বিশেষ সংবাদদাতা : আফগানিস্তানের রাষ্ট্র ক্ষমতার আকস্মিক পালাবদলে আঞ্চলিক নিরাপত্তার পাশাপাশি অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির বাণিজ্যের ভবিষ্যৎ নিয়েও। আয়তনে বাংলাদেশের সাড়ে চারগুণ দেশটি। তবু আফগানিস্তানের অর্থনীতি খুবই ছোট। মাথাপিছু আয় ৫১০ ডলারের কাছাকাছি। বিদেশি সাহায্যের ওপর অনেকটাই নির্ভরশীল। সম্প্রতি বাংলাদেশ ও আফগানিস্তানের মধ্যে ব্যবসা-বাণিজ্য বাড়তে শুরু করেছিল। ২০২০-২১ অর্থবছরে দেশটিতে ৮৬ লাখ মার্কিন ডলারের পণ্য রফতানি করে বাংলাদেশ। এর আগের অর্থবছর করেছিল ৫৭ লাখ ডলারের পণ্য। গত অর্থবছরে আফগানিস্তান থেকে বাংলাদেশে দুই কোটি ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি হয়েছিল। যা ছিল আগের বছরের দ্বিগুণেরও বেশি। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ-আফগানিস্তানের দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ ২ কোটি ৮৬ লাখ ডলার (প্রায় ২৪৩ কোটি টাকা)। জানা গেছে, ২০০৫-০৬ অর্থবছরে ৯ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য রফতানি হয় আফগানিস্তানে। তখন আমদানি ছিল না। ২০০৯-১০ অর্থবছর আমদানি হয় ৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারের পণ্য। ২০১৫-১৬ অর্থবছরে আফগানিস্তানে রফতানির চেয়ে দেশটি থেকে আমদানি বেশি হয়। ২০১৮-১৯ অর্থবছরে বাংলাদেশ থেকে আফগানিস্তানে রফতানি হয় ৬২ লাখ ৬০ হাজার ডলারের পণ্য। আমদানি হয় ৮১ লাখ ডলারের। ২০১৯-২০ অর্থবছরে রফতানি আরও কমে ৫৭ লাখ ৭০ হাজার ডলারে দাঁড়ালেও আমদানি হয় ৯২ লাখ ডলারের। আফগানিস্তান থেকে আমদানি করা পণ্যের মধ্যে বাদাম, ফল, বস্ত্র শিল্পের উপাদান, প্লাস্টিক ও রাবারজাত পণ্য অন্যতম। পাশাপাশি বাংলাদেশ থেকে রফতানি হয় ওষুধ, সবজি, টেক্সটাইল ফাইবার, সুতা ও পোশাক। এ ছাড়া বৈদ্যুতিক যন্ত্রপাতি এবং শিল্পে ব্যবহৃত যন্ত্রাংশও রফতানি হয়। রফতানি উন্নয়ন ব্যুরোর (ইপিবি) তথ্য অনুযায়ী, ২০২০-২১ অর্থবছরে আফগানিস্তানে ৮৬ লাখ ডলারের পণ্য রফতানির মধ্যে ওষুধই ছিল ৭৬ লাখ ডলারের। এ ছাড়া ২ লাখ ৯৩ হাজার ডলারের প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানি হয়। এরমধ্যে নুডুলস, বিস্কুটসহ বিভিন্ন প্রক্রিয়াজাত খাদ্য রফতানি করে প্রাণ-আরএফএল গ্রুপ। গত অর্থবছরে দেশটিতে ৭০ হাজার ডলারের পোশাক রফতানি হয়েছে। এর আগের বছর হয়েছিল মাত্র ৬ হাজার ৩০৫ ডলারের পোশাক। নিট পোশাকশিল্প মালিকদের সংগঠন বিকেএমইএ সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘আফগানিস্তানের বর্তমান রাজনৈতিক পরিস্থিতি কোন দিকে যায়, তার ওপর পোশাকের রফতানি নির্ভর করছে। তবে এতে আহামরি কোনও ক্ষতি হবে না। কারণ, পোশাক রফতানিতে আফগানিস্তান বাংলাদেশের টার্গেট নয়।’ পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআরআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘আফগানিস্তানের অর্থনীতির চেয়ে আঞ্চলিক নিরাপত্তাই বেশি গুরুত্বপূর্ণ। দেশটির অর্থনীতি ক্ষুদ্র। ইদানীং আরও বেশি বিদেশি সহায়তার ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়েছে।’ তিনি বলেন, ‘আফগানরা আফিম রফতানির মাধ্যমে আয় করে বেশি। এটা খুব একটা গ্রহণযোগ্য বাণিজ্য নয়। তাদের বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। উৎপাদন কার্যক্রম বাড়াতে হবে। বিশেষ করে যে খনিজ সম্পদ আছে সেটার যথাযথ ব্যবহার করতে হবে।’
আইএমএফের সহযোগিতা স্থগিত
এদিকে আফগানিস্তানের জন্য সব ধরনের সহযোগিতা স্থগিত করেছে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (আইএমএফ)। বিবিসি জানিয়েছে, তালেবান কাবুল দখল করে নেওয়ার প্রেক্ষাপটে দেশটির নতুন সরকারের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির বিষয়টি পরিষ্কার না হওয়ায় এই সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থাটি। আফগানিস্তানে একটি সরকারের স্বীকৃতি দেওয়া নিয়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের মধ্যে স্পষ্টতার অভাবের কারণে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে,’ বলেন আইএমএফের একজন মুখপাত্র। আগামী ২৩ অগাস্ট আইএমএফ থেকে ৩৭ কোটি ডলারেরও বেশি পাওয়ার কথা ছিল আফগানিস্তানের।
ভারতকে পণ্য দেওয়া বন্ধ!
আফগানিস্তান দখলের পর প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক জোরদার করার কথা বললেও ভারতে পণ্য সরবরাহ বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান। এমনটাই দাবি করেছে নয়াদিল্লি। ইরানি বার্তা সংস্থা তাসনিমের প্রতিবেদনে জানানো হয়, পাকিস্তানের ভেতর দিয়ে সড়কপথে ভারতে দেশটির পণ্য পাঠানোর প্রক্রিয়া বন্ধ করে দিয়েছে তালেবান। ফেডারেশন অব ইন্ডিয়ান এক্সপোর্ট অর্গানাইজেশন্সের মহাপরিচালক অজয় সাহাই বলেছেন, তবে দুবাইয়ের মাধ্যমে আফগানিস্তানের সঙ্গে ভারতের বাণিজ্যিক লেনদেন অব্যাহত রয়েছে।
কী হবে বাংলাদেশ-আফগানিস্তান বাণিজ্যের
ট্যাগস :
জনপ্রিয় সংবাদ