ঢাকা ০৫:০০ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৬ অগাস্ট ২০২৫

কিয়েভে কারফিউ জারি

  • আপডেট সময় : ০২:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২
  • ১১৮ বার পড়া হয়েছে

প্রত্যাশা ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে কারফিউ জারি করেছেন শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিতসচকো। গতকাল সোমবার রাত থেকে আগামীকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। এক ঘোষণায় মেয়র ভিতালি ক্লিতসচকো জানান, রাজধানীতে (২১ মার্চ) রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর আল জাজিরার। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কোনো দোকানপাট, ফার্মেসি এবং পেট্রল স্টেশন খোলা হবে না। অ্যালার্মের শব্দ বাজলে প্রত্যেককে বাড়িতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এদিকে রুশ বাহিনী মারিউপোল শহর ঘিরে ফেলায় সেখানে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। করিডোর তৈরি করতে না দেওয়ায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের অনুমতি মেলেনি। ওই শহরে প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আটকা পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লোকজন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সেখানে খাবার পানির সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে। ওষুধ সরবরাহও অনেক কমে গেছে। দিন দিন সংকট আরও বাড়ছে। ফলে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে মানুষ, বিভিন্ন ধরনের রোগও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তাঘাটে মরদেহ পড়ে আছে। ভয়ে কেউ মরদেহ সরানোর জন্যও এগিয়ে আসছে না। তবে মরদেহগুলো উদ্ধার করার সুযোগ পেলেই সবগুলো একসঙ্গে গণকবর দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আশপাশের এলাকাও ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরের মেয়র ভাদিম বয়চেনকো জানান, ৮০ শতাংশ ভবনই হয় ধ্বংস হয়ে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শান্তি আলোচনায় ব্যর্থতা ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ ডেকে আনবে: জেলেনস্কি : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে দুই দেশের লড়াই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ সূচনা করতে পারে। গতকাল রোববার সিএনএনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এসব কথা বলেন। পুতিনের প্রতি ইঙ্গিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আমি গত দুই বছরই আলোচনার পক্ষে ছিলাম। আমি মনে করি, আলোচনা ছাড়া আমরা এই যুদ্ধের ইতি টানতে পারব না।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের যদি ১ শতাংশও সুযোগ থাকে, আমাদের সেই সুযোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমাদের এটা করা উচিত। আমি আপনাকে শান্তি আলোচনার ফলাফল বলে দিতে পারি…।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের নির্মূল করতে, হত্যা করতে এসেছে রুশ বাহিনী। আমাদের জনগণ ও সেনাবাহিনীর মর্যাদা বিবেচনায় বলতে পারি, আমরা শক্তিশালী আঘাত মোকাবিলা করতে পারি, আমরা পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের মর্যাদাবোধ আমাদের জীবন রক্ষা করছে না। তাই আমি মনে করি, সংলাপের সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য আমাদের যেকোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যেকোনো সুযোগ নিতে হবে, এমনকি পুতিনের সঙ্গে কথা বলার সম্ভাব্যতা নিয়েও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মানেই হলো— একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।’
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে এ যুদ্ধ শুরু হতো না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি আমার দেশ ও জনগণের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। যদি ন্যাটোর সদস্যরা আমাদের এই জোটে দেখতে চান, তাহলে দ্রুত এটা করুন। কারণ, প্রতিদিনই আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছেন।’
ন্যাটো সদস্যদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘কিন্তু আপনারা যদি আমাদের জনগণের জীবনের সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত না হন, যদি আমাদের দুই নৌকায় পা দেওয়া অবস্থায় দেখতে চান, আর আপনারা আমাদের গ্রহণ করবেন কি করবেন না, সেটা বোঝার ক্ষেত্রে যদি আমাদের দ্বিধায় রাখতে চান; আপনারা এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ফেলতে পারেন না, এমন অনিশ্চয়তায় থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের (ন্যাটো সদস্যদের) অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা সরাসরি ও পরিষ্কারভাবে বলুন, আমরা এক বছর, দুই বছর কিংবা পাঁচ বছরের মধ্যে আপনাদের ন্যাটোর সদস্য করতে যাচ্ছি, অথবা রাখঢাক না করে ‘না’ বলে দিন। জবাব ছিল স্পষ্ট—তোমাদের ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। কিন্তু তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, দরজা খোলা।’ ইউক্রেনের ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়া নিজেদের (রাশিয়া) নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। শুরুতে ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়ার বিষয়ে অনড় মনোভাব দেখায় ইউক্রেন। তবে হামলা শুরুর পর সুর নরম করেন জেলেনস্কি। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে কিয়েভ ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পথ থেকে সরে আসতে রাজি বলেও জানান তিনি। ইউক্রেনে রুশ হামলা আজ সোমবার ২৬তম দিনে গড়িয়েছে। কয়েক দফার সংলাপে দুই পক্ষ কিছুটা অগ্রগতির কথা জানালেও সহসাই যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আজ দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবার অনলাইনে শান্তি আলোচনায় বসতে পারেন বলে জানা গেছে।

