক্টরের ধান কাটা শেষ। বাকি জমির ধান এখন পরিপক্ব অবস্থায়। কিন্তু পানিতে ডুবে যাওয়ায় ধান হেলে পড়ছে ও চিটা বেড়ে যাচ্ছে।

অন্যদিকে আবার আলুর উৎপাদন বেশি হলেও দাম না থাকায় কৃষকরা বড় লোকসানে পড়েছেন। কেউ কেউ কেজিতে ১৫-২০ টাকা পর্যন্ত ক্ষতি গুনেছেন। ক্ষতির কারণে অনেক কৃষক আলু চাষ থেকে সরে আসার কথা ভাবছেন।

কৃষকরা বুঝতে পারছেন না কখন ফসল বাঁচাতে হবে, কখন লাগাতে হবে। এমতাবস্থায় কৃষিবিদসহ খাত সংশ্লিষ্টরা কৃষি খাতে প্রযুক্তি ব্যবহারের ওপর জোর দিয়েছেন; অন্তত আবহাওয়ার পূর্বাভাস কৃষকের হাতে সময়মতো যেন পৌঁছানো যায়। কিন্তু সে উদ্যোগ কোথায়?

সরকারি পদক্ষেপের ঘাটতিও কৃষি খাতের সংকটকে আরো গভীর করেছে। বাজারে সিন্ডিকেট নিয়ন্ত্রণ, সারের দাম কমানো ও বিতরণে তদারকি, কারখানায় জ্বালানি সরবরাহ নিশ্চিতকরণ- এসব বিষয়ে দৃশ্যমান কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতিকে আরো জটিল করেছে বিলম্ব ও নীরবতা। উৎপাদন কমে গেলে আমদানির চাপ বাড়ে, বৈদেশিক মুদ্রা খরচ বেড়ে যায় এবং খাদ্যদ্রব্যের দাম আরো বৃদ্ধি পায়। এ পরিস্থিতি খাদ্য নিরাপত্তাকে ঝুঁকির মধ্যে ফেলবে, মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি করবে এবং সার্বিকভাবে অর্থনীতিকে আরো নাজুক করে তুলবে।

আওয়ামী স্বৈরশাসনের সময়ে কৃষি ও খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা নিয়ে আমরা মনগড়া অনেক কথা শুনেছি, আস্ফালন দেখেছি, অথচ বাস্তবতা হচ্ছে বাংলাদেশকে বছরে এক কোটি টনের বেশি খাদ্যশস্য আমদানি করতে হয়। নানা সংকটের মাঝেও দেশের কৃষি খাতের অসীম সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এ সম্ভাবনা বাস্তবায়নে প্রয়োজন সঠিক নীতি, আধুনিক অবকাঠামো এবং কৃষককেন্দ্রিক প্রণোদনা নিশ্চিত করা। সামনে জনগণের নির্বাচিত সরকারের কাছ থেকে আমাদের প্রত্যাশা কৃষক ও কৃষি বাঁচাতে আশু দৃশ্যমান পদক্ষেপ গ্রহণ করা।

প্রথমেই প্রয়োজন কৃষি বীমা চালু করা। বাংলাদেশের কৃষকরা বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, অতিবৃষ্টি ও রোগবালাইসহ নানা ঝুঁকির মধ্যে কাজ করেন। একটি মৌসুমের ক্ষতিই একটি পরিবারকে ঋণের ফাঁদে ফেলে দিতে পারে। কৃষি বীমা কৃষকের আয় স্থিতিশীল করবে, ক্ষতির পরে ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ দেবে এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারে উৎসাহিত করবে।

চীন ও ভিয়েতনামসহ অনেক দেশ কৃষিভিত্তিক বীমা চালু করে গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে, বাংলাদেশকেও সেই পথে হাঁটতে হবে। দ্বিতীয়ত, দেশব্যাপী আধুনিক গুদাম ও কোল্ড-স্টোরেজ স্থাপন জরুরি। কৃষকরা ফসল কাটার মৌসুমে একযোগে বাজারে আনলে দাম পড়ে যায়। ফলে তারা ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন, আর মধ্যস্বত্বভোগীরা পরে উচ্চমূল্যে বিক্রি করে লাভবান হন।

যদি কৃষকরা ফসল সংরক্ষণের সুবিধা পান, তাহলে তারা বাজার স্থিতিশীল না হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষা করে বিক্রি করতে পারবেন। এতে উৎপাদনোত্তর ক্ষতি কমবে, কৃষকের দরকষাকষির ক্ষমতা বাড়বে এবং বাজারও স্থিতিশীল থাকবে।

