ঢাকা ০১:৫৬ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ জুন ২০২৫

কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের জন্মদিন আজ

  • আপডেট সময় : ০২:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪
  • ১০৪ বার পড়া হয়েছে

Screenshot

বিনোদন প্রতিবেদক : বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের অসম্ভব জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। নাটক-সিনেমা পরিচালনা এবং লেখনিতেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ছয় বার। ২০১৫ সালে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক।
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সেই কিংবদন্তি অভিনেতার জন্মদিন। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৮৪ বছর। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এটিএম শামসুজ্জামান জন্ম হয়েছিল নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরের ভোলাকোটের বড় বাড়ি। থাকতেন ঢাকায় দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল। তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
প্রয়াত কিংবদন্তি এই অভিনেতা ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নয়া জিন্দগানী’। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘এতটুকু আশা’ চলচ্চিত্রে তাকে খবরের কাগজ বিক্রেতা চরিত্রে প্রথমবারের মত পর্দায় দেখা যায়। এরপর ‘সুয়োরাণী দুয়োরাণী’ (১৯৬৮), ‘মলুয়া’ (১৯৬৯), ‘বড় বউ’ (১৯৭০) চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিএম শামসুজ্জামান ‘মলুয়া’ চলচ্চিত্রের সংলাপও রচনা করেন। তিনি প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ (১৯৭১) চলচ্চিত্রের। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা এবং এই ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২) চলচ্চিত্রে বেজার আলী চরিত্রে অভিনয় করেন এটিএম শামসুজ্জামান। এর গল্পও তিনি লেখেন। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেন। আলোচনায় আসেন ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর খল চরিত্রেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। তবে রম্য চরিত্রেও বেশ কিছু সিনেমায় এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনয় দর্শকের হৃদয় কেড়েছে। এর মধ্যে ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ভন্ড’, ‘লঙ্কাকাণ্ড’, ‘পাগলা ঘণ্টা’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘হাজার বছর ধরে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০০৯ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটির ‘এবাদত’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে এটিএম শাসুজ্জামানের। তবে শুধু সিনেমা নয়, অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে মানুষকে হাসিয়েছেন এটিএম শামসুজ্জামান। এর মধ্যে রঙের মানুষ, ঘর কুটুম, ভবের হাট, বউ চুরি, নোয়াশাল, শীল বাড়ি, নৈব নৈব চ, ভীমরতি, ছাত্র নং অধ্যয়নং’ গরু চুরি ইত্যাদি। শেষ জীবনে ছোটপর্দায়ই তিনি বেশি অভিনয় করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন: এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান। এই দম্পতির তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ২০১২ সালের ১৩ মার্চ এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে এটিএম খলিকুজ্জামান কুশল নিজ বড় ভাই এটিএম কামালুজ্জামান কবিরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। সে সময় এটিএম শামসুজ্জামান নিজেই ছেলে কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হত্যার অভিযোগে কুশলকে ২০১৩ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এটিএম শামসুজ্জামান ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। তাকে জুরাইন কবরস্থানে ছেলে কামরুজ্জামান কবীরের পাশে সমাহিত করা হয়। এর আগে একাধিক বার অভিনেতার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়।

 

 

 

 

যোগাযোগ

সম্পাদক : ডা. মোঃ আহসানুল কবির, প্রকাশক : শেখ তানভীর আহমেদ কর্তৃক ন্যাশনাল প্রিন্টিং প্রেস, ১৬৭ ইনার সার্কুলার রোড, মতিঝিল থেকে মুদ্রিত ও ৫৬ এ এইচ টাওয়ার (৯ম তলা), রোড নং-২, সেক্টর নং-৩, উত্তরা মডেল টাউন, ঢাকা-১২৩০ থেকে প্রকাশিত। ফোন-৪৮৯৫৬৯৩০, ৪৮৯৫৬৯৩১, ফ্যাক্স : ৮৮-০২-৭৯১৪৩০৮, ই-মেইল : [email protected]
আপলোডকারীর তথ্য

