ঢাকা ০১:৫৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২০ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

কিডনি ও লিভারের চেয়ে মস্তিষ্কেই প্লাস্টিক কণা বেশি

  • আপডেট সময় : ০৭:৫৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫
  • ১৬ বার পড়া হয়েছে

প্রযুক্তি ডেস্ক: কিডনি ও লিভারের চেয়ে মানুষের মস্তিষ্কে বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

মানুষের মস্তিষ্কে প্লাস্টিকের কণা পাওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তবে আগের বিভিন্ন গবেষণার চেয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে এগুলো। মানবদেহের বিভিন্ন জায়গায় এমন প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের বিষয় হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষকরা বলছেন, গত ৫০ বছরে পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ হু হু করে বেড়েছে। প্লাস্টিক ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মাইক্রোপ্লাস্টিক বা পাঁচশ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট ও ন্যানোপ্লাস্টিক বা এক ন্যানোমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়।

বর্তমানে পানি, মাটি, বায়ু, এমনকি খাবারেও পাওয়া যায় এসব প্লাস্টিক কণা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, খাবার, পানীয় বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকতে পারে প্লাস্টিকের এসব ক্ষুদ্র কণা। তবে এগুলো দেহের কোথায় পৌঁছাতে পারে বা এর ফলে কোনও বিপদ হতে পারে কি না তা বুঝতে পারা এখনও কঠিন।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার মেডিসিন’-এ।

এ নতুন গবেষণায় ২০১৬ ও ২০২৪ সালে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্কের টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করেছেন গবেষক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন ও তার গবেষণা দলটি।

গবেষণায় দেহের এসব অঙ্গে কতটা প্লাস্টিক জমেছে ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ পরিবর্তিত হয়েছে কি না খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। এজন্য অন্যান্য অঙ্গের নমুনার পাশাপাশি ২০১৬ সালে মানুষের মস্তিষ্কের ২৮টি ও ২০২৪ সালে ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন তারা।

গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, পরীক্ষিত সব অঙ্গেই প্লাস্টিকের কণা রয়েছে। ২০১৬ সালের লিভার ও কিডনির নমুনায় প্লাস্টিকের মাত্রা একই রকম থাকলেও ওই বছরের মস্তিষ্কের নমুনায় প্লাস্টিক কণার ঘনত্ব ছিল অনেক বেশি। ২০১৬ সালের নমুনার সঙ্গে ২০২৪ সালের নমুনার তথ্য তুলনা করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক ও লিভার উভয় ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের মাত্রার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের নমুনাও পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, এসব ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে প্লাস্টিক কণার পরিমাণ অন্যান্যদের চেয়ে বেশি ছিল।

তবে গবেষকরা বলেছেন, প্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের ডিমেনশিয়া হয়েছে এরমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। প্লাস্টিক জমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বা সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর কোনও প্রভাব পড়ে কি না তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

এ গবেষণার জন্য দেহের সব ধরনের টিস্যুর নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট স্থান যেমন নিউ মেক্সিকো ও পূর্ব উপকূল অঞ্চল থেকে এসেছে।

গবেষকরা বলছেন, একজন ব্যক্তি কোথায় থাকেন, তার খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে শরীরে প্লাস্টিকের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। আর এ প্রবণতা গোটা বিশ্বের জন্য সত্যি কি না তা দেখার জন্য আরও বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ গবেষণার প্রয়োজন।

প্লাস্টিক কণা মানুষের ক্ষতি করে কি না তা নিশ্চিত করেনি গবেষণাটি। তবে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশ্ন সামনে এনেছে এটি। প্লাস্টিক দূষণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাই এসব ক্ষুদ্র কণা কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে তা জানার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।

 

 

ট্যাগস :

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কিডনি ও লিভারের চেয়ে মস্তিষ্কেই প্লাস্টিক কণা বেশি

আপডেট সময় : ০৭:৫৬:১১ অপরাহ্ন, সোমবার, ১৭ ফেব্রুয়ারী ২০২৫

প্রযুক্তি ডেস্ক: কিডনি ও লিভারের চেয়ে মানুষের মস্তিষ্কে বেশি প্লাস্টিক কণা পাওয়া গেছে বলে উঠে এসেছে সাম্প্রতিক এক গবেষণায়।

মানুষের মস্তিষ্কে প্লাস্টিকের কণা পাওয়ার বিষয়টি নতুন কিছু নয়। তবে আগের বিভিন্ন গবেষণার চেয়ে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এর পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর কেমন প্রভাব ফেলে এগুলো। মানবদেহের বিভিন্ন জায়গায় এমন প্লাস্টিকের কণা খুঁজে পাওয়ার বিষয়টি উদ্বেগের বিষয় হতে পারে বলে প্রতিবেদনে লিখেছে বিজ্ঞানভিত্তিক সাইট নোরিজ।