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

জনপ্রিয় সংবাদ

গোসলের আগে ত্বককে রাখবে সতেজ যে প্যাক

কিয়েভে কারফিউ জারি

আপডেট সময় : ০২:৩০:৫৫ অপরাহ্ন, সোমবার, ২১ মার্চ ২০২২

প্রত্যাশা ডেস্ক : ইউক্রেনের রাজধানী কিয়েভে কারফিউ জারি করেছেন শহরের মেয়র ভিতালি ক্লিতসচকো। গতকাল সোমবার রাত থেকে আগামীকাল বুধবার সকাল পর্যন্ত সেখানে কারফিউ জারি করা হয়। এক ঘোষণায় মেয়র ভিতালি ক্লিতসচকো জানান, রাজধানীতে (২১ মার্চ) রাত ৮টা থেকে বুধবার সকাল ৭টা পর্যন্ত কারফিউ জারি করা হয়েছে। খবর আল জাজিরার। তিনি জানিয়েছেন, মঙ্গলবার কোনো দোকানপাট, ফার্মেসি এবং পেট্রল স্টেশন খোলা হবে না। অ্যালার্মের শব্দ বাজলে প্রত্যেককে বাড়িতে বা আশ্রয়কেন্দ্রে অবস্থান করতে বলা হয়েছে। এদিকে রুশ বাহিনী মারিউপোল শহর ঘিরে ফেলায় সেখানে অতি প্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের ভয়াবহ সংকট দেখা দিয়েছে। করিডোর তৈরি করতে না দেওয়ায় মানবিক সহায়তা সরবরাহের অনুমতি মেলেনি। ওই শহরে প্রায় তিন লাখ বাসিন্দা আটকা পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে লোকজন বিদ্যুৎবিচ্ছিন্ন অবস্থায় দিন কাটাচ্ছে। সেখানে খাবার পানির সংকটও তীব্র হয়ে উঠেছে। ওষুধ সরবরাহও অনেক কমে গেছে। দিন দিন সংকট আরও বাড়ছে। ফলে অনাহারে দিন কাটাচ্ছে মানুষ, বিভিন্ন ধরনের রোগও দ্রুত ছড়িয়ে পড়ছে। রাস্তাঘাটে মরদেহ পড়ে আছে। ভয়ে কেউ মরদেহ সরানোর জন্যও এগিয়ে আসছে না। তবে মরদেহগুলো উদ্ধার করার সুযোগ পেলেই সবগুলো একসঙ্গে গণকবর দেওয়া হচ্ছে। সামাজিক মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া ছবিতে দেখা গেছে, শহরটি ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। আশপাশের এলাকাও ধ্বংস হয়ে গেছে। শহরের মেয়র ভাদিম বয়চেনকো জানান, ৮০ শতাংশ ভবনই হয় ধ্বংস হয়ে গেছে বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।
শান্তি আলোচনায় ব্যর্থতা ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ’ ডেকে আনবে: জেলেনস্কি : রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে আলোচনায় বসতে রাজি আছেন বলে জানিয়েছেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট ভলোদিমির জেলেনস্কি। তিনি সতর্ক করে দিয়ে বলেছেন, যদি শান্তি আলোচনার প্রচেষ্টা ব্যর্থ হয়, তাহলে দুই দেশের লড়াই ‘তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধের’ সূচনা করতে পারে। গতকাল রোববার সিএনএনকে দেওয়া এক বিশেষ সাক্ষাৎকারে জেলেনস্কি এসব কথা বলেন। পুতিনের প্রতি ইঙ্গিত করে ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি তাঁর সঙ্গে আলোচনায় বসতে প্রস্তুত। আমি গত দুই বছরই আলোচনার পক্ষে ছিলাম। আমি মনে করি, আলোচনা ছাড়া আমরা এই যুদ্ধের ইতি টানতে পারব না।’
