ঢাকা ০৪:১২ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৪ জুলাই ২০২৫

কিয়েভ দখলে মরিয়া পুতিন

  • আপডেট সময় : ০২:৩০:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২
  • ৯৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাশিয়ার স্থল বাহিনীর ৪০ মাইল লম্বা একটি বহর ট্যাঙ্কসহ ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি কোম্পানি জানিয়েছে।
কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে গ্রহণ করা নতুন ছবির ভিত্তিতে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস জানায়, আগের প্রতিবেদনগুলোতে ওই সাঁজোয়া বহর ১৭ মাইল দীর্ঘ বলা হলেও সেটি ঠিক ছিল না, ওই বহরটি আসলে প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ। ওই বহরটিতে কয়েকশ সামরিক যান রয়েছে এবং তারা ইউক্রেইনের রাজধানীর উত্তরে ইভানকিভ শহরের কাছাকাছি আছে বলে জানিয়েছে ম্যাক্সার। হোয়াইট হাউস রাশিয়ার এই সামরিক বহরটিকে নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, এত বড় সামরিক বহর নিয়ে উদ্বিগ্নবোধ করছেন তারা, পাশাপাশি সহিংসতা বৃদ্ধি, বেসামরিক হতাহত এবং নির্বিচার হত্যা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেইনীয়দের প্রবল প্রতিরোধে বিস্মিত মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেইনীয়দের জন্য পরিস্থিতি এখন ‘আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে’ বলে আশঙ্কা তাদের। রাশিয়ার সেনাদের অপ্রতিরোধ্য ঢেউ এগিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছেন তারা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেইনকে অবিলম্বে ৩৫ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, যখন কিয়েভে সরাসরি উড়ে যাওয়া যেত তখন প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়া যত সহজ ছিল এখন আর পরিস্থিতি তেমনটি নেই।
বিবিসি জানিয়েছে, ম্যাক্সারের প্রকাশ করা নতুন আরও কিছু ছবিতে বেলারুশের দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেইনের সীমান্তের ২০ মাইলের মধ্যে স্থল বাহিনী ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার দেখা গেছে।
খারকিভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১০ : রাশিয়ার আগ্রাসনের ষষ্ঠ দিনে ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কেন্দ্রস্থলে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৩৫ জন। ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্টন হেরাশেঙ্কো গতকাল মঙ্গলবার স্যোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধ্বংসস্তুপ সরানোর কাজ চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
রাশিয়া মঙ্গলবার সকালের এই হামলা শহরের কেন্দ্রস্থলে ফ্রিডম স্কয়ারের সরকারি ভবনগুলো লক্ষ্য করে চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চ্যানেলগুলোতে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে আঞ্চলিক রাজ্য প্রশাসন ভবনের সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়তে দেখা গেছে। এর ফলে একটি বিশাল, জ্বলন্ত বিস্ফোরণ ঘটে যা জানালা ও কাছাকাছি সব গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। হামলার পরের এক ভিডিওতে ধ্বংসস্তূপ ও পোড়া গাড়ি দেখা গেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে এই হামলা হয়। খারকিভে গত কয়েকদিন ধরেই আকাশ থেকে ব্যাপক বোমাবর্ষণ ও তুমুল যুদ্ধ হচ্ছে। ইউক্রেইনের উত্তরপূর্বের এই শহরে ১৬ লাখ মানুষের বাস।
রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে: জেলেনস্কি : ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছেন। বিবিসি জানায়, খারকিভের কেন্দ্রস্থলে ফ্রিডম স্কয়ারে অপেরা হাউজ, কনসার্ট হল, সরকারি কার্যালয়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা ‘প্রাণঘাতী’ এবং ‘বর্বরোচিত’ বলেছেন কর্মকতারা। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, “রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে। রাশিয়া বাহিনী আজ খুব নির্মমভাবে খারকিভকে কামানের গোলার নিশানা করেছে। এটি একটি শান্তিপূর্ণ স্থান, শান্তিপূর্ণ শহরতলীৃ রুশরা জানে তারা কোথায় গোলাবর্ষণ করছে।”
ভিডিও ফুটেজে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র স্থানীয় সরকারি ভবনে আঘাত হেনে বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গেছে। কয়েকদিন ধরেই খারকিভে ভারি গোলাবর্ষণ করছে রাশিয়া। খারকিভ এবং রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য শহরগুলো রাশিয়া ঘিরে ফেলতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেইন সরকার। রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে এমন অভিযোগও বাড়ছে। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিসহ দেশটির স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা এমনকী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও বলছে, আবাসিক এলাকায় হামলার ঘটনা তদন্ত করে দেখা দরকার। জেলেনস্কি বলেছেন, “একটি রাষ্ট্র, যারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে পারে না।”
রাশিয়া এর আগে আবাসিক এলাকাগুলোকে হামলার নিশানা করার কথা অস্বীকার করেছে। তবে যুদ্ধাপরাধ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পালন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরুর চেষ্টায় আছে। তদন্তকাজ শুরু করতে আইসিসি’র প্রধান কৌঁসুলির এখনও প্রয়োজন বিচারকদের অনুমোদন। তার আগে, তিনি তার তদন্ত দলকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার মতো নীপিড়নমূলক ঘটনার প্রমাণ জোগাড় করতে বলেছেন। ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ফ্রিডম স্কয়ার এবং আবাসিক এলাকাগুলোতে বর্বরোচিত হামলার জন্য রাশিয়াকে শাস্তি দিতে বিশ্বের আরও বেশিকিছু করা উচিত। “রাশিয়া ক্ষোভের বশে আরও বেশি যুদ্ধাপরাধ করছে এবং নিরীহ মানুষ মারছে” বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনে পড়েছে। কয়েকদিক থেকে এই হামলা চলছে। তবে ইউক্রেইনের প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার অভিযান শম্ভুকগতিতে চলছে। খেরসন শহরের বাসিন্দারা বলছে, শহরটি এখন ঘেরাও হয়ে পড়েছে। মারিউপোল বন্দর নগরীর মেয়র জানিয়েছেন, রাতে শহরটিতে গোলাবর্ষণ হয়েছে। খেরসন শহরের মেয়র বলেছেন, রুশ সেনারা শহরটির চারপাশে চেকপয়েন্ট বসাচ্ছে। এই শহরটি রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে। রুশ সেনারা শহরটি ঘিরে ফেললেও এটি “ইউক্রেইনের ছিল এবং ইউক্রেইনের হাতেই থাকবে” বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন খেরসনের মেয়র। শহরটি থেকে এক সাংবাদিক ইউক্রেইন ২৪ সম্প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, শহরটি আসলে ঘেরাও হয়ে গেছে। সেখানে সব দিক থেকে প্রচুর রুশ সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম জড়ো হয়েছে। সেনারা শহর থেকে বেরোনোর পথে চেকপয়েন্ট বসাচ্ছে। ওদিকে, বন্দরনগরী মারিউপোলের মেয়র ইউক্রেইন ২৪ নিউজকে কড়া ভাষায় বলেছেন, “রুশ নাৎসিরা ইউক্রেইন জাতিকে গণহত্যা করার চেষ্টা করছে। আমরা শেষ বুলেটটি পর্যন্ত লড়ে যাব।” ওদিকে, রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ডেনিস পুশিলিন বলেছেন, মঙ্গলবারে তার বাহিনীর লক্ষ্য হচ্ছে মারিউপোল ঘিরে ফেলা। রাশিয়ার রাষ্ট্র-মালিকানাধীন আরআইএ নভোস্তি সংবাদ সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।
