নিজস্ব প্রতিবেদক: যেসব দল ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধে হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছিল তারা এখন গলা উঁঠিয়ে কথা বলা চেষ্টা করছে যেন ওই সময় (৭১ সালে) কিছু হয়নি বলে মন্তব্য করেছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, কিছু-কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ১৯৭১ (মুক্তিযুদ্ধ) কোনো ঘটনাই ছিল না।
মঙ্গলবার (২৫ মার্চ) দুপুরে রাজধানীর রমনায় ইনস্টিটিউশন অব ইঞ্জিনিয়ার্স (আইইবি) ভবনে আয়োজিত আলোচনা সভায় তিনি এ কথা বলেন। মহান স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষ্যে বিএনপি এ আলোচনা সভার আয়োজন করে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ২৫ মার্চের এই কালো দিনে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর এই দেশের মানুষের ওপর ঝাপিয়ে পড়েছিল। হত্যা করেছে লাখো নিরীহ মানুষ। কিন্তু সেই গণহত্যার জন্য পাকিস্তান এখনও ক্ষমা চায়নি। এ কথাগুলো এখন কেন বলছি, কারণ পরিবেশ তৈরি হয়েছে, কিছু-কিছু মানুষ, একটি গোষ্ঠী ও কিছু-কিছু দল বোঝানোর চেষ্টা করছেন, ১৯৭১ (মুক্তিযুদ্ধ) কোনো ঘটনাই ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের যে আন্দোলন, লাখ-লাখ মানুষের যে আত্মত্যাগ, ৯ মাস ধরে বাড়ি-ঘর ছেড়ে কোটি-কোটি মানুষ যে ভারতে আশ্রয় নিয়েছিল সেই অবস্থা যেন আমরা ভুলে যাচ্ছি। যারা সরাসরি সহযোগিতা করেছে, সরাসরি হত্যাযজ্ঞে সহযোগিতা করেছে তারা এখন গলা উঁচিয়ে- ফুলিয়ে কথা বলছে। কারও নাম বলতে চাই না, তিক্ততাও সৃষ্টি করতে চায় না।
তিনি বলেন, ইতিহাস তো ইতিহাসই, কেউ বিকৃত করতে পারবে না। সেই জন্য আজকের এই রাত্রি (২৫ মার্চ) অত্যন্ত কলঙ্ক ও দুঃখময় রাত্রি।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগ গণতন্ত্রে বিশ্বাসী না, তারা গণতন্ত্র ধ্বংসকারী। তাই আওয়ামী লীগকে গণতন্ত্রের সুবিধা দেওয়ার কথা চিন্তা করতে পারেনি।
শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে গেছে, এটাই এদের চরিত্র বলে উল্লেখ করে সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, ওরা দেখে, জনগণ যখন ক্ষেপে উঠে, তখন ওরা এভাবে কর্মীদের অরক্ষিত রেখে পালিয়ে যায়। এবার তাই করেছে, জনতার বিক্ষোভে ভারতে পালিয়ে গেছে।
বাংলাদেশের মহীয়সী নারী বেগম খালেদা প্রথম নারী মুক্তিযোদ্ধা। পাকিস্তান সেনাবাহিনীর হাতে গ্রেফতার হয় ৯ মাস জেলে ছিলেন বলেও মন্তব্য করেন মির্জা ফখরুল।
মির্জা ফখরুল বলেন, সংস্কার প্রথম শুরু হয়েছে শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমানের হাত দিয়ে, পরে করেছেন বেগম খালেদা জিয়া। দেশের মৌলিক সংস্কার কিন্তু বিএনপির হাত দিয়েই। এখন ৩১ দফা রাষ্ট্র কাঠামো মেরামতের প্রস্তাব দিয়েছে তো বিএনপি, ১৬ সালে বিএনপির নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ২০৩০ ভিশন দিয়েছে। সংস্কার কোনো নতুন বিষয় নয়। অথচ অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কারের পাহাড় এনেছে। আমরা সংস্কারের প্রস্তাবনায় মতামত দিয়েছি, পক্ষে-বিপক্ষে। আমরা বলেছি, নির্বাচনের কোনো বিকল্প নেই। এটি আজ ষড়যন্ত্র সৃষ্টি হয়েছে। দেশের সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে। যেটা আমরা মেনে নেব না। কারণ সেনাবাহিনী দুঃসময়ে আমাদের পাশে দাঁড়ায়। তিনি আরো বলেন, আন্দোলনের ভিত্তি তো বিএনপি করেছে। হঠাৎ করেই একটা বিপ্লব হয়নি, বিএনপির নেতাকর্মীদের আন্দোলনের মধ্যে উঠে এসেছে।
যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন করতে যায়, তারা কী করবে, আমরা ভালো বুঝি: বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, ‘যারা ১০০ গাড়ি নিয়ে ইলেকশন ক্যাম্পেইন (নির্বাচনী প্রচারাভিযান) করতে যায়, তারা কী করবে, সেটা আমরা ভালো বুঝি।’
আলোচনা সভায় মির্জা ফখরুল এ কথা বলেন, গতকাল সোমবার (২৪ মার্চ) ঢাকা থেকে উড়োজাহাজে সৈয়দপুর যান জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলম। সৈয়দপুর থেকে তিনি সড়কপথে পঞ্চগড়ের দেবীগঞ্জ যান। দেবীগঞ্জ থেকে শতাধিক গাড়ির বহর নিয়ে তিনি জেলার বোদা, পঞ্চগড় সদর, তেঁতুলিয়া ও আটোয়ারী উপজেলা সফর করেন। সারজিস আলমের বাড়ি আটোয়ারী উপজেলায়। রাজনৈতিক দলের নেতৃত্ব পাওয়ার পর বাড়ি ফেরার পথে সারজিস আলমের এই ‘শোডাউন’ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে নানা আলোচনা-সমালোচনা চলছে। এ নিয়ে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুলও কথা বললেন।
ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তনের আলোচনা সভায় সভাপতির বক্তব্যে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি জনগণের সঙ্গে আছে। অতীতে ছিল, ভবিষ্যতেও থাকবে। বিএনপি অবশ্যই জয়যুক্ত হবে। জনগণ যাতে বিএনপিকে ভালো বলে-এমন কাজ করতে দলের নেতা-কর্মীদের নির্দেশ দেন তিনি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, দেশে এমন সংকট তৈরি হয়েছে যে দেশপ্রেমিক সেনাবাহিনীকে পর্যন্ত আজকে বিতর্কিত করার চেষ্টা চলছে, যেটা তাঁরা কোনোমতেই মেনে নিতে পারেন না। এ প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, ‘যারা আমাদের দেশকে রক্ষা করে, যারা সংকটে পাশে এসে দাঁড়ায়, তাদের কখনোই আমরা বিতর্কিত হতে দিতে পারি না।’
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র: আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ভোট দেওয়ার সুযোগ পেলে জনগণ সরকার পরিবর্তন করতে পারে। আর ভোট দেওয়ার সুযোগ না পেলে বিতাড়িত করে সরকার পরিবর্তন করে জনগণ। এরশাদ গণতন্ত্র হত্যা করে গায়ের জোরে ক্ষমতায় টিকে থাকতে চেয়েছিলেন। ছাত্র-জনতা তাঁকে বিদায় করেছিল। একইভাবে শেখ হাসিনাকেও বিদায় করা হয়েছে।
জাতীয় নির্বাচন নিয়ে ষড়যন্ত্র হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি বলেন, নানাভাবে অসিলা সৃষ্টি করা হচ্ছে। সংস্কারের কথা বলে অসিলা সৃষ্টি করে জাতীয় নির্বাচনকে পেছানোর চেষ্টা চলছে। এর পেছনে উদ্দেশ্য আছে বলে মন্তব্য করে খন্দকার মোশাররফ হোসেন বলেন, ‘সব বুঝি, কিন্তু বলতে চাই না।’
অতি দ্রুত নির্বাচনের দিন-তারিখ ঘোষণা করার আহ্বান জানান বিএনপির এই নেতা। তিনি বলেন, নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করলে মানুষ নির্বাচনমুখী হবে। তখন যেকোনো ধরনের ষড়যন্ত্র আর টিকতে পারবে না।
আলোচনা সভায় বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, দলের ভাইস চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম ও আহমদ আজম খান, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক মোহাম্মদ কামরুল আহসান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য মামুন আহমেদ, জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সহ–উপাচার্য অধ্যাপক লুৎফর রহমান প্রমুখ বক্তব্য দেন। সভা সঞ্চালনায় ছিলেন বিএনপির প্রচার সম্পাদক সুলতান সালাউদ্দিন টুকু।