কৃষকের উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করাও সমান গুরুত্বপূর্ণ। বর্তমান ব্যবস্থায় কৃষকের হাতে থাকে সবচেয়ে কম মুনাফা, আর মধ্যস্বত্বভোগীরা পায় সবচেয়ে বেশি। যদি সরকার ন্যূনতম সহায়তা মূল্য ঘোষণা করে সরাসরি কৃষকের কাছ থেকে পণ্য ক্রয় শুরু করে, তাহণে কৃষক ন্যায্য দামের নিশ্চয়তা পাবেন। ডিজিটাল মার্কেটপ্লেস, কৃষক সমবায় সংগঠন এবং স্বচ্ছ নিলাম ব্যবস্থা মধ্যস্বত্বভোগীদের প্রভাব কমাতে পারে। ন্যায্যমূল্য নিশ্চিত করা কেবল অর্থনৈতিক সিদ্ধান্ত নয়। এটি কৃষকের প্রতি ন্যায়বিচারের প্রতিফলন।

কৃষি পরিবর্তনের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ উদ্যোগ হলো কৃষকদের জন্য নির্দিষ্ট কার্ড চালু করা। যেটা বিএনপি তাদের অঙ্গীকার হিসেবে এরই মধ্যে উল্লেখ করেছে। দলটির নেতারা ‘ফার্মার কার্ড’ চালু করার কথা বলেছেন, যেটা নিঃসন্দেহে দেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এ ডিজিটাল পরিচয়পত্রের আওতায় শুধু ফসল চাষী নয়, মাছচাষি, গবাদি পশুপালক ও দুগ্ধ উৎপাদকরাও আসবেন।

ফার্মার কার্ডের মাধ্যমে কৃষকরা সহজেই সরকারি ভর্তুকি, স্বল্পমূল্যের কৃষিযন্ত্র, সেচ সুবিধা, কৃষি ঋণ, সার ও বীজ পাওয়ার সুযোগ পাবেন। একই সঙ্গে এটি একটি জাতীয় ডাটাবেস তৈরি করে দেবে; যা কৃষিনীতি নির্ধারণ, পরিকল্পনা গ্রহণ ও তদারকিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। এর পাশাপাশি মোবাইলফোনের মাধ্যমে আবহাওয়ার তথ্য, বাজারদর এবং কৃষি পরামর্শ পাওয়া গেলে কৃষকের সিদ্ধান্ত গ্রহণ আরো সহজ হবে।

আগাম বন্যা বা ঝড়ের সতর্কতা, কোন জেলায় কোন ফসলের দাম কত, এমন তথ্য কৃষকের ক্ষতি কমাতে এবং লাভ বাড়াতে সহায়ক হবে। মোবাইলভিত্তিক ফসল রোগনির্ণয় সেবা কৃষককে দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে সাহায্য করবে। এতে অপচয় কমবে এবং উৎপাদন বাড়বে। তবে এসব করতে গেলে প্রথমেই প্রয়োজন হবে সদিচ্ছা ও সৎ প্রচেষ্টার।

বিগত সময়ে সার ও সেচ থেকে শুরু করে ফসল সংরক্ষণ ও কৃষক প্রণোদনা নিয়ে গুরুত্বপূর্ণ কোনো উদ্যোগ বাস্তবায়িত হয়নি। চালের দাম বৃদ্ধি, সারের সংকট, সেচ ও সংরক্ষণ ব্যবস্থার দুর্বলতা— এসব সংকট দীর্ঘদিনের সে অবহেলার ফল। সামনে জনগণের নির্বাচিত সরকারকে কৃষি ও কৃষকের দায়িত্ব নিতে হবে। বিএনপিকে সাধুবাদ জানাই, নির্বাচনী অঙ্গীকারে কৃষি খাত অগ্রাধিকার দিয়ে বিবেচনা করার জন্য। তবে একই সঙ্গে তাদের মনে রাখতে হবে, অঙ্গীকার যেন ফাঁকা বুলিতে পরিণত না হয়; কেননা যারা কৃষকদের ঘামকে সম্মান করবে তারাই জনগণের জন্য সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ে তুলতে পারবে।

লেখক: কৃষিবিদ ও পরিবেশবিজ্ঞানী, সিডনি ওয়াটার করপোরেশন, অস্ট্রেলিয়া
(মতামত লেখকের সম্পূর্ণ নিজস্ব)

আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