কুমিল্লা প্রতিনিধি: কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের মেয়র পদের উপনির্বাচনে লড়তে মনোনয়নপত্র জমা দেওয়া চার প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল বৃহস্পতিবার সকাল ১১টার দিকে এ নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন তার কার্যালয়ে মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই শেষে এই তথ্য জানান। প্রার্থীরা হলেন- ডা. তাহসীন বাহার সূচনা, নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম, মনিরুল হক সাক্কু ও নিজাম উদ্দিন কায়সার। কুমিল্লা সিটির মেয়র পদের এই উপনির্বাচনে এবার কোনো রাজনৈতিক দল সরাসরি অংশ নিচ্ছে না। নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার দলীয় সিদ্ধান্তের কারণে মেয়র পদের উপ-নির্বাচনেও কাউকে দলীয় মনোনয়ন দেয়নি বিএনপি। আর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পর ‘কেন্দ্রে ভোটারদের টানতে এবং দলীয় বিভেদ দূর করতে’ স্থানীয় সরকার নির্বাচনের ময়মনসিংহ ও কুমিল্লা এই দুই সিটি করপোরেশনের উপনির্বাচনে কাউকে দলীয় প্রতীক দেয়নি। তবে মনোনয়নপত্র বৈধ ঘোষণা হওয়া চার প্রার্থীর মধ্যে দু’জন আওয়ামী লীগের নেতা এবং অন্য দু’জন বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কৃত। মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষদিনে গত মঙ্গলবার তারা সবাই স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছিলেন। এর মধ্যে ডা. তাহসীন বাহার সূচনা কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। তিনি কুমিল্লা সদর আসনের সংসদ সদস্য ও মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি আ ক ম বাহাউদ্দিন বাহারের কন্যা। নূর-উর রহমান মাহমুদ তানিম মহানগর আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজের সাবেক ভিপি। তৃণমূলের নেতা হিসেবে মাঠে রয়েছে তার শক্ত অবস্থান। অন্যদিকে কুমিল্লা সিটির সাবেক দুইবারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কু কুমিল্লা দক্ষিণ জেলা বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক এবং নিজাম উদ্দিন কায়সার কুমিল্লা মহানগর স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সভাপতি। এ দু’জন গত সিটি নির্বাচনে দলীয় সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে মেয়র পদে লড়ে বিএনপি থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কার হয়েছিলেন। রিটার্নিং কর্মকর্তা মো. ফরহাদ হোসেন জানান, এ নির্বাচনে প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষদিন ২২ ফেব্রুয়ারি। প্রতীক বরাদ্দ ২৩ ফেব্রুয়ারি। আর ৯ মার্চ ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএমে) মাধ্যমে মেয়র পদে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নির্বাচনকে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ, অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করতে নানা ধরনের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে জানান তিনি। এর আগে ২০২২ সালের ১৫ জুন অনুষ্ঠিত প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত। গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সন্ধ্যা সোয়া ৬টার দিকে সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে মারা যান তিনি। পরে গত ২২ জানুয়ারি মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
এর আগে ২০২২ সালের ১৫ জুনের নির্বাচনে কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের (কুসিক) তৃতীয় নির্বাচনে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরফানুল হক রিফাত নৌকা প্রতীক নিয়ে নির্বাচিত হন। রিফাত ছিলেন কুমিল্লা সিটিতে আওয়ামী লীগের প্রথম মেয়র। প্রতিদ্বন্দ্বী ও আগের দু’বারের মেয়র মনিরুল হক সাক্কুর চেয়ে তিনি মাত্র ৩৪৩ ভোট বেশি পেয়েছিলেন। ওই বছরের ৭ জুলাই রিফাত মেয়রের দায়িত্ব নেন। কিন্তু গত বছরের ১৩ ডিসেম্বর সিঙ্গাপুরের মাউন্ট এলিজাবেথ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।
রিফাতের মৃত্যুতে ১৮ ডিসেম্বর মেয়রের পদ শূন্য ঘোষণা করা হয়। পরে গত ২২ জানুয়ারি মেয়র পদে উপ-নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে নির্বাচন কমিশন।
প্রায় ১০ লাখ বাসিন্দার এই মহানগরীতে ভোটার ২ লাখ ২৯ হাজার ৯২০; তাদের মধ্যে নারী ১ লাখ ১৭ হাজার ৯২, পুরুষ ১ লাখ ১২ হাজার ৮২৬, আর হিজড়া ভোটার ২ জন।
মোট ২৭টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই সিটি করপোরেশনে গত নির্বাচনে ১০৫টি কেন্দ্রে ভোটগ্রহণ করেছিল নির্বাচন কমিশন।
কুমিল্লা সিটি উপনির্বাচন: ৪ প্রার্থীরই মনোনয়নপত্র বৈধ
জনপ্রিয় সংবাদ