জেলেনস্কি আরও বলেন, ‘যুদ্ধ বন্ধের যদি ১ শতাংশও সুযোগ থাকে, আমাদের সেই সুযোগ নেওয়া প্রয়োজন বলে আমি মনে করি। আমাদের এটা করা উচিত। আমি আপনাকে শান্তি আলোচনার ফলাফল বলে দিতে পারি…।’ ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমাদের নির্মূল করতে, হত্যা করতে এসেছে রুশ বাহিনী। আমাদের জনগণ ও সেনাবাহিনীর মর্যাদা বিবেচনায় বলতে পারি, আমরা শক্তিশালী আঘাত মোকাবিলা করতে পারি, আমরা পাল্টা আঘাত হানতে সক্ষম। কিন্তু আমাদের মর্যাদাবোধ আমাদের জীবন রক্ষা করছে না। তাই আমি মনে করি, সংলাপের সম্ভাবনা সৃষ্টির জন্য আমাদের যেকোনো পদ্ধতি অনুসরণ করতে হবে, যেকোনো সুযোগ নিতে হবে, এমনকি পুতিনের সঙ্গে কথা বলার সম্ভাব্যতা নিয়েও চেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে। আর এসব প্রচেষ্টা ব্যর্থ হওয়ার মানেই হলো— একটি তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ।’
জেলেনস্কি বলেন, ইউক্রেন ন্যাটোর সদস্য হলে এ যুদ্ধ শুরু হতো না বলে তিনি বিশ্বাস করেন। ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি আমার দেশ ও জনগণের জন্য নিরাপত্তার নিশ্চয়তা চাই। যদি ন্যাটোর সদস্যরা আমাদের এই জোটে দেখতে চান, তাহলে দ্রুত এটা করুন। কারণ, প্রতিদিনই আমাদের মানুষ মারা যাচ্ছেন।’
ন্যাটো সদস্যদের উদ্দেশে জেলেনস্কি বলেন, ‘কিন্তু আপনারা যদি আমাদের জনগণের জীবনের সুরক্ষা দিতে প্রস্তুত না হন, যদি আমাদের দুই নৌকায় পা দেওয়া অবস্থায় দেখতে চান, আর আপনারা আমাদের গ্রহণ করবেন কি করবেন না, সেটা বোঝার ক্ষেত্রে যদি আমাদের দ্বিধায় রাখতে চান; আপনারা এমন পরিস্থিতিতে আমাদের ফেলতে পারেন না, এমন অনিশ্চয়তায় থাকতে বাধ্য করতে পারেন না।’
ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট বলেন, ‘আমি ব্যক্তিগতভাবে তাদের (ন্যাটো সদস্যদের) অনুরোধ করেছিলাম, আপনারা সরাসরি ও পরিষ্কারভাবে বলুন, আমরা এক বছর, দুই বছর কিংবা পাঁচ বছরের মধ্যে আপনাদের ন্যাটোর সদস্য করতে যাচ্ছি, অথবা রাখঢাক না করে ‘না’ বলে দিন। জবাব ছিল স্পষ্ট—তোমাদের ন্যাটোর সদস্য করা হবে না। কিন্তু তাঁরা প্রকাশ্যে বলছেন, দরজা খোলা।’ ইউক্রেনের ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়া নিজেদের (রাশিয়া) নিরাপত্তার জন্য হুমকি মনে করে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ইউক্রেনের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শুরু করে রাশিয়া। শুরুতে ন্যাটো জোটের সদস্য হওয়ার বিষয়ে অনড় মনোভাব দেখায় ইউক্রেন। তবে হামলা শুরুর পর সুর নরম করেন জেলেনস্কি। নিরাপত্তার নিশ্চয়তা পেলে কিয়েভ ন্যাটোর সদস্য হওয়ার পথ থেকে সরে আসতে রাজি বলেও জানান তিনি। ইউক্রেনে রুশ হামলা আজ সোমবার ২৬তম দিনে গড়িয়েছে। কয়েক দফার সংলাপে দুই পক্ষ কিছুটা অগ্রগতির কথা জানালেও সহসাই যুদ্ধ বন্ধের কোনো লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। আজ দুই দেশের প্রতিনিধিরা আবার অনলাইনে শান্তি আলোচনায় বসতে পারেন বলে জানা গেছে।