কেউ আমাদের মচকাতে পারবে না: ইউক্রেনকে কেউ মচকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তার দেশে যা ঘটছে সেটি একটি ট্র্যাজেডি। ইউক্রেনীয়রা তাদের ভূখ-, তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের জীবনের জন্য লড়াই করছে। তিনি বলেন, কেউ আমাদের মচকাতে পারবে না। কারণ, আমরা ইউক্রেনীয়। তার ভাষণের সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কক্ষে এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইউরোপীয় এমপি এবং কর্মকর্তারা উঠে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে হাততালি দেন। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। সোমবারও ১৬ জন নিহত হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইউক্রেনের পাশে আছে, এ বিষয়টি প্রমাণের জন্যও পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান জেলেনস্কি। এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে পাঁচ হাজার ৭১০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। তাদের দাবি, সেনাদের প্রাণহানি ছাড়াও একই সময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে ১৯৮টি রাশিয়ান ট্যাংক, ২৯টি এয়ারক্রাফট, ৮৪৬টি সাঁজোয়া যান ও ২৯টি হেলিকপ্টার হারিয়েছে রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তরফে স্বতন্ত্রভাবে ইউক্রেনের এমন দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে গত রোববার রাশিয়ার পক্ষ থেকেও তাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। এর আগে দেশটি দাবি করে আসছিল, সংঘর্ষে কোনও রাশিয়ান সেনা নিহত হয়নি।
নিষেধাজ্ঞা কখনোই রাশিয়াকে টলাতে পারবে না: পেসকভ : পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কখনোই রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিষয়ে তাদের অবস্থান থেকে টলাতে পারবে না। গতকাল মঙ্গলবার ক্রেমলিন এ তথ্য জানায় বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়। এখন ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলা শুরুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংক ও কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে এখন মুখোমুখি আলোচনা চলছে, তাই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে এখন আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেনে সাধারণ জনগণকে লক্ষ্য করে গুচ্ছবোমা ও ভ্যাকুয়াম বোমা নিক্ষেপের অভিযোগকে মিথ্যা বলে খারিজ করে দেন পেসকভ। ইউক্রেনে ষষ্ঠ দিনের মতো রাশিয়ার আগ্রাসনে সামরিক পরিস্থিতি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পেসকভ। ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনকে নাৎসিবাদের প্রভাবমুক্ত এবং নিরস্ত্রীকরণ করতে এ বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের সূত্র ধরে জানতে চাওয়া হয়েছিল ক্রেমলিন কী মনে করে কিয়েভ নাৎসিদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু পেসকভ কোনো মন্তব্য করেননি।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

ইইউ ও মেক্সিকোর ওপর ৩০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করলেন ট্রাম্প

কিয়েভ দখলে মরিয়া পুতিন

