কাউসার লাবীব
আমাদের নবী করিম (সা.) মানুষের মাঝে দয়ার বাণী ছড়িয়ে দিয়েছিলেন। তার ওপর মক্কার কাফিররা শত অত্যাচার করার পরও তিনি তাদের ক্ষমা করে দিয়েছিলেন। তিনি ইসলামকে ঘোষণা দিয়েছিলেন শান্তির ধর্ম হিসেবে। তার ঐতিহাসিক বাণী—‘দয়াশীলদের ওপর করুণাময় আল্লাহ দয়া করেন। তোমরা দুনিয়াবাসীকে দয়া করো, তাহলে যিনি আসমানে আছেন, তিনি তোমাদের দয়া করবেন’ (আবু দাউদ: ৪৯৪১)।
নবীজি (সা.) এই দয়া শুধু মানুষের প্রতিই দেখাননি, প্রাণিকুলের প্রতিও তিনি ছিলেন সদয়। এক সাহাবি বর্ণনা করেন, আমরা এক সফরে ছিলাম। নবী করিম (সা.) সাময়িকভাবে দূরে গেলে আমরা একটি পাখি ও তার দুটি ছানা ধরে ফেলি। মা পাখিটি আমাদের ওপর চক্কর দিয়ে ডানা ঝাপটে কষ্ট প্রকাশ করছিল। নবীজি (সা.) ফিরে এসে বললেন, ‘কে এই পাখিটিকে কষ্ট দিয়েছে? তার ছানাগুলো ফিরিয়ে দাও’ (সুনানে আবু দাউদ)।
প্রাণীদের কষ্ট দেওয়া থেকে বিরত থাকার জন্য নবীজি (সা.) সবাইকে সাবধান করে দিয়ে বলেন, ‘যে ব্যক্তি কোনো চড়ুইকে অযথা হত্যা করল, সেই চড়ুই কিয়ামতের দিন আল্লাহ তাআলার কাছে উঁচু স্বরে ফরিয়াদ করে বলবে- হে আল্লাহ, অমুক ব্যক্তি আমাকে অযথা হত্যা করেছিল’ (সুনানে নাসায়ি: ৪৪৪৭)। অন্য হাদিসে নবীজি (সা.) বলেন- যে কোনো প্রাণীকে অন্যায়ভাবে হত্যা করবে, আল্লাহ তাকে বিচারের মুখোমুখি করবেন (সুনানে নাসায়ি)।
কুকুর পাহারা ও শিকারে উপকারী প্রাণী। কোরআনের সুরা কাহাফে বর্ণিত হয়েছে- আল্লাহর প্রতি বিশ্বাসী কয়েক যুবক যখন নিপীড়ন থেকে পালিয়ে গুহায় আশ্রয় নেয়, তাদের সঙ্গী ছিল একটি কুকুর। তবে বিনা প্রয়োজনে কুকুর নিজ ঘরে পুষতে নিরুৎসাহিত করেছে ইসলাম। কিন্তু তাকে কোনোভাবেই নির্যাতনের অনুমতি দেয়নি; বরং এসব অবলা প্রাণীকে খাবার দেওয়ার মধ্যে রয়েছে অনেক সওয়াব, রয়েছে ক্ষমার ঘোষণা।
আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক ব্যভিচারিণীকে ক্ষমা করে দেওয়া হয়। সে একটি কুকুরের কাছ দিয়ে যাচ্ছিল। তখন সে দেখতে পেল কুকুরটি একটি কূপের পাশে বসে হাঁপাচ্ছে। পানির পিপাসা তাকে মুমূর্ষু করে দিয়েছিল। তখন সেই নারী তার মোজা খুলে তার ওড়নার সঙ্গে বাঁধল। অতঃপর সে কূপ থেকে পানি তুলল (এবং কুকুরটিকে পানি পান করাল) এ কারণে তাকে ক্ষমা করে দেওয়া হলো’ (সহিহ বুখারি: ৩৩২১)।
অন্য এক হাদিসে প্রাণীকে কষ্ট দিয়ে মেরে ফেলার জন্য এক নারীকে জাহান্নামের আগুনে প্রবেশ করানো হয়েছে মর্মে বর্ণিত হয়েছে। হজরত আবদুল্লাহ ইবনে ওমর (রা.) থেকে বর্ণিত- আল্লাহর রাসুল (সা.) বলেন, ‘এক নারীকে একটি বিড়ালের কারণে আজাব দেওয়া হয়েছিল। সে বিড়ালটিকে বেঁধে রেখেছিল। সে অবস্থায় বিড়ালটি মরে যায়। মহিলাটি ওই কারণে জাহান্নামে গেল। কেননা সে বিড়ালটিকে খানাপিনা কিছুই করায়নি এবং ছেড়েও দেয়নি; যাতে সে জমিনের পোকামাকড় খেয়ে বেঁচে থাকতে পারে’ (সহিহ বুখারি ৩৪৮২)।
লেখক: সাংবাদিক
আজকের প্রত্যাশা/কেএমএএ






