গবেষকরা বলছেন, গত ৫০ বছরে পরিবেশে প্লাস্টিক বর্জ্যের পরিমাণ হু হু করে বেড়েছে। প্লাস্টিক ভেঙে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে তা মাইক্রোপ্লাস্টিক বা পাঁচশ মাইক্রোমিটারের চেয়ে ছোট ও ন্যানোপ্লাস্টিক বা এক ন্যানোমিটারের চেয়েও ক্ষুদ্র প্লাস্টিক কণায় পরিণত হয়।

বর্তমানে পানি, মাটি, বায়ু, এমনকি খাবারেও পাওয়া যায় এসব প্লাস্টিক কণা। বিজ্ঞানীদের অনুমান, খাবার, পানীয় বা শ্বাস প্রশ্বাসের মাধ্যমে মানবদেহে ঢুকতে পারে প্লাস্টিকের এসব ক্ষুদ্র কণা। তবে এগুলো দেহের কোথায় পৌঁছাতে পারে বা এর ফলে কোনও বিপদ হতে পারে কি না তা বুঝতে পারা এখনও কঠিন।

গবেষণাটি প্রকাশ পেয়েছে বিজ্ঞানভিত্তিক জার্নাল ‘নেচার মেডিসিন’-এ।

এ নতুন গবেষণায় ২০১৬ ও ২০২৪ সালে মারা যাওয়া ব্যক্তিদের লিভার, কিডনি ও মস্তিষ্কের টিস্যুর নমুনা পরীক্ষা করেছেন গবেষক ম্যাথিউ ক্যাম্পেন ও তার গবেষণা দলটি।

গবেষণায় দেহের এসব অঙ্গে কতটা প্লাস্টিক জমেছে ও সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এর পরিমাণ পরিবর্তিত হয়েছে কি না খতিয়ে দেখেছেন গবেষকরা। এজন্য অন্যান্য অঙ্গের নমুনার পাশাপাশি ২০১৬ সালে মানুষের মস্তিষ্কের ২৮টি ও ২০২৪ সালে ২৪টি নমুনা বিশ্লেষণ করেছেন তারা।

গবেষণার ফলাফলে উঠে এসেছে, পরীক্ষিত সব অঙ্গেই প্লাস্টিকের কণা রয়েছে। ২০১৬ সালের লিভার ও কিডনির নমুনায় প্লাস্টিকের মাত্রা একই রকম থাকলেও ওই বছরের মস্তিষ্কের নমুনায় প্লাস্টিক কণার ঘনত্ব ছিল অনেক বেশি। ২০১৬ সালের নমুনার সঙ্গে ২০২৪ সালের নমুনার তথ্য তুলনা করে বিজ্ঞানীরা বলেছেন, সময়ের সঙ্গে সঙ্গে মস্তিষ্ক ও লিভার উভয় ক্ষেত্রেই প্লাস্টিকের মাত্রার পরিমাণ অনেক বেড়েছে।

ডিমেনশিয়া আক্রান্ত ব্যক্তিদের মস্তিষ্কের নমুনাও পরীক্ষা করেছেন গবেষকরা। তারা বলছেন, এসব ব্যক্তিদের মস্তিষ্কে প্লাস্টিক কণার পরিমাণ অন্যান্যদের চেয়ে বেশি ছিল।

তবে গবেষকরা বলেছেন, প্লাস্টিকের সংস্পর্শে আসার ফলে তাদের ডিমেনশিয়া হয়েছে এরমন কোনও প্রমাণ মেলেনি। প্লাস্টিক জমে মস্তিষ্কের কার্যকারিতা বা সার্বিক স্বাস্থ্যের ওপর কোনও প্রভাব পড়ে কি না তা বোঝার জন্য আরও গবেষণা প্রয়োজন।

এ গবেষণার জন্য দেহের সব ধরনের টিস্যুর নমুনা যুক্তরাষ্ট্রের নির্দিষ্ট স্থান যেমন নিউ মেক্সিকো ও পূর্ব উপকূল অঞ্চল থেকে এসেছে।

গবেষকরা বলছেন, একজন ব্যক্তি কোথায় থাকেন, তার খাদ্যাভ্যাস বা জীবনযাত্রার ওপর নির্ভর করে শরীরে প্লাস্টিকের পরিমাণ পরিবর্তিত হতে পারে। আর এ প্রবণতা গোটা বিশ্বের জন্য সত্যি কি না তা দেখার জন্য আরও বড় পরিসরে ও বৈচিত্র্যপূর্ণ গবেষণার প্রয়োজন।

প্লাস্টিক কণা মানুষের ক্ষতি করে কি না তা নিশ্চিত করেনি গবেষণাটি। তবে গুরুত্বপূর্ণ এক প্রশ্ন সামনে এনেছে এটি। প্লাস্টিক দূষণ ক্রমাগত বেড়েই চলেছে। তাই এসব ক্ষুদ্র কণা কীভাবে মানুষের স্বাস্থ্যের ওপর প্রভাব ফেলতে পারে তা জানার জন্য আরও গবেষণার প্রয়োজন।