আপডেট সময় : ০২:৩০:২০ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১ মার্চ ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : রাশিয়ার স্থল বাহিনীর ৪০ মাইল লম্বা একটি বহর ট্যাঙ্কসহ ইউক্রেইনের রাজধানী কিয়েভের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের একটি বেসরকারি কোম্পানি জানিয়েছে।
কৃত্রিম উপগ্রহের মাধ্যমে গ্রহণ করা নতুন ছবির ভিত্তিতে মহাকাশ প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান ম্যাক্সার টেকনোলজিস জানায়, আগের প্রতিবেদনগুলোতে ওই সাঁজোয়া বহর ১৭ মাইল দীর্ঘ বলা হলেও সেটি ঠিক ছিল না, ওই বহরটি আসলে প্রায় ৪০ মাইল দীর্ঘ। ওই বহরটিতে কয়েকশ সামরিক যান রয়েছে এবং তারা ইউক্রেইনের রাজধানীর উত্তরে ইভানকিভ শহরের কাছাকাছি আছে বলে জানিয়েছে ম্যাক্সার। হোয়াইট হাউস রাশিয়ার এই সামরিক বহরটিকে নিবিড় নজরদারিতে রেখেছে বলে জানিয়েছে সিএনএন। যুক্তরাষ্ট্রের বেশ কয়েকজন কর্মকর্তা সিএনএনকে বলেছেন, এত বড় সামরিক বহর নিয়ে উদ্বিগ্নবোধ করছেন তারা, পাশাপাশি সহিংসতা বৃদ্ধি, বেসামরিক হতাহত এবং নির্বিচার হত্যা নিয়েও তারা উদ্বিগ্ন। রাশিয়ার আগ্রাসনের মুখে ইউক্রেইনীয়দের প্রবল প্রতিরোধে বিস্মিত মার্কিন কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ইউক্রেইনীয়দের জন্য পরিস্থিতি এখন ‘আরও বেশি চ্যালেঞ্জিং হবে’ বলে আশঙ্কা তাদের। রাশিয়ার সেনাদের অপ্রতিরোধ্য ঢেউ এগিয়ে আসছে বলে সতর্ক করেছেন তারা। সম্প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ইউক্রেইনকে অবিলম্বে ৩৫ কোটি ডলারের প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়ার জন্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিনকেনকে নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু ব্যক্তিগতভাবে মার্কিন কর্মকর্তারা স্বীকার করেছেন, যখন কিয়েভে সরাসরি উড়ে যাওয়া যেত তখন প্রতিরক্ষা সহায়তা দেওয়া যত সহজ ছিল এখন আর পরিস্থিতি তেমনটি নেই।
বিবিসি জানিয়েছে, ম্যাক্সারের প্রকাশ করা নতুন আরও কিছু ছবিতে বেলারুশের দক্ষিণাঞ্চলে ইউক্রেইনের সীমান্তের ২০ মাইলের মধ্যে স্থল বাহিনী ও অ্যাটাক হেলিকপ্টার দেখা গেছে।
খারকিভে রুশ ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় নিহত ১০ : রাশিয়ার আগ্রাসনের ষষ্ঠ দিনে ইউক্রেইনের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভের কেন্দ্রস্থলে রুশ বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় অন্তত ১০ জন নিহত হয়েছে এবং আহত হয়েছে ৩৫ জন। ইউক্রেইনের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা অ্যান্টন হেরাশেঙ্কো গতকাল মঙ্গলবার স্যোশাল মিডিয়ায় এক পোস্টে একথা জানিয়েছেন। তিনি বলেন, “ধ্বংসস্তুপ সরানোর কাজ চলছে। হতাহতের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে।”
রাশিয়া মঙ্গলবার সকালের এই হামলা শহরের কেন্দ্রস্থলে ফ্রিডম স্কয়ারের সরকারি ভবনগুলো লক্ষ্য করে চালিয়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। ইউক্রেইনের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম চ্যানেলগুলোতে ভাইরাল হওয়া এক ভিডিওতে আঞ্চলিক রাজ্য প্রশাসন ভবনের সামনে একটি ক্ষেপণাস্ত্র আছড়ে পড়তে দেখা গেছে। এর ফলে একটি বিশাল, জ্বলন্ত বিস্ফোরণ ঘটে যা জানালা ও কাছাকাছি সব গাড়ি উড়িয়ে নিয়ে যায়। হামলার পরের এক ভিডিওতে ধ্বংসস্তূপ ও পোড়া গাড়ি দেখা গেছে। স্থানীয় সময় সকাল ৮টার দিকে এই হামলা হয়। খারকিভে গত কয়েকদিন ধরেই আকাশ থেকে ব্যাপক বোমাবর্ষণ ও তুমুল যুদ্ধ হচ্ছে। ইউক্রেইনের উত্তরপূর্বের এই শহরে ১৬ লাখ মানুষের বাস।
রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে: জেলেনস্কি : ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম শহর খারকিভে রাশিয়ার বোমাবর্ষণকে যুদ্ধাপরাধ বলে বর্ণনা করেছেন। বিবিসি জানায়, খারকিভের কেন্দ্রস্থলে ফ্রিডম স্কয়ারে অপেরা হাউজ, কনসার্ট হল, সরকারি কার্যালয়ে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র ও রকেট হামলা ‘প্রাণঘাতী’ এবং ‘বর্বরোচিত’ বলেছেন কর্মকতারা। প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি বলেছেন, “রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে। রাশিয়া বাহিনী আজ খুব নির্মমভাবে খারকিভকে কামানের গোলার নিশানা করেছে। এটি একটি শান্তিপূর্ণ স্থান, শান্তিপূর্ণ শহরতলীৃ রুশরা জানে তারা কোথায় গোলাবর্ষণ করছে।”
ভিডিও ফুটেজে রাশিয়ার ক্ষেপণাস্ত্র স্থানীয় সরকারি ভবনে আঘাত হেনে বিস্ফোরণ ঘটতে দেখা গেছে। কয়েকদিন ধরেই খারকিভে ভারি গোলাবর্ষণ করছে রাশিয়া। খারকিভ এবং রাজধানী কিয়েভসহ অন্যান্য শহরগুলো রাশিয়া ঘিরে ফেলতে চাইছে বলে অভিযোগ করেছে ইউক্রেইন সরকার। রাশিয়া যুদ্ধাপরাধ করছে এমন অভিযোগও বাড়ছে। ইউক্রেইনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কিসহ দেশটির স্থানীয় সরকারের কর্মকর্তারা এমনকী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থাও বলছে, আবাসিক এলাকায় হামলার ঘটনা তদন্ত করে দেখা দরকার। জেলেনস্কি বলেছেন, “একটি রাষ্ট্র, যারা বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলা চালিয়ে যুদ্ধাপরাধ করে তারা জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সদস্য হতে পারে না।”
রাশিয়া এর আগে আবাসিক এলাকাগুলোকে হামলার নিশানা করার কথা অস্বীকার করেছে। তবে যুদ্ধাপরাধ খতিয়ে দেখার দায়িত্ব পালন করা আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত (আইসিসি) রাশিয়ার বিরুদ্ধে ওঠা অভিযোগের তদন্ত শুরুর চেষ্টায় আছে। তদন্তকাজ শুরু করতে আইসিসি’র প্রধান কৌঁসুলির এখনও প্রয়োজন বিচারকদের অনুমোদন। তার আগে, তিনি তার তদন্ত দলকে বেসামরিক নাগরিকদের ওপর হামলার মতো নীপিড়নমূলক ঘটনার প্রমাণ জোগাড় করতে বলেছেন। ইউক্রেইনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দিমিত্রো কুলেবা বলেছেন, ফ্রিডম স্কয়ার এবং আবাসিক এলাকাগুলোতে বর্বরোচিত হামলার জন্য রাশিয়াকে শাস্তি দিতে বিশ্বের আরও বেশিকিছু করা উচিত। “রাশিয়া ক্ষোভের বশে আরও বেশি যুদ্ধাপরাধ করছে এবং নিরীহ মানুষ মারছে” বলে তিনি অভিযোগ করেন।
ইউক্রেইনে রাশিয়ার আগ্রাসন মঙ্গলবার ষষ্ঠ দিনে পড়েছে। কয়েকদিক থেকে এই হামলা চলছে। তবে ইউক্রেইনের প্রতিরোধের মুখে রাশিয়ার অভিযান শম্ভুকগতিতে চলছে। খেরসন শহরের বাসিন্দারা বলছে, শহরটি এখন ঘেরাও হয়ে পড়েছে। মারিউপোল বন্দর নগরীর মেয়র জানিয়েছেন, রাতে শহরটিতে গোলাবর্ষণ হয়েছে। খেরসন শহরের মেয়র বলেছেন, রুশ সেনারা শহরটির চারপাশে চেকপয়েন্ট বসাচ্ছে। এই শহরটি রাশিয়ার দখল করে নেওয়া ক্রিমিয়া উপদ্বীপের কাছে। রুশ সেনারা শহরটি ঘিরে ফেললেও এটি “ইউক্রেইনের ছিল এবং ইউক্রেইনের হাতেই থাকবে” বলে প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন খেরসনের মেয়র। শহরটি থেকে এক সাংবাদিক ইউক্রেইন ২৪ সম্প্রচারমাধ্যমকে বলেছেন, শহরটি আসলে ঘেরাও হয়ে গেছে। সেখানে সব দিক থেকে প্রচুর রুশ সেনা এবং সামরিক সরঞ্জাম জড়ো হয়েছে। সেনারা শহর থেকে বেরোনোর পথে চেকপয়েন্ট বসাচ্ছে। ওদিকে, বন্দরনগরী মারিউপোলের মেয়র ইউক্রেইন ২৪ নিউজকে কড়া ভাষায় বলেছেন, “রুশ নাৎসিরা ইউক্রেইন জাতিকে গণহত্যা করার চেষ্টা করছে। আমরা শেষ বুলেটটি পর্যন্ত লড়ে যাব।” ওদিকে, রাশিয়া-সমর্থিত বিচ্ছিন্নতাবাদী নেতা ডেনিস পুশিলিন বলেছেন, মঙ্গলবারে তার বাহিনীর লক্ষ্য হচ্ছে মারিউপোল ঘিরে ফেলা। রাশিয়ার রাষ্ট্র-মালিকানাধীন আরআইএ নভোস্তি সংবাদ সংস্থা এ খবর জানিয়েছে।