কিংবদন্তি অভিনেতা এটিএম শামসুজ্জামানের জন্মদিন আজ

আপডেট সময় : ০২:১৪:৪৬ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৪

বিনোদন প্রতিবেদক : বাংলা চলচ্চিত্র ও নাটকের অসম্ভব জনপ্রিয় একজন অভিনেতা ছিলেন এটিএম শামসুজ্জামান। নাটক-সিনেমা পরিচালনা এবং লেখনিতেও ছিলেন সিদ্ধহস্ত। অভিনয়ের জন্য আজীবন সম্মাননাসহ জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার পেয়েছিলেন ছয় বার। ২০১৫ সালে পেয়েছিলেন রাষ্ট্রের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সম্মাননা একুশে পদক।
আজ মঙ্গলবার (১০ সেপ্টেম্বর) সেই কিংবদন্তি অভিনেতার জন্মদিন। বেঁচে থাকলে তার বয়স হতো ৮৪ বছর। ১৯৪১ সালের ১০ সেপ্টেম্বর এটিএম শামসুজ্জামান জন্ম হয়েছিল নোয়াখালীর দৌলতপুরে নানাবাড়িতে। তার গ্রামের বাড়ি লক্ষীপুরের ভোলাকোটের বড় বাড়ি। থাকতেন ঢাকায় দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে। বাবা নূরুজ্জামান ছিলেন নামকরা উকিল। তিনি শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের সঙ্গে রাজনীতি করতেন। মা নুরুন্নেসা বেগম। পাঁচ ভাই ও তিন বোনের মধ্যে এটিএম শামসুজ্জামান ছিলেন সবার বড়।
প্রয়াত কিংবদন্তি এই অভিনেতা ঢাকার পগোজ স্কুল, কলেজিয়েট স্কুল, রাজশাহীর লোকনাথ হাই স্কুলে পড়াশোনা করেছিলেন। পগোজ স্কুলে তার বন্ধু ছিলেন আরেক খ্যাতিমান অভিনেতা প্রবীর মিত্র। এটিএম শামসুজ্জামানের চলচ্চিত্র পর্দায় আগমন ১৯৬৫ সালে। তার অভিনীত প্রথম চলচ্চিত্র ‘নয়া জিন্দগানী’। চলচ্চিত্রটি মুক্তি পায়নি। ১৯৬৮ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘এতটুকু আশা’ চলচ্চিত্রে তাকে খবরের কাগজ বিক্রেতা চরিত্রে প্রথমবারের মত পর্দায় দেখা যায়। এরপর ‘সুয়োরাণী দুয়োরাণী’ (১৯৬৮), ‘মলুয়া’ (১৯৬৯), ‘বড় বউ’ (১৯৭০) চলচ্চিত্রে ছোট চরিত্রে অভিনয় করেন। এটিএম শামসুজ্জামান ‘মলুয়া’ চলচ্চিত্রের সংলাপও রচনা করেন। তিনি প্রথম কাহিনি ও চিত্রনাট্য লিখেছেন ‘জলছবি’ (১৯৭১) চলচ্চিত্রের। ছবির পরিচালক ছিলেন নারায়ণ ঘোষ মিতা এবং এই ছবির মাধ্যমেই অভিনেতা ফারুকের চলচ্চিত্রে অভিষেক ঘটে।
বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের পটভূমিতে নির্মিত প্রথম চলচ্চিত্র ‘ওরা ১১ জন’ (১৯৭২) চলচ্চিত্রে বেজার আলী চরিত্রে অভিনয় করেন এটিএম শামসুজ্জামান। এর গল্পও তিনি লেখেন। ১৯৭৫ সালে নারায়ণ ঘোষ মিতার ‘লাঠিয়াল’ চলচ্চিত্রে তিনি খল চরিত্রে অভিনয় করেন। আলোচনায় আসেন ১৯৭৬ সালে আমজাদ হোসেনের ‘নয়নমণি’ চলচ্চিত্রে খল চরিত্রে অভিনয়ের মাধ্যমে। এরপর খল চরিত্রেই ব্যাপক জনপ্রিয়তা পান তিনি। তবে রম্য চরিত্রেও বেশ কিছু সিনেমায় এটিএম শামসুজ্জামানের অভিনয় দর্শকের হৃদয় কেড়েছে। এর মধ্যে ‘যাদুর বাঁশি’, ‘রামের সুমতি’, ‘ভন্ড’, ‘লঙ্কাকাণ্ড’, ‘পাগলা ঘণ্টা’, ‘ম্যাডাম ফুলি’, ‘চুড়িওয়ালা’, ‘হাজার বছর ধরে’ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। ২০০৯ সালে শাবনূর-রিয়াজ জুটির ‘এবাদত’ ছবি দিয়ে চলচ্চিত্র পরিচালক হিসেবে অভিষেক ঘটে এটিএম শাসুজ্জামানের। তবে শুধু সিনেমা নয়, অসংখ্য নাটকে অভিনয় করে মানুষকে হাসিয়েছেন এটিএম শামসুজ্জামান। এর মধ্যে রঙের মানুষ, ঘর কুটুম, ভবের হাট, বউ চুরি, নোয়াশাল, শীল বাড়ি, নৈব নৈব চ, ভীমরতি, ছাত্র নং অধ্যয়নং’ গরু চুরি ইত্যাদি। শেষ জীবনে ছোটপর্দায়ই তিনি বেশি অভিনয় করেছেন।
ব্যক্তিগত জীবন: এটিএম শামসুজ্জামানের স্ত্রী রুনী জামান। এই দম্পতির তিন ছেলে ও তিন মেয়ে। ২০১২ সালের ১৩ মার্চ এটিএম শামসুজ্জামানের ছোট ছেলে এটিএম খলিকুজ্জামান কুশল নিজ বড় ভাই এটিএম কামালুজ্জামান কবিরকে ছুরিকাঘাতে হত্যা করেন। সে সময় এটিএম শামসুজ্জামান নিজেই ছেলে কুশলের বিরুদ্ধে মামলা করেন। হত্যার অভিযোগে কুশলকে ২০১৩ সালে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন আদালত। এটিএম শামসুজ্জামান ২০২১ সালের ২০ ফেব্রুয়ারি ঢাকার সূত্রাপুরের দেবেন্দ্রনাথ দাস লেনে নিজ বাসায় মৃত্যুবরণ করেন। তিনি দীর্ঘদিন ধরে বার্ধক্যজনিত নানা অসুখে ভুগছিলেন। তাকে জুরাইন কবরস্থানে ছেলে কামরুজ্জামান কবীরের পাশে সমাহিত করা হয়। এর আগে একাধিক বার অভিনেতার মৃত্যুর গুজব ছড়ায়।