নারী ও শিশু ডেস্ক: চাকরি নয়, বরং কৃষিকেই জীবনের পথ হিসেবে বেছে নিতে চান। কৃষির প্রতি আগ্রহ নয়, রয়েছে ভালোবাসা। বাড়ির খামারে রয়েছে অর্ধশতাধিক গবাদিপশু ও বিদেশি প্রজাতির পাখি ও কবুতর। এছাড়া বাগানে রয়েছে বিভিন্ন প্রজাতির গাছও। কৃষি উদ্যোগের বাইরেও আছে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। কৃষির প্রতি অবিচল নিষ্ঠারই স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশের ১০টির বেশি পুরস্কার জিতেছেন- গল্পটি সাতক্ষীরার মেয়ে নিশিতা নাজনীন নীলার।
দৃষ্টিনন্দন নানা পুরস্কার রয়েছে ঘরের ভেতর সাজানো। এর কোনোটিতে লেখা ইংরেজি, আবার কোনোটিতে হিন্দি। স্মারকের গায়ে ঝলমল করছে সোনালি অক্ষরে লেখা তার নাম। কৃষিতে সম্পৃক্ত থাকার অংশ হিসেবে নীলার হাতে উঠেছে এসব পুরস্কার।
ছোটবেলা থেকেই কৃষির প্রতি প্রেম: সাতক্ষীরার কলারোয়া উপজেলার পানিকাউরিয়া গ্রামের মেয়ে নীলা। বর্তমানে কলারোয়া সরকারি মহিলা কলেজের বাণিজ্য বিভাগের স্নাতক তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী। এর পাশাপাশি ভারতের দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কৃষিতে স্নাতক শেষ করে বর্তমানে তিনি স্নাতকোত্তর অধ্যয়ন করছেন। মা-বাবা দুজনেই শিক্ষক হলেও তবে নীলার স্বপ্ন ভিন্ন। স্কাউটসে যখন যোগ দেন, তখন নীলা প্রাথমিক বিদ্যালয়ে পড়ত। সেখান থেকে শেখেন সেবা, শৃঙ্খলা আর নেতৃত্ব। আর সেখান থেকেই জন্ম নেয় প্রকৃতি ও কৃষির প্রতি ভালোবাসা। মাধ্যমিকে স্কাউটস পরে কলেজে রোভার স্কাউটসে অংশ নিয়ে জিতেছেন নানা পুরস্কার। ২০২২ সালে খুলনা রেলওয়ে মুক্ত স্কাউটস গ্রুপের হয়ে পাঁচ দিনব্যাপী ১৭০ কিলোমিটার পথ হেঁটে অর্জন করেন ‘পরিভ্রমণ ব্যাজ’।
দেশ-বিদেশে অর্জন করেন বিভিন্ন সম্মাননা: নিশিতা নাজনীন নীলা কৃষির প্রতি অবিচল নিষ্ঠারই স্বীকৃতিস্বরূপ দেশ-বিদেশ থেকে বিভিন্ন সম্মাননা অর্জন করেন। এ পর্যন্ত দেশ-বিদেশের ১০টির বেশি পুরস্কার জিতেছেন। এগুলোর মধ্যে মর্যাদাপূর্ণ ইংল্যান্ড, ভারত ও নেপালের অ্যাওয়ার্ড জিতেছেন তিনি। ২০২২ সালে দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট তাকে উদীয়মান বিজ্ঞানীর সম্মাননা এবং সঙ্গে অর্থমূল্য লক্ষাধিক টাকা পুরস্কৃত করে। ২০২৪ সালে ইংল্যান্ডের রয়েল হর্টিকালচার সোসাইটি তাকে ‘গার্ডেন মেরিট অ্যাওয়ার্ড’ এবং আড়াই লাখ টাকা অর্থমূল্যের পুরস্কার দেয় এবং ২০২৫ সালে নেপালের কৃষি মন্ত্রণালয় ও প্রাণিসম্পদ বিভাগ তাকে সম্মানিত করে ‘গ্লোবাল অ্যাগ্রো লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড’ দিয়ে। এছাড়া দেশেও তিনি বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের কৃষি সম্মাননা অর্জন করেন।
কৃষিতেই জীবন এবং খামারেই সুখ: নীলার বাড়িতে খামারে রয়েছে বিভিন্ন গবাদি পশুর খামার ও বিভিন্ন প্রজাতির গাছের খামার। খামারে রয়েছে অর্ধশতাধিক গরু, ছাগল, ভেড়া, খরগোশ। দেশীয় হাঁস-মুরগির সঙ্গে পালিত হচ্ছে বিদেশি প্রজাতির পাখি ও কবুতর। এক বিঘা জমিতে রয়েছে বাঁশঝাড়, এক একর জমিতে আমবাগান আর মেহগনিগাছের বাগান, জলাশয়ে মিশ্র মাছ চাষ এবং দেড় শ প্রজাতির উদ্ভিদের সমাহার রয়েছে। তার বাগানে রয়েছে সুন্দরবনের বিভিন্ন প্রজাতির গাছ।
নীলা বলেন, ‘দিনের পর দিন আমি গাছের সঙ্গে থাকি। তাদের যত্ন নিতে নিতে মনে হয়, এরা আমারই সন্তান।’
মানবতার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত: কৃষি উদ্যোগের বাইরেও আছে মানবতার এক উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। সাতক্ষীরা শহরে একটি বাড়ি ভাড়া নিয়ে তিনি আশ্রয় দিয়েছেন পাঁচজন অসহায়, স্বজনহীন বৃদ্ধাকে। নিজেই তাদের সেবাযত্ন করেন, চিকিৎসা ও খাবারের ব্যবস্থা করেন। নীলা বলেন, ‘আমি মনে করি, মানুষের পাশে দাঁড়াতে পারাটাই জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া।’ কোনো সংগঠন নয়, শুধু নিজের ভালোবাসা থেকে তিনি এই কাজ করছেন কয়েক বছর ধরে।
চাকরি নয়- কৃষিতেই স্বপ্ন: চাকরি নয়, কৃষিকেই জীবনের পথ হিসেবে বেছে নিতে চান নীলা। নীলা বলেন, ‘আমার দাদা-চাচারা কৃষিকাজ করতেন। আমি তাদের পথ ধরেই হাঁটতে চাই। লেখাপড়া শেষে কোনো চাকরি করব নয়, বরং কৃষির মাধ্যমে মানুষকে কাজের সুযোগ করে দিতে চাই।’
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