কেউ আমাদের মচকাতে পারবে না: ইউক্রেনকে কেউ মচকাতে পারবে না বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। গতকাল মঙ্গলবার ইউরোপীয় পার্লামেন্টের বিশেষ অধিবেশনে ভিডিও কনফারেন্সে দেওয়া ভাষণে এমন মন্তব্য করেন তিনি। এক প্রতিবেদনে এ খবর জানিয়েছে যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংবাদমাধ্যম বিবিসি। ভলোদিমির জেলেনস্কি বলেন, তার দেশে যা ঘটছে সেটি একটি ট্র্যাজেডি। ইউক্রেনীয়রা তাদের ভূখ-, তাদের স্বাধীনতা এবং তাদের জীবনের জন্য লড়াই করছে। তিনি বলেন, কেউ আমাদের মচকাতে পারবে না। কারণ, আমরা ইউক্রেনীয়। তার ভাষণের সময় ইউরোপীয় পার্লামেন্টের কক্ষে এক আবেগঘন পরিস্থিতি তৈরি হয়। ইউরোপীয় এমপি এবং কর্মকর্তারা উঠে দাঁড়িয়ে দীর্ঘক্ষণ ধরে হাততালি দেন। জেলেনস্কি বলেন, রাশিয়া ইউক্রেনের শিশুদের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত করছে। সোমবারও ১৬ জন নিহত হয়েছে। ইউরোপীয় পার্লামেন্ট ইউক্রেনের পাশে আছে, এ বিষয়টি প্রমাণের জন্যও পার্লামেন্ট সদস্যদের প্রতি আহ্বান জানান জেলেনস্কি। এদিকে ইউক্রেনে রুশ আগ্রাসন শুরুর পর থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে পাঁচ হাজার ৭১০ রুশ সেনা নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে ইউক্রেনের সশস্ত্র বাহিনী। তাদের দাবি, সেনাদের প্রাণহানি ছাড়াও একই সময়ে ইউক্রেনীয় বাহিনীর হাতে ১৯৮টি রাশিয়ান ট্যাংক, ২৯টি এয়ারক্রাফট, ৮৪৬টি সাঁজোয়া যান ও ২৯টি হেলিকপ্টার হারিয়েছে রাশিয়া।
আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলোর তরফে স্বতন্ত্রভাবে ইউক্রেনের এমন দাবির সত্যতা নিশ্চিত করা সম্ভব হয়নি। তবে গত রোববার রাশিয়ার পক্ষ থেকেও তাদের ক্ষয়ক্ষতির কথা স্বীকার করা হয়েছে। এর আগে দেশটি দাবি করে আসছিল, সংঘর্ষে কোনও রাশিয়ান সেনা নিহত হয়নি।
নিষেধাজ্ঞা কখনোই রাশিয়াকে টলাতে পারবে না: পেসকভ : পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা কখনোই রাশিয়াকে ইউক্রেনের বিষয়ে তাদের অবস্থান থেকে টলাতে পারবে না। গতকাল মঙ্গলবার ক্রেমলিন এ তথ্য জানায় বলে রয়টার্সের খবরে বলা হয়। এখন ইউক্রেনে রুশ সামরিক হামলা শুরুকে কেন্দ্র করে যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, জাপানসহ বিভিন্ন দেশ ও সংগঠন রাশিয়ার ওপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার কয়েকটি ব্যাংক ও কয়েকজন ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। তাঁদের সম্পদ বাজেয়াপ্ত করেছে। ক্রেমলিনের মুখপাত্র দিমিত্রি পেসকভ বলেন, যেহেতু দুই দেশের মধ্যে এখন মুখোমুখি আলোচনা চলছে, তাই দুই দেশের প্রেসিডেন্টের মধ্যে এখন আলোচনার কোনো সম্ভাবনা নেই। ইউক্রেনে সাধারণ জনগণকে লক্ষ্য করে গুচ্ছবোমা ও ভ্যাকুয়াম বোমা নিক্ষেপের অভিযোগকে মিথ্যা বলে খারিজ করে দেন পেসকভ। ইউক্রেনে ষষ্ঠ দিনের মতো রাশিয়ার আগ্রাসনে সামরিক পরিস্থিতি বিষয়ে কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি পেসকভ। ক্রেমলিনের দাবি, ইউক্রেনকে নাৎসিবাদের প্রভাবমুক্ত এবং নিরস্ত্রীকরণ করতে এ বিশেষ অভিযান চালানো হচ্ছে। রাশিয়ার সেনাবাহিনী-সংক্রান্ত এক প্রশ্নের সূত্র ধরে জানতে চাওয়া হয়েছিল ক্রেমলিন কী মনে করে কিয়েভ নাৎসিদের নিয়ন্ত্রণে। কিন্তু পেসকভ কোনো মন্তব্য করেননি।